'জিনের বাদশার' প্রতারণা-অপরাধীদের শাস্তি হোক
জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে সর্বস্বান্ত করার ঘটনা নতুন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারক চক্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ত্বরিত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে পার পেয়ে যায়।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উত্তর হলদা গ্রামের রিপন হালদারের স্ত্রী মরিয়ম জিনের বাদশা পরিচয়ধারীর খপ্পরে পড়ে নিজের সঞ্চিত অর্থের পুরোটাই খুইয়েছেন। অভাব ঘোচানোর জন্য মরিয়ম জিনের বাদশার মাধ্যমে তার সামান্য অর্থ কোটি কোটি টাকায় পরিণত হওয়ার স্বপ্নে এতটাই বিভোর ছিলেন যে বুঝতেই চাননি এটা একটি প্রতারণার ফাঁদ। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে মরিয়মের ৩৭ হাজার টাকা লোপাট করেই যে প্রতারক চক্রটি তাদের অপকর্মে যতি টানবে তা নয়। কারণ, এ ধরনের অপরাধ যারা করে তারা অধিকাংশ সময়েই একটি চক্রের সদস্য হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই চক্র তাদের একটি কার্যসিদ্ধির পর স্থান, এমনকি কৌশল পরিবর্তন করে নতুন করে প্রতারণা ফাঁদ পাতে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সতর্ক হলে অপরাধীদের পাকড়াও করা এবং এদের চক্র ভেঙে দেওয়া সম্ভব। তারা যদি দায়সারা গোছের পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের কর্তব্য সারতে চান তাহলে প্রতারকরা পুনরায় ভিন্ন স্থানে, নতুন শিকার বেছে নিয়ে নতুন করে প্রতারণার ফাঁদ পাতার সুযোগ পাবে। মানুষের সরলতা, শিক্ষার অভাব ও কিছুটা কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে ধর্ম ও প্রচলিত বিভিন্ন লোককাহিনী অবলম্বন করে প্রতারণার ফাঁদ পাতা সহজ হয়। এগুলোর বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচারণা ও মানুষকে আধুনিকমনস্ক করা গেলে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তবে তারপরও সমাজ থেকে প্রতারণা একেবারে উবে যাবে তা কিন্তু হলফ করে বলা যাবে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব প্রতারণার ব্যাপারে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিলে এক্ষেত্রে সুফল মিলবে। আমরা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উত্তর হলদা গ্রামের মরিয়মকে যারা জিনের বাদশা পরিচয়ের ফাঁদে ফেলে তার সামান্য সঞ্চয়কে লোপাট করেছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানাই। এজন্য প্রশাসনকেই কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। দেশের যে কোনো স্থানেই এ ধরনের উৎপাত দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের তরফে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা জরুরি।
No comments