আমার বন্ধু কবি হাসান হাফিজ by ইমদাদুল হক মিলন
কবি হাসান হাফিজকে নিয়ে বলতে হলে নিজের কথাও অনেকখানি বলতে হয়। ১৯৭৩ সালের কথা। প্রথম হাসান হাফিজকে দেখি অবজারভার ভবনে। ওই ভবন থেকে বের হতো দৈনিক পূর্বদেশ। পূর্বদেশের ছোটদের পাতা 'চাঁদের হাট'। সেখানে জীবনের প্রথম লেখাটি ছাপা হয়েছে আমার। কিশোর গল্প। নাম 'বন্ধু'। গল্প প্রকাশের কয়েক দিন পর চাঁদের হাটের পাতায় দেখলাম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে পূর্বদেশ অফিসে।
আয়োজক চাঁদের হাট পাতার যিনি সম্পাদক তিনি। পরে তাঁর নাম জেনেছি রফিকুল হক। দাদুভাই নামে যিনি পরিচিত এবং বিখ্যাত ছড়াকার। তিনি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চাঁদের হাটে যাঁরা নিয়মিত লেখালেখি করে সদ্য কৈশোর পেরোনো কিছু ছেলেমেয়ে তাদের নিয়ে একটি সাহিত্যের অনুষ্ঠান করবেন। গেণ্ডারিয়া থেকে আমিও গেছি। 'বন্ধু' গল্পের সুবাদে সেই অনুষ্ঠানে আমি পেয়ে গেলাম পরবর্তী জীবনের অনেক প্রিয় বন্ধুকে। যেমন_ফরিদুর রেজা সাগর, আফজাল হোসেন, আবদুর রহমান, সাইফুল আলম, শাহানা বেগম, শুশুমণি, মুনা মালতি, একটু সিনিয়র আলী ইমাম, সিরাজুল ইসলাম, ফিউরি খোন্দকার; পরবর্তী সময়ে দিদারুল আলম, খন্দকার আলমগির, শাহ আলমগির।
ওই অনুষ্ঠানেই পরিচয় হয়েছিল হাসান হাফিজের সঙ্গে। তখন তাঁর অন্য একটা নাম ছিল। সেই নামটা আমি আর এখন বলতে চাই না। হাসান হাফিজ নামের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে সেই নাম।
হাসান হাফিজ তখন ছড়া কবিতা লেখেন, ছোটদের জন্য লেখেন রূপকথা। হাতের লেখা মুক্তার মতো। একটু উচ্চৈঃস্বরে কথা বলার স্বভাব। যেখানে থাকেন, সেই জায়গা গরম করে রাখেন। এখনো সেই স্বভাব অনেকখানি রয়ে গেছে তাঁর।
পরবর্তী জীবনে হাসান হাফিজ কবি হয়ে উঠলেন। চমৎকার কবিতা লেখেন। বাংলা ভাষাটা খুব ভালো জানেন। বাংলা বানানের মাস্টার। এত দিন লেখালেখির বয়স হয়ে গেল, তার পরও আমার নিজের বহু বানান ভুল হয়। লিখতে বসে কোথাও আটকে গেলে হাসান হাফিজকে ফোন করি। বন্ধু, অমুক বানানটা বলো তো।
সঙ্গে সঙ্গে সঠিক বানানটা পেয়ে যাই।
পেশায় হাসান হাফিজ সাংবাদিক। সাংবাদিকতার কাজে দেশ-বিদেশ চষে বেড়ান। কিন্তু অন্তরজুড়ে তাঁর কবিতা। আপাদমস্তক কবিতায় মত্ত হয়ে আছেন। ফাঁকে সম্পাদনা করছেন নানা ধরনের বই। সবই প্রায় ছোটদের জন্য। রূপকথা লিখেছেন অনেক। বিদেশের রূপকথা অনুবাদ করেছেন অনেক। বাংলা একাডেমী বইমেলায় প্রতিবছরই প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর নানা ধরনের বই। কবিতাসমগ্রই তো বোধ হয় বেরিয়ে গেছে তিন খণ্ড। ম্যারাডোনাকে নিয়ে তাঁর একটি বই আছে, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আছে একটি সম্পাদিত গ্রন্থ। এ রকম বহু কাজ তাঁর।
হাসান হাফিজকে নিয়ে একটি স্মৃতির কথা বলি। বহু বছর আগের কথা। মুন্সীগঞ্জে সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে। আমরা দুজনই তখন একেবারে তরুণ। একজন কবি হিসেবে, আরেকজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে সামান্য পরিচিত। ওই সাহিত্য সম্মেলনে আমরা দুজনই দাওয়াত পেয়েছি। দিনভর সাহিত্য সম্মেলন হলো। কবিতাপাঠ শুরু হলো সন্ধ্যায়। তখন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে হয় লঞ্চে করে। অনেক রাত হয়ে গেছে। লঞ্চ নেই। মুন্সীগঞ্জেই থেকে যেতে হলো আমাদের। হাসান হাফিজের পরিচিত একজনের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হলো। খাওয়াদাওয়ার পর ছোট্ট একটা ঘরে চৌকির ওপর শোয়ার ব্যবস্থা হলো। দুই বন্ধু শুয়ে পড়লাম। শোয়ার পর তিরিশ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট, হাসান হাফিজ গভীর ঘুমে ডুবে গেলেন। ঘুমন্ত মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস কিঞ্চিৎ ভারী হয়। ও রকম শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি।
আমি হতভম্ব! এত তাড়াতাড়ি, এইভাবে অচেনা এক বাড়ির বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া যায়! আমি সারা রাত উসখুস করলাম, হাসান হাফিজ একটানা ঘুমালেন।
এখনো তাঁর সেই ঘুমের কথা আমার মনে পড়ে।
এ বছর হাসান হাফিজের বয়স হলো ছাপ্পান্ন। বয়স হলে মানুষের ঘুম কমে আসে। জানি না, হাসান হাফিজের ঘুম কমেছে কি না। যদি সেই আগের মতো ঘুম তিনি ঘুমাতে পারেন, তাহলে তাঁর মতো সুখী মানুষ আর কে আছে!
হৃদয় ভর্তি কবিতা, আর চোখ ভর্তি ঘুম নিয়ে প্রিয় বন্ধু হাসান হাফিজ, তুমি আরো ছাপ্পান্ন বছর বেঁচে থাকো_তোমার জন্মদিনে এই আমার শুভেচ্ছা।
ওই অনুষ্ঠানেই পরিচয় হয়েছিল হাসান হাফিজের সঙ্গে। তখন তাঁর অন্য একটা নাম ছিল। সেই নামটা আমি আর এখন বলতে চাই না। হাসান হাফিজ নামের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে সেই নাম।
হাসান হাফিজ তখন ছড়া কবিতা লেখেন, ছোটদের জন্য লেখেন রূপকথা। হাতের লেখা মুক্তার মতো। একটু উচ্চৈঃস্বরে কথা বলার স্বভাব। যেখানে থাকেন, সেই জায়গা গরম করে রাখেন। এখনো সেই স্বভাব অনেকখানি রয়ে গেছে তাঁর।
পরবর্তী জীবনে হাসান হাফিজ কবি হয়ে উঠলেন। চমৎকার কবিতা লেখেন। বাংলা ভাষাটা খুব ভালো জানেন। বাংলা বানানের মাস্টার। এত দিন লেখালেখির বয়স হয়ে গেল, তার পরও আমার নিজের বহু বানান ভুল হয়। লিখতে বসে কোথাও আটকে গেলে হাসান হাফিজকে ফোন করি। বন্ধু, অমুক বানানটা বলো তো।
সঙ্গে সঙ্গে সঠিক বানানটা পেয়ে যাই।
পেশায় হাসান হাফিজ সাংবাদিক। সাংবাদিকতার কাজে দেশ-বিদেশ চষে বেড়ান। কিন্তু অন্তরজুড়ে তাঁর কবিতা। আপাদমস্তক কবিতায় মত্ত হয়ে আছেন। ফাঁকে সম্পাদনা করছেন নানা ধরনের বই। সবই প্রায় ছোটদের জন্য। রূপকথা লিখেছেন অনেক। বিদেশের রূপকথা অনুবাদ করেছেন অনেক। বাংলা একাডেমী বইমেলায় প্রতিবছরই প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর নানা ধরনের বই। কবিতাসমগ্রই তো বোধ হয় বেরিয়ে গেছে তিন খণ্ড। ম্যারাডোনাকে নিয়ে তাঁর একটি বই আছে, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আছে একটি সম্পাদিত গ্রন্থ। এ রকম বহু কাজ তাঁর।
হাসান হাফিজকে নিয়ে একটি স্মৃতির কথা বলি। বহু বছর আগের কথা। মুন্সীগঞ্জে সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে। আমরা দুজনই তখন একেবারে তরুণ। একজন কবি হিসেবে, আরেকজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে সামান্য পরিচিত। ওই সাহিত্য সম্মেলনে আমরা দুজনই দাওয়াত পেয়েছি। দিনভর সাহিত্য সম্মেলন হলো। কবিতাপাঠ শুরু হলো সন্ধ্যায়। তখন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে হয় লঞ্চে করে। অনেক রাত হয়ে গেছে। লঞ্চ নেই। মুন্সীগঞ্জেই থেকে যেতে হলো আমাদের। হাসান হাফিজের পরিচিত একজনের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হলো। খাওয়াদাওয়ার পর ছোট্ট একটা ঘরে চৌকির ওপর শোয়ার ব্যবস্থা হলো। দুই বন্ধু শুয়ে পড়লাম। শোয়ার পর তিরিশ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট, হাসান হাফিজ গভীর ঘুমে ডুবে গেলেন। ঘুমন্ত মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস কিঞ্চিৎ ভারী হয়। ও রকম শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি।
আমি হতভম্ব! এত তাড়াতাড়ি, এইভাবে অচেনা এক বাড়ির বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া যায়! আমি সারা রাত উসখুস করলাম, হাসান হাফিজ একটানা ঘুমালেন।
এখনো তাঁর সেই ঘুমের কথা আমার মনে পড়ে।
এ বছর হাসান হাফিজের বয়স হলো ছাপ্পান্ন। বয়স হলে মানুষের ঘুম কমে আসে। জানি না, হাসান হাফিজের ঘুম কমেছে কি না। যদি সেই আগের মতো ঘুম তিনি ঘুমাতে পারেন, তাহলে তাঁর মতো সুখী মানুষ আর কে আছে!
হৃদয় ভর্তি কবিতা, আর চোখ ভর্তি ঘুম নিয়ে প্রিয় বন্ধু হাসান হাফিজ, তুমি আরো ছাপ্পান্ন বছর বেঁচে থাকো_তোমার জন্মদিনে এই আমার শুভেচ্ছা।
No comments