পাঠকের চিঠি- শান্তি-মিলনের দিন
বাংলাদেশ একটি উৎসবমুখর ও উৎসবপ্রিয় দেশ। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ
বাংলাদেশ। তাই এই দেশে অনেক পুজো-পার্বণ ও উৎসব পালিত হয়। তার মধ্যে বড়দিন
হচ্ছে অন্যতম। বড়দিন প্রধানত একটি ধর্মীয় উৎসব।
তথাপি ধর্মীয় উৎসবকে
অতিক্রম করে সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। কারণ সমাজে অবস্থিত প্রত্যেক
মানুষের জীবনে বড়দিন নিয়ে আসে হতাশার মাঝে আশা, নিরানন্দের মাঝে আনন্দ,
অশান্তির মাঝে শান্তি, বেদনার মাঝে সুখ। সমাজে আনে মিলন। সবাই
বিভেদ-দ্বন্দ্ব, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে বড়দিন উৎসবে সবাই একত্রে মিলে মিশে
অনুষ্ঠান করে, প্রার্থনা করে, সারা রাত জেগে কীর্তন করে এবং এক অপরকে
নিমন্ত্রণ করে। সবাই পরস্পরকে বড়দিনের কার্ড পাঠায়, ফোনে ও ই-মেইলে
শুভেচ্ছা পাঠায়। ধর্মীয় নেতা-নেত্রীগণ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিমন্ত্রণ
করে বড়দিনের আনন্দ সহভাগিতা করে। এমনি করে বড়দিন হয়ে উঠে সামাজিক উৎসব।
ক্ষুদ্র পরিসরে বলা যায়, বড়দিন একটি ধর্র্মীয় উৎসব ও পারিবারিক উৎসব। আমরা অনেক সময় খ্রিস্টের সেই পারিবারিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। পাপ, হিংসা, বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব, সার্থপরতা, অহঙ্কার আমাদের খ্রিস্টের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই রাখালদের মতো সরলতা ও উন্মুক্ততা আমাদের পরিবারে বৃদ্ধি করা দরকার। তাতে পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় ও গভীর হবে। প-িতদের মতো জ্ঞান বুদ্ধি আমাদের বেশি থাকতে পারে। কিন্তু তাদের মতো নিরহঙ্কারী হতে হবে। তারাই তো মহাজ্ঞানী, যারা প্রকৃত সত্যের সন্ধান পেয়েছে। যিশুই তো সেই সত্য। আমাদের পরিবারের মাঝেও সেই চেতনা জাগরিত করা আবশ্যক। লেখাপড়ার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক পরিচর্যাও প্রয়োজন।
বড়দিনের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো পারিবাকি সম্পর্ক সুদৃঢ় ও গভীর করা। হতে পারে পরিবারের কেউ বিদেশে আছে কিংবা দূরে অবস্থান করছে। বড়দিন হলো সেই দূরত্ব কমিয়ে আনার একটি পারিবারিক উৎসব। যারা এ দিনে আমাদের কাছে নেই, তাদের স্মরণ করার দিন। ফোন করে, কার্ড পাঠিয়ে ও উপহার পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর দিন। এ দিনে অনেকেই ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে এবং প্রিয়জনের সাথে দেখা করে। নিজের স্বার্থ ত্যাগ করেছেন। মারিয়া জানেন কুমারী অবস্থায় গর্ভধারণ করা নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবু মারিয়া নিজের সুনাম, খ্যাতি, সুবিধা ইত্যাদি ত্যাগ করে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে গ্রহণ করেছেন।
আমরা কি করব? এই বড়দিন নিজেদের বদ অভ্যাস, মন্দ চিন্তা-ভাবনা ত্যাগ করে পাপময় স্বভাব ত্যাগ করে যিশুর চরণে ধূপ ধুনোর মতো মূল্যবান উপহার হতে পারি। আসুন আমরা এই বড়দিনে বিনম্রতায়, হৃদয়ে ও ভালবাসায় বড় হওয়ার সাধনা করি।
গৌরব জি. পাথাং
মড়ঁৎড়নপংপ@মসধরষ.পড়স
No comments