ট্রাইব্যুনালকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দিন- ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বান
যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে রক্ষা করতে হলে গোটা ট্রাইব্যুনালকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
তারা বলেন, ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। নিরাপত্তা জোরদার করা না হলে যে কোন সময় আর বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্ত্রীদের অতিকথন বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার সংগঠনের এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহারিয়ার কবির বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে, টাইব্যুনালের প্রতিটি কক্ষ ও করিডোর সিসিটিভি ক্যামেরা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গোয়েন্দা নজরদারির অধীনে থাকলে চেয়ারম্যান বা অন্য কারও পক্ষে কম্পিউটারের হ্যাকিং বা টেলিযোগাযোগের রেকর্ড বাইরে পাচার করা কারও পক্ষে সম্ভব হতো না। সংগঠনের সহসভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রীরা একের পর যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের আগেই তারা রায় প্রদান করছে। মন্ত্রীদের এই অতিকথন বিচার প্রক্রিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এর থেকে মন্ত্রীদের বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত একের পর এক ষড়যন্ত্র করলেও এক্ষেত্রে সরকার নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করছে। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে প্রকট।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে রক্ষার জন্য পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয় অবিলম্বে জামায়াতী ইসলামের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও তাদের অস্ত্র এবং অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠন ও বাহিনী হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আল শামসদের বিচার করতে হবে। রাজনীতি নিষিদ্ধ ও তাদের বিচার করা না হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন নস্যাৎ হয়ে যাবে। কালক্রমে বাংলাদেশ পরিণত হবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো সন্ত্রাসী ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে।
এসব দাবির মধ্যে আরও রয়েছে কাক্সিক্ষত সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হলে গোটা ট্রাইব্যুনাল এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তার নিñিদ্র চাদরে ঢেকে দিতে হবে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে আরও দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। সুপ্রীমকোর্টের প্রবীণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা ম-লী গঠন করতে হবে। সরকার পরিবর্তন হলেও যাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য সংসদে আইন পাস করে মানবতাবিরোধী বিচার ট্রাইব্যুনালকে একটি স্থায়ী এবং প্রশাসনিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, কম্পিউটারে হ্যাকিং, টেলিফোনে আড়িপাতা, ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করে তথ্য চুরি, পাচার ও প্রকাশের জন্য আইনী বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে হবে। আমার দেশে প্রকাশিত স্কাইপি হ্যাকিং সম্পর্কে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, যারা ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের কম্পিউটারের তথ্য চুরি করেছে কাল তারা জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাসমূহ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কম্পিউটারে হামলা চালাতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহারিয়ার কবির বলেন, ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা বলতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে বিচারক, আইনজীবী বা কয়েকজন কর্মকর্তার জন্য নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করা। কিন্তু ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে বার বার ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় প্রধান গোয়োন্দা নজরদারির ব্যর্থতার কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারক, আইনজীবীর এবং সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারে প্রতিপক্ষের তস্কর হ্যাকাররা যেভাবে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ আগেই সতর্ক হলে তা বন্ধ করা যেত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্র ও যোগাযোগের সব উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার আছে। এই নিরাপত্তা ভঙ্গকারীর জন্য ফৌজদারি আইনে শাস্তির বিধানও আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে রক্ষার জন্য দৈনিক আমার দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং ফৌজদারি আইন লঙ্ঘন করেছে। স্কাইপে টেলিফোনের যে কথোপকথন প্রকাশ করেছে, সেটি তারা চুরির মাধ্যমে পেয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করে সংবাদপত্রের নীতিমালা, বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করে দ-নীয় অপরাধ করেছে পত্রিকাটি।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে দেশ-বিদেশে বহুমাত্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে। শত কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ভাড়া করেছে ’৭১-এর আইন, ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া, বিচারের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ ও কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যাহত করার জন্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে চলা এসব চক্রান্ত প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক একটি পত্রিকায় লিখেছে স্কাইপিফোনে বিচারপতির সঙ্গে আলোচনাকারী ড. জিয়াউদ্দিন ও তার সহযোগী রায়হান রশিদ নাকি নির্মূল কমিটির সঙ্গে যুক্ত। এটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। ড. জিয়াউদ্দিন বা রায়হান কোন দিনই নির্মূল কমিটির সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আমরা বরং জিয়াউদ্দিনের সম্পর্কে জানতে চেয়েছি তিনি কিভাবে কোন এখতিয়ারে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও আইনজীবীদের আইনী পরামর্শ উপদেশ ও নির্দেশ দিচ্ছেন। জিয়াউদ্দিন নিজেকে আন্তর্জাতিক সুনামখ্যাত আইনজীবী দাবি করার পরও কেন তিনি একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং প্রসিকিউশনকে আইনী সহায়তা দিচ্ছেন তার তদন্ত হওয়া জরুরী। তাঁর এই আচরণের কারণেই ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া অন্যান্য বিচারক, আইনজীবী সাক্ষী ও সরকার সম্পর্কে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে উৎসাহী হয়েছেন। জিয়াউদ্দিন আইনবিরোধী কিছু না করলেও যা করেছেন তা অশোভন ও নীতিবর্জিত।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে, ট্রইব্যুনালের প্রতিটি কক্ষে ও করিডোরে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গেয়েন্দা নজরে থাকলে চেয়ারম্যান বা অন্য কারও কম্পিউটার হ্যাকিং বা টেলিযোগাযোগ রেকর্ড করে বাইরে পাচার করা সম্ভব হতো না। জোর দিয়ে বলতে পারি ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল এবং যে কোন সময় আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৬/২ ধারায় এবং ৫৮/২ ধারায় অনুযায়ী হ্যাকিংয়ের শাস্তি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদ- এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা। দেশী-বিদেশী সবাই এর আওতায় থাকবে। তারপরও এ শাস্তি পর্যাপ্ত নয়। রাষ্ট্রীয় তথ্য পাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- এবং ব্যক্তিগত তথ্য পাচারের জন্য যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান চালু করা উচিত। না হলে এ ধরনের কর্মকা- বন্ধ হবে না। চৌর্যবৃত্তি দ্বারা পাওয়া কোন তথ্য ব্যবহার করাও একই অপরাধ। কাজেই আমার দেশ পত্রিকার সংশ্লিষ্টদের বিচার হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে হ্যাকিং করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের সজাগ থাকতে হবে। পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সর্বশক্তি নিয়োগ করে অপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
কমিটির সহ-সভাপতি মুনতাসীর মামুন বলেন, বিএনপি-জামায়াত দুটি দলই যুদ্ধাপরাধী দল। প্রথম থেকেই পুরো বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করার চেষ্টায় লিপ্ত তারা। কিন্তু এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা ও নমনীয়তা রয়েছে। হ্যাকিংয়ের মতো চোরাই করা উপাদানও আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে অথচ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর অতিকথন বিচারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দেবেন তাঁদেরও বুঝতে হবে সারাজাতি রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
শহীদ-জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ৪১ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রতিটি শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এই বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-শিবির এই বিচার বানচালের চক্রান্ত করছে। কিন্তু এই বিচার না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ধ্বংস হয়ে যাবে। ব্যারিস্টার তুরীন আফরোজ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনী ও বিচারিক দিক যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর মানবিক দিকও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এ বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই।
সোমবার সংগঠনের এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহারিয়ার কবির বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে, টাইব্যুনালের প্রতিটি কক্ষ ও করিডোর সিসিটিভি ক্যামেরা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গোয়েন্দা নজরদারির অধীনে থাকলে চেয়ারম্যান বা অন্য কারও পক্ষে কম্পিউটারের হ্যাকিং বা টেলিযোগাযোগের রেকর্ড বাইরে পাচার করা কারও পক্ষে সম্ভব হতো না। সংগঠনের সহসভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রীরা একের পর যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের আগেই তারা রায় প্রদান করছে। মন্ত্রীদের এই অতিকথন বিচার প্রক্রিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এর থেকে মন্ত্রীদের বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত একের পর এক ষড়যন্ত্র করলেও এক্ষেত্রে সরকার নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করছে। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে প্রকট।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে রক্ষার জন্য পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয় অবিলম্বে জামায়াতী ইসলামের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও তাদের অস্ত্র এবং অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠন ও বাহিনী হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আল শামসদের বিচার করতে হবে। রাজনীতি নিষিদ্ধ ও তাদের বিচার করা না হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন নস্যাৎ হয়ে যাবে। কালক্রমে বাংলাদেশ পরিণত হবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো সন্ত্রাসী ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে।
এসব দাবির মধ্যে আরও রয়েছে কাক্সিক্ষত সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হলে গোটা ট্রাইব্যুনাল এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তার নিñিদ্র চাদরে ঢেকে দিতে হবে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে আরও দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। সুপ্রীমকোর্টের প্রবীণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা ম-লী গঠন করতে হবে। সরকার পরিবর্তন হলেও যাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য সংসদে আইন পাস করে মানবতাবিরোধী বিচার ট্রাইব্যুনালকে একটি স্থায়ী এবং প্রশাসনিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, কম্পিউটারে হ্যাকিং, টেলিফোনে আড়িপাতা, ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করে তথ্য চুরি, পাচার ও প্রকাশের জন্য আইনী বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে হবে। আমার দেশে প্রকাশিত স্কাইপি হ্যাকিং সম্পর্কে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, যারা ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের কম্পিউটারের তথ্য চুরি করেছে কাল তারা জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাসমূহ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কম্পিউটারে হামলা চালাতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহারিয়ার কবির বলেন, ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা বলতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে বিচারক, আইনজীবী বা কয়েকজন কর্মকর্তার জন্য নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করা। কিন্তু ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে বার বার ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় প্রধান গোয়োন্দা নজরদারির ব্যর্থতার কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারক, আইনজীবীর এবং সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারে প্রতিপক্ষের তস্কর হ্যাকাররা যেভাবে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ আগেই সতর্ক হলে তা বন্ধ করা যেত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্র ও যোগাযোগের সব উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার আছে। এই নিরাপত্তা ভঙ্গকারীর জন্য ফৌজদারি আইনে শাস্তির বিধানও আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে রক্ষার জন্য দৈনিক আমার দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং ফৌজদারি আইন লঙ্ঘন করেছে। স্কাইপে টেলিফোনের যে কথোপকথন প্রকাশ করেছে, সেটি তারা চুরির মাধ্যমে পেয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করে সংবাদপত্রের নীতিমালা, বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করে দ-নীয় অপরাধ করেছে পত্রিকাটি।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে দেশ-বিদেশে বহুমাত্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে। শত কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ভাড়া করেছে ’৭১-এর আইন, ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া, বিচারের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ ও কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যাহত করার জন্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে চলা এসব চক্রান্ত প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক একটি পত্রিকায় লিখেছে স্কাইপিফোনে বিচারপতির সঙ্গে আলোচনাকারী ড. জিয়াউদ্দিন ও তার সহযোগী রায়হান রশিদ নাকি নির্মূল কমিটির সঙ্গে যুক্ত। এটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। ড. জিয়াউদ্দিন বা রায়হান কোন দিনই নির্মূল কমিটির সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আমরা বরং জিয়াউদ্দিনের সম্পর্কে জানতে চেয়েছি তিনি কিভাবে কোন এখতিয়ারে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও আইনজীবীদের আইনী পরামর্শ উপদেশ ও নির্দেশ দিচ্ছেন। জিয়াউদ্দিন নিজেকে আন্তর্জাতিক সুনামখ্যাত আইনজীবী দাবি করার পরও কেন তিনি একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং প্রসিকিউশনকে আইনী সহায়তা দিচ্ছেন তার তদন্ত হওয়া জরুরী। তাঁর এই আচরণের কারণেই ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া অন্যান্য বিচারক, আইনজীবী সাক্ষী ও সরকার সম্পর্কে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে উৎসাহী হয়েছেন। জিয়াউদ্দিন আইনবিরোধী কিছু না করলেও যা করেছেন তা অশোভন ও নীতিবর্জিত।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে, ট্রইব্যুনালের প্রতিটি কক্ষে ও করিডোরে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গেয়েন্দা নজরে থাকলে চেয়ারম্যান বা অন্য কারও কম্পিউটার হ্যাকিং বা টেলিযোগাযোগ রেকর্ড করে বাইরে পাচার করা সম্ভব হতো না। জোর দিয়ে বলতে পারি ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল এবং যে কোন সময় আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৬/২ ধারায় এবং ৫৮/২ ধারায় অনুযায়ী হ্যাকিংয়ের শাস্তি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদ- এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা। দেশী-বিদেশী সবাই এর আওতায় থাকবে। তারপরও এ শাস্তি পর্যাপ্ত নয়। রাষ্ট্রীয় তথ্য পাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- এবং ব্যক্তিগত তথ্য পাচারের জন্য যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান চালু করা উচিত। না হলে এ ধরনের কর্মকা- বন্ধ হবে না। চৌর্যবৃত্তি দ্বারা পাওয়া কোন তথ্য ব্যবহার করাও একই অপরাধ। কাজেই আমার দেশ পত্রিকার সংশ্লিষ্টদের বিচার হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে হ্যাকিং করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের সজাগ থাকতে হবে। পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সর্বশক্তি নিয়োগ করে অপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
কমিটির সহ-সভাপতি মুনতাসীর মামুন বলেন, বিএনপি-জামায়াত দুটি দলই যুদ্ধাপরাধী দল। প্রথম থেকেই পুরো বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করার চেষ্টায় লিপ্ত তারা। কিন্তু এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা ও নমনীয়তা রয়েছে। হ্যাকিংয়ের মতো চোরাই করা উপাদানও আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে অথচ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর অতিকথন বিচারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দেবেন তাঁদেরও বুঝতে হবে সারাজাতি রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
শহীদ-জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ৪১ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রতিটি শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এই বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-শিবির এই বিচার বানচালের চক্রান্ত করছে। কিন্তু এই বিচার না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ধ্বংস হয়ে যাবে। ব্যারিস্টার তুরীন আফরোজ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনী ও বিচারিক দিক যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর মানবিক দিকও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এ বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই।
No comments