কেস অব ইনফার্টিলিটি by শামীম রেজা
"যমজ ছেলে দুটি হুবহু ইমরানের চেহারাই শুধু পায়নি, আচার-আচরণেও অবিকল ইমরান, আমি যেমন চেয়েছিলাম তেমনই; অথচ তামীম-মামীম কেউই ইমরানের সন্তান নয়।" কথার পিঠে এই কথা বলে শাবিলা ম্লান চোখে সেবন্তী ভট্টাচারিয়ার দিকে তাকায়। ইমরান তাঁর সন্তানদের নিয়ে একটু দূরে টেঙ্াসের হাউসটোন পার্কের চাইল্ড গ্যালারিতে খেলছেন; সঙ্গে সুকুমার ভট্টাচারিয়া ও তাঁর বাচ্চারা। এখানে শাবিলারা এসেছেন আজ দুদিন।
কথা কটি শুনে সেবন্তীর মন গ্রাস করে বসেছে হাউসটোন পার্কের সব অন্ধকার। শাবিলা কথার পিঠে কথা বলে যাচ্ছিলেন যখন, মোহাচ্ছন্ন সেবন্তী মনে করতে পারছিলেন না কয়েক মাস আগে দেখা সেই স্প্যানিশ ফিল্মটির কথা, যে ফিল্মে এমনই একটি গল্প সরলভাবে বলেছেন ফিল্ম মেকার। কিন্তু কৈশোরে পড়া মহাভারতের অন্যতম নারী চরিত্র কুন্তীর পুরুষ সংসর্গের কথা জ্বলজ্বল করে তাঁর মনে ভেসে ওঠে। কুমারী কুন্তী দুর্বাসা মুনির কাছ থেকে বশীকরণ মন্ত্র বর হিসেবে পেয়ে প্রথমেই সূর্যদেবের সংসর্গে পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, যার নাম মহাবীর কর্ণ। কুন্তী ছাড়া যে সন্তানের খবর কোনো মানুষই জানত না।
সংবিৎ ফিরে পান শাবিলার কথায়, "জানিস, আমি কিন্তু ইমরানকে ভালোবাসি স্টিল নাউ; এর মধ্যে কোনো খাদ নেই।" সেবন্তী শূন্যদৃষ্টিতে তাকান, কী বলবেন ভেবে পান না। হঠাৎ প্রশ্ন করেন, "তাহলে তামীম-মামীমের বাবা কে?"
"এই চরম সত্যটি তোকে বলব বলেই তো এবার সামারে এত বছর পর তোর কাছে আসা। তোর মনে পড়ে, আমাদের ক্লাসের মানিককে?"
সেবন্তী বললেন, "সেই এঙ্ট্রা-অর্ডিনারি মাণিক্য, যে আমাদের তার মেসে নিয়ে...। মনে পড়ে, কেউ আমরা জানতাম না ও আসলে জাদুর মতো মেয়েদের নিয়ে যেত আর ব্যবহার শেষে চিনতে পারত না। তুই আর আমি মুখোমুখি হয়েছিলাম না জেনে, ওর মেসে; তারপর কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মুহূর্তেই কেমন ম্যানেজ হয়ে গেলাম, অতঃপর দুজনকেই একই জায়গায় একই সঙ্গে ওর সংসর্গে! ভাবতে গেলে মনে হয়, সে এক মায়ার জগৎ ছিল_হয়তো ক্ষণিকের দুর্বলতা। এরপর আমি কিন্তু কোনো দিন আর যাইনি, মানিকের মুখোমুখিও হইনি। এর কারণ হয়তো মোহন্ত, বিদেশে পাড়ি দেওয়া, জীবনযুদ্ধে লড়তে লড়তে এখন টেঙ্াসে। উদ্বাস্তু জীবনের স্বাদ বাবার সঙ্গে কলকাতায়ও কম পোহাতে হয়নি। সেই পুরান ঢাকার প্রাসাদসম অট্টালিকা ছেড়ে...যাক ওসব কথা। তোর কথা বল প্লিজ, আমার বুক ফাঁকা হয়ে আসছে। ইমরান ভাইয়ের ব্যাপারটা কি তাহলে কেস অব ইনফার্টিলিটি?"
"হ্যাঁ, ঠিক বল্ছিস।"
"সেঙ্ুয়াল ক্যাপাবিলিটি ওকে, বাট পারসন ক্যান নট গিভ বার্থ টু এ বেবি।"
"আচ্ছা, ইমরান ভাই জানে না এসব?"
"একদম জানে না। হরমোনাল কারণে ওর এক ধরনের অ্যালার্জি হতো, তাই বিভিন্ন টেস্ট করতে হতো। আর ওকে কোনো দিন জানতেও দিইনি এসব। ওই যে মিডল ক্লাস ব্লাডি ডাক্তারটার কথা মনে আছে?"
"মনে থাকবে না আবার। আশরাফের কথা বলছিস তো? ও তো আমার সঙ্গেও চান্স নিতে চেয়েছিল। কী হয়েছে বল।"
"আশরাফের কাছে একটা মাইনর প্রবলেম নিয়ে গিয়েছিলাম ইমরানকে দেখাতে। আশরাফ কতকগুলো টেস্ট দিল ইমরানকে। ইমরান এর কিছুদিনের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে চাকরি পেয়ে চলে গেল সিঙ্গাপুরে। আমি পরীক্ষার কাজে ঢাকায়। একদিন আশরাফ ফোনে জানাল, 'জরুরি দেখা করে যা।' আমি ওর চেম্বারে যাওয়ার পর ইমরানের হরমোনাল টেস্টের একটি রিপোর্ট দেখিয়ে বলল, 'ডার্লিং, তোমার হাজব্যান্ড জেনেটিক অ্যাবনরমালিটিজ সাচ অ্যাজ অ্যা রবার্টসোনিয়ান ট্রানস্লোকেসনের রোগী। সেঙ্ সম্পূর্ণ ঠিকঠাক, কিন্তু ইমরানের স্পার্মে ওর বাচ্চা নিতে পারবে না তুমি কোনো দিন'।"
"আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আমি কতক্ষণ অ্যাবনরমাল আচরণ করেছিলাম মনে নেই। আশরাফ সুযোগটি নিয়েছিল, ফলে আশরাফকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। কিছুদিন পর সিঙ্গাপুরে গিয়ে আমি আর ইমরান দুজনই বডি চেকআপ করাই, কিন্তু ডাক্তারকে বলে ইমরানের অলক্ষ্যে ইনফার্টিলিটি ব্যাপারটি সঠিক কি না তার জন্য টেস্ট দিই। একই রেজাল্ট আসে। এর বছরখানেক পর ইংল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে ইমরানকে সেখানেও একই টেস্ট করাই_একই রেজাল্ট। ডাক্তাররা জানান, এর চিকিৎসা আমাদের বিজ্ঞানশাস্ত্রে নেই। আমি উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ শুরু করি ইমরানের সঙ্গে, অন্যান্য মানুষের সঙ্গে; কিন্তু অমন ভালো মানুষটিকে বুঝতেই দিইনি এর কারণ।
কিছুদিন পর ওকে একটি কোর্সে ওয়াশিংটনে যেতে হয়। তখন আমি বাংলাদেশে ফিরে আসি আর তখনই ঘটে ঘটনাটা। হঠাৎ গুলশানের বাড়িতে এসে হাজির সেই চন্দ্র মাণিক্য। ওকে দেখে বিরক্ত হই, বকাঝকা করি। মাম-ড্যাড বাড়িতে ছিলেন না। কয়েক দিনের জন্য ব্যাংককে। কোথায় জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল আমার। আমি যেন নদীর মতো ভাসতে চাইলাম। ওয়াইল্ড মানিককেই যেন আমন্ত্রণ করলাম আর অবচেতনে ইমরানের প্রতিচ্ছবি তাড়া করছিল। মানিক ছিল বাস্তবের অন্য পিঠে, কিন্তু ইমরানই যেন ছিল সেই তিন দিন, দিনমান ধ্যানে। ইমরান যখন কোর্স শেষে এলো, তখন আমার গর্ভের বয়স ছয় মাস। আমাদের ওয়াইল্ড বয়টা এখন কোথায়? ও কী যেন নাটক-ফাটক করত, থিয়েটার-কবিতা-গল্প?"
অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে শাবিলার।
"এই ঘটনার কিছুদিন পর ফিল্মের স্পট দেখতে যাওয়ার সময় বাস ওদের প্রাইভেট কার চাপা দেয়। স্পট ডেথ। আমি শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম, কিন্তু লাশ দেখিনি।"
স্তব্ধতা নেমে আসে সেবন্তী আর শাবিলার কথার মধ্যে। স্তব্ধতা ভেঙে ডাক্তার আশরাফের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কথা শোনান শাবিলা। বলেন, "অনেকদিন যেতে হয়েছে ওর কাছে, ঘৃণায়-অপমানে এখনো জ্বলছি, যতবার গেছি ততবার জ্বলছি।"
"তোর ব্যাপারটা নরশ্রেষ্ঠ পাণ্ডু আর কুন্তীর মতো না, এমনকি কৃষ্ণ, দ্বৈপায়ন, বেদব্যাসের মতোও নয়। কুন্তীর স্বামী ছিলেন পাণ্ডু, যিনি ছিলেন ইমপোটেন্ট। জানিস তো এসব?"
"জানা আছে, তার পরও বল, প্লিজ শুনতে ইচ্ছা করছে।"
"ফলে তাঁর বংশরক্ষার্থে ধর্মপুত্র, বায়ুর পুত্র এবং ইন্দ্রের সংসর্গে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কুন্তী, যাঁদের নাম যুধিষ্ঠির, ভীমসেন ও অর্জুন। তৃতীয়ের পর চতুর্থ পরপুরুষ সংসর্গে যেতে রাজি হননি কুন্তী। জানিস কী মত ব্যক্ত করেছিলেন?"
"কী?"
"পঞ্চম পরপুরুষ সংসর্গ করলে সে স্ত্রী, স্বৈরিণী, বন্ধকী বলে গণ্য হবে।"
"তাই!" দুজনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। এমন সময় ইমরান ও সুকুমার এসে পড়ায় তাঁদের কথায় ছেদ পড়ে যায়।
রাতে ডিনারের পর ইমরান ও সুকুমার ক্যাসিনোতে সময় কাটাতে গেলে শাবিলা আর সেবন্তী তাঁদের স্মৃতির ডালা নিয়ে রুম আটকে বসেন। মানিকের সঙ্গে শাবিলার কতকগুলো রেয়ার ছবি রাখতে দেন সেবন্তীকে।
একটা প্রশ্নের উত্তর কোনোভাবেই খুঁজে পান না সেবন্তী, কিভাবে ইমরানের চেহারার মতো চেহারা হলো তামীম-মামীমের?
"আচ্ছা সেবন্তী, তুই যে বেদব্যাসের কথা বললি, গল্পটা বল তো, তোদের সনাতন ধর্মে কত কী যে আছে, যা জীবনেরই অংশ।"
সেবন্তী চিৎকার দিয়ে উঠল, "এই হলো অশিক্ষার ফল। তুই তো লিটারেচারেরই ছাত্রী, আমি তো ইকোনমিকস। অথচ জানিস না বেদব্যাস কে। কোনো ধর্মগ্রন্থ প্রণেতা নয়, মহাকাব্য মহাভারত প্রণেতা।"
"ও, স্যরি ডিয়ার। গল্পটা বল। দাঁড়া দেখছি, ব্যাসের জীবনী পড়ছিলাম, তোরা আসার আগের দিন। পড়ে শোনাই, শোন..."
"আরে বাব্বা সংক্ষেপে বল, তর সইছে না।"
"আচ্ছা শোন_একাত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ, তোদের আর দেশকে ছেড়ে আসার সময় এই গ্রন্থখানি শুধু নিয়ে এসেছিলাম।"
"কোনো মানুষ শুধু তার একার জীবন যাপন করে না। সে তার অজ্ঞাতেই বহু মানুষের দুর্বলতা, কামনা আর আকাঙ্ক্ষার ভার বয়ে বেড়ায়। মানুষের সবচেয়ে কঠিন কাজ তার নিজের আকাঙ্ক্ষার স্বরূপকে জানা।"
"এসব জ্ঞানের অংশ রাখ তো, গল্প অংশটি পড়।"
পড়তে থাকে সেবন্তী_ব্যাসের মা সত্যবতীর গর্ভে শান্তনুর দুই পুত্রের জন্ম, যাঁদের নাম চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য। চিত্রাঙ্গদ অবিবাহিত অবস্থায় যুদ্ধে নিহত হন। সাম্রাজ্যের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় কিশোর বিচিত্রবীর্যের ওপর। কাশিরাজের দুই কন্যাকে বলপূর্বক হরণ করে বিচিত্রবীর্যর কাছে বিবাহ দেন ভীষ্ম। কিন্তু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বিচিত্রবীর্য। হস্তিনাপুরের রাজপরিবারের একমাত্র পুরুষ ভীষ্ম। তিনি ব্রতের কারণে সাম্রাজ্যের দায়ভার নেবেন না। সত্যবতী ভরতবংশ বিস্তারে তাঁর সহযোগিতা চাইলে ভীষ্ম সত্যবতীর আগের ঘরের সন্তান কৃষ্ণ ব্যাসকে নিমন্ত্রণ করে ভাইয়ের স্ত্রীদের গ্রহণ করতে বলেন, মাকে।
বেদব্যাসকে ডেকে পাঠালেন সত্যবতী। তিনি বললেন, ভরতকুল রক্ষার জন্য তোমাকে প্রয়োজন মহাপ্রজ্ঞ পুত্রধন। মায়ের কথা শিরোধার্য ভেবে বিচিত্রবীর্যর স্ত্রীদের গর্ভে পুত্র উৎপাদন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যাস। এদিকে রাজবধূ অম্বিকা বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো সন্ন্যাসীকে কোনো রকম গ্রহণ করতে প্রস্তুত নন। অম্বিকা এই প্রথম ব্যাসের রুক্ষ কুৎসিত মূর্তি দেখে ঘৃণায় চোখ বন্ধ করলেন।
ব্যাস তাঁর সংসর্গে গিয়ে বললেন, জানি অরণ্যচারী সন্ন্যাসীকে রাজবধূর পছন্দ হবে না। হে দেবীরানী, আমি অন্যের মনোরঞ্জনের জন্য নিজেকে পরিবর্তিত করি না!
আমার বন্যতা, দুর্গন্ধ, কুৎসিত অবস্থাকে গ্রহণ করতে পারলে তবেই হবে সার্থক মিলন।
শেষরাতে মা সত্যবতী অপেক্ষায় ব্যাসের। ব্যাস শেষরাতের মতোই মানসিক ক্লান্তিতে দাঁড়িয়ে ভাবছেন তাঁর প্রথম সংসর্গে আসা নারী অম্বিকার কথা। পেছনে ঘাড়ে মায়ের হাত।
অম্বিকাকে তুষ্ট করতে পারোনি, বাবা?
আধো অন্ধকারে মায়ের দিকে ফিরে শান্ত অথচ গম্ভীর ধীর কণ্ঠে বললেন_
শ্রদ্ধা ছাড়া এমন কাজের কোনো সুফল ফলে না, মা।
অম্বিকা গ্রহণ করেছে আমাকে অশ্রদ্ধায়। তাই আমি
গ্রহণ করতে পারিনি শ্রদ্ধায়। নিষ্ফল মিলন হয়েছে
পরস্পরের অশ্রদ্ধায়।
তোমার পুত্রবধূর গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেবে, সে হবে দোদুলচিত্ত, ত্রুটিপূর্ণ! অশ্রদ্ধায়-অভক্তিতে এমন কাজের ফল অশুভই হবে, মা।
বিচলিত সত্যবতী দুশ্চিন্তায় পড়ে পরমুহূর্তে হাসিমুখে বললেন, ভরতকুল রক্ষার্থে কাল তুমি দ্বিতীয়জন অম্বালিকার গর্ভে আলোকবর্তিকাময় সুন্দর সন্তান দান করো হে প্রাজ্ঞ পুরুষ। ত্রুটিপূর্ণ পুত্র সম্রাটের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
তন্ময় হয়ে শুনছিলেন শাবিলা। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল মাণিক্যের সঙ্গে সেই ঘোরগ্রস্ত তিন দিনের কথা। কখনো মনে হয়নি ইমরান নয়, এটা মাণিক্য। অথচ বিস্ময়কর হলেও সত্য, তামীম-মামীম মাণিক্যের ঔরসজাত!
টেঙ্াসেই সেই বেড়ানোর পর আজ তামীম-মামীম এসেছে প্রায় ২৫ বছর পর এই কনসোডিয়ামে, ওদের চিনতে পারেননি প্রথমে সেবন্তী। ইতিমধ্যে সুকুমার ভট্টাচারিয়া গত হয়েছেন; বড় ছেলে ডেনমার্কে সেটেল্ড। মেজ মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায়। ছোট ছেলে আর তার বউয়ের সঙ্গে সেবন্তী ভট্টাচারিয়া নিঃসঙ্গ বাড়িতে সময় কাটান, নিঃসন্তান দম্পতিদের সঙ্গে।
তামীম-মামীম দুজনই ফ্লোরিডায় থাকে, তামীম অরসিনোতে নাসার স্পেস সেন্টারে মেডিসিন ইন স্পেসে কাজ করে; আর মামীম অ্যারোনটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে গবেষণা করছে ফ্লোরিডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুজন এসেছে গত পরশু ঢাকা থেকে মায়ের দেওয়া শেষ উপহার তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে দিতে।
তামীম জিজ্ঞেস করে, "আন্টি, আপনার কাছে মায়ের নাকি কিছু রেয়ার ছবি ও ভিডিও ক্লিপস আছে, সেগুলো কি দেখা যাবে একবার?"
উদ্বিগ্ন কণ্ঠে সেবন্তী জানতে চান, "শাবিলার কী হয়েছে? ইমরান কেমন আছে?"
তামিম বলল, "মা গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মৃত্যুবরণ করেছেন। আর বাবাও বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রোগশোকে ভুগে সিঙ্গাপুরে মারা যান এর এক সপ্তাহ আগে।"
বড় একটি প্যাকেট খুলে দেখেন সেবন্তী, তাঁর প্রিয় নকশীকাঁথা। লেখা_
এমন করেই ব্যক্তিগত ইতিহাসের যবনিকা ঘটে মানুষের। বন্ধু, ভালো থেকো।
সংবিৎ ফিরে পান শাবিলার কথায়, "জানিস, আমি কিন্তু ইমরানকে ভালোবাসি স্টিল নাউ; এর মধ্যে কোনো খাদ নেই।" সেবন্তী শূন্যদৃষ্টিতে তাকান, কী বলবেন ভেবে পান না। হঠাৎ প্রশ্ন করেন, "তাহলে তামীম-মামীমের বাবা কে?"
"এই চরম সত্যটি তোকে বলব বলেই তো এবার সামারে এত বছর পর তোর কাছে আসা। তোর মনে পড়ে, আমাদের ক্লাসের মানিককে?"
সেবন্তী বললেন, "সেই এঙ্ট্রা-অর্ডিনারি মাণিক্য, যে আমাদের তার মেসে নিয়ে...। মনে পড়ে, কেউ আমরা জানতাম না ও আসলে জাদুর মতো মেয়েদের নিয়ে যেত আর ব্যবহার শেষে চিনতে পারত না। তুই আর আমি মুখোমুখি হয়েছিলাম না জেনে, ওর মেসে; তারপর কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মুহূর্তেই কেমন ম্যানেজ হয়ে গেলাম, অতঃপর দুজনকেই একই জায়গায় একই সঙ্গে ওর সংসর্গে! ভাবতে গেলে মনে হয়, সে এক মায়ার জগৎ ছিল_হয়তো ক্ষণিকের দুর্বলতা। এরপর আমি কিন্তু কোনো দিন আর যাইনি, মানিকের মুখোমুখিও হইনি। এর কারণ হয়তো মোহন্ত, বিদেশে পাড়ি দেওয়া, জীবনযুদ্ধে লড়তে লড়তে এখন টেঙ্াসে। উদ্বাস্তু জীবনের স্বাদ বাবার সঙ্গে কলকাতায়ও কম পোহাতে হয়নি। সেই পুরান ঢাকার প্রাসাদসম অট্টালিকা ছেড়ে...যাক ওসব কথা। তোর কথা বল প্লিজ, আমার বুক ফাঁকা হয়ে আসছে। ইমরান ভাইয়ের ব্যাপারটা কি তাহলে কেস অব ইনফার্টিলিটি?"
"হ্যাঁ, ঠিক বল্ছিস।"
"সেঙ্ুয়াল ক্যাপাবিলিটি ওকে, বাট পারসন ক্যান নট গিভ বার্থ টু এ বেবি।"
"আচ্ছা, ইমরান ভাই জানে না এসব?"
"একদম জানে না। হরমোনাল কারণে ওর এক ধরনের অ্যালার্জি হতো, তাই বিভিন্ন টেস্ট করতে হতো। আর ওকে কোনো দিন জানতেও দিইনি এসব। ওই যে মিডল ক্লাস ব্লাডি ডাক্তারটার কথা মনে আছে?"
"মনে থাকবে না আবার। আশরাফের কথা বলছিস তো? ও তো আমার সঙ্গেও চান্স নিতে চেয়েছিল। কী হয়েছে বল।"
"আশরাফের কাছে একটা মাইনর প্রবলেম নিয়ে গিয়েছিলাম ইমরানকে দেখাতে। আশরাফ কতকগুলো টেস্ট দিল ইমরানকে। ইমরান এর কিছুদিনের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে চাকরি পেয়ে চলে গেল সিঙ্গাপুরে। আমি পরীক্ষার কাজে ঢাকায়। একদিন আশরাফ ফোনে জানাল, 'জরুরি দেখা করে যা।' আমি ওর চেম্বারে যাওয়ার পর ইমরানের হরমোনাল টেস্টের একটি রিপোর্ট দেখিয়ে বলল, 'ডার্লিং, তোমার হাজব্যান্ড জেনেটিক অ্যাবনরমালিটিজ সাচ অ্যাজ অ্যা রবার্টসোনিয়ান ট্রানস্লোকেসনের রোগী। সেঙ্ সম্পূর্ণ ঠিকঠাক, কিন্তু ইমরানের স্পার্মে ওর বাচ্চা নিতে পারবে না তুমি কোনো দিন'।"
"আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আমি কতক্ষণ অ্যাবনরমাল আচরণ করেছিলাম মনে নেই। আশরাফ সুযোগটি নিয়েছিল, ফলে আশরাফকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। কিছুদিন পর সিঙ্গাপুরে গিয়ে আমি আর ইমরান দুজনই বডি চেকআপ করাই, কিন্তু ডাক্তারকে বলে ইমরানের অলক্ষ্যে ইনফার্টিলিটি ব্যাপারটি সঠিক কি না তার জন্য টেস্ট দিই। একই রেজাল্ট আসে। এর বছরখানেক পর ইংল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে ইমরানকে সেখানেও একই টেস্ট করাই_একই রেজাল্ট। ডাক্তাররা জানান, এর চিকিৎসা আমাদের বিজ্ঞানশাস্ত্রে নেই। আমি উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ শুরু করি ইমরানের সঙ্গে, অন্যান্য মানুষের সঙ্গে; কিন্তু অমন ভালো মানুষটিকে বুঝতেই দিইনি এর কারণ।
কিছুদিন পর ওকে একটি কোর্সে ওয়াশিংটনে যেতে হয়। তখন আমি বাংলাদেশে ফিরে আসি আর তখনই ঘটে ঘটনাটা। হঠাৎ গুলশানের বাড়িতে এসে হাজির সেই চন্দ্র মাণিক্য। ওকে দেখে বিরক্ত হই, বকাঝকা করি। মাম-ড্যাড বাড়িতে ছিলেন না। কয়েক দিনের জন্য ব্যাংককে। কোথায় জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল আমার। আমি যেন নদীর মতো ভাসতে চাইলাম। ওয়াইল্ড মানিককেই যেন আমন্ত্রণ করলাম আর অবচেতনে ইমরানের প্রতিচ্ছবি তাড়া করছিল। মানিক ছিল বাস্তবের অন্য পিঠে, কিন্তু ইমরানই যেন ছিল সেই তিন দিন, দিনমান ধ্যানে। ইমরান যখন কোর্স শেষে এলো, তখন আমার গর্ভের বয়স ছয় মাস। আমাদের ওয়াইল্ড বয়টা এখন কোথায়? ও কী যেন নাটক-ফাটক করত, থিয়েটার-কবিতা-গল্প?"
অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে শাবিলার।
"এই ঘটনার কিছুদিন পর ফিল্মের স্পট দেখতে যাওয়ার সময় বাস ওদের প্রাইভেট কার চাপা দেয়। স্পট ডেথ। আমি শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম, কিন্তু লাশ দেখিনি।"
স্তব্ধতা নেমে আসে সেবন্তী আর শাবিলার কথার মধ্যে। স্তব্ধতা ভেঙে ডাক্তার আশরাফের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কথা শোনান শাবিলা। বলেন, "অনেকদিন যেতে হয়েছে ওর কাছে, ঘৃণায়-অপমানে এখনো জ্বলছি, যতবার গেছি ততবার জ্বলছি।"
"তোর ব্যাপারটা নরশ্রেষ্ঠ পাণ্ডু আর কুন্তীর মতো না, এমনকি কৃষ্ণ, দ্বৈপায়ন, বেদব্যাসের মতোও নয়। কুন্তীর স্বামী ছিলেন পাণ্ডু, যিনি ছিলেন ইমপোটেন্ট। জানিস তো এসব?"
"জানা আছে, তার পরও বল, প্লিজ শুনতে ইচ্ছা করছে।"
"ফলে তাঁর বংশরক্ষার্থে ধর্মপুত্র, বায়ুর পুত্র এবং ইন্দ্রের সংসর্গে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কুন্তী, যাঁদের নাম যুধিষ্ঠির, ভীমসেন ও অর্জুন। তৃতীয়ের পর চতুর্থ পরপুরুষ সংসর্গে যেতে রাজি হননি কুন্তী। জানিস কী মত ব্যক্ত করেছিলেন?"
"কী?"
"পঞ্চম পরপুরুষ সংসর্গ করলে সে স্ত্রী, স্বৈরিণী, বন্ধকী বলে গণ্য হবে।"
"তাই!" দুজনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। এমন সময় ইমরান ও সুকুমার এসে পড়ায় তাঁদের কথায় ছেদ পড়ে যায়।
রাতে ডিনারের পর ইমরান ও সুকুমার ক্যাসিনোতে সময় কাটাতে গেলে শাবিলা আর সেবন্তী তাঁদের স্মৃতির ডালা নিয়ে রুম আটকে বসেন। মানিকের সঙ্গে শাবিলার কতকগুলো রেয়ার ছবি রাখতে দেন সেবন্তীকে।
একটা প্রশ্নের উত্তর কোনোভাবেই খুঁজে পান না সেবন্তী, কিভাবে ইমরানের চেহারার মতো চেহারা হলো তামীম-মামীমের?
"আচ্ছা সেবন্তী, তুই যে বেদব্যাসের কথা বললি, গল্পটা বল তো, তোদের সনাতন ধর্মে কত কী যে আছে, যা জীবনেরই অংশ।"
সেবন্তী চিৎকার দিয়ে উঠল, "এই হলো অশিক্ষার ফল। তুই তো লিটারেচারেরই ছাত্রী, আমি তো ইকোনমিকস। অথচ জানিস না বেদব্যাস কে। কোনো ধর্মগ্রন্থ প্রণেতা নয়, মহাকাব্য মহাভারত প্রণেতা।"
"ও, স্যরি ডিয়ার। গল্পটা বল। দাঁড়া দেখছি, ব্যাসের জীবনী পড়ছিলাম, তোরা আসার আগের দিন। পড়ে শোনাই, শোন..."
"আরে বাব্বা সংক্ষেপে বল, তর সইছে না।"
"আচ্ছা শোন_একাত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ, তোদের আর দেশকে ছেড়ে আসার সময় এই গ্রন্থখানি শুধু নিয়ে এসেছিলাম।"
"কোনো মানুষ শুধু তার একার জীবন যাপন করে না। সে তার অজ্ঞাতেই বহু মানুষের দুর্বলতা, কামনা আর আকাঙ্ক্ষার ভার বয়ে বেড়ায়। মানুষের সবচেয়ে কঠিন কাজ তার নিজের আকাঙ্ক্ষার স্বরূপকে জানা।"
"এসব জ্ঞানের অংশ রাখ তো, গল্প অংশটি পড়।"
পড়তে থাকে সেবন্তী_ব্যাসের মা সত্যবতীর গর্ভে শান্তনুর দুই পুত্রের জন্ম, যাঁদের নাম চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য। চিত্রাঙ্গদ অবিবাহিত অবস্থায় যুদ্ধে নিহত হন। সাম্রাজ্যের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় কিশোর বিচিত্রবীর্যের ওপর। কাশিরাজের দুই কন্যাকে বলপূর্বক হরণ করে বিচিত্রবীর্যর কাছে বিবাহ দেন ভীষ্ম। কিন্তু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বিচিত্রবীর্য। হস্তিনাপুরের রাজপরিবারের একমাত্র পুরুষ ভীষ্ম। তিনি ব্রতের কারণে সাম্রাজ্যের দায়ভার নেবেন না। সত্যবতী ভরতবংশ বিস্তারে তাঁর সহযোগিতা চাইলে ভীষ্ম সত্যবতীর আগের ঘরের সন্তান কৃষ্ণ ব্যাসকে নিমন্ত্রণ করে ভাইয়ের স্ত্রীদের গ্রহণ করতে বলেন, মাকে।
বেদব্যাসকে ডেকে পাঠালেন সত্যবতী। তিনি বললেন, ভরতকুল রক্ষার জন্য তোমাকে প্রয়োজন মহাপ্রজ্ঞ পুত্রধন। মায়ের কথা শিরোধার্য ভেবে বিচিত্রবীর্যর স্ত্রীদের গর্ভে পুত্র উৎপাদন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যাস। এদিকে রাজবধূ অম্বিকা বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো সন্ন্যাসীকে কোনো রকম গ্রহণ করতে প্রস্তুত নন। অম্বিকা এই প্রথম ব্যাসের রুক্ষ কুৎসিত মূর্তি দেখে ঘৃণায় চোখ বন্ধ করলেন।
ব্যাস তাঁর সংসর্গে গিয়ে বললেন, জানি অরণ্যচারী সন্ন্যাসীকে রাজবধূর পছন্দ হবে না। হে দেবীরানী, আমি অন্যের মনোরঞ্জনের জন্য নিজেকে পরিবর্তিত করি না!
আমার বন্যতা, দুর্গন্ধ, কুৎসিত অবস্থাকে গ্রহণ করতে পারলে তবেই হবে সার্থক মিলন।
শেষরাতে মা সত্যবতী অপেক্ষায় ব্যাসের। ব্যাস শেষরাতের মতোই মানসিক ক্লান্তিতে দাঁড়িয়ে ভাবছেন তাঁর প্রথম সংসর্গে আসা নারী অম্বিকার কথা। পেছনে ঘাড়ে মায়ের হাত।
অম্বিকাকে তুষ্ট করতে পারোনি, বাবা?
আধো অন্ধকারে মায়ের দিকে ফিরে শান্ত অথচ গম্ভীর ধীর কণ্ঠে বললেন_
শ্রদ্ধা ছাড়া এমন কাজের কোনো সুফল ফলে না, মা।
অম্বিকা গ্রহণ করেছে আমাকে অশ্রদ্ধায়। তাই আমি
গ্রহণ করতে পারিনি শ্রদ্ধায়। নিষ্ফল মিলন হয়েছে
পরস্পরের অশ্রদ্ধায়।
তোমার পুত্রবধূর গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেবে, সে হবে দোদুলচিত্ত, ত্রুটিপূর্ণ! অশ্রদ্ধায়-অভক্তিতে এমন কাজের ফল অশুভই হবে, মা।
বিচলিত সত্যবতী দুশ্চিন্তায় পড়ে পরমুহূর্তে হাসিমুখে বললেন, ভরতকুল রক্ষার্থে কাল তুমি দ্বিতীয়জন অম্বালিকার গর্ভে আলোকবর্তিকাময় সুন্দর সন্তান দান করো হে প্রাজ্ঞ পুরুষ। ত্রুটিপূর্ণ পুত্র সম্রাটের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
তন্ময় হয়ে শুনছিলেন শাবিলা। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল মাণিক্যের সঙ্গে সেই ঘোরগ্রস্ত তিন দিনের কথা। কখনো মনে হয়নি ইমরান নয়, এটা মাণিক্য। অথচ বিস্ময়কর হলেও সত্য, তামীম-মামীম মাণিক্যের ঔরসজাত!
টেঙ্াসেই সেই বেড়ানোর পর আজ তামীম-মামীম এসেছে প্রায় ২৫ বছর পর এই কনসোডিয়ামে, ওদের চিনতে পারেননি প্রথমে সেবন্তী। ইতিমধ্যে সুকুমার ভট্টাচারিয়া গত হয়েছেন; বড় ছেলে ডেনমার্কে সেটেল্ড। মেজ মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায়। ছোট ছেলে আর তার বউয়ের সঙ্গে সেবন্তী ভট্টাচারিয়া নিঃসঙ্গ বাড়িতে সময় কাটান, নিঃসন্তান দম্পতিদের সঙ্গে।
তামীম-মামীম দুজনই ফ্লোরিডায় থাকে, তামীম অরসিনোতে নাসার স্পেস সেন্টারে মেডিসিন ইন স্পেসে কাজ করে; আর মামীম অ্যারোনটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে গবেষণা করছে ফ্লোরিডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুজন এসেছে গত পরশু ঢাকা থেকে মায়ের দেওয়া শেষ উপহার তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে দিতে।
তামীম জিজ্ঞেস করে, "আন্টি, আপনার কাছে মায়ের নাকি কিছু রেয়ার ছবি ও ভিডিও ক্লিপস আছে, সেগুলো কি দেখা যাবে একবার?"
উদ্বিগ্ন কণ্ঠে সেবন্তী জানতে চান, "শাবিলার কী হয়েছে? ইমরান কেমন আছে?"
তামিম বলল, "মা গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মৃত্যুবরণ করেছেন। আর বাবাও বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রোগশোকে ভুগে সিঙ্গাপুরে মারা যান এর এক সপ্তাহ আগে।"
বড় একটি প্যাকেট খুলে দেখেন সেবন্তী, তাঁর প্রিয় নকশীকাঁথা। লেখা_
এমন করেই ব্যক্তিগত ইতিহাসের যবনিকা ঘটে মানুষের। বন্ধু, ভালো থেকো।
No comments