মুখোমুখি সংসদ ও বিচার বিভাগ-স্পিকার সুচিন্তিত মতামত দিন

রাষ্ট্রের প্রধান দুই স্তম্ভ জাতীয় সংসদ এবং বিচার বিভাগের মুখোমুখি হওয়া সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দখলে থাকা সুপ্রিম কোর্টের সম্পত্তি উচ্চ আদালতের রায়ে পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের বক্তব্যকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন রাষ্ট্রদ্রোহিতা


এবং আদালত অবমাননাকর বলে অভিহিত করলে তার প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় সংসদে বিষয়টি উত্থাপিত হয়। সংসদের আলোচনায় অংশ নিয়ে কোনো কোনো সংসদ সদস্য ওই বিচারপতির অপসারণ দাবি করেছেন। তা না হলে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা পুনরায় সংসদেরই ফিরিয়ে আনা হবে বলেও মত দিয়েছেন প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দেশবাসী এ আলোচনা সরাসরি টেলিভিশনে শুনেছে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তাদের কাছে চিত্তাকর্ষক মনে হয়নি, বরং সৃষ্টি করেছে উদ্বেগের। আদালতের কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায়ের বিষয়ে কথা বলা, এমনকি সমালোচনা করার অধিকার সংসদের রয়েছে। বিচার বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে আইন প্রণয়নের অধিকারও একান্তই তাদের। তবে এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে, জাতীয় সংসদ ও বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাদের কাছে সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ সর্বদা প্রত্যাশা করা হয়। এ দুটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে, এটাই কাম্য থাকে। এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানেরই এমন ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়, যাতে জনগণের কাছে মনে হতে পারে একটি অপরটিকে হেয় করার চেষ্টা করছে। এখানে কার এখতিয়ার বেশি, কার হাত কতটা লম্বা সে প্রসঙ্গ তোলা অর্থহীন। বরং পরমতসহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত তো তারাই স্থাপন করবেন। আমাদের অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সংসদের ভেতরে ও বাইরে প্রায়শই অসংলগ্ন ও বেফাঁস মন্তব্য করেন, যা জনগণ আশা করে না। বিচার বিভাগের কাছেও থাকে অভিন্ন প্রত্যাশা। দেশে এখন অনেক সংকট। রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বিরোধী দল রাজপথের আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ে সংকল্পবদ্ধ। দ্রব্যমূল্যের চাপে জনজীবন দুর্বিষহ। সংবিধানের অপর স্তম্ভ নির্বাহী বিভাগের অনেক কাজের সমালোচনা হচ্ছে। এ অবস্থায় জাতীয় সংসদ ও বিচার বিভাগের মধ্যে বাকবিতণ্ডা এবং উভয় তরফেই অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটলে জনগণ আরও হতাশ হবে। জাতীয় সংসদ ও বিচার বিভাগের মুখোমুখি অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বিশিষ্ট কয়েকজন আইনজীবী উভয়পক্ষকে সংযমের পথ অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সমকালে এ সংক্রান্ত খবর পরিবেশন করে বলা হয়, বিরাজমান সংকট নিরসনের জন্য সমাধান সূত্র বের করার জন্য তারা আলোচনায় বসবেন। তাদের এ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে, এটাই প্রত্যাশা। স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে সংসদে পরপর দু'দিন আলোচনার পর জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ এ বিষয়ে মতামত দেবেন বলে জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার লে. কর্নেল (অব.) শওকত আলী। এ জন্য তিনি প্রয়োজনীয় আইন-কানুন পরীক্ষা করছেন। আমরা আশা করব, এ প্রতিষ্ঠান দুটি যাতে আরও শক্তিশালী হয়ে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল হয়ে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে তিনি তার অবস্থান থেকে সুচিন্তিত মতামত দেবেন।
 

No comments

Powered by Blogger.