শুভ বড়দিন
আজ ২৫ ডিসেম্বর। শুভ বড়দিন। দুই সহস্রাধিক বছর আগে এই দিনে জেরুজালেমের
বেথলেহেমে যিশুখ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেন। শত শত বছর ধরে বিশ্বের খ্রীস্টান
সম্প্রদায় উৎসবমুখর পরিবেশে বড়দিন পালন করে আসছে।
এটি খ্রীস্টান
সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অত্যাচার ও
পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার জন্যই যিশু আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি
সারাজীবন আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করেছেন।
হিংসা-দ্বেষ ভুলে তিনি সবাইকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন।শাসকের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি শাসকের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে ক্রুশবিদ্ধ হন।
যিশুর জন্মদিন এই বড়দিনে খ্রীস্টান সমাজ আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে। এদিন বিশ্ববাসীকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে যিশুর আদর্শ তাদের প্রেরণা দেয়। তারা স্বপ্ন দেখে, যিশুর বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীতে এক আনন্দময় ও পাপমুক্ত বিশ্ব গড়ে উঠবে।
বড়দিনের উৎসব পালনের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ প্রথাগত নিয়ম থাকলেও পৃথিবীর নানা দেশে আঞ্চলিক সংস্কৃতি এই উৎসবকে প্রভাবিত করেছে। বড়দিনের উৎসবে অন্য দেশের মতো সান্তাক্লজের উপস্থিতি বাংলাদেশেও দেখা যায়। শিশুদের প্রিয় এই উপহারদাতাও নাম কোন কোন দেশে অন্যরকম। তবে তাঁর স্বভাব বা আচরণ সর্বত্র এক রকম। তিনি সবসময় শিশুদের ভালবাসেন এবং বড়দিনের উৎসবের সময় তাদের নানারকম উপহার দেন। পৃথিবীর অন্য সব দেশের খ্রীস্টানদের মতো এবার এদেশের খ্রীস্টানরাও বড়দিনের উৎসব পালন করছেন। বাংলাদেশে মানুষের অবাধ ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। বড়দিনের উৎসব পালনকালে এদেশের খ্রীস্টানরা যেমন শান্তি ও মানবতার কথা স্মরণ করেন, তা থেকে অন্য মানুষেরাও নিজেদের বিচ্ছিন্ন বোধ করেন না। প্রতিটি সাধারণ মানুষ এই উৎসবের আনন্দের অংশীদার। বাংলাদেশে বড়দিনের উৎসব কেবল শহরেই অনুষ্ঠিত হয় না। বরং তা শহরের বাইরে কিছু কিছু খ্রীস্টান- অধ্যুষিত গ্রামেও খুবই আবেগ ও আনন্দময় পরিবেশ উদ্যাপিত হয়।
প্রতিটি ধর্মের মূল বাণীই হলো মানবতা। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম ও আশার বাণী প্রচার করা হয়, তার মূলে রয়েছে মানবতা। কোন ধর্মই এই বোধ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তবু ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত পরিলক্ষিত হয়। বড়দিন প্রতিটি মানুষকে শান্তি, প্রেম ও সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সর্বত্র বড়দিন উদ্্যাপনের আনন্দ যেন মানুষের মধ্যে সত্যিকার মানবতাকে জাগ্রত করে; মহামানব যিশু যে প্রেম, শান্তি ও সম্প্রীতির শিক্ষা প্রচার করেছেন, তার যথার্থ প্রতিফলন যেন সবার জীবনে ঘটে। তাহলেই বড়দিনের উৎসব সবার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
No comments