হতে চাই রেডিও জকি by ইমরান হোসেন
শুক্রবার রাত বারোটা বাজতে না বাজতেই কলেজপড়ুয়া অন্তুর কানে উঠে গিয়েছে মোবাইলের এয়ারফোন। কারণ একটু পরেই শুরু হবে রেডিও ফুর্তির ‘ভুত এফ এম’। রুমের মধ্যে লাইট নিভিয়ে এফএম রেডিওর এই অনুষ্ঠান শোনাটা অন্তুর এক প্রিয় শখ।
শুধু অন্তুই নয়, এ রকম হাজার হাজার তরুণের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এফএম রেডিও। ঘরে কিংবা বাইরে, গাড়িতে অথবা পথ চলতে চলতে মোবাইল ফোনে এফএম রেডিওতে পছন্দের গান শোনাটা তরুণদের কাছে এখন এক দারুণ ক্রেজ। তবে এই এফএম রেডিও শোনার প্রবণতার ব্যাপারটা টিনএজারদের মধ্যেই বেশি লক্ষ্য করা যায়।এসব রেডিও অনুষ্ঠানের সঞ্চালকদের আরজে বা রেডিও জকি বলা হয়। তরুণদের কাছে এই আরজেরা দারুণ জনপ্রিয়। নির্দিষ্ট সময়ে নানান অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হন এসব আরজে। পছন্দের গান, কথা আর আড্ডাবাজি নিয়ে মাতিয়ে তোলেন শ্রোতাদের। আমাদের দেশের এফএম রেডিওর সংস্কৃতি অবশ্য খুব পুরনো নয়। যদিও সারা পৃথিবীতে অনেক আগে থেকেই চলে আসছে এমএম রেডিও। বাংলাদেশের প্রথম এফএম রেডিও রেডিও টুডে। এরপর একের পর এক আসতে শুরু করে বেশ কয়েকটা স্টেশন। সম্প্রতি সংযোজন হচ্ছে এইচডি রেডিও স্টেশন।
দিন দিন উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি আর এর ঢেউ এসে পড়ছে রেডিওতে। আমাদের দেশে রেডিও শোনার সংস্কৃতি কিন্তু বেশ পুরনো। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তথা রেডিওর রয়েছে দারুণ এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। অবশ্য বর্তমান সময়ে এসে শহরের তরুণরা দারুণভাবে আকৃষ্ট হয়েছে এফএম-এর প্রতি। এফএম রেডিও তাদের এ দিকে ফিরিয়ে এনেছে বলা চলে। দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে রেডিও অবদান অসামান্য।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব স্টেশনে আরজে হিসেবে কাজ করছেন এই তরুণ প্রজন্মই। অনেকেই আবার পড়াশোনার পাশাপাশি করছেন আরজের চাকরি। অনেক শ্রোতাই নিজেদের আরজে হিসেবে দেখতে চান। এই পেশায় রয়েছে তারকা খ্যাতির হাতছানি। এক কথায় অনেক তরুণের এখন স্বপ্নই আরজে হওয়া; যেমন আর দশটা তরুণ স্বপ্ন দেখেন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিংবা সাংবাদিক হওয়ার।
বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি এফএম রেডিও স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে এবিসি রেডিও, রেডিও টুডে, রেডিও আমার, রেডিও ফুর্তি, পিপলস রেডিও, ঢাকা এফএম অন্যতম। এছাড়াও কিছু এফএম রেডিও তাদের কার্যক্রম চালু করার লাইসেন্স পেয়েছে এবং অন এয়ারের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এফএম-এর পাশাপাশি এখন কিছু অনলাইন রেডিও যুক্ত হয়েছে এই কাতারে। খুবই স্বল্প খরচে এসব অনলাইন রেডিও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বিধায় তরুণর্ওা ঝুঁকছে এসব অনলাইন রেডিও প্রতিষ্ঠা করতে। অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এসব স্টেশনে নিয়মিত প্রচার করা হয় সংবাদ এবং ট্রাফিক আপডেট।
আরজে প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে রয়েছে জবস এ ওয়ান, রেডিও টুডে, মিডিয়া একাডেমী, বিজেমসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। আরজে হিসেবে নিয়োগের পরে সব রেডিও স্টেশনই তাদের নতুন নিয়োগকৃত আরজেদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব ট্রেনিংয়ে সিনিয়র আরজেরাই ক্লাস নিয়ে থাকেন। এখানে রেডিও অনুষ্ঠান উপস্থাপনার নানা নান্দনিক এবং টেকনিক্যাল দিক তুলে ধরা হয়।
তবে যেকোন পেশার জন্যই প্রয়োজন প্রস্তুতি। আপনি যদি আগে থেকেই একটু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপনি অন্যের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন একটু বেশিই। আরজে হওয়ার জন্য অবশ্যই শুদ্ধ উচ্চারণ এবং সুন্দর উপস্থাপনা কৌশল জানতে হয়। সেই সঙ্গে থাকতে হবে নান্দনিকতা বোধ, সেন্স অব হিউমার। অবশ্যই মিউজিকের ওপর কিছুটা ধারণা থাকতে হবে।
সাধারণত দুই থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী ক’টি অনুষ্ঠান করে থাকেন একেক জন আরজে। অনুষ্ঠানের আগে এবং পরে দুই ঘণ্টা তাদেরকে অনুষ্ঠানের জন্য স্ক্রিপ্ট এবং অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে হয়।
রেডিও আমার-এ আরজে হিসেবে কাজ করছেন আরজে মেঘলা। লাভ গুরুকে সঙ্গে নিয়ে ‘আমার ভালোবাসার গল্প’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে দর্শকরা স্টুডিওতে এসে জানান তাদের ভালোবাসার গল্প। দারুণ জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানের আরজে মেঘলা জানালেন, ‘আরজে হতে হলে অবশ্যই প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব থাকতে হবে। তাৎক্ষণিক যে কোন বিষয় নিয়ে কথা বলার দক্ষতা একজন আরজেকে অনেকদূর নিয়ে যায়। একজন শ্রোতা যখন আমাদের অনুষ্ঠান শোনেন এবং আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠান নিয়ে ফিডব্যাক দেন সেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের সময়।’
তবে আমাদের এই ক্রমবর্ধমান এফএম রেডিও ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত দক্ষ লোকবল। তরুণদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামীদিনের জনপ্রিয় তারকা আরজে। সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সময় এখনই। প্রতিযোগিতা দৌড়ে এগিয়ে থাকতে প্রস্তুতির বিকল্প নেই। অতএব, আর বিলম্ব নয়!
No comments