ফতুল্লা পুলিশের ঘুম ভাঙবে কবে? by রণেশ মৈত্র
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানা মন্ত্রণালয় বিগত বছরটিতে এই সরকার ক্ষমতায় এসে কী কী প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে তার তালিকা প্রণয়নে ব্যস্ত। তা তারা থাকুন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দল মত যাই হোক না কেন, অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে—এটি তো ছিল সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার
আজও প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই অঙ্গীকারটির কথা জোর গলায় প্রায়ই উচ্চারণ করে থাকেন। কিন্তু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেখা যায়, অঙ্গীকারের ভিত্তিটা দিনে দিনে যেন শিথিল হয়ে আসছে—নড়বড়ে হয়ে আসছে। এই যে নড়বড়ে হয়ে আসা বা শিথিল হয়ে আসা তা কি নিতান্তই অমূলক? তা যে নয়, একটি মাত্র উদাহরণই বিষয়টি প্রমাণের ক্ষেত্রে সম্ভবত যথেষ্ট।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ তারিখে ‘জনকণ্ঠে’ প্রকাশিত তিন কলাম শিরোনামের একটি খবর পাঠক-পাঠিকাদের সামনে উদ্ধৃত করছি, ঘটনাটি তাদের স্মরণে আনার জন্য। ওই তারিখের দৈনিকটির চতুর্থ পৃষ্ঠায় খবরটি যে শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো, ‘ফতুল্লায় সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি।’ খবরটি জনকণ্ঠের নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধি যেভাবে পরিবেশন করেছেন তা হলো :
‘ফতুল্লার পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় সোমবার ভোররাতে ব্যবসায়ী ছয় ভাইয়ের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা বাড়ির লোকজনকে এলোপাতাড়ি ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ২৫ লাখ টাকা, আটটি মোবাইল সেট, ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার ও তিনটি ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে গেছে। ডাকাতদের হামলায় ছয়জন গুরুতর আহত হয়েছে। আশংকাজনক অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে ওই ভোরেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একজনের কাছ থেকে লুণ্ঠিত একটি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়েছে।’
‘জানা গেছে, পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় সরকার ভবনে মৃত মাখন সরকারের ছয় ছেলে পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। একতলা বাড়ির ১২টি কক্ষে ব্যবসায়ী ছয় ভাইয়ের বসবাস। ছয় ভাইয়ের মধ্যে কাজল সরকার, পরিমল সরকার, বাদল সরকার গার্মেন্টের ব্যবসা করেন। খোকন সরকার চীন থেকে শিশুদের খেলনা আমদানি করেন। সুতা ব্যবসায়ে জড়িত অন্য দুই ভাই জীবন সরকার ও রতন সরকার। সোমবার রাত প্রায় তিনটায় ১৫/২০ জন ডাকাত কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তারা বাড়ির লোকজনকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরিমল সরকারের প্রতিবন্ধী মেয়ে তন্বী সরকার (১৬) আতংকে চিত্কার করলে ডাকাতরা তাকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা চালায়। তার অবস্থা আশংকাজনক। এছাড়াও ডাকাতদের হামলায় আহত হয়েছেন পরিমল সরকার (৪৫), খোকন সরকার (৩৮), শুভ সরকার (১৮), কাজল সরকার (৪৮), রেখা রানী সরকার (৪০)। আহত সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
‘ডাকাতরা প্রতিটি ঘরে হানা দেয়। আমলমারি, ওয়ারড্রব, শোকেসের তালা ভেঙে ২৫ লাখ নগদ টাকা, ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৮টি মোবাইল সেট ও তিনটি ডিজিটাল ক্যামেরা লুট করে নিয়ে যায়।’
ঘটনার পরদিন সকালে কাজল সরকার দাবি করেন, তাদের ছয় ভাইয়ের ঘর থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার, ২৫ লাখ টাকা ও অন্যান্য জিনিস ডাকাতরা রাতে লুট করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ফতুল্লা থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। ভোর পৌনে চারটায় ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় চায়ের দোকানে বসে চা পান করার সময় আবদুর রশীদ নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে লামাপাড়া এলাকা থেকে তাহের নামে আর এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়।’
প্রকাশিত খবরের প্রয়োজনীয় অংশ ওইটুকুই। পড়লে যা স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো, ভয়াবহ ওই ডাকাতির লক্ষ্য ছিল যত বেশি সম্ভব টাকা পয়সা, সোনাদানা ও বহনযোগ্য অন্যান্য সম্পদ ওই বাড়ি থেকে নিয়ে যাবে এবং ওই কাজের পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে প্রয়োজনে তাকে বা তাদের খতম করে দিতে দ্বিধা করা হবে না এবং এ লক্ষ্য পূরণে তারা পুরোপুরি সফল যে হয়েছে সংবাদটিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানলাম, ডাকাতরা যাদের গুরুতর আহত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভর্তি হতে বাধ্য করেছিল, তারা সবাই সুস্থ হয়েছেন, বাড়িতে ফিরেও এসেছেন। কিন্তু পুলিশি যে তত্পরতা ঘটনার পরপরই প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল—যার ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দু-দু’জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছিল, তা কি অব্যাহত আছে?
প্রশ্নটি শুধু ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারের নয়, আজীবন সাংবাদিকতা ও রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট থাকার ফলে আমারও। খোঁজ-খবর নিয়ে মোবাইল নং সংগ্রহ করি ফতুল্লা থানার ওসি এবং নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের। প্রসঙ্গত বলে রাখি, যাদের বাড়িতে ডাকাতি হলো, যে সাংবাদিক বন্ধুটি ওই খবর পাঠালেন এবং ফতুল্লা থানার ওসি বা নারায়ণগঞ্জের এসপি কেউই আমার পরিচিতজন নন। আত্মীয়ও নন, যা হোক এক মাসেরও বেশি আগে ওসিকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনাটি সম্পর্কে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় বলেন, আসামীকে গ্রেফতার, লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার এবং উপযুক্ত চার্জশিট, সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে যত দ্রুত সম্ভব হাজির করা হবে। আশ্বস্ত হলাম।
অতঃপর ২/১ দিনের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে ফোন করে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানালে তিনিও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন। আরও নিশ্চিন্ত হলাম। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমার অত্যন্ত পরিচিত, বয়সে কনিষ্ঠ, তবে বহু সভা-মিছিল একসঙ্গে মাত্র তিন বছর আগেও করেছি। এর পরপরই শুনি আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশ্বাসটা বাড়ল।
আসামি ১০/১৫ জন। লুণ্ঠিত মালামাল অনেক। ওসিকে বলেছিলাম, মালামাল উদ্ধার কিন্তু সুবিচারের স্বার্থেই দরকার, যেমন দরকার সব আসামির গ্রেফতার। যা হোক, ডাকাতির ঘটনার প্রায় দু’মাস অতিক্রান্ত হলো। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং ওসিকে বলার পর এক মাস চলে গেল। এর মধ্যে আর কোনো গ্রেফতার বা কোনো মালামাল উদ্ধার নেই। বাধ্য হয়ে গত ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের এসপি সাহেবের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বললেন, পুলিশের তত্পরতা অব্যাহত আছে। তবে ডাকাত দলের সবাই স্থানীয় নয়, আন্তঃজেলা দল বলে মনে হয়। সর্বত্র খোঁজ-খবর করা হচ্ছে। আশা করি সময় লাগলেও পুলিশ সফল হবে। উল্লেখ্য, প্রথম দিনে গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছে এবং সব আসামির নাম-পরিচয়ও জানিয়েছে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই।
পুলিশ সুপারের বক্তব্য বা আশ্বাস দ্রুত কার্যকর না হলে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্তরা অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ডাকাত দলের সাহসও তেমন বাড়বে এবং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থাও তেমনই কমবে।
ফতুল্লার এই পরিবারটিসহ আর কোনো সংখ্যালঘু পরিবার যাতে কোনোভাবে নির্যাতিত না হন—আমি সেটাই চাই এবং এখানেই মামলাটির গুরুত্ব।
আমার আন্তরিক প্রত্যাশা, বিষয়টি নিয়ে আর লিখতে হবে না, ফতুল্লা বা দেশের কোনো থানায় পুলিশকে সন্দেহের চোখেও দেখতে হবে না।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ তারিখে ‘জনকণ্ঠে’ প্রকাশিত তিন কলাম শিরোনামের একটি খবর পাঠক-পাঠিকাদের সামনে উদ্ধৃত করছি, ঘটনাটি তাদের স্মরণে আনার জন্য। ওই তারিখের দৈনিকটির চতুর্থ পৃষ্ঠায় খবরটি যে শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো, ‘ফতুল্লায় সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি।’ খবরটি জনকণ্ঠের নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধি যেভাবে পরিবেশন করেছেন তা হলো :
‘ফতুল্লার পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় সোমবার ভোররাতে ব্যবসায়ী ছয় ভাইয়ের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা বাড়ির লোকজনকে এলোপাতাড়ি ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ২৫ লাখ টাকা, আটটি মোবাইল সেট, ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার ও তিনটি ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে গেছে। ডাকাতদের হামলায় ছয়জন গুরুতর আহত হয়েছে। আশংকাজনক অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে ওই ভোরেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একজনের কাছ থেকে লুণ্ঠিত একটি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়েছে।’
‘জানা গেছে, পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় সরকার ভবনে মৃত মাখন সরকারের ছয় ছেলে পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। একতলা বাড়ির ১২টি কক্ষে ব্যবসায়ী ছয় ভাইয়ের বসবাস। ছয় ভাইয়ের মধ্যে কাজল সরকার, পরিমল সরকার, বাদল সরকার গার্মেন্টের ব্যবসা করেন। খোকন সরকার চীন থেকে শিশুদের খেলনা আমদানি করেন। সুতা ব্যবসায়ে জড়িত অন্য দুই ভাই জীবন সরকার ও রতন সরকার। সোমবার রাত প্রায় তিনটায় ১৫/২০ জন ডাকাত কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তারা বাড়ির লোকজনকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরিমল সরকারের প্রতিবন্ধী মেয়ে তন্বী সরকার (১৬) আতংকে চিত্কার করলে ডাকাতরা তাকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা চালায়। তার অবস্থা আশংকাজনক। এছাড়াও ডাকাতদের হামলায় আহত হয়েছেন পরিমল সরকার (৪৫), খোকন সরকার (৩৮), শুভ সরকার (১৮), কাজল সরকার (৪৮), রেখা রানী সরকার (৪০)। আহত সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
‘ডাকাতরা প্রতিটি ঘরে হানা দেয়। আমলমারি, ওয়ারড্রব, শোকেসের তালা ভেঙে ২৫ লাখ নগদ টাকা, ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৮টি মোবাইল সেট ও তিনটি ডিজিটাল ক্যামেরা লুট করে নিয়ে যায়।’
ঘটনার পরদিন সকালে কাজল সরকার দাবি করেন, তাদের ছয় ভাইয়ের ঘর থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার, ২৫ লাখ টাকা ও অন্যান্য জিনিস ডাকাতরা রাতে লুট করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ফতুল্লা থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। ভোর পৌনে চারটায় ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় চায়ের দোকানে বসে চা পান করার সময় আবদুর রশীদ নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে লামাপাড়া এলাকা থেকে তাহের নামে আর এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়।’
প্রকাশিত খবরের প্রয়োজনীয় অংশ ওইটুকুই। পড়লে যা স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো, ভয়াবহ ওই ডাকাতির লক্ষ্য ছিল যত বেশি সম্ভব টাকা পয়সা, সোনাদানা ও বহনযোগ্য অন্যান্য সম্পদ ওই বাড়ি থেকে নিয়ে যাবে এবং ওই কাজের পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে প্রয়োজনে তাকে বা তাদের খতম করে দিতে দ্বিধা করা হবে না এবং এ লক্ষ্য পূরণে তারা পুরোপুরি সফল যে হয়েছে সংবাদটিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানলাম, ডাকাতরা যাদের গুরুতর আহত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভর্তি হতে বাধ্য করেছিল, তারা সবাই সুস্থ হয়েছেন, বাড়িতে ফিরেও এসেছেন। কিন্তু পুলিশি যে তত্পরতা ঘটনার পরপরই প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল—যার ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দু-দু’জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছিল, তা কি অব্যাহত আছে?
প্রশ্নটি শুধু ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারের নয়, আজীবন সাংবাদিকতা ও রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট থাকার ফলে আমারও। খোঁজ-খবর নিয়ে মোবাইল নং সংগ্রহ করি ফতুল্লা থানার ওসি এবং নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের। প্রসঙ্গত বলে রাখি, যাদের বাড়িতে ডাকাতি হলো, যে সাংবাদিক বন্ধুটি ওই খবর পাঠালেন এবং ফতুল্লা থানার ওসি বা নারায়ণগঞ্জের এসপি কেউই আমার পরিচিতজন নন। আত্মীয়ও নন, যা হোক এক মাসেরও বেশি আগে ওসিকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনাটি সম্পর্কে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় বলেন, আসামীকে গ্রেফতার, লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার এবং উপযুক্ত চার্জশিট, সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে যত দ্রুত সম্ভব হাজির করা হবে। আশ্বস্ত হলাম।
অতঃপর ২/১ দিনের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে ফোন করে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানালে তিনিও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন। আরও নিশ্চিন্ত হলাম। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমার অত্যন্ত পরিচিত, বয়সে কনিষ্ঠ, তবে বহু সভা-মিছিল একসঙ্গে মাত্র তিন বছর আগেও করেছি। এর পরপরই শুনি আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশ্বাসটা বাড়ল।
আসামি ১০/১৫ জন। লুণ্ঠিত মালামাল অনেক। ওসিকে বলেছিলাম, মালামাল উদ্ধার কিন্তু সুবিচারের স্বার্থেই দরকার, যেমন দরকার সব আসামির গ্রেফতার। যা হোক, ডাকাতির ঘটনার প্রায় দু’মাস অতিক্রান্ত হলো। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং ওসিকে বলার পর এক মাস চলে গেল। এর মধ্যে আর কোনো গ্রেফতার বা কোনো মালামাল উদ্ধার নেই। বাধ্য হয়ে গত ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের এসপি সাহেবের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বললেন, পুলিশের তত্পরতা অব্যাহত আছে। তবে ডাকাত দলের সবাই স্থানীয় নয়, আন্তঃজেলা দল বলে মনে হয়। সর্বত্র খোঁজ-খবর করা হচ্ছে। আশা করি সময় লাগলেও পুলিশ সফল হবে। উল্লেখ্য, প্রথম দিনে গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছে এবং সব আসামির নাম-পরিচয়ও জানিয়েছে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই।
পুলিশ সুপারের বক্তব্য বা আশ্বাস দ্রুত কার্যকর না হলে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্তরা অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ডাকাত দলের সাহসও তেমন বাড়বে এবং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থাও তেমনই কমবে।
ফতুল্লার এই পরিবারটিসহ আর কোনো সংখ্যালঘু পরিবার যাতে কোনোভাবে নির্যাতিত না হন—আমি সেটাই চাই এবং এখানেই মামলাটির গুরুত্ব।
আমার আন্তরিক প্রত্যাশা, বিষয়টি নিয়ে আর লিখতে হবে না, ফতুল্লা বা দেশের কোনো থানায় পুলিশকে সন্দেহের চোখেও দেখতে হবে না।
No comments