ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস-এ অরাজকতা চলবেই?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার ভোরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দুটি গোষ্ঠীর সশস্ত্র সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত। সংগঠনের নেতাকর্মীরাই পরস্পরকে কুপিয়েছে কিংবা গুলি-বোমায় আহত করেছে। আগের রাতে তাদের হাতে বই-খাতা নয়, বরং উঠে আসে চাপাতি-রামদা-পিস্তল।
শাহবাগ থানা পুলিশের ভাষ্যমতে, 'মুহসীন হল থেকে প্রশাসনিক ভবন খুব কাছে। ফলে বিভিন্ন টেন্ডারের কাজে প্রভাব রাখা যায় এ হল থেকে। তাই হলের নিয়ন্ত্রণ রাখতেই এ সংঘর্ষ।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মুহসীন হল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই ছাত্রলীগের দুটি বিবদমান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রণপ্রস্তুতি সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে অবগত ছিল। সোমবার রাতে মুহসীন হলের 'ছাত্রলীগ নেতাদের' সঙ্গে প্রক্টোরিয়াল টিমের বৈঠক হয় এবং তিন ঘণ্টা সভা অনুষ্ঠানের পর সবাইকে 'সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে' ভোররাত সাড়ে ৪টায় সভা শেষ হয়। এ সময় হল প্রাঙ্গণে পুলিশ উপস্থিত ছিল। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে আপসরফার চেষ্টা না করে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা। পুলিশ নিজেরাও এ দায়িত্ব পালন করতে পারত। আর সেটা করা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নামধারী সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাস রক্তাক্ত করতে পারত না। সংঘর্ষ শেষ হওয়ার ১৬-১৭ ঘণ্টা পর মুহসীন হলে পুলিশ তল্লাশি চালায় এবং কার্যত কোনো অস্ত্রের সন্ধান পায়নি। অথচ মঙ্গলবার প্রত্যুষে পুলিশ হলে থাকা অবস্থাতেই সন্ত্রাসীরা চর দখলের কায়দার উন্মত্ত আচরণ করতে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের কারোরই তাতে সম্বিত ফেরেনি। তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কাছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আহ্বান জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের তা পরোয়া করতে বয়েই গেছে! তারা ছাত্র সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বটে, কিন্তু তার ঐতিহ্য ধারণ করে না। এর প্রয়োজনও বোধ করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, 'এ প্রতিষ্ঠানের কিছু ছাত্র পরস্পরকে এভাবে কোপাতে পারে, এমন বীভৎসতা দেখে আমরা আতঙ্কিত। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।' তার এ অবস্থান যথার্থ। ইতিমধ্যে অনেক বিলম্ব ঘটে গেছে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে নয়, দেশের আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এ ধরনের সন্ত্রাসীদের দাপট-দৌরাত্ম্যে ছাত্র সংগঠনের নাম ব্যবহার করছে বটে, কিন্তু মূলত তারা হচ্ছে সন্ত্রাসী। তাদের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি ঘটছে, শিক্ষার পরিবেশ বিঘি্নত হচ্ছে। সরকারের সুনামহানি ঘটছে। তারপরও কি এদের আটক করার জন্য আইনের লম্বা হাত এতটুকু প্রসারিত হবে না? মঙ্গলবার প্রত্যুষের নারকীয় সন্ত্রাসের পর মুহসীন হল ছাত্রলীগের কমিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ১১ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু যারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেও তো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা ও মদদদানের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি খোদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও এমন অভিযোগে অভিযুক্ত। আওয়ামী লীগ তাদের একটি সংগঠনের এমন অনাচার ও অরাজক কর্মকাণ্ড আর কতদিন সহ্য করবে?
No comments