বুয়েট শিক্ষক সমিতির কতিপয় নেতা শিবির ক্যাডারদের আশ্রয়! by বিভাষ বাড়ৈ
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবিরের নাশকতার বিরুদ্ধে জাতি যখন এককাট্টা তখনও উল্টোপথে হাঁটছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। শিক্ষক সমিতির নেতারা যেন শিবির ক্যাডারদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
এবার নাশকতার আলামতসহ শিবির ক্যাডারদের পুুলিশে ধরিয়ে দিয়ে আলামত জব্দ করাকে অপরাধ অভিহিত করে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। কেবল তাই নয়, মৌলবাদী শিক্ষক নেতাদের চাপে প্রশাসন উল্টো প্রগতিশীল ছাত্রদের অপরাধী চিহ্নিত করেছে এ খবর প্রকাশ করার অভিযোগে বদলি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা ও প্রগতিশীল কর্মকর্তাকে। এদিকে শিবির ক্যাডারদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় প্রগতিশীলদের শাস্তির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে বুয়েটজুড়ে। আবার রেজিস্ট্রার পদে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে ১৩৫ জনের পেছনে থাকা এক শিক্ষক নেতার লাইমলাইটে চলে আসায় নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে শিক্ষক সমিতির কর্মকা-। সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষাকালে ক্যাম্পাসে নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে এসে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল বুয়েটের শিবির ক্যাডার আইএম ইকবাল। শিবিরের সাম্প্রতিক তা-বের সঙ্গে এই শিবির ক্যাডারের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাকে ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল ছাত্ররা। আহসান উল্লাহ হলের ১০৩ নম্বর কক্ষের এই শিবির ক্যাডার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। বুয়েটে ৫৯ জন শিবির সদস্যের যে গোপন তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে তাতে নাম আছে ইকবালের। তার মোবাইল ফোনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাশকতা চক্রান্তের আলামত পাওয়া গেছে। তার মোবাইল থেকে পাঠানো মেসেজে বলা হয়েছে, গুলি, লাঠিচার্জ, বুলেট, টিয়ারশেল কোন কিছুতেই পিছপা হওয়া যাবে না। ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী।’ এছাড়া রাজধানীতে জামায়াতের সাম্প্রতিক তা-ব চালানোর সময় মৌচাকে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল বুয়েটের আরেক শিবির ক্যাডার শফিকুল ইসলাম। আটক হয় শিবির ক্যাডার আমিনুল। আটকের পর আবাসিক হলে এই শিবির ক্যাডারদের কক্ষে অভিযান চালায় ছাত্ররা। সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে মাঠে নামে বুয়েট ছাত্রলীগ। তারা প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালকসহ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আহসান উল্লাহ, নজরুল ইসলাম ও সোহরাওয়াদী হলে শিবিরের অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধারে তল্লাশি চালায়। এ সময় বেরিয়ে আসে বুয়েট ঘিরে পরিচালিত জামায়াত- শিবিরের ভয়াবহ নাশকতা চক্রান্তের নেটওয়ার্ক। আটক শিবির ক্যাডাররা পুলিশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ্যেই বলেছে, বুয়েটের সাম্প্রতিক আন্দোলন ছিল তাদের পরিকল্পনার ফসল। যেখানে মূল নেতৃত্বে ছিলেন তাদের সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বুয়েটের চার শিক্ষক। তারা সংগঠনকে নিয়মিত আর্থিকভাবেও সহায়তা করেন। ওই চার শিক্ষকের নামও প্রকাশ করেছে এই শিবির ক্যাডার। আটক শিবির ক্যাডার শফিকুল ইসলামের ফেসবুক ও ই-মেইলেও এই চার শিক্ষকের নাম পাওয়া গিয়েছিল। ফেসবুকে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া অভিযুক্ত শিক্ষকরা হচ্ছেন ড. মহবুব রাজ্জাক, ড. জাহাঙ্গীর, স্নিগ্ধা আফসানা ও মোহাম্মদ আলী। এদের প্রত্যেককেই নিজেদের লোক বলে দাবি করেছে আটক শিবির ক্যাডার। ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে পুুলিশ। ঘটনা গণমাধ্যমে কিছুদিন ধরে একটানা প্রকাশিত হওয়ায় এ নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও ছাত্রদের অপকর্মের চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়ায় তারা তোপের মুখে পড়ে। এরই মধ্যে নাশকতার আলামতসহ আটক আছে সাত শিবির ক্যাডার। পুলিশ বলছে, নাশকতায় জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থী সে যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু শিবিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ছয় ছাত্রকে অপরাধী উল্লেখ করে এক হল প্রাধ্যক্ষের সুপারিশপত্র দেয়ার ঘটনায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রগতিশীল হয়েও উল্টো শাস্তির মুখে পড়া এই ছাত্ররা হচ্ছে আহসান উল্লাহ হলের তন্ময়, ড. এম এ রশিদ হলের সিয়াম, নজরুল ইসলাম হলের মিঠুন, একই হলের জয় প্রকাশ রায়, আরিফুর রহমান কাজল ও আরিফ রায়হান দ্বীপ। অভিযোগ পাাওয়া গেছে, উপাচার্যের কাছে একটি হলের প্রাধ্যক্ষ শিক্ষক সমিতির জামায়াতী নেতাদের কথা অনুসারে ওই ৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে উপাচার্যের কাছে অভিযোগপত্র দিয়েছে। তবে এটি প্রকাশ হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, মৌলবাদী শিক্ষক নেতাদের চাপে প্রশাসন উল্টো প্রগতিশীল ছাত্রদের অপরাধী চিহ্নিত করেছে এমন খবর প্রকাশ করার অভিযোগ এনে বদলি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা ও এক প্রগতিশীল কর্মকর্তাকে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ বুয়েট শাখার সেক্রেটারি এই কর্মকর্তার নাম রফিকুল ইসলাম। তাঁকে ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালকের অফিসের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনা নিয়ে এখন বিব্রত শিক্ষকরাও। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম নজরুল ইসলাম যদিও বলেছেন, অন্যায়ভাবে কাউকে শাস্তি দেয়া হবে না। কিন্তু শিবিরের নাশকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে শাস্তি পেতে হবে? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এটা ঠিক হবে না। আমি বিষয়টি অবশ্যই দেখব। এদিকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, উপাচার্য ছাড়া এখন বুয়েট প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কোন কর্মকর্তা সরকারের প্রতি আস্থাশীল নয়। অধিকাংশই সরকারবিরোধী এবং মৌলবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরা উপাচার্যকে চাপ দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত।
No comments