মাদকাসক্তি মোকাবেলা-সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি

দেশে মাদকাসক্ত লোকের সংখ্যা ৫০ থেকে ৭০ লাখ, এমনকি এক কোটি হওয়াও বিচিত্র নয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, মাদকাসক্তদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ সবচেয়ে কর্মক্ষম তরুণ ও যুবকদের মধ্যেই মাদক গ্রহণের সর্বনাশী প্রবণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।


গতকাল শনিবার সমকালের প্রথম পৃষ্ঠার প্রধান প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে মাদকাসক্তদের কারণে সামাজিক ও পারিবারিক নানা সংকট এবং অস্থিরতা তৈরির প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। কীভাবে এ ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পারি? প্রথমেই মাদক উৎপাদন ও বিপণনের স্থানগুলোকে নির্ধারণ করা চাই। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক চোরাচালানি চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করাও জরুরি। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাদকবিরোধী তৎপরতার পাশাপাশি শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সক্রিয়তার ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে এ ক্যুঅভ্যাস থেকে আসক্তদের মুক্ত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা এবং পারিবারিক পর্যায়ে নিয়মিত কাউন্সেলিং চাই। প্রয়োজন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়াতে এর কুফল এবং এ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে নাটিকা, প্রামাণ্য চিত্রসহ বহুমুখী প্রচারণা। মাদকসেবীদের মাদক ব্যবহারের কুপ্রভাব সম্পর্কে জ্ঞানদানে তেমন সুফল সাধারণত পাওয়া যায় না। কারণ মাদক সেবন যখন একটা অভ্যাসে পরিণত হয় তখন এর প্রতি আসক্তরা পিতা-মাতা-আত্মীয়-পরিজন, এমনকি নিজের জীবনেরও তোয়াক্কা করে না। এ সময় সমাজ ও পরিবার এদের সমর্থনে এগিয়ে এলে এবং একই সঙ্গে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হলে সুফল মিলতে পারে। মাদক নিরাময় ব্যবস্থাও আধুনিক হওয়া চাই। নিরাময় কেন্দ্রগুলো যাতে পুনরায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি না করে সেদিকেও নজর রাখতে হবে প্রশাসনকে।
মাদকের নেশা সর্বনাশ। এর নীল দংশন থেকে জাতিকে মুক্ত করতেই হবে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো হারিয়ে যাবে। যারা দেশ-জাতির উন্নতির সোপান তৈরি করবে তারা নেশার ঘোরে ঢুকে গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। মাদকের করাল থাবা বিস্তারকে রোধ করতেই হবে। এ জন্য ব্যক্তি মাদক ব্যবহারকারী, পরিবার ও সমাজ এবং রাষ্ট্র্রের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সম্মিলিত বহুমুখী প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে জরুরি ভিত্তিতেই।
 

No comments

Powered by Blogger.