সিয়াম সাধনার মাস ধর্ম-জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় রোজার ভূমিকা by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের তৃতীয় হচ্ছে সিয়াম সাধনা বা রোজা তথা নির্ধারিত সময়ের জন্য খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থেকে উপবাস যাপন। মানবজাতি এ রোজার মাধ্যমে মানসিকভাবে আত্মসংযমে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, যা দেহকে পূতপবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে তোলে। রোজার দ্বারা মানুষের শারীরিক সুস্থতা হাসিল হয় ও মানসিক সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধিত হয়।
রোজা একই সঙ্গে মানবদেহে রোগ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। রোজা পালনের ফলে দেহের রোগ-জীবাণু জীর্ণ অন্ত্রগুলো ধ্বংস হয় এবং ইউরিক এসিড বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। শরীরে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি পেলে নানা প্রকার নার্ভ-সংক্রান্ত রোগ বৃদ্ধি পায়। দেহের বেশির ভাগ রোগের সৃষ্টির কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ। পক্ষান্তরে খাদ্যকে আয়ত্ত করার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আর এ আয়ত্ত করার অন্যতম মাধ্যম হলো রোজা। তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজা রাখ।’
‘রমজান’ শব্দটি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ হচ্ছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া। এভাবে ধ্বংস না হলে কিন্তু ওইসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরে রক্তচাপ, অন্ত্র ও পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্ম দিতে থাকত, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ছাড়া উপবাস কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে নতুন জীবনীশক্তি সৃষ্টি করে রোজাদারের মনে সজিব অনুভূতি এনে দেয়। সিয়াম সাধনায় দেহের পরিপাকযন্ত্র এক প্রকার পরিশুদ্ধি লাভের অবকাশ পায়। ফলে দেহের অপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সারাংশ ও সঞ্চিত বিষাক্ত রস নিঃশেষ হয়ে যায়। দেহের বাড়তি ওজন, রস ও চর্বি ইত্যাদি হ্রাস পায়। পাকস্থলী-সংক্রান্ত রোগসমূহ যেমন—ক্ষুধামান্দ্য, পেট ফাঁপা, টক ঢেঁকুর, লিভারের দুর্বলতা, বমি বমি ভাব সিয়াম সাধনার ফলে স্বাভাবিকভাবেই উপশম হওয়ার সুযোগ পায়।
গৃহীত খাদ্যদ্রব্যের শতকরা ২৫ ভাগ বা এর অধিক অংশই অপ্রয়োজনীয়। দেহযন্ত্রে খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে টকসিন নামক এক প্রকার রসজাতীয় বিষ সঞ্চিত হয়ে থাকে। বাড়তি খাদ্যদ্রব্যাদি ক্ষেত্রবিশেষে স্বাস্থ্য রক্ষায় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একনাগাড়ে কিছুদিন রোজার মাধ্যমে পরিপাকযন্ত্রকে খালি রাখলে দেহের ভেতর সঞ্চিত বিষাক্ত রস নিঃশেষ হয়ে যায় এবং উত্তম রস দেহের মধ্যে কোনো প্রকার ক্ষতি সাধনের অবকাশ রাখে না। এ জন্য দেহের ভেতর সঞ্চিত হরেক রকম বিষাক্ত উপাদান অতি সহজে ও দ্রুতগতিতে দূর করার মোক্ষম উপায় হলো রোজা। পরিমিত পানাহার সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আহার করবে ও পান করবে, কিন্তু অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত-৩১)
রোজা মানব স্ব্বাস্থ্যের বিরাট উপকার সাধন করে। সারা বছর অনিয়মিত বা অতিরিক্ত পানাহার বা অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য খেয়ে রক্তে যখন প্রচুর কোলেস্টেরল জমে প্রেসার বা অন্য যেকোনো হূৎপীড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তখন রোজার উপবাস রক্তের কোলেস্টেরল ও হূৎপীড়ার আশঙ্কামুক্ত করে। অতিভোজনের অত্যাচারে পাকস্থ্থলী যখন হতোদ্যম ও দুর্বল হয়ে পড়ে তখন এক মাসের দিবাভাগের রোজা পাকস্থলীকে সবল করে নতুন জীবন দান করে, ফলে রক্ত ও রক্তনালিগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়। রোজা শুরুর কিছুদিনের মধ্যে রোজাদার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিতে পারেন। কারণ ক্ষুধার চিরাচরিত অভ্যাস রোজা শুরুর প্রথম কয়েক দিনই একটু যন্ত্রণা দেয় মাত্র। পরে এটাও অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এরপর সিয়াম সাধনা বা রোজা অনুশীলনকারী ব্যক্তি প্রতিদিনই মানসিকভাবে নিজেকে প্রাণময়, চঞ্চল ও উৎফুল্ল মনে করে। জীবন-চাঞ্চল্যের নবতর প্রবাহ শরীরে জীবনতরঙ্গের সৃষ্টি করে।
রোজার উপবাসের মাধ্যমে লিভার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় ফলে ত্বকের নিচে সঞ্চিত চর্বি, পেশির প্রোটিন, গ্রন্থিসমূহ এবং লিভারে কোষসমূহ আন্দোলিত হয়। অভ্যন্তরীণ দেহ যন্ত্রগুলোর সংরক্ষণ এবং হূৎপিণ্ডের নিরাপত্তার জন্য অন্য দেহাংশগুলোর বিক্রিয়া বন্ধ রাখে। খাদ্যাভাব বা আরাম-আয়েশের জন্য মানুষের শরীরের যে ক্ষতি হয়, রোজা তা পূরণ করে দেয়। এ ছাড়া মানুষের শরীরে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও রোজা অনেক উপকার সাধন করে। তাই বর্তমানে অনেক দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি যেমন—হূদরোগ, চর্মরোগ, বাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলকায় রোগী, জ্বর, শ্বাসকষ্ট রোগ ইত্যাদি নিরাময়ে রোজা রাখার উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। রোজা এসব রোগের কষ্ট দূর করে। এটি অতি স্বাভাবিক ও অত্যন্ত কার্যকর পন্থায় দেহের অভ্যন্তরে বিধৌত ও পরিচ্ছন্ন হয়। তাই আধ্যাত্মিক সুফি সাধকদের মতে, হূদয়ের স্বচ্ছতা হাসিলে স্বল্প খাদ্যগ্রহণের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
মাহে রমজান এলে অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েন এই ভেবে যে রোজা রাখলে নাকি শরীর-স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু রোজায় কারও স্বাস্থ্য বিনষ্ট হয়ে গেছে বা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে কোনো রোজাদারের মৃত্যু হয়েছে, এমন ঘটনা ঘটেনি। রমজান মাসের পরে দেখা যায় যে যার যেমন স্বাস্থ্য ঠিক তেমন আছে। রোজা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং মঙ্গলজনকই বটে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার হতে হবে পুষ্টিকর ও পরিমিত। রোজার সময় মানুষের শরীরের বিপাকক্রিয়া বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছুটা পরিবর্তিত নয় বলে সহজ পাচ্য অর্থাৎ সহজে হজম হয় এ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। রোজা একই সঙ্গে দেহে রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোজা পালনের ফলে দেহে রোগ-জীবাণুবর্ধক ও জীর্ণ জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়। রোজাদারের শরীরে পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার দরুণ চর্মরোগ বৃদ্ধি পায় না। রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানবস্বাস্থ্যের ওপর ধীরভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
সূর্যাস্তের পর রাত্রি শুরুর প্রাক্কালে গোধূলিলগ্নে রোজা শেষ করার মধ্যে মানসিক, আধ্যাত্মিক এমনকি শারীরিক নিগূঢ় রহস্য ও তাৎপর্য রয়েছে। সেহির থেকে ইফতার পর্যন্ত বেশ অনেকটা সময় পরে খাদ্য গ্রহণে সতর্ক থাকলে শারীরিকভাবে সুস্থ থেকে রোজা পালন সম্ভব। রোজার মাসে খাবার সাধারণত তিনবার খাওয়া হয়—ইফতার, কিছুক্ষণ পরে সন্ধ্যা রাতের খাবার এবং সেহির। স্বাস্থ্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল, খাদ্য গ্রহণের সময়ে পরিবর্তনের দরুন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই রমজান মাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে রোজা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যের সহায়ক। ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করে রোজা রাখতে পারেন। দেহ সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকে, মন ভালো থাকলে ইচ্ছামাফিক আল্লাহর ইবাদত করতে পারবেন। সুতরাং স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ও পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ করে রমজান মাসে রোজাদারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা মোটেই কঠিন ব্যাপার নয়।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
‘রমজান’ শব্দটি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ হচ্ছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া। এভাবে ধ্বংস না হলে কিন্তু ওইসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরে রক্তচাপ, অন্ত্র ও পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্ম দিতে থাকত, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ছাড়া উপবাস কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে নতুন জীবনীশক্তি সৃষ্টি করে রোজাদারের মনে সজিব অনুভূতি এনে দেয়। সিয়াম সাধনায় দেহের পরিপাকযন্ত্র এক প্রকার পরিশুদ্ধি লাভের অবকাশ পায়। ফলে দেহের অপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সারাংশ ও সঞ্চিত বিষাক্ত রস নিঃশেষ হয়ে যায়। দেহের বাড়তি ওজন, রস ও চর্বি ইত্যাদি হ্রাস পায়। পাকস্থলী-সংক্রান্ত রোগসমূহ যেমন—ক্ষুধামান্দ্য, পেট ফাঁপা, টক ঢেঁকুর, লিভারের দুর্বলতা, বমি বমি ভাব সিয়াম সাধনার ফলে স্বাভাবিকভাবেই উপশম হওয়ার সুযোগ পায়।
গৃহীত খাদ্যদ্রব্যের শতকরা ২৫ ভাগ বা এর অধিক অংশই অপ্রয়োজনীয়। দেহযন্ত্রে খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে টকসিন নামক এক প্রকার রসজাতীয় বিষ সঞ্চিত হয়ে থাকে। বাড়তি খাদ্যদ্রব্যাদি ক্ষেত্রবিশেষে স্বাস্থ্য রক্ষায় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একনাগাড়ে কিছুদিন রোজার মাধ্যমে পরিপাকযন্ত্রকে খালি রাখলে দেহের ভেতর সঞ্চিত বিষাক্ত রস নিঃশেষ হয়ে যায় এবং উত্তম রস দেহের মধ্যে কোনো প্রকার ক্ষতি সাধনের অবকাশ রাখে না। এ জন্য দেহের ভেতর সঞ্চিত হরেক রকম বিষাক্ত উপাদান অতি সহজে ও দ্রুতগতিতে দূর করার মোক্ষম উপায় হলো রোজা। পরিমিত পানাহার সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আহার করবে ও পান করবে, কিন্তু অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত-৩১)
রোজা মানব স্ব্বাস্থ্যের বিরাট উপকার সাধন করে। সারা বছর অনিয়মিত বা অতিরিক্ত পানাহার বা অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য খেয়ে রক্তে যখন প্রচুর কোলেস্টেরল জমে প্রেসার বা অন্য যেকোনো হূৎপীড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তখন রোজার উপবাস রক্তের কোলেস্টেরল ও হূৎপীড়ার আশঙ্কামুক্ত করে। অতিভোজনের অত্যাচারে পাকস্থ্থলী যখন হতোদ্যম ও দুর্বল হয়ে পড়ে তখন এক মাসের দিবাভাগের রোজা পাকস্থলীকে সবল করে নতুন জীবন দান করে, ফলে রক্ত ও রক্তনালিগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়। রোজা শুরুর কিছুদিনের মধ্যে রোজাদার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিতে পারেন। কারণ ক্ষুধার চিরাচরিত অভ্যাস রোজা শুরুর প্রথম কয়েক দিনই একটু যন্ত্রণা দেয় মাত্র। পরে এটাও অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এরপর সিয়াম সাধনা বা রোজা অনুশীলনকারী ব্যক্তি প্রতিদিনই মানসিকভাবে নিজেকে প্রাণময়, চঞ্চল ও উৎফুল্ল মনে করে। জীবন-চাঞ্চল্যের নবতর প্রবাহ শরীরে জীবনতরঙ্গের সৃষ্টি করে।
রোজার উপবাসের মাধ্যমে লিভার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় ফলে ত্বকের নিচে সঞ্চিত চর্বি, পেশির প্রোটিন, গ্রন্থিসমূহ এবং লিভারে কোষসমূহ আন্দোলিত হয়। অভ্যন্তরীণ দেহ যন্ত্রগুলোর সংরক্ষণ এবং হূৎপিণ্ডের নিরাপত্তার জন্য অন্য দেহাংশগুলোর বিক্রিয়া বন্ধ রাখে। খাদ্যাভাব বা আরাম-আয়েশের জন্য মানুষের শরীরের যে ক্ষতি হয়, রোজা তা পূরণ করে দেয়। এ ছাড়া মানুষের শরীরে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও রোজা অনেক উপকার সাধন করে। তাই বর্তমানে অনেক দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি যেমন—হূদরোগ, চর্মরোগ, বাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলকায় রোগী, জ্বর, শ্বাসকষ্ট রোগ ইত্যাদি নিরাময়ে রোজা রাখার উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। রোজা এসব রোগের কষ্ট দূর করে। এটি অতি স্বাভাবিক ও অত্যন্ত কার্যকর পন্থায় দেহের অভ্যন্তরে বিধৌত ও পরিচ্ছন্ন হয়। তাই আধ্যাত্মিক সুফি সাধকদের মতে, হূদয়ের স্বচ্ছতা হাসিলে স্বল্প খাদ্যগ্রহণের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
মাহে রমজান এলে অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েন এই ভেবে যে রোজা রাখলে নাকি শরীর-স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু রোজায় কারও স্বাস্থ্য বিনষ্ট হয়ে গেছে বা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে কোনো রোজাদারের মৃত্যু হয়েছে, এমন ঘটনা ঘটেনি। রমজান মাসের পরে দেখা যায় যে যার যেমন স্বাস্থ্য ঠিক তেমন আছে। রোজা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং মঙ্গলজনকই বটে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার হতে হবে পুষ্টিকর ও পরিমিত। রোজার সময় মানুষের শরীরের বিপাকক্রিয়া বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছুটা পরিবর্তিত নয় বলে সহজ পাচ্য অর্থাৎ সহজে হজম হয় এ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। রোজা একই সঙ্গে দেহে রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোজা পালনের ফলে দেহে রোগ-জীবাণুবর্ধক ও জীর্ণ জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়। রোজাদারের শরীরে পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার দরুণ চর্মরোগ বৃদ্ধি পায় না। রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানবস্বাস্থ্যের ওপর ধীরভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
সূর্যাস্তের পর রাত্রি শুরুর প্রাক্কালে গোধূলিলগ্নে রোজা শেষ করার মধ্যে মানসিক, আধ্যাত্মিক এমনকি শারীরিক নিগূঢ় রহস্য ও তাৎপর্য রয়েছে। সেহির থেকে ইফতার পর্যন্ত বেশ অনেকটা সময় পরে খাদ্য গ্রহণে সতর্ক থাকলে শারীরিকভাবে সুস্থ থেকে রোজা পালন সম্ভব। রোজার মাসে খাবার সাধারণত তিনবার খাওয়া হয়—ইফতার, কিছুক্ষণ পরে সন্ধ্যা রাতের খাবার এবং সেহির। স্বাস্থ্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল, খাদ্য গ্রহণের সময়ে পরিবর্তনের দরুন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই রমজান মাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে রোজা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যের সহায়ক। ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করে রোজা রাখতে পারেন। দেহ সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকে, মন ভালো থাকলে ইচ্ছামাফিক আল্লাহর ইবাদত করতে পারবেন। সুতরাং স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ও পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ করে রমজান মাসে রোজাদারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা মোটেই কঠিন ব্যাপার নয়।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
No comments