স্বপ্নের সোনার বাংলা
আমরা যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম; এতকাল পরে যেন সেই স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। অনেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের এ বিস্ময়কর সাফল্যের স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বিখ্যাত বিদেশী পত্রিকা থেকে।গত বুধবার ব্রিটেনের প্রভাবশালী ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। পত্রিকাটির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ল্যারি এলিয়েটের ‘নিউওয়েব ইকোনমিস গোয়িং ফর গ্রোথ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সময় বিশ্বব্যাপী যে দেশগুলোকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অভিহিত করা হতো, তারা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। জানা গেছে, ২০১৩ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসাবে এই দেশগুলো বিশ্বে শীর্ষ ২০-এর মধ্যে থাকবে। উল্লেখ্য, এক দশকেরও বেশি সময় আগে গোল্ডম্যান স্যাসের জিম ও’নেইল উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশসমূহের ছোট্ট একটি তালিকা তৈরি করেন। এতে ছিল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের নাম। ইংরেজীতে দেশগুলোর নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে তিনি দেশগুলোকে অভিহিত করেন ‘ব্রিক’ নামে। পরবর্তীকালে এতে যোগ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার নাম। তখন এর সংক্ষিপ্ত রূপ হয় ‘ব্রিকস’। ‘ব্রিকস’-এর উত্তরসূরি হিসেবে ১১টি সম্ভাব্য নব্য অর্থনৈতিক শক্তির তালিকা তৈরি করেছেন ও’নেইল। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, তুরস্ক ও ভিয়েতনাম।
বিশ্বের ১১টি সম্ভাব্য নব্য অর্থনৈতিক শক্তির তালিকায় বাংলাদেশের নাম দেখে কেউ কেউ হয়ত অবাক হতে পারেন। কিন্তু গার্ডিয়ান পত্রিকার পক্ষ থেকে অনেক ভেবেচিন্তে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে অনেক গবেষণা, অনেক হিসাবনিকাশ। আসলে বাংলাদেশে যেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক সমস্যা রয়েছে; তার চেয়েও বেশি রয়েছে অর্থনীতি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। বিশ্বের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের এই উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। গত দু’তিন দশক ধরে বাংলাদেশে কৃষি, শিক্ষা ও শিল্প খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি জোরদার। উন্নত শস্যবীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি শস্য উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশের কিছু কৃষিপণ্য বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। এখানে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ এখন লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে; নারী ও পুরুষ সবাই স্বনির্ভরতার মন্ত্রে উজ্জীবিত। দেশে অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্ত মধ্যে নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাই দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে। অপরদিকে রফতানিমুখী পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে চীনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘিরে যে সম্ভাবনার উজ্জ্বল আলো দেখা যাচ্ছে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসী বাঙালীদের পাঠানো অর্থ। বাংলাদেশসহ যে ১১টি সম্ভাব্য নব্য অর্থনৈতিক শক্তির কথা বলা হয়েছে, এদের বেশিরভাগই ছিল এক সময় পশ্চিমা দেশগুলোর উপনিবেশ। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে যে মুহূর্তে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মন্দা ও দুরবস্থা; সেই মুহূর্তে এই দেশগুলোতে সমৃদ্ধির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হবে, সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না আমাদের সামান্য ভুলে দেশের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। তাই আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নেই। আমাদের উন্নয়নের শত্রু ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও হুঁশিয়ার থাকতে হবে। আমাদের স্বপ্নের স্বনির্ভর সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হোক এটাই সবার প্রত্যাশা।
No comments