শুভ বড়দিন by রেভারেন্ড রবার্ট সরকার
এই শুভ বড়দিনে সবাইকে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই এবং প্রার্থনা করি যেন ২০১৩ সাল আমাদের জীবনে অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে। পবিত্র বাইবেলে মূলত চারটি সুসমাচার পুস্তকে প্রভু যিশু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়; কিন্তু তার জন্মের আগেও যেমন
অনেক প্রেরিত পুরুষ প্রভু যিশু সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তেমনি তার মৃত্যুর পর প্রভুর শিষ্যরা তার সম্পর্কে অনেক কথা লিখে গিয়েছেন। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই যে, শুধু খ্রিস্ট ধর্মে নয়, অন্যান্য ধর্মেও তার সম্পর্কে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা পাওয়া যায়, যেটি হয়তো আর কোনো ধর্ম প্রবর্তক সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। খ্রিস্ট শুধু এদিক দিয়েই অনন্য ছিলেন তা নয়, তার জন্ম অর্থাৎ এই বড়দিনের কাহিনীও অনবদ্য। এ কাহিনী নিয়ে অনেকে নেতিবাচক কথা বলতে চেষ্টা করেও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, প্রকৃতই প্রভু যিশুর জন্ম ছিল ইউনিক। তার এ জন্মের বিষয়ে প্রথমত, আমরা একটু আলোচনা করি। তার জন্মের প্রায় সাড়ে সাতশ' বছর আগে নবী যিশাইয় লিখে গিয়েছিলেন,
'কারণ একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন...
একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে
শাসন করার ভার তার কাঁধের ওপর থাকবে
আর তার নাম হবে আশ্চর্য পরামর্শদাতা,
শক্তিশালী ঈশ্বর চিরস্থায়ী পিতা, শান্তিরাজ্য' (যিশাইয় ৯ :৬)
এ ধরনের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী প্রভু যিশু সম্পর্কে তার জন্মের কয়েকশ' বছর আগে অনেক নবী করে গেছেন। এর অনেক পর প্রভু যিশুর জন্মের সময় হঠাৎ একদিন স্বর্গ থেকে প্যালেস্টাইন দেশের গালিল প্রদেশের নাসরত গ্রামে মরিয়ম নামে এক কুমারী মেয়ের কাছে গাব্রিয়েল (বা জিব্রাইল) দূত এসে বললেন, মরিয়ম, ভয় করো না, কারণ ঈশ্বর তোমাকে খুব দয়া করেছেন। তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তার নাম যিশু রাখবে। তিনি মহান হবেন ও রাজত্ব করবেন। তখন মরিয়ম অবাক হয়ে বললেন, 'এ কেমন করে হবে? আমার তো বিয়ে হয়নি।' মহান জিব্রাইল বলেন, 'ঈশ্বরের শক্তির ছায়া তোমার ওপরে পড়বে। ঈশ্বরের কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই।' (লূক ১:২৬-৩৭)। এ কথা শুনে মরিয়মের সঙ্গে যার বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হয়ে গিয়েছিল সেই যোশেফ বলেন, 'তাহলে কি আমি মরিয়মকে তালাক দেব, কারণ তার সঙ্গে আমার তো তেমন পরিচয় হয়নি।' আবার জিব্রাইল এসে তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললেন, যেন তিনি কোনো সন্দেহ না করেন, বরং ঈশ্বরের পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেন (মথি ১ :১৮-২৫)।
এ ঘটনা কবে ঘটেছিল_ ঐতিহাসিকরা মনে করেন ৪ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। তারপরও হতে পারে। তারিখ যেদিনই হোক। প্রশ্ন এসে যায় যে, তাতে এ ২০১২ খ্রিস্ট আমার কী আসে যায় বা আমি কীভাবে সেই বড়দিনের আশীর্বাদ বা তার অংশ পেতে পারি। তাহলে আমরা প্রথমত দেখি যে, ঈশ্বর চান যেন আপনার ও আমার জন্য প্রভু যিশু জন্মগ্রহণ করেন। এটি শুধু একদিনের ঘটনা নয়, কিন্তু ঈশ্বর যুগের পর যুগ ধরে পরিকল্পনা করে আসছেন, কী করে মানুষ আরও একটু ভালো জীবনযাপন করতে পারে, কী করে সে ঈশ্বরের কাছাকাছি আসতে পারে এবং কী করে ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে পারে।
ঈশ্বরের এ চাওয়ার পেছনে রয়েছে মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা। মানুষ যতই দূরে সরে যাক না কেন ঈশ্বর মানুষকে বারবার তার কাছে ডাকতে চেয়েছেন। তাই পুরো মানবজাতিকে প্রস্তুত করার জন্য তিনি ভাববাণী বললেন এবং তা তিনি পূর্ণও করলেন। প্রভু যিশুরূপে তিনি নিজে এ পৃথিবীতে এলেন_ মানুষের সুখ-দুঃখ, সমস্যা, বিপদ, দুশ্চিন্তা, মনোভাবকে আরও ভালো করে যেন তিনি বুঝতে পারেন। তাই তিনি নাম নিলেন 'যিশু', যার অর্থ মানুষের সঙ্গে ঈশ্বর। সব কাদা, ধুলা ও পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য তিনি শুধু মানুষকে কতগুলো নিয়মকানুন দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন না। তিনি নিজে এসে সেই নিয়ম পূর্ণ করলেন। ঈশ্বর যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলেন তখন তিনি চান যেন আমরা বিনা শর্তে তার বাধ্য হই। মেষ পালকদের কাছে গভীর রাতে যখন স্বর্গের দূতরা এসে প্রভু যিশুর জন্ম সংবাদ দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে মেষ পালকরা তাদের সব কিছু ফেলে বৈৎলেহমে প্রভু যিশুকে দেখতে গেলেন। হয়তো তাদের হাতে ময়লা ছিল, কাপড়ে দুর্গন্ধ ছিল, এমনকি তারা কোনো উপহারও নিয়ে যাননি; কিন্তু তারা প্রভুকে দেখতে পেয়েছিলেন।
অন্যদিকে যদিও এ ঘটনার কিছুদিন পরের ঘটনা আমরা দেখি, পূর্বদেশের কয়েকজন পণ্ডিত ব্যক্তি আকাশে তারা দেখে তার পেছন পেছন চলে প্রভুকে দেখতে বিহুদা দেশে এলেন। কিন্তু তখনই তারা তাদের শর্তহীনভাবে চলবার শর্ত ভুলে গেলেন ও তাদের জ্ঞানে যেটা স্বাভাবিক সেভাবেই সেখানকার রাজার ঘরে গিয়ে প্রশ্ন করে উঠলেন_ 'আমরা রাজাকে দেখতে এসেছি, তিনি কোথায়?' তাদের সব পাণ্ডিত্য দিয়ে চরম মূর্খতা প্রকাশ করলেন। ফলে হেরোদ রাজা উদ্বিগ্ন হলেন এবং তার সঙ্গে পুরো এলাকা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। কারণ রাজা হেরোদ যখনই বুঝলেন যে আরেকজন রাজা জন্ম নিয়েছেন তিনি দু'বছরের নিচে সব শিশুকে হত্যা করার আদেশ জারি করলেন।
তখনই পণ্ডিতরা ভুল বুঝলেন ও বাইরে এসে আবার তারাদের পেছনে পেছনে চলে শিশু যিশুকে দেখতে পেলেন। আজ এই বড়দিনে আমরা একটু দেখি, যে ঈশ্বর কি আমার জীবনের মধ্য দিয়ে কোনো আশীর্বাদ আমার পরিবার, সমাজ বা দেশে দিতে চান কি-না। লক্ষ্য করা যেতে পারে যে, মরিয়মের কাছে এটি অসম্ভব ছিল, তার এমন কিছুই ছিল না, যাতে তিনি এ মহাআশীর্বাদ বহন করার যোগ্যতা পেতে পারতেন। শুধু এক ঈশ্বর তাকেই মনোনীতা করেছিলেন। নিশ্চয়ই এ পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ অনেকে আছেন যারা অনেক যোগ্য। শিক্ষিত এবং প্রভু হয়তো তাদের ব্যবহার করবেন? কিন্তু আপনি নিজেকে নিয়ে এ বিষয়টি কখনও চিন্তা করেছেন। পবিত্র বাইবেলের একটি পদে লেখা আছে_ দেখ, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আঘাত করছি। কেউ যদি আমার শব্দ শোনে ও দরজা খুলে দেয়, তবে আমি ভেতরে তার কাছে যাব এবং তার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। (প্রকাশিত ৩:২০)। আজ প্রভু যিশু আমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ও আঘাত করছেন।
স রেভারেন্ড রবার্ট সরকার : পাস্টর
'কারণ একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন...
একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে
শাসন করার ভার তার কাঁধের ওপর থাকবে
আর তার নাম হবে আশ্চর্য পরামর্শদাতা,
শক্তিশালী ঈশ্বর চিরস্থায়ী পিতা, শান্তিরাজ্য' (যিশাইয় ৯ :৬)
এ ধরনের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী প্রভু যিশু সম্পর্কে তার জন্মের কয়েকশ' বছর আগে অনেক নবী করে গেছেন। এর অনেক পর প্রভু যিশুর জন্মের সময় হঠাৎ একদিন স্বর্গ থেকে প্যালেস্টাইন দেশের গালিল প্রদেশের নাসরত গ্রামে মরিয়ম নামে এক কুমারী মেয়ের কাছে গাব্রিয়েল (বা জিব্রাইল) দূত এসে বললেন, মরিয়ম, ভয় করো না, কারণ ঈশ্বর তোমাকে খুব দয়া করেছেন। তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তার নাম যিশু রাখবে। তিনি মহান হবেন ও রাজত্ব করবেন। তখন মরিয়ম অবাক হয়ে বললেন, 'এ কেমন করে হবে? আমার তো বিয়ে হয়নি।' মহান জিব্রাইল বলেন, 'ঈশ্বরের শক্তির ছায়া তোমার ওপরে পড়বে। ঈশ্বরের কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই।' (লূক ১:২৬-৩৭)। এ কথা শুনে মরিয়মের সঙ্গে যার বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হয়ে গিয়েছিল সেই যোশেফ বলেন, 'তাহলে কি আমি মরিয়মকে তালাক দেব, কারণ তার সঙ্গে আমার তো তেমন পরিচয় হয়নি।' আবার জিব্রাইল এসে তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললেন, যেন তিনি কোনো সন্দেহ না করেন, বরং ঈশ্বরের পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেন (মথি ১ :১৮-২৫)।
এ ঘটনা কবে ঘটেছিল_ ঐতিহাসিকরা মনে করেন ৪ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। তারপরও হতে পারে। তারিখ যেদিনই হোক। প্রশ্ন এসে যায় যে, তাতে এ ২০১২ খ্রিস্ট আমার কী আসে যায় বা আমি কীভাবে সেই বড়দিনের আশীর্বাদ বা তার অংশ পেতে পারি। তাহলে আমরা প্রথমত দেখি যে, ঈশ্বর চান যেন আপনার ও আমার জন্য প্রভু যিশু জন্মগ্রহণ করেন। এটি শুধু একদিনের ঘটনা নয়, কিন্তু ঈশ্বর যুগের পর যুগ ধরে পরিকল্পনা করে আসছেন, কী করে মানুষ আরও একটু ভালো জীবনযাপন করতে পারে, কী করে সে ঈশ্বরের কাছাকাছি আসতে পারে এবং কী করে ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে পারে।
ঈশ্বরের এ চাওয়ার পেছনে রয়েছে মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা। মানুষ যতই দূরে সরে যাক না কেন ঈশ্বর মানুষকে বারবার তার কাছে ডাকতে চেয়েছেন। তাই পুরো মানবজাতিকে প্রস্তুত করার জন্য তিনি ভাববাণী বললেন এবং তা তিনি পূর্ণও করলেন। প্রভু যিশুরূপে তিনি নিজে এ পৃথিবীতে এলেন_ মানুষের সুখ-দুঃখ, সমস্যা, বিপদ, দুশ্চিন্তা, মনোভাবকে আরও ভালো করে যেন তিনি বুঝতে পারেন। তাই তিনি নাম নিলেন 'যিশু', যার অর্থ মানুষের সঙ্গে ঈশ্বর। সব কাদা, ধুলা ও পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য তিনি শুধু মানুষকে কতগুলো নিয়মকানুন দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন না। তিনি নিজে এসে সেই নিয়ম পূর্ণ করলেন। ঈশ্বর যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলেন তখন তিনি চান যেন আমরা বিনা শর্তে তার বাধ্য হই। মেষ পালকদের কাছে গভীর রাতে যখন স্বর্গের দূতরা এসে প্রভু যিশুর জন্ম সংবাদ দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে মেষ পালকরা তাদের সব কিছু ফেলে বৈৎলেহমে প্রভু যিশুকে দেখতে গেলেন। হয়তো তাদের হাতে ময়লা ছিল, কাপড়ে দুর্গন্ধ ছিল, এমনকি তারা কোনো উপহারও নিয়ে যাননি; কিন্তু তারা প্রভুকে দেখতে পেয়েছিলেন।
অন্যদিকে যদিও এ ঘটনার কিছুদিন পরের ঘটনা আমরা দেখি, পূর্বদেশের কয়েকজন পণ্ডিত ব্যক্তি আকাশে তারা দেখে তার পেছন পেছন চলে প্রভুকে দেখতে বিহুদা দেশে এলেন। কিন্তু তখনই তারা তাদের শর্তহীনভাবে চলবার শর্ত ভুলে গেলেন ও তাদের জ্ঞানে যেটা স্বাভাবিক সেভাবেই সেখানকার রাজার ঘরে গিয়ে প্রশ্ন করে উঠলেন_ 'আমরা রাজাকে দেখতে এসেছি, তিনি কোথায়?' তাদের সব পাণ্ডিত্য দিয়ে চরম মূর্খতা প্রকাশ করলেন। ফলে হেরোদ রাজা উদ্বিগ্ন হলেন এবং তার সঙ্গে পুরো এলাকা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। কারণ রাজা হেরোদ যখনই বুঝলেন যে আরেকজন রাজা জন্ম নিয়েছেন তিনি দু'বছরের নিচে সব শিশুকে হত্যা করার আদেশ জারি করলেন।
তখনই পণ্ডিতরা ভুল বুঝলেন ও বাইরে এসে আবার তারাদের পেছনে পেছনে চলে শিশু যিশুকে দেখতে পেলেন। আজ এই বড়দিনে আমরা একটু দেখি, যে ঈশ্বর কি আমার জীবনের মধ্য দিয়ে কোনো আশীর্বাদ আমার পরিবার, সমাজ বা দেশে দিতে চান কি-না। লক্ষ্য করা যেতে পারে যে, মরিয়মের কাছে এটি অসম্ভব ছিল, তার এমন কিছুই ছিল না, যাতে তিনি এ মহাআশীর্বাদ বহন করার যোগ্যতা পেতে পারতেন। শুধু এক ঈশ্বর তাকেই মনোনীতা করেছিলেন। নিশ্চয়ই এ পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ অনেকে আছেন যারা অনেক যোগ্য। শিক্ষিত এবং প্রভু হয়তো তাদের ব্যবহার করবেন? কিন্তু আপনি নিজেকে নিয়ে এ বিষয়টি কখনও চিন্তা করেছেন। পবিত্র বাইবেলের একটি পদে লেখা আছে_ দেখ, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আঘাত করছি। কেউ যদি আমার শব্দ শোনে ও দরজা খুলে দেয়, তবে আমি ভেতরে তার কাছে যাব এবং তার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। (প্রকাশিত ৩:২০)। আজ প্রভু যিশু আমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ও আঘাত করছেন।
স রেভারেন্ড রবার্ট সরকার : পাস্টর
No comments