শীতে ত্বকের পরিচর্যা
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে বায়ুম-ল ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। এই শুয়ে নেয়ার কারণে ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফেটে যেতে থাকে। আমাদের দেহের ৫৭ শতাংশই হলো পানি। আর এর মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে ১ ভাগ।
ফলে ত্বক থেকে পানি বেরিয়ে গেলে ত্বক দুর্বল আর অসহায় হয়ে পড়ে। ত্বকের যে সব গ্রন্থি থেকে তৈল আর পানি বের হয়ে থাকে তা আর আগের মতো ঘর্ম বা তৈল কোনটাই তৈরি করতে পারে না। ফলে ত্বক আরও শুকিয়ে যেতে থাকে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমাদের ত্বকে থাকে ঘর্মগ্রন্থি, থাকে তৈলগ্রন্থি যেখান থেকে অনবরত তেল আর ঘাম বের হতে থাকে। এই ঘাম আর তেল মিলে দেহের ওপর একটি মিশ্রণ বা আবরণী তৈরি করে যা দেহকে শীতল করে রাখে এবং ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে ও ত্বকের ফাটা ভাব প্রতিরোধ করে। শীত এলে ত্বক ছাড়াও সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ঠোঁট নিয়ে। কম-বেশি ঠোঁট ফাটা সকলেরই হয়। সেক্ষেত্রে তৈলাক্ত প্রলেপ ঠোঁটে ব্যবহার করে ঠোঁট ভাল রাখা যায়। তবে মনে রাখতে হবে জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো কখনও উচিত নয়। এতে ঠোঁট ফাটা আরও বেড়ে যেতে পারে। আর একশ্রেণীর লোকের এই শীত এলেই পা ফাটার প্রবণতা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এক্রোফ্লেভিন দ্রবণে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পা শুকিয়ে যাওয়া মাত্র ভেসলিন মেখে দিন। এছাড়াও গ্লিসারিন ও পানির দ্রবণ পায়ে মাখলে পায়ের ফাটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পায়ের ফাটা কম হলে অলিভ ওয়েল বা নারিকেল তৈল ব্যবহারেও ভাল ফল পাওয়া যায়। তবে এখন বাজারে অনেক রকমের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। এটা আসলে তৈল আর পানির একটি মিশ্রণ। এতে থাকে ত্বক কোমলকারী পদার্থ যেমন পেট্রোলিয়াম, ভেজিটেবল ওয়েল, ল্যানোলিন, সিলিকন, লিকুয়িড, প্যারাফিন, গ্লিসারিন, প্লাইকল ইত্যাদি।এখন শীতকালে বাড়ে এমন একটি রোগের বিষয় কিছুটা আলোচনা করা যাক। রোগটির নাম হচ্ছে ইক্থায়োসিস। ইক্থায়োসিস আবার বিভিন্ন ধরনের আছে, তবে আমরা তার সবগুলোতে না গিয়ে শুধু ইক্থায়োসিস ভ্যালগারিস নিয়ে কিছুটা আলোচনা করব। এটি একটি জন্মগত রোগ এবং রোগটি শিশুকাল থেকেই লক্ষ করা যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি হাজারে অন্তত একজন এ রোগে ভুগে থাকে। নারী-পুরুষের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সমপরিমাণ। এ রোগে যারা আক্রান্ত হয় তাদের হাত ও পায়ের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট মরা চামড়া বা আঁইশ পায়ের সামনের অংশের বা হাতের চামড়ায় লক্ষণীয়ভাবে ফুটে উঠতে দেখা যায়। তবে হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থান থাকবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তাদের কাছে প্রশ্ন রাখলে তারাই বলবে যে, এ রোগটি তাদের দেহে ছোটবেলা থেকেই আছে। এদের ক্ষেত্রে শীলকাল এলেই প্রতিবছর এর ব্যাপকতা বেড়ে যায়। এদের হাত বা পায়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, হাতের রেখাগুলো খুবই স্পষ্ট এবং মোটা- যা কিনা সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। এরই সঙ্গে তাদের থাকে এ্যালার্জিক সমস্যা। তাদের কাছে প্রশ্ন করলে তারাই বলবে যে, তাদের প্রায়শই নাক দিয়ে পনি পড়া অর্থাৎ সর্দি সর্দি ভাব থাকবে। তাদের পারিবারিক ইতিহাস খুঁজলে আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে যে, তাদের পরিবারে এ্যালার্জিক সমস্যা ছিল বা এখনও আছে। এ রোগটি একেবারে কখনই ভাল হয় না। তবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
শীত এলেই বেশি বেশি করে তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ত্বক ভাল থাকে এবং ফাটা ভাব পরিস্ফুট হয় না। তবে যাদের ফাটা অবস্থা খুব বেশি তাদের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি এ্যাসিড মাখলে খুবই ভাল ফল পাওয়া যায়। আর এটি পেতে যদি অসুবিধা হয় তাহলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে খুবই ভাল ফল পাওয়া যায়।
ডা. দিদারুল আহসান
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
আল-রাজি হাসপাতাল
ফোন : ০১৭১৫৬১৬২০০
No comments