ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ খাতে যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহী বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদার কারণে আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারি। ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বা এখানকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন আমরা এখানে যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি।


গতকাল বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার আগরতলায় আসাম রাইফেলস মাঠে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আগরতলা পুর পরিষদ শেখ হাসিনার সম্মানে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের ভাগ্য প্রতিবেশী দেশ দুটির পারস্পরিক বহুমুখী সম্পর্কের মধ্যে নিহিত রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আস্থাহীনতা ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে অতীতে বারবার এ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকার ও বাংলাদেশের জনগণ ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক কল্যাণকর সম্পর্ক স্থাপনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, অতীতকে পেছনে ফেলে আমরা যদি এক সঙ্গে কাজ করি তাহলে অবশ্যই দুই দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে সামনে এগিয়ে যেতে পারব। খবর বাসস, বাংলা নিউজের।
এর আগে সংবর্ধনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাদের পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এখানে ৭২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এ থেকে ত্রিপুরা রাজ্য ১৯৬ মেগাওয়াট পাবে।
আমাদের ভারত সরকারের কোনো আপত্তি না থাকলে এর মধ্য থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা বাংলাদেশকে দেব। এ সময় পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ভারী যন্ত্রাংশ আনার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান মানিক সরকার।
তার এ বক্তব্যের সূত্র ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১০০ মেগাওয়াট কেন, আসুন আমরা যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন_ ইতিহাস, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ত্রিপুরাবাসী এ বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের ভবিষ্যতও একইসূত্রে গাঁথা। তিনি বলেন, উভয় দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে নজর দিতে হবে এবং আমাদের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে।
পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে এক চমৎকার সুযোগ তৈরি হয়েছে উলেল্গখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অবশ্যই এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে তার ভারত সফরের পর ঢাকা ও নয়াদিলি্লর মধ্যে নিরাপত্তা, স্থলসীমানা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়গুলো আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা উভয় সরকার এখন গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছি, যাতে উভয় দেশের জনগণ তার সুফল ভোগ করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আশুগঞ্জ সড়ক পথে পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মালপত্র পরিবহন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং একই পথে পরীক্ষামূলকভাবে কার্গো চলাচল করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই পরীক্ষামূলক পরিবহনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিদ্যমান অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য দু'দেশের কর্মকর্তারা এখন কাজ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেল যোগাযোগ এবং ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ব্যাপারে উভয় দেশের কর্মকর্তারা একটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সাবরোম-রামগড় স্থল শুল্কবন্দর চালু ও বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমান্তে চারটি সীমান্ত হাট বসানোর ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা শুধু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী নয়, এ রাজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাস। তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ষাটের দশকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে দেশকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে স্বাধিকার আন্দোলনের ডাক দিলে তখন তার বিরুদ্ধে 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রায় ১৬ লাখ বাংলাদেশিকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ত্রিপুরা সরকার ও তার জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

No comments

Powered by Blogger.