জীবনের বাস্তবতায় বড়দিনের বাণী by রেভা
যিহুদিয়ার দীনদরিদ্র রাখালদের কাছে সেই প্রথম বড়দিনের রাতে যিশুর জন্মবারতা জানিয়ে স্বর্গদূতরা এই আনন্দের গান শুনিয়েছিলেন, 'ঊর্ধ্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে তাঁহার প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।' স্বর্গীয় সে আনন্দ হওয়ার কথা সব মানুষেরই।
দুঃখকষ্টে ভরা জীবনযুদ্ধে সর্বস্বান্ত মানুষের জন্য সেদিন স্বর্গের দূতরা ত্রাণকর্তা খ্রিস্টের শুভ জন্মবারতা শোনালেন। বাইবেলের শিক্ষায় সব সম্পদ, সৃষ্টির স্রষ্টা ও একমাত্র সার্বভৌম মালিক ঈশ্বর, যিনি প্রেমময় ও ন্যায়বান। 'পৃথিবী ও সব বস্তু সদাপ্রভুরই; জগৎ ও তন্নিবাসীগণ তাঁহার' (গীতসংহিতা ২৪ : ১)। ঈশ্বর চান সব মানুষই যেন তাঁর সম্পদ ভোগ করে এবং তাঁর প্রশংসা করে। কিন্তু স্বার্থপরতা ও লোভের কারণে মানুষ নিজের জন্য ও অন্যের দুঃখের কারণ হয়; সবল ও চতুর মানুষ অন্যের অধিকার হরণ করে; সমাজে আসে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা। তা থেকে তৈরি হয় অশান্তি ও হিংসা। বাইবেলের অনেক অংশ জুড়েই রয়েছে ন্যায্যতার বিষয়ে সুস্পষ্ট শিক্ষা। এই ন্যায্যতার মানবসমাজ গঠনের পথে দরিদ্রের প্রতি প্রেম প্রদর্শনের বিষয়টি পুরনো ও নতুন- উভয় নিয়মে বড় এক স্থান করে নিয়েছে। বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে ঈশ্বর মূল্য দেন ন্যায্যতাকে : 'ধার্মিকতা ও ন্যায়ের অনুষ্ঠান সদাপ্রভুর কাছে বলিদান অপেক্ষা গ্রাহ্য।' তিনি চান যারা সমর্থ, সবল ও সক্ষম, তারা দুঃখী, দরিদ্র ও দুর্বলের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। খ্রিস্টধর্ম দর্শনে মানুষের জীবনের জন্য পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। মানুষ দেহে, মনে ও আত্মায় পরিপূর্ণ ও সুষম জীবন নিয়ে বেঁচে থাকবে, তা-ই স্রষ্টা ও প্রেমময় ঈশ্বরের ইচ্ছা। যাকোব তাঁর পত্রে বলেছেন, 'ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা এবং সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম' (যাকোব ১ : ২৭)। দরিদ্রের সেবা ধর্মের অঙ্গ। ঈশ্বর সব নবীর মধ্য দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে প্রকৃত কৃচ্ছ্রসাধন ও উপবাস কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকাই নয়; বরং তার সঙ্গে থাকা চাই ন্যায্যতার কাজ, দুর্বল-দরিদ্রের আর্থসামাজিক মুক্তিদান, যারা সবলের দ্বারা অত্যাচারিত ও শোষিত, তাদের আর্থিক কষ্ট দূর করা। ধর্মকর্মের প্রকাশ হতে হবে সমাজে সব কিছুতে ন্যায়বিচারের কাজে। আমোষ তাই বলেছেন, 'বিচার জলবৎ প্রবাহিত হউক; ধার্মিকতা চিরপ্রবহমান স্রোতের ন্যায় বহুক।' ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচারকে এক করে দেখা হয়েছে এখানে। মীখা নবীর মাধ্যমে ঈশ্বর বলেছেন, 'ঈশ্বর লৌকিক ধর্মকর্মে সুখী নন।' তাই বলা হয়েছে, 'হে মনুষ্য, যাহা ভালো তাহা তিনি তোমাকে জানাইয়াছেন; বস্তুত ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?' তাই বাইবেলে দরিদ্রদের প্রতি ধনী বা সবল লোকদের সেবা বা প্রেমের কাজ হচ্ছে মূলত ন্যায্যতা ও ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও নম্রতার প্রমাণ। তা কেবল করুণা করার বিষয়ই নয়।
আমরা ধর্মের বাণী সঠিক পালন করি না বলেই পৃথিবীর বর্তমান এই হাল হয়েছে, যেখানে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ পৃথিবীর ৯০ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে আর ৯০ শতাংশ মানুষ বাকি ১০ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে। ওই ৯০ শতাংশ মানুষের পক্ষে ঈশ্বর কথা বলেন আমাদের বিবেকে। আমাদের ঐকান্তিক কামনা ও চেষ্টা হওয়া উচিত এমন এক সমাজ ও পৃথিবী গড়া, যেখানে প্রতিটি মানুষ মানবীয় সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সুন্দর পরিবেশ ও সুযোগ পাবে, পাবে তার ন্যায্য অধিকার, হবে তার সুস্থ দেহ, মন ও অন্তর এবং সবার জীবনেই হবে স্রষ্টার প্রশংসা।
দুই হাজার বছর আগে যিশুখ্রিস্টের জন্মের সময় স্বার্থপরতা ও অহংকারের কারণে গোটা মানবজাতির যে অবস্থা ছিল, তা আজও আছে। মানুষের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ তার হৃদয়ের পরিবর্তন। সর্বত্রই অশান্তি, হিংসা ও মূল্যবোধের যেন অপ্রতিরোধ্য অবক্ষয়। মানুষে-মানুষে, ধনী-নির্ধন, সবল-দুর্বল, ক্ষমতাহীন ও ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষে ভেদাভেদ দিনে দিনে আকারে-প্রকারে বেড়ে চলছে। ঈশ্বর মানুষের সমূহ মুক্তির জন্য মানবরূপে খ্রিস্টের মধ্যে নিজের প্রেম, পবিত্রতা, ধার্মিকতা ও ন্যায্যতাকে প্রকাশ করলেন। মানুষের অবস্থা নিয়ে তিনি কেবল ভাবেননি, ঈশ্বরবিহীন মানুষের অবস্থাকে নিজে ভোগ করলেন, কারণ তিনি তাঁর বাস্তবতাকে পরিপূর্ণরূপে উপলব্ধি করেছেন।
যিশুখ্রিস্টের সম্পূর্ণ ঈশ্বরকেন্দ্রিক, মানুষের পরিত্রাণের জন্য উৎসর্গিত জীবন ও সব সৃষ্টির ওপরে তাঁর কর্তৃত্বপূর্ণ জীবন ও কাজ নিঃশর্তভাবেই প্রমাণ দেয় যে তাঁর ব্যক্তিসত্তায় ঈশ্বর ও মানুষের পরিপূর্ণতা অবিচ্ছেদ্য ও আশ্চর্যরূপে একত্রে বাস করেছে। ঈশ্বরের পরাক্রম ও সার্বভৌমত্বের ওপর নির্ভর করেই তিনি মানুষ হয়েও তাঁর কৃত আশ্চর্য কাজগুলো সাধন করতে পেরেছেন। তাঁর আগমনেই পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্য উপস্থিত হয়েছে, তাঁর মণ্ডলী যার বাহ্যিক চিহ্ন। খ্রিস্টের বিষয়ে পিতর সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, 'হে ইসরায়েলিরা, এই সব কথা শুনো। নাসরতীয় যিশু পরাক্রম-কার্য, অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্নগুলো দ্বারা তোমাদের কাছে ঈশ্বর-কর্তৃক প্রমাণিত মনুষ্য; তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বর তোমাদের মধ্যে ওই সব কার্য করিয়াছেন' (প্রেরিত ২ : ২২)। আদমের পাপের ফলে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি ও সাদৃশ্য নষ্ট হয়ে গেলেও তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি। সব সৃষ্টি বা প্রকৃতির ওপর খ্রিস্টের যে অধিকার ও কর্তৃত্ব আছে, তা আমাদের এই নিশ্চয়তা দেয় যে খ্রিস্টগত জীবনেও সেই একটি কর্তৃত্ব থাকবে। কারণ সে জীবন্ত খ্রিস্টের মতোই- ঈশ্বরকেন্দ্রিক, মানবমুখী ও অন্য সব সৃষ্টির সঙ্গে সুসম্পর্কযুক্ত। সে জীবন সব জড়তা ও অন্ধকারের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত। আর তা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি তথা তাঁর নৈতিক গুণাবলি প্রতিফলিত করে। এদিন প্রথম আদম ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্যতায় যা হারিয়েছেন, শেষ আদম খ্রিস্টের কারণেই মানুষ তা ফিরে পেতে পারে। সম্পূর্ণ ঈশ্বরকেন্দ্রিক জীবন হবে মানুষের প্রতি স্বর্গীয় প্রেমে পূর্ণ এবং তা হবে সব জড়তার ওপরে বিজয়ী। খ্রিস্টের জীবন এই ত্রিবিধ জীবন। আদি পিতা-মাতা সে জীবন হারিয়ে ফেলেন। অদৃশ্য ঈশ্বরের দৃশ্যমান প্রতিমূর্তি নাসরতীয় যিশু মানব-খ্রিস্টে পরিপূর্ণরূপে বাস করেছে। সে প্রতিমূর্তি আমরা তাঁর মধ্যেই খুঁজে পাই; হারিয়ে যাওয়া সেই ঈশ্বরের সেই দানকে আবার লাভ করি। মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের নৈতিক সাদৃশ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কারণে তাঁর আগমন।
খ্রিস্টের আত্মদান ও প্রেম আমাদের সবাইকে আজ নতুন করে অনুপ্রেরণা দান করুক, যেন আমরাও একে অন্যকে সেবা করতে পারি। পৃথিবীতে মানুষে-মানুষে যদি ন্যায্যতা ও শান্তি থাকে, তাহলেই স্বর্গে ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমা হবে। অশান্ত এ পৃথিবীর মানুষ যদি যিশুখ্রিস্টের নিঃস্বার্থ প্রেম এবং জীবন সম্পর্কে তাঁর পবিত্র দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলতে চেষ্টা করত, তাহলে পৃথিবীর অবস্থা কতই না সুন্দর ও শান্তিময় হতো! জগৎ আজ কেবল প্রেমহীন ভালোবাসার ভালো ভালো কথায় ভরে গেছে, নিষ্ক্রিয় উৎকণ্ঠার ভারে মানুষ নুয়ে পড়ছে। কর্তব্যজ্ঞানহীন উপদেশের বোঝা আজ আর নয়। সর্বস্তরে আজ চাই কথা ও কাজের মিল। বড়দিন এসেছে আমাদের এ আহ্বান জানাতে, যেন আমরা একে অন্যের সঙ্গে শান্তি ও সমৃদ্ধ জীবনের জন্য সচেষ্ট হই, হই সক্রিয়। আমাদের এই ভাবনা-চেতনা সবার মধ্যেই জাগরিত হোক, হোক তা কাজে পরিণত। সনাতন ঈশ্বরের চিন্তা ও বাক্য যেমন খ্রিস্টেতে মানবাকারে মূর্ত হয়েছে, তেমনই হোক আমাদের সব সুন্দর কথা ও চিন্তা।
লেখক : খ্রিস্টীয় ঈশতত্ত্ব মহাবিদ্যালয় বাংলাদেশের অধ্যক্ষ
আমরা ধর্মের বাণী সঠিক পালন করি না বলেই পৃথিবীর বর্তমান এই হাল হয়েছে, যেখানে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ পৃথিবীর ৯০ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে আর ৯০ শতাংশ মানুষ বাকি ১০ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে। ওই ৯০ শতাংশ মানুষের পক্ষে ঈশ্বর কথা বলেন আমাদের বিবেকে। আমাদের ঐকান্তিক কামনা ও চেষ্টা হওয়া উচিত এমন এক সমাজ ও পৃথিবী গড়া, যেখানে প্রতিটি মানুষ মানবীয় সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সুন্দর পরিবেশ ও সুযোগ পাবে, পাবে তার ন্যায্য অধিকার, হবে তার সুস্থ দেহ, মন ও অন্তর এবং সবার জীবনেই হবে স্রষ্টার প্রশংসা।
দুই হাজার বছর আগে যিশুখ্রিস্টের জন্মের সময় স্বার্থপরতা ও অহংকারের কারণে গোটা মানবজাতির যে অবস্থা ছিল, তা আজও আছে। মানুষের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ তার হৃদয়ের পরিবর্তন। সর্বত্রই অশান্তি, হিংসা ও মূল্যবোধের যেন অপ্রতিরোধ্য অবক্ষয়। মানুষে-মানুষে, ধনী-নির্ধন, সবল-দুর্বল, ক্ষমতাহীন ও ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষে ভেদাভেদ দিনে দিনে আকারে-প্রকারে বেড়ে চলছে। ঈশ্বর মানুষের সমূহ মুক্তির জন্য মানবরূপে খ্রিস্টের মধ্যে নিজের প্রেম, পবিত্রতা, ধার্মিকতা ও ন্যায্যতাকে প্রকাশ করলেন। মানুষের অবস্থা নিয়ে তিনি কেবল ভাবেননি, ঈশ্বরবিহীন মানুষের অবস্থাকে নিজে ভোগ করলেন, কারণ তিনি তাঁর বাস্তবতাকে পরিপূর্ণরূপে উপলব্ধি করেছেন।
যিশুখ্রিস্টের সম্পূর্ণ ঈশ্বরকেন্দ্রিক, মানুষের পরিত্রাণের জন্য উৎসর্গিত জীবন ও সব সৃষ্টির ওপরে তাঁর কর্তৃত্বপূর্ণ জীবন ও কাজ নিঃশর্তভাবেই প্রমাণ দেয় যে তাঁর ব্যক্তিসত্তায় ঈশ্বর ও মানুষের পরিপূর্ণতা অবিচ্ছেদ্য ও আশ্চর্যরূপে একত্রে বাস করেছে। ঈশ্বরের পরাক্রম ও সার্বভৌমত্বের ওপর নির্ভর করেই তিনি মানুষ হয়েও তাঁর কৃত আশ্চর্য কাজগুলো সাধন করতে পেরেছেন। তাঁর আগমনেই পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্য উপস্থিত হয়েছে, তাঁর মণ্ডলী যার বাহ্যিক চিহ্ন। খ্রিস্টের বিষয়ে পিতর সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, 'হে ইসরায়েলিরা, এই সব কথা শুনো। নাসরতীয় যিশু পরাক্রম-কার্য, অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্নগুলো দ্বারা তোমাদের কাছে ঈশ্বর-কর্তৃক প্রমাণিত মনুষ্য; তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বর তোমাদের মধ্যে ওই সব কার্য করিয়াছেন' (প্রেরিত ২ : ২২)। আদমের পাপের ফলে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি ও সাদৃশ্য নষ্ট হয়ে গেলেও তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি। সব সৃষ্টি বা প্রকৃতির ওপর খ্রিস্টের যে অধিকার ও কর্তৃত্ব আছে, তা আমাদের এই নিশ্চয়তা দেয় যে খ্রিস্টগত জীবনেও সেই একটি কর্তৃত্ব থাকবে। কারণ সে জীবন্ত খ্রিস্টের মতোই- ঈশ্বরকেন্দ্রিক, মানবমুখী ও অন্য সব সৃষ্টির সঙ্গে সুসম্পর্কযুক্ত। সে জীবন সব জড়তা ও অন্ধকারের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত। আর তা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি তথা তাঁর নৈতিক গুণাবলি প্রতিফলিত করে। এদিন প্রথম আদম ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্যতায় যা হারিয়েছেন, শেষ আদম খ্রিস্টের কারণেই মানুষ তা ফিরে পেতে পারে। সম্পূর্ণ ঈশ্বরকেন্দ্রিক জীবন হবে মানুষের প্রতি স্বর্গীয় প্রেমে পূর্ণ এবং তা হবে সব জড়তার ওপরে বিজয়ী। খ্রিস্টের জীবন এই ত্রিবিধ জীবন। আদি পিতা-মাতা সে জীবন হারিয়ে ফেলেন। অদৃশ্য ঈশ্বরের দৃশ্যমান প্রতিমূর্তি নাসরতীয় যিশু মানব-খ্রিস্টে পরিপূর্ণরূপে বাস করেছে। সে প্রতিমূর্তি আমরা তাঁর মধ্যেই খুঁজে পাই; হারিয়ে যাওয়া সেই ঈশ্বরের সেই দানকে আবার লাভ করি। মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের নৈতিক সাদৃশ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কারণে তাঁর আগমন।
খ্রিস্টের আত্মদান ও প্রেম আমাদের সবাইকে আজ নতুন করে অনুপ্রেরণা দান করুক, যেন আমরাও একে অন্যকে সেবা করতে পারি। পৃথিবীতে মানুষে-মানুষে যদি ন্যায্যতা ও শান্তি থাকে, তাহলেই স্বর্গে ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমা হবে। অশান্ত এ পৃথিবীর মানুষ যদি যিশুখ্রিস্টের নিঃস্বার্থ প্রেম এবং জীবন সম্পর্কে তাঁর পবিত্র দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলতে চেষ্টা করত, তাহলে পৃথিবীর অবস্থা কতই না সুন্দর ও শান্তিময় হতো! জগৎ আজ কেবল প্রেমহীন ভালোবাসার ভালো ভালো কথায় ভরে গেছে, নিষ্ক্রিয় উৎকণ্ঠার ভারে মানুষ নুয়ে পড়ছে। কর্তব্যজ্ঞানহীন উপদেশের বোঝা আজ আর নয়। সর্বস্তরে আজ চাই কথা ও কাজের মিল। বড়দিন এসেছে আমাদের এ আহ্বান জানাতে, যেন আমরা একে অন্যের সঙ্গে শান্তি ও সমৃদ্ধ জীবনের জন্য সচেষ্ট হই, হই সক্রিয়। আমাদের এই ভাবনা-চেতনা সবার মধ্যেই জাগরিত হোক, হোক তা কাজে পরিণত। সনাতন ঈশ্বরের চিন্তা ও বাক্য যেমন খ্রিস্টেতে মানবাকারে মূর্ত হয়েছে, তেমনই হোক আমাদের সব সুন্দর কথা ও চিন্তা।
লেখক : খ্রিস্টীয় ঈশতত্ত্ব মহাবিদ্যালয় বাংলাদেশের অধ্যক্ষ
No comments