পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে by সুভাষ সাহা

গোড়াতেই গলদ। তাই ধক ধক করে বুকে কাঁপন ধরিয়ে চলমান গাড়ি রাস্তায় বসে পড়তে পারে। অতঃপর হাতুড়ে ডাক্তারের মতো ড্রাইভার-কন্ডাক্টর রাস্তার এক পাশে গাড়িটি ঠেলে নিয়ে তাতে অপারেশন চালানোর কাজটি সারতে লেগে যেতে পারেন। বরাত ভালো হলে গাড়িটি পুনরায় গন্তব্যে রওনা হওয়ার তাগদ লাভ করতে পারে। নচেৎ এন্তার ভোগান্তি ও রাস্তায় সরকার আর অদৃষ্টের মুণ্ডু চটকাতে চটকাতে বিকল্প সন্ধানে নেমে পড়া।


আবার অনেকের ভাগ্যে বাস-মিনিবাস, ট্যাক্সিতে চেপে স্বর্গধামের চাবি জুটে যাওয়াও বিচিত্র নয়। কারণ আপনি না বললেও যাত্রী শকটের চালক কীভাবে দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে করতে আন্ডারটেক তরিকা রপ্ত করতে হয় ততদিনে জেনে গেছে কি-না! রাস্তার মাইলফলক, সতর্কবাণী, স্পিড সীমিত করার লেখনী_ এসব পড়তে পারার বালাই তাদের নেই। এই দেখুন না, সাংবাদিক বন্ধুরা অনেক ঘোরাঘুরি করে, অনেক কর্মকর্তার মন ভজিয়ে, ক্ষেত্রবিশেষে সোর্স লাগিয়ে তবেই না দেশে কতগুলো গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে, কতজন চালকের অরিজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তার হিসাব বের করতে পারেন। এ ধরনের সেক্টরের প্রকৃত হিসাব বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু যোগাযোগমন্ত্রী মহোদয় বুধবার এমন একটি কাণ্ড করলেন যাতে সাংবাদিক কেন, অপরাধ শাখার চার চোখের গোয়েন্দা কর্মকর্তাও ফেল মেরে যাবেন। এভাবে রাস্তায় চলাচলকারী যানের জীবন-যৌবন ও চালকের উদ্দাম নৃত্যের বিবরণ মৃত্যুকূপের গীতিনাট্যকেও হার মানাবে।
প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানবাহন দুর্ঘটনা এবং তাতে দিন দিন মৃত্যুর মিছিলের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হওয়ার বিবরণ পড়ে, শুনে যোগাযোগমন্ত্রীর অন্তরাত্মা সম্ভবত বারবার কেঁপে উঠে থাকবে। কেন এমন হচ্ছে, এ প্রশ্ন যেমন অনেক প্রিয়জন হারানো মানুষের, তেমনি তার মনেও জাগতে পারে। তিনি নিজেও এক সময় সাংবাদিক-কলামিস্ট ছিলেন। তাই সাংবাদিকের অনুসন্ধিৎসু মন আর রাজনীতিকের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা তাকে সত্য অনুসন্ধানে তাড়িত করে থাকবে।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আকস্মিক পরিদর্শনে দেখা গেল ২২টি যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে ১৮টিরই কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। অর্থাৎ রাস্তায় গাড়িটি আদৌ চলাচলের উপযোগী কি-না তার ছাড়পত্র ছাড়াই টোকেনের ভিত্তিতে গাড়িটি চলাচল করছে। আর এই টোকেন বাণিজ্যের সঙ্গে কারা জড়িত সেটা মন্ত্রী ও জনতা উভয়েই জানেন। সব চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে না এটা জনতা জানে। এখানেও নগদ নারায়ণের বিনিময়ে অনায়াসে পার পাওয়ার তরিকা ড্রাইভার-হেলপারদের জানতে হয়, জনতাও দেখে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার স্ফীত করে। মন্ত্রীর অনুসন্ধানে দেখা গেল, অধিকাংশ গাড়ির চালকের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সই নেই। যাদের আছে তাদেরটা আবার জাল।
অর্থাৎ ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদের হাতে নিজেদের জীবন ও পরিবারের ভব্যিষ্যৎকে সঁপে দিয়ে রাজধানীতে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করছেন। যোগাযোগমন্ত্রী রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষকে কী নিদারুণ সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন! এখন থেকে গাড়ি দেখলেই মনে হবে মৃত্যুদূত বুঝিবা ধেয়ে আসছে।
আমরা জানি, যোগাযোগমন্ত্রী একা এ সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করতে পারবেন না। তবে তিনি কৌশলী হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল হ্রাস করতে পারবেন। পুরোপুরি সফলতার জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন পড়বে। সেটাও মন্ত্রী উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে নিতে পারেন। এতে মন্ত্রী-জনতা উভয়েরই স্বস্তি মিলবে।

No comments

Powered by Blogger.