চরাচর-মহারাস উৎসব by আবদুল হামিদ মাহবুব
বাংলাদেশে সর্বাধিক মণিপুরীর বাস মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, ইসলাম ও মাধবপুর ইউনিয়নে। মণিপুরী সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসবের নাম রাস উৎসব।
এ উৎসব সামনে রেখে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যে এখন অন্য রকম আমেজ। মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া- দুই মতাবলম্বীর মণিপুরী সম্প্রদায় রাস উৎসব উদ্যাপন করে ভিন্নভাবে। এই এলাকার রাসলীলার বড় অনুষ্ঠান হয় মণিপুরী সেবা সংঘের আয়োজনে মাধবপুর ইউনিয়নের জোড়ামণ্ডপ শিববাজার প্রাঙ্গণে। অন্যটি অনুষ্ঠিত হয় আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও গ্রামে।
রস শব্দ থেকেই রাস-এর উৎপত্তি। রস আস্বাদনের জন্য রাধা-কৃষ্ণের লীলানুকরণে নৃত্যগীতের মাধ্যমে যে উৎসব উদ্যাপন করা হয়, সেটাই রাস উৎসব। রাসলীলা দুই ভাগে বিভক্ত : গোষ্ঠলীলা ও রাসলীলা। গোষ্ঠলীলায় কৃষ্ণের বাল্যকালে মাঠে মাঠে বাঁশি বাজিয়ে ধেনু চরানোর মুহূর্তগুলো অনুকরণ করা হয়। গোষ্ঠলীলাকে রাখালনৃত্য বলা হয়। রাসলীলায় অভিনীত হয় গোপীনৃত্য। গোপীদের নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলাই এই পর্বে অভিনীত হয়।
হাজার হাজার বছর আগে শ্রীবৃন্দাবনে রাসলীলার আবির্ভাব হলেও মণিপুরে এর প্রচলন হয় ২৫৮ বছর আগে। মণিপুর রাজ্যের মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের শাসনকালে রাসলীলার প্রচলন হয়।
১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে মণিপুরের মহারাজা স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রবর্তন করেছিলেন, সেটাই রাসনৃত্য। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে কমলগঞ্জে উদ্যাপিত হয়ে আসছে মহারাস পূর্ণিমা। মণিপুরী অধ্যুষিত কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, মাধবপুরসহ অন্যান্য ইউনিয়নে বসবাসরত মণিপুরীদের মধ্যে আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই উৎসবের সাড়া পড়ে যায়। তাদের সঙ্গে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকও আনন্দে মেতে ওঠে এ উৎসবে। দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরীসহ জাতিধর্ম-নির্বিশেষে অনেকেই ছুটে আসে মহারাসলীলা উপভোগ করতে। মণিপুরী নৃত্যকলা শুধু কমলগঞ্জে নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা সারা বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। ১৯২৬ সালে সিলেটের মাছিমপুরে মণিপুরী মেয়েদের পরিবেশিত রাসনৃত্য উপভোগ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরে কবিগুরু কমলগঞ্জের নৃত্য শিক্ষক নীলেশ্বর মুখার্জিকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে প্রবর্তন করেছিলেন মণিপুরী নৃত্য শিক্ষা। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে রাতের বেলায় রাস উৎসব হয়ে ওঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
রাখালনৃত্য দিনের বেলায় অর্থাৎ সূর্যাস্তের আগেই অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবের দিন শিশুশিল্পীরা রাখাল সাজে সজ্জিত হয়ে একটি মাঠে সমবেত হয়। এদের পরনে থাকে ধুতি, মাথায় ময়ূরপালকের মুকুট, কপালে চন্দনের তিলক, গলায় সোনার মালা, হাতে বাঁশি ও পায়ে নূপুর। বাঁশি হাতে বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করতে করতে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন অনুকরণে একজন শিশুশিল্পী মাঠে প্রবেশ করে।
রাস উৎসবে বিশাল এলাকাজুড়ে বসে মেলা। কৃষি সরঞ্জাম, মাটির তৈরি সামগ্রী, ঘরকন্নার সামগ্রীসহ নানা দ্রব্যের পসরা নিয়ে বসে বিক্রেতারা। সারা রাত ধরে চলে মেলা। মেলায় মণিপুরীদের তৈরি সামগ্রীর দোকানগুলোতে থাকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধক, বৈষ্ণব, পর্যটকসহ জাতিধর্ম-নির্বিশেষে ছুটে আসা মানুষের উপস্থিতিতে রাসের পুরো রাত থাকে জমজমাট।
আবদুল হামিদ মাহবুব
রস শব্দ থেকেই রাস-এর উৎপত্তি। রস আস্বাদনের জন্য রাধা-কৃষ্ণের লীলানুকরণে নৃত্যগীতের মাধ্যমে যে উৎসব উদ্যাপন করা হয়, সেটাই রাস উৎসব। রাসলীলা দুই ভাগে বিভক্ত : গোষ্ঠলীলা ও রাসলীলা। গোষ্ঠলীলায় কৃষ্ণের বাল্যকালে মাঠে মাঠে বাঁশি বাজিয়ে ধেনু চরানোর মুহূর্তগুলো অনুকরণ করা হয়। গোষ্ঠলীলাকে রাখালনৃত্য বলা হয়। রাসলীলায় অভিনীত হয় গোপীনৃত্য। গোপীদের নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলাই এই পর্বে অভিনীত হয়।
হাজার হাজার বছর আগে শ্রীবৃন্দাবনে রাসলীলার আবির্ভাব হলেও মণিপুরে এর প্রচলন হয় ২৫৮ বছর আগে। মণিপুর রাজ্যের মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের শাসনকালে রাসলীলার প্রচলন হয়।
১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে মণিপুরের মহারাজা স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রবর্তন করেছিলেন, সেটাই রাসনৃত্য। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে কমলগঞ্জে উদ্যাপিত হয়ে আসছে মহারাস পূর্ণিমা। মণিপুরী অধ্যুষিত কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, মাধবপুরসহ অন্যান্য ইউনিয়নে বসবাসরত মণিপুরীদের মধ্যে আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই উৎসবের সাড়া পড়ে যায়। তাদের সঙ্গে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকও আনন্দে মেতে ওঠে এ উৎসবে। দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরীসহ জাতিধর্ম-নির্বিশেষে অনেকেই ছুটে আসে মহারাসলীলা উপভোগ করতে। মণিপুরী নৃত্যকলা শুধু কমলগঞ্জে নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা সারা বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। ১৯২৬ সালে সিলেটের মাছিমপুরে মণিপুরী মেয়েদের পরিবেশিত রাসনৃত্য উপভোগ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরে কবিগুরু কমলগঞ্জের নৃত্য শিক্ষক নীলেশ্বর মুখার্জিকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে প্রবর্তন করেছিলেন মণিপুরী নৃত্য শিক্ষা। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে রাতের বেলায় রাস উৎসব হয়ে ওঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
রাখালনৃত্য দিনের বেলায় অর্থাৎ সূর্যাস্তের আগেই অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবের দিন শিশুশিল্পীরা রাখাল সাজে সজ্জিত হয়ে একটি মাঠে সমবেত হয়। এদের পরনে থাকে ধুতি, মাথায় ময়ূরপালকের মুকুট, কপালে চন্দনের তিলক, গলায় সোনার মালা, হাতে বাঁশি ও পায়ে নূপুর। বাঁশি হাতে বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করতে করতে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন অনুকরণে একজন শিশুশিল্পী মাঠে প্রবেশ করে।
রাস উৎসবে বিশাল এলাকাজুড়ে বসে মেলা। কৃষি সরঞ্জাম, মাটির তৈরি সামগ্রী, ঘরকন্নার সামগ্রীসহ নানা দ্রব্যের পসরা নিয়ে বসে বিক্রেতারা। সারা রাত ধরে চলে মেলা। মেলায় মণিপুরীদের তৈরি সামগ্রীর দোকানগুলোতে থাকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধক, বৈষ্ণব, পর্যটকসহ জাতিধর্ম-নির্বিশেষে ছুটে আসা মানুষের উপস্থিতিতে রাসের পুরো রাত থাকে জমজমাট।
আবদুল হামিদ মাহবুব
No comments