দেশ রক্ষার ‘শেষ যুদ্ধ’by রাহাত খান
ফ্যাসিবাদী রাজনীতি বলতে যা বুঝায়, জামায়াতে ইসলামী সেই সংজ্ঞার প্রতিটি শর্তই সর্বতোভাবে পূরণ করে। কি পাকিস্তানে, কি ভারতে, কি বাংলাদেশে। ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বৈশিষ্ট্য : ধর্ম ও এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণকে বিতর্কিত করে তোলা।
নিজেদের বিকৃত ধর্মভিত্তিক রাজনীতির স্বার্থে মুসলমানদের সঙ্গে হিন্দু, খ্রিস্টান ও ইহুদীদের, মুসলমান শিয়ার সঙ্গে সুন্নি, সুন্নির সঙ্গে কাদিয়ানীর এবং এক বর্ণের সঙ্গে আরেক বর্ণের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে রাখা।
বাংলাদেশে সত্যিকারের মুসলিম অনুসারী মাত্রই জানেন জামায়াতীরা নবীজীর ইসলামকে নয়, মওদুদীর ইসলামের অনুগামী (আস্তাগফিরুল্লাহ)। মুসলমানের ইমান আল্লা-রাসুল। আর জামায়াতীদের কাছে রসুলুল্লাহ্ (সা) ইমানের অংশ নন, বড়জোর মুসলিম অনুসারীদের ‘মুরব্বী’ কিংবা বড় ভাইয়ের মতো মান্যবর। তাদের কাছে ধর্ম (মুসলিম) হচ্ছে সন্ত্রাসী ‘জেহাদে’ লিপ্ত থাকা। তাদের রাজনীতি হচ্ছে ধর্মকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল জামায়াতে ইসলাম নামে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলটি।
ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে, একক নির্বাচনে বলতে গেলে তেমন পাত্তাই পায় না। তাদের সবচেয়ে বেশি দাপট ও প্রভাব পাকিস্তানে। কেননা সেদেশে সহচর বা সহযাত্রী হিসেবে তারা তালেবান ও জঙ্গী সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা পায়। এর পরও পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী সাধারণ নির্বাচনে কখনই একটি বা দু’টির বেশি আসন পায় না। ভারতে জামায়াতের অস্তিত্ব ক্ষীণ বললেও কম বলা হয়। আর সেদেশে সাধারণ নির্বাচনে কোন আসন জেতা তো ‘দূর অস্ত’। শুধু বাংলাদেশেই জামায়াতে ইসলামীর যা একটু হিড়িক-তিরিক। সেটাও প্রায় একই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিএনপির সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক ঐক্য ও একাত্মতার কারণে।
জামায়াত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে বিশ্বাস করে না। বিএনপিও কি করে? হয়ত করে। তবে ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর বিএনপি পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোন রকমের একটা লুজ ফেডারেশন করতে যেন বদ্ধপরিকর। জিয়াউর রহমান আবদুস সাত্তার এবং খালেদা জিয়ার রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে এ ধারণা অতি পরিষ্কার হয়ে দেখা দেয়। জিয়াউর রহমান রাজনীতির এই এজেন্ডা (পাকিস্তানের সঙ্গে ফেডারেশন সম্পর্কে যাওয়া) বাস্তবায়নের চেষ্টা করে গেছেন। বিএনপি রাজনীতিতে তার উত্তরসূরি। তাঁর পতœী খালেদা জিয়ার রাজনীতির অতীত টার্গেট সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। বর্তমানে বিএনপি রাজনীতি তো কোন রাখ-ঢাকও রাখছে না। জামায়াতকে রাজনীতিতে এক পরিবারভুক্ত করেই ক্ষান্ত নয়, তারা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত তথা রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের যুদ্ধাপরাধী বিচার বাধাগ্রস্ত করতেও ওঠেপড়ে লেগেছে।
আগে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল। তবে এখন দিনদিন পরিষ্কার হয়ে উঠছে এই বিষয়টা যে জামায়াতের সঙ্গী হিসেবে রাজনীতিতে বিএনপিও স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করেছে। নইলে বিএনপি এবারের ২০১৪ সাধারণ নির্বাচনকে ‘দেশ রক্ষার আন্দোলন’ বলে অভিহিত করতে চাইছে কেন? তাও কথাটা বেগম জিয়া ব্যক্ত করেছেন তাদের তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সম্মেলনে!
প্রশ্ন ওঠে বেগম জিয়ার এই দেশ রক্ষার বিষয়টা কি! তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিতভাবে আক্রান্ত হয়, শুরু হয় বাঙালী নিধনে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ, এক কোটি লোকজন বাঁচাতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল প্রতিবেশী ভারতে, পাকিস্তানী সেনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাঙালীদের একচ্ছত্র নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে,...তখন ঘটনার নৃশংসতায় বাঙালী প্রথমে খানিকটা হতবিহ্বল হয়ে গেলেও অচিরে তারা শত্রুকে রুখে দাঁড়াবার এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করার সঙ্কল্পে তা ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে। নেতা বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েই গিয়েছিলেন। একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালী জাতিকে ‘তোমাদের যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর’Ñএই নির্দেশও তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা ছিল বাঙালীর মুক্তি, স্বাধীনতা তথা দেশ রক্ষার সংগ্রাম। বাংলাদেশের ট্রেনিং পাওয়া না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা যোগ দিয়েছিলেন দেশ রক্ষার সেই আন্দোলনে। সেই যুদ্ধে। বেগম খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামী তাহলে গত ৪০ বছর ধরে ধীরে ধীরে উন্নত ও সম্পন্ন হতে থাকা বাংলাদেশে ২০১২ সালের উপাত্তে এসে কোন্্ দেশ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হতে বলছেন মুক্তিযোদ্ধাদের?
বাংলাদেশ কি অন্য কোন দেশ দ্বারা আক্রান্ত? অথবা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক পরিস্থিতি কি এমন বিপর্যস্ত এবং শাসনের বাইরে চলে গেছে যে আসন্ন ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যালটযুদ্ধে দেশ রক্ষার খাতিরে বিএনপি-জামায়াতসহ পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে জয়ী করতে হবে? বেগম খালেদা জিয়া ১৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সম্মেলনে এমন কথাও বলেছেন বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সমমনা দলগুলোকে ভোট না দিলে বাংলাদেশের মানচিত্র বদলে যাবে।
বেগম জিয়া এতদিন যা বলেছেন তা অনেক সময় কিছুটা অস্পষ্ট মনে হলেও এবার তিনি আর অস্পষ্ট নন। তার ডাইনে বাঁয়ে জামায়াত এবং মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী ইত্যকার বিলুপ্ত প্রায় পাকিস্তানপন্থী দল। তাদের কাঁধে ভর দিয়েই বিএনপির রাজনীতি চলছে। আর অস্পষ্টতা নেই! বিএনপি এখন রাজনীতিতে জামায়াতের সঙ্গে পা মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে প- বা বাধাগ্রস্ত হয় সেজন্য বিএনপি জামায়াতের জঙ্গীবাদী সশস্ত্র রাজনৈতিক আচরণকে নৈতিক সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির এই বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা আড়ালে-প্রকাশ্যে বরাবরই ছিল। তাই আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত প্রাপ্তির পর খুনী ও বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মুশতাকের আড়াই মাসের ‘বাদশাহী’। তারপর প্রধান বিচারপতি জাস্টিস সায়েমের চীফ মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্ট্র্রেটর হওয়া। এই হওয়াটা ষড়যন্ত্রের আসল হোতা জেনারেল জিয়ারই গোপন নির্দেশে। পরে ১৯৭৬ সালে নিজেই প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়ে ‘দেশ রক্ষা’র সামরিক ও রাজনৈতিক ‘আন্দোলনে’ লিপ্ত হলেন। দুনিয়ার ঘৃণ্যতম ও নিকৃষ্টতম ‘ইনডেমনিটি আইন’ পাস করলেন। সংবিধান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চারটি আদর্শের মধ্যে তিনটিই বাতিল করে দিলেন। বাতিল করে দিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের করা দালাল আইন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ আইন। গোপনে ক্যাঙ্গারু আদালতে নামমাত্র বিচারে হত্যা করলেন বেছে বেছে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে। আর স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় বীরযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে কার্যত হত্যা করেছিলেন তো ক্ষমতাসীন হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই।
জিয়ার ভূমিকার এতখানি বর্ণনা দিলাম শুধু এইটুকু ব্যাখ্যা করতে যে বাংলাদেশকে আবার পুরো পাকিস্তান না হোক অন্তত পাকিস্তানের সঙ্গে শিথিল হলেও কোন না কোন সূত্রে ফেডারেশনের অংশ করা যায় কিনা সেটাই ছিল ধুরন্ধর জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক-সামরিক টার্গেট। সেটাই ‘দেশ-রক্ষা’র যুদ্ধ। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত এবং সমমনা পাকিস্তানপন্থী তথাকথিত ইসলামী দলগুলোর পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান এই কারণেই। পাকিস্তানের সঙ্গে ক্ষীণ হলেও একটা শিথিল ফেডারেশনে যুক্ত হওয়া। পরবর্তী সময় জিয়া পতœী খালেদা জিয়াও বিএনপির রাজনীতিতে একই ধারা অনুসরণ করে চলেছেন। আগে খানিকটা রাজনৈতিক অস্পষ্টতার মধ্যে থাকতেন। এখন আর বিএনপি রাজনীতিতে অস্পষ্টতা বলতে কিছু নেই। মরণ কামড় দিতে চাইছে তারা। এতদিনে উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে ওঠা উন্নয়নের দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ বাংলাদেশকে। বিএনপি-জামায়াতের এই মরণ কামড়ের নামই ‘দেশ-রক্ষা’র শেষ যুদ্ধ। এজন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েমে যারা যুদ্ধ করেছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে তিরিশ লাখ সহযোদ্ধা কমরেডকে হারিয়েছেন, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ‘দেশ রক্ষার’ যুদ্ধে সহযোগিতা চেয়েছেন রাজাকার-আলবদরদের মা। যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানীদের সঙ্গে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন বলেই জানা যায়।
বিএনপি-জামায়াতের দেশ রক্ষার এই শেষ যুদ্ধ আর কিছু না, ব্যালটযুদ্ধে জিতে বাংলাদেশের চেহারাটা আবার ২০০১-২০০৬ সালের মতো করে ছলে-বলে-কৌশলে পাকিস্তানের সঙ্গে এমন একটা সম্পর্কে যুক্ত হওয়া যাতে কা-টা বাস্তবে লুজ ফেডারেশনের মতোই কিছু একটা দাঁড়ায়। জিয়াউর রহমান যা সূচনা করেছিলেন বিএনপি-জামায়াত এখন সেটাই বাস্তবে রূপ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
মরিয়া না হয়েও তো উপায় নেই! বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মই বেয়ে দ্রুত ওপরে উঠে যাচ্ছে! সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক। তারা আশ্চর্য হচ্ছে তবে স্বীকারও করছে বিশ্বজুড়ে গত অর্ধদশক মহামন্দা বিরাজ করলেও বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের প্রায় সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বিশ্বের বহু দেশের তুলনায়। চীন, ভারত, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধির চাকা শতকরা ৯ বা আট থেকে শতকরা ছয়ভাগে নেমে গেছে। অথচ তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলে নিক্সন-কিসিঞ্জার বিদ্রƒপাত্মক ও শ্লেষের ভাষায় যে দেশকে অভিহিত করেছিলেন, সেই বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ছয়ের কাছাকাছি আছে। গত ৪ বছরে বাংলাদেশের রফতানি ভল্যুম ও আয়, দুই-ই বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচক ইতিবাচক। গ্রামাঞ্চলে লোকের আয়-উন্নতি বেড়েছে। বেড়েছে গ্রামাঞ্চলে দ্রুত নগরায়ন। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় সম্প্রীতি মন্তব্য করা হয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ধারা বর্তমান পর্যায়েও স্থিত রাখতে পারলে উন্নত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে আগামী ৩০/৩৫ বছরের মধ্যেই। খাদ্যোৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনও বাংলাদেশের আর একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
সহ্য করা যায় নির্যাতন ও শোষণকারী দেশ পাকিস্তানকে রণাঙ্গনে হারিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের এমন শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি। কষ্ট হয় না দেখতে যে একদিকে পাকিস্তানকে দিন দিন ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে চলেছে আর অন্যদিকে বাংলাদেশ তার হাজার বছরের দারিদ্র্য ও দীনদশা কাটিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হওয়ার পথে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছে!
হ্যাঁ, অসহ্য লাগে। কষ্ট লাগে। আর কোন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর না হোক, বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীসমূহের খুবই কষ্ট লাগে। খুবই অসহ্য মনে হয় পাকিস্তান যখন নানা সমস্যায় ধুঁুঁকছে তখন উন্নয়নের রাস্তা ধরে বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়াটা। এবারে তাই ২০১৪ সালের নির্বাচনে শেষ চেষ্টা করে দেখতে চায় তারা। বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গীবাদী বাংলাদেশ গড়ার এই সঙ্কল্পেরই নাম দিয়েছেন ‘দেশ রক্ষা’র শেষ যুদ্ধ হিসেবে। এজন্য ষড়যন্ত্র ও রাজনীতি, উভয় পন্থায়ই চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
দেশ এক হিসেবে দুই ‘দলে’ বিভক্ত। ‘প্রো-আওয়ামী লীগ’ এবং ‘এন্টি-আওয়ামী লীগ’ দলে। আরেক হিসেবে বলা যায় মোটা দাগে দেশ বিভক্ত দুই রাজনীতিতে, স্বাধীনতা পক্ষের রাজনীতি এবং স্বাধীনতা বিরোধী রাজনীতিতে। প্রশ্ন দাঁড়ায় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী, মুক্তিযোদ্ধা এবং উন্নয়ন-যোদ্ধা, বাংলাদেশের জাগ্রত তরুণ সমাজ কোন্্ রাজনীতি বেছে নেবেন?
এই প্রশ্নের জবাব আমার দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। মানুষ উন্নয়নের পথই বেছে নেবে, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের পথ নয়। অন্ধকারের ফাঁদে পা দেবে না আলোর পথই বেছে নেবে তারা। এরকমই তো হওয়ার কথা। সূর্য পূর্ব দিকে উদয় হতে শুরু করলে অবশ্য ভিন্ন কথা।
বাংলাদেশে সত্যিকারের মুসলিম অনুসারী মাত্রই জানেন জামায়াতীরা নবীজীর ইসলামকে নয়, মওদুদীর ইসলামের অনুগামী (আস্তাগফিরুল্লাহ)। মুসলমানের ইমান আল্লা-রাসুল। আর জামায়াতীদের কাছে রসুলুল্লাহ্ (সা) ইমানের অংশ নন, বড়জোর মুসলিম অনুসারীদের ‘মুরব্বী’ কিংবা বড় ভাইয়ের মতো মান্যবর। তাদের কাছে ধর্ম (মুসলিম) হচ্ছে সন্ত্রাসী ‘জেহাদে’ লিপ্ত থাকা। তাদের রাজনীতি হচ্ছে ধর্মকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল জামায়াতে ইসলাম নামে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলটি।
ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে, একক নির্বাচনে বলতে গেলে তেমন পাত্তাই পায় না। তাদের সবচেয়ে বেশি দাপট ও প্রভাব পাকিস্তানে। কেননা সেদেশে সহচর বা সহযাত্রী হিসেবে তারা তালেবান ও জঙ্গী সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা পায়। এর পরও পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী সাধারণ নির্বাচনে কখনই একটি বা দু’টির বেশি আসন পায় না। ভারতে জামায়াতের অস্তিত্ব ক্ষীণ বললেও কম বলা হয়। আর সেদেশে সাধারণ নির্বাচনে কোন আসন জেতা তো ‘দূর অস্ত’। শুধু বাংলাদেশেই জামায়াতে ইসলামীর যা একটু হিড়িক-তিরিক। সেটাও প্রায় একই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিএনপির সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক ঐক্য ও একাত্মতার কারণে।
জামায়াত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে বিশ্বাস করে না। বিএনপিও কি করে? হয়ত করে। তবে ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর বিএনপি পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোন রকমের একটা লুজ ফেডারেশন করতে যেন বদ্ধপরিকর। জিয়াউর রহমান আবদুস সাত্তার এবং খালেদা জিয়ার রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে এ ধারণা অতি পরিষ্কার হয়ে দেখা দেয়। জিয়াউর রহমান রাজনীতির এই এজেন্ডা (পাকিস্তানের সঙ্গে ফেডারেশন সম্পর্কে যাওয়া) বাস্তবায়নের চেষ্টা করে গেছেন। বিএনপি রাজনীতিতে তার উত্তরসূরি। তাঁর পতœী খালেদা জিয়ার রাজনীতির অতীত টার্গেট সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। বর্তমানে বিএনপি রাজনীতি তো কোন রাখ-ঢাকও রাখছে না। জামায়াতকে রাজনীতিতে এক পরিবারভুক্ত করেই ক্ষান্ত নয়, তারা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত তথা রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের যুদ্ধাপরাধী বিচার বাধাগ্রস্ত করতেও ওঠেপড়ে লেগেছে।
আগে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল। তবে এখন দিনদিন পরিষ্কার হয়ে উঠছে এই বিষয়টা যে জামায়াতের সঙ্গী হিসেবে রাজনীতিতে বিএনপিও স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করেছে। নইলে বিএনপি এবারের ২০১৪ সাধারণ নির্বাচনকে ‘দেশ রক্ষার আন্দোলন’ বলে অভিহিত করতে চাইছে কেন? তাও কথাটা বেগম জিয়া ব্যক্ত করেছেন তাদের তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সম্মেলনে!
প্রশ্ন ওঠে বেগম জিয়ার এই দেশ রক্ষার বিষয়টা কি! তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিতভাবে আক্রান্ত হয়, শুরু হয় বাঙালী নিধনে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ, এক কোটি লোকজন বাঁচাতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল প্রতিবেশী ভারতে, পাকিস্তানী সেনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাঙালীদের একচ্ছত্র নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে,...তখন ঘটনার নৃশংসতায় বাঙালী প্রথমে খানিকটা হতবিহ্বল হয়ে গেলেও অচিরে তারা শত্রুকে রুখে দাঁড়াবার এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করার সঙ্কল্পে তা ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে। নেতা বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েই গিয়েছিলেন। একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালী জাতিকে ‘তোমাদের যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর’Ñএই নির্দেশও তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা ছিল বাঙালীর মুক্তি, স্বাধীনতা তথা দেশ রক্ষার সংগ্রাম। বাংলাদেশের ট্রেনিং পাওয়া না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা যোগ দিয়েছিলেন দেশ রক্ষার সেই আন্দোলনে। সেই যুদ্ধে। বেগম খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামী তাহলে গত ৪০ বছর ধরে ধীরে ধীরে উন্নত ও সম্পন্ন হতে থাকা বাংলাদেশে ২০১২ সালের উপাত্তে এসে কোন্্ দেশ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হতে বলছেন মুক্তিযোদ্ধাদের?
বাংলাদেশ কি অন্য কোন দেশ দ্বারা আক্রান্ত? অথবা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক পরিস্থিতি কি এমন বিপর্যস্ত এবং শাসনের বাইরে চলে গেছে যে আসন্ন ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যালটযুদ্ধে দেশ রক্ষার খাতিরে বিএনপি-জামায়াতসহ পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে জয়ী করতে হবে? বেগম খালেদা জিয়া ১৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সম্মেলনে এমন কথাও বলেছেন বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সমমনা দলগুলোকে ভোট না দিলে বাংলাদেশের মানচিত্র বদলে যাবে।
বেগম জিয়া এতদিন যা বলেছেন তা অনেক সময় কিছুটা অস্পষ্ট মনে হলেও এবার তিনি আর অস্পষ্ট নন। তার ডাইনে বাঁয়ে জামায়াত এবং মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী ইত্যকার বিলুপ্ত প্রায় পাকিস্তানপন্থী দল। তাদের কাঁধে ভর দিয়েই বিএনপির রাজনীতি চলছে। আর অস্পষ্টতা নেই! বিএনপি এখন রাজনীতিতে জামায়াতের সঙ্গে পা মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে প- বা বাধাগ্রস্ত হয় সেজন্য বিএনপি জামায়াতের জঙ্গীবাদী সশস্ত্র রাজনৈতিক আচরণকে নৈতিক সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির এই বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা আড়ালে-প্রকাশ্যে বরাবরই ছিল। তাই আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত প্রাপ্তির পর খুনী ও বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মুশতাকের আড়াই মাসের ‘বাদশাহী’। তারপর প্রধান বিচারপতি জাস্টিস সায়েমের চীফ মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্ট্র্রেটর হওয়া। এই হওয়াটা ষড়যন্ত্রের আসল হোতা জেনারেল জিয়ারই গোপন নির্দেশে। পরে ১৯৭৬ সালে নিজেই প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়ে ‘দেশ রক্ষা’র সামরিক ও রাজনৈতিক ‘আন্দোলনে’ লিপ্ত হলেন। দুনিয়ার ঘৃণ্যতম ও নিকৃষ্টতম ‘ইনডেমনিটি আইন’ পাস করলেন। সংবিধান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চারটি আদর্শের মধ্যে তিনটিই বাতিল করে দিলেন। বাতিল করে দিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের করা দালাল আইন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ আইন। গোপনে ক্যাঙ্গারু আদালতে নামমাত্র বিচারে হত্যা করলেন বেছে বেছে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে। আর স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় বীরযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে কার্যত হত্যা করেছিলেন তো ক্ষমতাসীন হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই।
জিয়ার ভূমিকার এতখানি বর্ণনা দিলাম শুধু এইটুকু ব্যাখ্যা করতে যে বাংলাদেশকে আবার পুরো পাকিস্তান না হোক অন্তত পাকিস্তানের সঙ্গে শিথিল হলেও কোন না কোন সূত্রে ফেডারেশনের অংশ করা যায় কিনা সেটাই ছিল ধুরন্ধর জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক-সামরিক টার্গেট। সেটাই ‘দেশ-রক্ষা’র যুদ্ধ। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত এবং সমমনা পাকিস্তানপন্থী তথাকথিত ইসলামী দলগুলোর পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান এই কারণেই। পাকিস্তানের সঙ্গে ক্ষীণ হলেও একটা শিথিল ফেডারেশনে যুক্ত হওয়া। পরবর্তী সময় জিয়া পতœী খালেদা জিয়াও বিএনপির রাজনীতিতে একই ধারা অনুসরণ করে চলেছেন। আগে খানিকটা রাজনৈতিক অস্পষ্টতার মধ্যে থাকতেন। এখন আর বিএনপি রাজনীতিতে অস্পষ্টতা বলতে কিছু নেই। মরণ কামড় দিতে চাইছে তারা। এতদিনে উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে ওঠা উন্নয়নের দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ বাংলাদেশকে। বিএনপি-জামায়াতের এই মরণ কামড়ের নামই ‘দেশ-রক্ষা’র শেষ যুদ্ধ। এজন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েমে যারা যুদ্ধ করেছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে তিরিশ লাখ সহযোদ্ধা কমরেডকে হারিয়েছেন, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ‘দেশ রক্ষার’ যুদ্ধে সহযোগিতা চেয়েছেন রাজাকার-আলবদরদের মা। যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানীদের সঙ্গে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন বলেই জানা যায়।
বিএনপি-জামায়াতের দেশ রক্ষার এই শেষ যুদ্ধ আর কিছু না, ব্যালটযুদ্ধে জিতে বাংলাদেশের চেহারাটা আবার ২০০১-২০০৬ সালের মতো করে ছলে-বলে-কৌশলে পাকিস্তানের সঙ্গে এমন একটা সম্পর্কে যুক্ত হওয়া যাতে কা-টা বাস্তবে লুজ ফেডারেশনের মতোই কিছু একটা দাঁড়ায়। জিয়াউর রহমান যা সূচনা করেছিলেন বিএনপি-জামায়াত এখন সেটাই বাস্তবে রূপ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
মরিয়া না হয়েও তো উপায় নেই! বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মই বেয়ে দ্রুত ওপরে উঠে যাচ্ছে! সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক। তারা আশ্চর্য হচ্ছে তবে স্বীকারও করছে বিশ্বজুড়ে গত অর্ধদশক মহামন্দা বিরাজ করলেও বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের প্রায় সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বিশ্বের বহু দেশের তুলনায়। চীন, ভারত, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধির চাকা শতকরা ৯ বা আট থেকে শতকরা ছয়ভাগে নেমে গেছে। অথচ তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলে নিক্সন-কিসিঞ্জার বিদ্রƒপাত্মক ও শ্লেষের ভাষায় যে দেশকে অভিহিত করেছিলেন, সেই বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ছয়ের কাছাকাছি আছে। গত ৪ বছরে বাংলাদেশের রফতানি ভল্যুম ও আয়, দুই-ই বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচক ইতিবাচক। গ্রামাঞ্চলে লোকের আয়-উন্নতি বেড়েছে। বেড়েছে গ্রামাঞ্চলে দ্রুত নগরায়ন। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় সম্প্রীতি মন্তব্য করা হয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ধারা বর্তমান পর্যায়েও স্থিত রাখতে পারলে উন্নত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে আগামী ৩০/৩৫ বছরের মধ্যেই। খাদ্যোৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনও বাংলাদেশের আর একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
সহ্য করা যায় নির্যাতন ও শোষণকারী দেশ পাকিস্তানকে রণাঙ্গনে হারিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের এমন শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি। কষ্ট হয় না দেখতে যে একদিকে পাকিস্তানকে দিন দিন ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে চলেছে আর অন্যদিকে বাংলাদেশ তার হাজার বছরের দারিদ্র্য ও দীনদশা কাটিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হওয়ার পথে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছে!
হ্যাঁ, অসহ্য লাগে। কষ্ট লাগে। আর কোন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর না হোক, বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীসমূহের খুবই কষ্ট লাগে। খুবই অসহ্য মনে হয় পাকিস্তান যখন নানা সমস্যায় ধুঁুঁকছে তখন উন্নয়নের রাস্তা ধরে বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়াটা। এবারে তাই ২০১৪ সালের নির্বাচনে শেষ চেষ্টা করে দেখতে চায় তারা। বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গীবাদী বাংলাদেশ গড়ার এই সঙ্কল্পেরই নাম দিয়েছেন ‘দেশ রক্ষা’র শেষ যুদ্ধ হিসেবে। এজন্য ষড়যন্ত্র ও রাজনীতি, উভয় পন্থায়ই চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
দেশ এক হিসেবে দুই ‘দলে’ বিভক্ত। ‘প্রো-আওয়ামী লীগ’ এবং ‘এন্টি-আওয়ামী লীগ’ দলে। আরেক হিসেবে বলা যায় মোটা দাগে দেশ বিভক্ত দুই রাজনীতিতে, স্বাধীনতা পক্ষের রাজনীতি এবং স্বাধীনতা বিরোধী রাজনীতিতে। প্রশ্ন দাঁড়ায় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী, মুক্তিযোদ্ধা এবং উন্নয়ন-যোদ্ধা, বাংলাদেশের জাগ্রত তরুণ সমাজ কোন্্ রাজনীতি বেছে নেবেন?
এই প্রশ্নের জবাব আমার দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। মানুষ উন্নয়নের পথই বেছে নেবে, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের পথ নয়। অন্ধকারের ফাঁদে পা দেবে না আলোর পথই বেছে নেবে তারা। এরকমই তো হওয়ার কথা। সূর্য পূর্ব দিকে উদয় হতে শুরু করলে অবশ্য ভিন্ন কথা।
No comments