ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চাই কার্যকর পদক্ষেপ-তৈরি পোশাক খাত

এটা সবারই জানা, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ ভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সেই খাত যদি বিদেশে ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে এবং এতে যদি রপ্তানি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তবে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই।


ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা তাঁর দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কেন ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে, তার কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেছেন। এসব কারণে যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও একই পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে কারণগুলো উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শ্রমিকনেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশটির কাছে এমন বার্তা গেছে যে এখানে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত নয়। সেখানে শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছে। সেখানকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অনেকে এ ব্যাপারে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাত সম্পর্কে এই যে নেতিবাচক ধারণা বিদেশে আলোচিত হচ্ছে, তার যৌক্তিক ভিত্তি অস্বীকার করার উপায় নেই। শ্রমিক অধিকার বলতে যা বোঝায়, এ খাতে তা উপেক্ষিত। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে যে খাতটি দেশে পর্যায়ক্রমে বিকশিত হয়েছে, সেই খাতে এ ধরনের পরিস্থিতি থাকার কথা নয়। ট্রেড ইউনিয়ন বা সিবিএর মতো সংগঠন এই খাতে গড়ে উঠুক, মালিকেরা সাধারণভাবে কখনোই তা চাননি। শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম যে বেতন-ভাতা সরকারের তরফ থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলেও দেখা যাচ্ছে, সেটাও কোনো কোনো তৈরি পোশাকশিল্প মালিক মানতে রাজি নন। শ্রমিকদের কল্যাণে লাভের ৫ শতাংশ দেওয়ার সরকারি উদ্যোগ নিয়েও রয়েছে মালিকদের আপত্তি। ফলে এই খাত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও কখনো ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশের ক্রেতারা অনেক সংবেদনশীল। শ্রমিকদের অধিকার যাথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয় না—এমন খবর একজন ক্রেতাকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কিনতে নিরুৎসাহিত করতে পারে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ‘ব্র্যান্ড-সংকট’ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন মজীনা। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর যে প্রচণ্ড বিরূপ প্রভাব ফেলবে, তাতে সন্দেহ নেই। আর বাংলাদেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাইছে, তখন এই ভাবমূর্তি নিয়ে কিছু আদায় করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
পোশাকশিল্প মালিকদের এটা বুঝতে হবে, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত না করতে পারলে সামনে এই খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে শ্রমিকনেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ডের কূল-কিনারা না করতে পারা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত হবে। আশা করব, তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও সরকার—দুই পক্ষই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে।

No comments

Powered by Blogger.