জন্মদিন- স্থাপত্যের এক মহান কবি by সামসুল ওয়ারেস
আজ ২৫ ডিসেম্বর, বাস্তু-আচার্য মাজহারুল ইসলামের ৮৯তম জন্মদিন। দীর্ঘ চার বছর অসুস্থ থেকে তিনি গত ১৫ জুলাই গভীর রাতে মারা যান। মৃত্যুর পর এটাই তাঁর প্রথম জন্মদিন।
এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আজ বিকেল তিনটা থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও স্মৃতিচারণা করা হবে।
মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষিত আধুনিক স্থপতি। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম আধুনিক স্থাপত্যকর্মের স্রষ্টা ও বাংলাদেশে শুদ্ধ স্থাপত্য নির্মাণ ও চর্চার পথিকৃৎ। তাঁর স্বপ্ন ছিল ৫৫ হাজার বর্গমাইলের প্রতি বর্গফুট জায়গা ভৌত পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রুচিশীল ও সভ্য দেশে পরিণত করা। মোগল, ঔপনিবেশিক ও প্রথাগত সব ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ আধুনিক ও যুগোপযোগী স্থাপত্যের স্বরূপ নির্ণয়, বিকাশ ও প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান সর্বাধিক।
মাজহারুল ইসলাম ১৯২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার কৃষ্ণনগরের সুন্দরপুর গ্রামে তাঁর নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৪৬ সালে পুরকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে ঢাকায় যোগাযোগ, বিল্ডিং ও সেচ মন্ত্রণালয়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫০ সালে তিনি বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান এবং ১৯৫২ সালে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে দেশে ফিরে তিনি সরকারে যোগ দেন। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু ও কারুকলা ভবন ডিজাইনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। বাংলাদেশের জলবায়ু, সংস্কৃতি, সহজলভ্য নির্মাণসামগ্রী ও সমকালীন প্রযুক্তির ব্যবহারে চারু ও কারুকলা ভবনের স্থাপত্য ডিজাইন ও সামগ্রিক পরিবেশ তিনি এমনভাবে সৃষ্টি করেন, যেন তা একটি সৃজনশীল শিক্ষাক্রমের সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। ১৯৫৫ সালে ভবনটির নির্মাণ শেষ হলে বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক স্থাপত্য রচিত হয়।
মাজহারুল ইসলাম স্থাপত্যকে শুধু ব্যবহারিক শিল্প হিসেবে গণ্য করেননি। তিনি স্থাপত্যকে সাধারণ মানুষের সুন্দর ও সভ্য জীবনে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে দেখেন। বুর্জোয়া স্থাপত্যরীতি পরিহার করে দেশজ সহজলভ্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে, সব ধরনের অলংকরণ ও সজ্জা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে, নির্মাণসামগ্রীর নিজস্ব সৌন্দর্য ব্যক্ত করে, কুসংস্কারমুক্ত এক স্বচ্ছ ও খোলামেলা স্থাপত্য রচনা করে তিনি সর্বসাধারণের পক্ষে অবস্থান নেন। তাঁর স্থাপত্য যেন দরিদ্রকে টেনে তোলে আর উচ্চবিত্তকে খর্ব করে সবাইকে শিক্ষিত, রুচিশীল মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজের সদস্যকরণের ঘোষণাপত্র।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ১৯৬৪ সালে পুরকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে স্থাপত্য উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান ‘বাস্তুকলাবিদ’ গঠন করেন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সাত বছর, সম্পূর্ণ শৈল্পিক স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর শত ভাগ ক্ষমতা উজাড় করে স্থাপত্য চর্চা করেন। বাস্তুকলাবিদ থেকে মাজহারুল ইসলাম একের পর এক বিশ্বমানের স্থাপত্য রচনা করেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বিচারে মাজহারুল ইসলামই ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ স্থপতি। তিনি বহু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। স্বাধীনতার পর প্রচণ্ড দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে আপসহীন, আদর্শবাদী ইসলাম খাপ খাওয়াতে পারেননি। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে তিনি স্থাপত্য সৃষ্টি করার সামান্যই সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর যখন সৃষ্টি করার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময় ছিল, তখনই নেমে আসে তাঁর জীবনে কষ্টকর সৃষ্টিহীনতা, অবহেলা ও নীরবতা। তিনি সারা জীবন সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার কিন্তু নিজের ব্যাপারে সম্পূর্ণ প্রচারবিমুখ।
মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ও প্রজ্ঞায় স্থপতি ইনস্টিটিউট একটি শক্ত ভিত্তি লাভ করে। তিনি স্থপতি লুই আই কানকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান শেরেবাংলা নগর কমপ্লেক্স ডিজাইন করার জন্য। তা ছাড়া ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঁচটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ডিজাইন করার জন্য তিনি যথাক্রমে স্থপতি পল রুডলফ ও স্টেনলি টাইগারম্যানকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের মাটিতে পৃথিবী বিখ্যাত মার্কিন স্থপতিদের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি সমৃদ্ধ আধুনিক স্থাপত্য সংস্কৃতি গড়ে তোলাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
বাস্তুকলাবিদের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কর্মগুলোর মধ্যে আছে মাজহারুল ইসলামের নিজের বাড়ি, নিপা ভবন, কৃষি ভবন, সাধারণ বিমা ভবন, পাঁচটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দুটি। এসব স্থাপত্য মৌলিক, সৎ এবং চিন্তার উদ্রেক করে। তাঁর স্থাপত্য নাগরিক জীবন বিদ্ধ, শক্ত ও প্রচণ্ডতাময়। বর্গাকার, ত্রিভুজ, রম্বস প্রভৃতি মৌলিক জ্যামিতির ব্যবহারে তাঁর স্থাপত্য বিমূর্ত, শুদ্ধ ও আদর্শের অনুসন্ধানী। স্বাধীনতা লাভের পর বিশ্ববিদ্যালয় দুটির সরকারি প্রজেক্ট তিনি ফিরে পাননি। ফলে মাস্টারপ্ল্যান ও সামান্য কিছু ভবন ছাড়া তিনি তাঁর আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ দর্শন বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
মাজহারুল ইসলাম ছিলেন প্রচণ্ড ধীশক্তিসম্পন্ন, স্থাপত্যের এক মহান দার্শনিক কবি।
তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে এগিয়ে। তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ এক নির্ভীক সৈনিক, তাঁর যুদ্ধ তিনি একাই লড়েছেন। বাংলাদেশের স্থাপত্য অঙ্গনে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব আজও বজায় আছে। মৃত্যুর আগেই তিনি ছিলেন কিংবদন্তি পুরুষ, মৃত্যুর পর তা আরও বোধগম্য হচ্ছে। তাঁর জন্মদিনে তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
সামসুল ওয়ারেস
২৪ ডিসেম্বর, ২০১২
মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষিত আধুনিক স্থপতি। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম আধুনিক স্থাপত্যকর্মের স্রষ্টা ও বাংলাদেশে শুদ্ধ স্থাপত্য নির্মাণ ও চর্চার পথিকৃৎ। তাঁর স্বপ্ন ছিল ৫৫ হাজার বর্গমাইলের প্রতি বর্গফুট জায়গা ভৌত পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রুচিশীল ও সভ্য দেশে পরিণত করা। মোগল, ঔপনিবেশিক ও প্রথাগত সব ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ আধুনিক ও যুগোপযোগী স্থাপত্যের স্বরূপ নির্ণয়, বিকাশ ও প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান সর্বাধিক।
মাজহারুল ইসলাম ১৯২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার কৃষ্ণনগরের সুন্দরপুর গ্রামে তাঁর নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৪৬ সালে পুরকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে ঢাকায় যোগাযোগ, বিল্ডিং ও সেচ মন্ত্রণালয়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫০ সালে তিনি বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান এবং ১৯৫২ সালে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে দেশে ফিরে তিনি সরকারে যোগ দেন। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু ও কারুকলা ভবন ডিজাইনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। বাংলাদেশের জলবায়ু, সংস্কৃতি, সহজলভ্য নির্মাণসামগ্রী ও সমকালীন প্রযুক্তির ব্যবহারে চারু ও কারুকলা ভবনের স্থাপত্য ডিজাইন ও সামগ্রিক পরিবেশ তিনি এমনভাবে সৃষ্টি করেন, যেন তা একটি সৃজনশীল শিক্ষাক্রমের সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। ১৯৫৫ সালে ভবনটির নির্মাণ শেষ হলে বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক স্থাপত্য রচিত হয়।
মাজহারুল ইসলাম স্থাপত্যকে শুধু ব্যবহারিক শিল্প হিসেবে গণ্য করেননি। তিনি স্থাপত্যকে সাধারণ মানুষের সুন্দর ও সভ্য জীবনে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে দেখেন। বুর্জোয়া স্থাপত্যরীতি পরিহার করে দেশজ সহজলভ্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে, সব ধরনের অলংকরণ ও সজ্জা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে, নির্মাণসামগ্রীর নিজস্ব সৌন্দর্য ব্যক্ত করে, কুসংস্কারমুক্ত এক স্বচ্ছ ও খোলামেলা স্থাপত্য রচনা করে তিনি সর্বসাধারণের পক্ষে অবস্থান নেন। তাঁর স্থাপত্য যেন দরিদ্রকে টেনে তোলে আর উচ্চবিত্তকে খর্ব করে সবাইকে শিক্ষিত, রুচিশীল মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজের সদস্যকরণের ঘোষণাপত্র।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ১৯৬৪ সালে পুরকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে স্থাপত্য উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান ‘বাস্তুকলাবিদ’ গঠন করেন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সাত বছর, সম্পূর্ণ শৈল্পিক স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর শত ভাগ ক্ষমতা উজাড় করে স্থাপত্য চর্চা করেন। বাস্তুকলাবিদ থেকে মাজহারুল ইসলাম একের পর এক বিশ্বমানের স্থাপত্য রচনা করেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বিচারে মাজহারুল ইসলামই ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ স্থপতি। তিনি বহু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। স্বাধীনতার পর প্রচণ্ড দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে আপসহীন, আদর্শবাদী ইসলাম খাপ খাওয়াতে পারেননি। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে তিনি স্থাপত্য সৃষ্টি করার সামান্যই সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর যখন সৃষ্টি করার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময় ছিল, তখনই নেমে আসে তাঁর জীবনে কষ্টকর সৃষ্টিহীনতা, অবহেলা ও নীরবতা। তিনি সারা জীবন সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার কিন্তু নিজের ব্যাপারে সম্পূর্ণ প্রচারবিমুখ।
মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ও প্রজ্ঞায় স্থপতি ইনস্টিটিউট একটি শক্ত ভিত্তি লাভ করে। তিনি স্থপতি লুই আই কানকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান শেরেবাংলা নগর কমপ্লেক্স ডিজাইন করার জন্য। তা ছাড়া ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঁচটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ডিজাইন করার জন্য তিনি যথাক্রমে স্থপতি পল রুডলফ ও স্টেনলি টাইগারম্যানকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের মাটিতে পৃথিবী বিখ্যাত মার্কিন স্থপতিদের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি সমৃদ্ধ আধুনিক স্থাপত্য সংস্কৃতি গড়ে তোলাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
বাস্তুকলাবিদের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কর্মগুলোর মধ্যে আছে মাজহারুল ইসলামের নিজের বাড়ি, নিপা ভবন, কৃষি ভবন, সাধারণ বিমা ভবন, পাঁচটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দুটি। এসব স্থাপত্য মৌলিক, সৎ এবং চিন্তার উদ্রেক করে। তাঁর স্থাপত্য নাগরিক জীবন বিদ্ধ, শক্ত ও প্রচণ্ডতাময়। বর্গাকার, ত্রিভুজ, রম্বস প্রভৃতি মৌলিক জ্যামিতির ব্যবহারে তাঁর স্থাপত্য বিমূর্ত, শুদ্ধ ও আদর্শের অনুসন্ধানী। স্বাধীনতা লাভের পর বিশ্ববিদ্যালয় দুটির সরকারি প্রজেক্ট তিনি ফিরে পাননি। ফলে মাস্টারপ্ল্যান ও সামান্য কিছু ভবন ছাড়া তিনি তাঁর আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ দর্শন বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
মাজহারুল ইসলাম ছিলেন প্রচণ্ড ধীশক্তিসম্পন্ন, স্থাপত্যের এক মহান দার্শনিক কবি।
তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে এগিয়ে। তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ এক নির্ভীক সৈনিক, তাঁর যুদ্ধ তিনি একাই লড়েছেন। বাংলাদেশের স্থাপত্য অঙ্গনে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব আজও বজায় আছে। মৃত্যুর আগেই তিনি ছিলেন কিংবদন্তি পুরুষ, মৃত্যুর পর তা আরও বোধগম্য হচ্ছে। তাঁর জন্মদিনে তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
সামসুল ওয়ারেস
২৪ ডিসেম্বর, ২০১২
No comments