তাবলিগ জামাতের পরিচয় by মাওলানা শিব্বীর আহমদ
তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম চলছে বিশ্বজুড়ে। পৃথিবীর যেখানেই মুসলমানদের আবাস, সেখানেই দীনের দাওয়াত নিয়ে হাজির হচ্ছে তাবলিগ জামাত। কোটি কোটি মুসলমানের কাছে তারা এ দাওয়াত পেঁৗছে দিচ্ছে_ আমরা সবাই যেন প্রকৃত মুসলমান হয়ে যাই। যে ইমানের দাওয়াত নিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন, সে ইমান যেন ব্যাপকতা লাভ করে পুরো উম্মতের মাঝে।
এ দাওয়াতের জন্য তাদের রয়েছে এক বিশেষ পদ্ধতি। প্রথমেই তারা এ দাওয়াত দেয় কালেমার। কালেমার হাকিকত ও গুরুত্ব যেন প্রত্যেক মুসলমান অনুধাবন করে ও 'আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই' এ কথার বিশ্বাস যেন তারা অন্তরে বদ্ধমূল করে নেয় আর 'হজরত মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল' এ কথাটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর সুন্নতের ওপর অবিচল থাকতে সচেষ্ট হয়। 'আল্লাহর হুকুম ও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নতের মাঝেই রয়েছে একজন মুসলমানের সফলতা ও কামিয়াবি।' কালেমার এ মর্মটিই তাবলিগ জামাতের লোকেরা প্রচার করেন।
কালেমার পর তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় নামাজের ওপর। যেভাবে আল্লাহ ও তার রাসূল নামাজ পড়তে বলেছেন, আমাদের নামাজও যেন তেমন হয়। এভাবে নামাজ পড়লেই জীবন হয়ে উঠতে পারে পরকালমুখী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত।
নামাজের পর তারা দাওয়াত দেয়_ প্রত্যেক মুসলমান যেন তার প্রয়োজন পরিমাণ দীনের ইলম অর্জন করে। প্রত্যেকের জন্যই দৈনন্দিন জীবনের ইবাদত ও নিজ নিজ পেশা-কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারণ মাসায়েল জানা জরুরি। এগুলো শেখা যেতে পারে দীনি বই-পুস্তক পড়ে কিংবা আলেমদের সাহচর্যে থেকে। সঙ্গে সঙ্গে তারা এ দাওয়াতও দেয় যেন প্রত্যেকেই আল্লাহর জিকিরে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। দীনি ইলমের মাধ্যমে মুসলমান পাবে পথের দিশা, আর জিকিরের মাধ্যমে সে পথে চলার শক্তি অর্জিত হবে।
তারা এ কথাও বলে_ আমাদের প্রত্যেকের আচরণ যাতে সুন্দর হয়। প্রত্যেককেই যেন তার মর্যাদানুসারে কদর ও সম্মান করা হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের যে উত্তম ব্যবহারের শিক্ষা দিয়ে গেছেন আমরা যেন সে ব্যবহারের নমুনা হতে পারি।
এ ক্ষেত্রে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে থাকে_ উপরোক্ত গুণগুলো আমাদের নিজেদের মাঝে অর্জন করার জন্য এবং পুরো উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের দলবদ্ধভাবে সফর করতে হবে; আপন অর্থ-সময়-আরামকে এ কাজের জন্য বিলিয়ে দিতে হবে এবং সফরের দিনগুলোতে বিশেষভাবে সব ধরনের অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকবে। আর শেষ কথা হচ্ছে_ উলিল্গখিত প্রতিটি বিষয়সহ জীবনের সব কাজে আমাদের লক্ষ্য হবে একটাই_ যেন আল্লাহ আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হন। জীবন-মরণ সবই যেন তার পথেই হয়। তারা কোনো বিশেষ দলের সদস্য হতে কিংবা কোনো পীরের হাতে বায়াত হতে বা কোনো খানকার দাওয়াত দেয় না। তারা দাওয়াত দেয়_ প্রত্যেক মুসলমান যেন তার জীবনে দীন মেনে চলে। আল্লাহর হুকুম ও তাঁর রাসূলের সুন্নত অনুসরণ করে।
নিজ খরচেই তারা তাবলিগি সফর করে থাকে_ কেউ দেশে, কেউ বিদেশে। জামাতে থাকাকালে সাধারণত তারা মসজিদেই অবস্থান করে। যারা কালেমা পারত না, তাবলিগে এসে তারা কালেমা শিখেছে। এভাবে যারা নামাজ পড়তে পারত না, কোরআনে কারিম পড়তে জানত না, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ছিল অজ্ঞ, তারা তাবলিগে এসে কোরআন পড়তে শিখছে, নামাজের নিয়ম-পদ্ধতি সম্পর্কে জানছে। আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন, এ তাবলিগের মেহনতের মাধ্যমে কত মানুষ যে হেদায়েতের দিশা পেয়েছে।
No comments