মত ও মন্তব্য-কালরাত্রি স্মরণে : যুক্ত পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেক by হারুন হাবীব
স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকীর কালরাত্রি স্মরণে যে লেখাটি লিখছি, তাতে আমার নিজের মন্তব্যের চেয়ে প্রতিবেদনের বিষয়গুলো প্রাধান্য পাক_এটিই আমি চেয়েছি। ৪০ বছর পেরিয়ে এসে এই দিনে আমাদের তারুণ্যের কথা মনে পড়ে। লাখো শহীদের রক্তে ভেজা মাটিতে দাঁড়িয়ে আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সৈনিকদের স্মৃতি নাড়িয়ে দেয়।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পরিচালিত হয় নিরস্ত্র বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বর্বরোচিত সামরিক অভিযান। পরিকল্পিত এ অভিযানকে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে অভিহিত করে। এ অভিযানে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। সাংবাদিক, গবেষক ও বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী সে রাতের আক্রমণের বর্ণনা এ রকম : ২৫ মার্চ ১৯৭১। তেজগাঁও এয়ারপোর্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা অসমাপ্ত রেখে পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তাঁর বিশেষ বিমানে আরোহণের ঠিক আগে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল টিক্কা খানের দিকে তাকিয়ে বলেন_'ওদের শায়েস্তা কর।' সামরিক প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অভিযানের সবুজ সংকেত মেলে। মধ্যরাতেই শুরু হয় বাঙালিদের 'শায়েস্তা করার' অভিযান। এই অতর্কিত সামরিক অভিযান হাজার হাজার নিরীহ, অসহায় বাঙালির জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়। মৃত্যু ও ধ্বংসের ঘন আচ্ছাদনে ঢেকে যায় ঢাকা নগরী। এ অভিযান থেকেই শুরু হয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ_যা বাংলাদেশের রক্তাক্ত অভ্যুদয় ঘটায়। ২৫ মার্চের আগে পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকা থেকে বের করে দেয়। তারা স্থানীয় প্রচারমাধ্যমের ওপর আরোপ করে কঠোর সেন্সরশিপ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক ঢাকায় লুকিয়ে থাকেন। তাঁদের অন্যতম_আরনল্ড জেইটলিন (Arnold Zeitlin), মাইকেল লরেন্ট (Michael Laurent) এবং সাইমন ড্রিং (Simon Dring)। এপি বার্তা সংস্থার রিপোর্টার আরনল্ড জেটলিন আমার কাছে দেওয়া এক স্মৃতিতর্পণে বলেন : সে রাতে আমি ঢাকার উপকণ্ঠে ইস্পাহানিদের বাড়িতে ছিলাম। রাতে খাওয়ার দাওয়াত ছিল। মেহমানদের মধ্যে ছিলেন সিলেটের কায়সার রশিদ। আরো ছিলেন একজন অমায়িক পাঠান (সম্ভবত ইউনুস শেঠি)। তিনি তখন পাকিস্তানের তথ্যসচিব। এয়ারপোর্ট রোড ধরে আমরা ঢাকা শহরের দিকে এগিয়ে চললাম। কিন্তু আমাদের থামতে হলো। দেখলাম, কেউ একটা বিশাল গাছ রাস্তায় আড়াআড়ি ফেলে রেখেছে। অন্ধকারে গাছের আড়ালে কতিপয় অস্ত্রধারীর অবয়ব দেখতে পেলাম। আমাদের তাই ফিরতে হলো। রাতটা ছাদের ওপরই কাটাই, গোলাগুলির আওয়াজ শুনে পরের দিনটাও সান্ধ্য আইনের আওতায় সে বাড়িতেই কাটে। বেতারেও কোনো খবর ছিল না। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তখন ব্যাপক ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। গ্রেপ্তার করে নিয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি নির্বাচনে অধিকাংশ আসন জয় করেছিলেন এবং হতে পারতেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় দিন সান্ধ্য আইন উঠিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমি হোটেলে ফিরিনি।
৩১ মার্চ ১৯৭১ লন্ডনের 'ডেইলি টেলিগ্রাফ' পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শী সাইমন ড্রিংয়ের 'ডেটলাইন ঢাকা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি এ রকম : ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর ঢাকা মহানগরী মুহুর্মুহু তোপধ্বনিতে প্রকম্পিত হতে থাকে। সর্বত্র বোমা-বারুদের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। টিক্কা খান বর্বর সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নির্মমভাবে গণবিদ্রোহ দমনে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টারস, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের প্রধান কার্যালয় পিলখানা সেনা অভিযানে বিধ্বস্ত হয়। এ অভিযানে নির্বিচারে ভারী আরআর-গান ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তৈরি আমেরিকান ট্যাংক ও এক কলাম সৈন্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি ঘিরে ফেলে। মধ্যরাতেই তারা ক্যাম্পাসে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়ে এবং নিকটবর্তী ছাত্রাবাসে গোলাগুলি চালানোর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে। আকস্মিক গোলাবর্ষণে একমাত্র ইকবাল হলেই (বর্তমান জহুরুল হক হল) ২০০ ছাত্র নিহত হয়। সৈন্যরা একদিকে হলগুলোর দিকে উপর্যুপরি শেল নিক্ষেপ করতে থাকে, অন্যদিকে চলতে থাকে মেশিনগানের গুলি। দুদিন পর্যন্ত পোড়া ঘরগুলোর জানালা-দরজায় মৃতদেহ ঝুলে থাকতে দেখা যায়। পথেঘাটে মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। জগন্নাথ হলে ছাত্রদের মৃতদেহগুলোকে সৈন্যরা ত্বরিত গর্ত খুঁড়ে গণকবর দেয় এবং পরে ট্যাংক চালিয়ে সমান করে রাখে। রেললাইন সংলগ্ন বস্তিগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ঘটনার দুদিন পরও ইকবাল হলের যত্রতত্র মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃতদেহ পড়ে থাকে আশপাশের জঙ্গল ও পুকুরে। সেনাবাহিনী এসব মৃতদেহ বেশির ভাগই সরিয়ে ফেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বহু মানুষ নির্বিচার গোলাগুলির শিকার হয়। রেললাইনের দু-পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা বস্তিগুলোকে নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়। তারা আশপাশের বাজারগুলো ধ্বংস করে। দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে মারা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজও সেনাবাহিনীর নির্বিচার গোলাগুলি থেকে রক্ষা পায়নি। রক্ষা পায়নি পাশের একটি মসজিদও। ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টো সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে রক্ত রঞ্জিত নাটক প্রত্যক্ষ করেন। পরে এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, 'প্রায় রাত সাড়ে ১০টায় রাতের খাবার শেষ করে আমরা আমাদের রুমে চলে যাই। ঘণ্টাখানেক পর প্রচণ্ড তোপধ্বনিতে আমরা জেগে উঠি। আমার বন্ধু ও সহচররা আমার রুমে চলে আসে। আমরা দেখতে পাই, আর্মি অপারেশনে নেমেছে। আমার ঘরে বসেই আমরা তিন ঘণ্টা ধরে দেখতে পাই আর্মি অপারেশন। বেশ কিছু স্থানে দেখা যায় প্রজ্বলিত অগি্নশিখা। আমরা দেখতে পাই স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক 'দ্য পিপল'-এর অফিস ধ্বংস হতে। এ পত্রিকাটি নিয়মিত আর্মি ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর সংবাদ পরিবেশন করত। প্রজ্বলিত দিগন্তের পানে তাকিয়ে আমার চিন্তা অতীত ও ভবিষ্যতের দিকে ছুটে চলে। ভেবে অবাক হই, ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী আছে।'
'ডেইলি টেলিগ্রাফ'-এর রিপোর্টটির অন্য একটি অংশ এ রকম : 'আল্লাহ এবং পাকিস্তানের ঐক্যের নামে' ঢাকা আজ এক বিধ্বস্ত ও সন্ত্রস্ত নগরী। দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টার নৃশংস অভিযান, ঠাণ্ডা মাথায় বোমাবর্ষণ এবং গোলাগুলি চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ হত্যা করে। তারা বিশাল এলাকা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে, যাতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার স্পৃহা শুরুতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অবশ্য দাবি করেছেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার প্রধানের এ দাবি সত্ত্বেও শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ গ্রামের দিকে পালাচ্ছে। শহরের রাস্তাঘাটগুলো প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে এবং প্রদেশটির নানা জায়গা থেকে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের খবর আসছে। কিন্তু এর পরও দেখা যাচ্ছে, ট্যাংক-বহর নিয়ে সেনাবাহিনী ছোট-বড় শহরগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সামান্য অভিযোগেই তারা গুলি করে মারছে সাধারণ মানুষ এবং দালানকোঠা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে নির্বিচারে। ... এই বর্বর অভিযানকে আন্দাজ করা যাবে বিছানায় ছাত্রদের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে, ঢাকার বাজারগুলোতে, দোকানের আশপাশে বিভিন্ন মানুষের মৃতদেহ দেখে এবং ভস্মীভূত ঘরবাড়িতে আগুনে পোড়া নারী ও শিশুর দেহ দেখে। পাকিস্তানের হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজনকে যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানেই গণহারে গুলি করে মারা হয়েছে। বাজার এবং শপিংমলগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আনুমানিক তিন ব্যাটালিয়ন সৈন্য 'অপারেশন সার্চলাইট' অভিযানে অংশগ্রহণ করে। রাত ১১টায় অভিযান শুরু হয়। একদিকে শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি, অন্যদিকে শহরবাসীও দ্রুত রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করতে থাকে। কেউবা গাড়ি উল্টিয়ে রাস্তা বন্ধ করে, গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে কিংবা আসবাবপত্র, কংক্রিটের পাইপ ইত্যাদি ঠেলে আনতে থাকে রাস্তার দিকে। সেনাবাহিনীর অন্য দলগুলো অভিযান চালায় রাজারবাগের পুলিশ সদর দপ্তরে। প্রথমে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে সেনাবাহিনী এগিয়ে গেছে পুলিশ লাইনসের দিকে। পুলিশের ছাউনিগুলো গোলা ছুড়ে এবং নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে ধ্বংস করেছে। ঠিক কত লোক রাজারবাগে সেই অভিযানে নিহত হয়েছে জানা যায়নি। কিন্তু সে রাতে অবস্থানরত এক হাজার ১০০ পুলিশের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই জীবন বাঁচাতে পেরেছিল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় যখন এ ধরনের অভিযান চলছিল, তখন সেনাবাহিনীর অন্য ইউনিটগুলো শেখ মুজিবের বাড়ি ঘেরাও করে। তিনি হয়তো সম্ভাব্য একটি আক্রমণ বুঝতে পেরেছিলেন। রাত ১টা ১০ মিনিটে একটি ট্যাংক, একটি সেনাবাহিনী ভর্তি গাড়ি এবং কয়েকটি ট্রাক বোঝাই সৈন্য গুলি ছুড়তে ছুড়তে তাঁর ধানমণ্ডির বাড়িতে প্রবেশ করে। সৈন্যরা বাড়ি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও দলিলপত্রও নিয়ে যায়। বাড়ির গেটে উড়তে থাকা নতুন বাংলাদেশের লাল, সবুজ ও হলুদ রঙের পতাকার ওপর তারা উপর্যুপরি গুলি চালায়। ২৬ মার্চের রাত ২টা পর্যন্ত ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি জায়গায় আগুন জ্বলতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা যত্রতত্র তরুণদের হত্যা করতে থাকে। ২৬ তারিখ ভোরের ঠিক আগ দিয়ে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সূর্য ওঠে, তখন নগরীর চারদিকে এক ভয়ংকর নিস্তব্ধতা বিস্তার করতে থাকে। ঢাকা শহরকে তখন মনে হয় এক মৃতের নগরী। কাক এবং মাঝেমধ্যে সেনাবাহিনীর ভারী যানের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। কোনো রকম সতর্কবাণী ছাড়াই সেনাবাহিনীর কলামগুলো পুরান ঢাকার দিকে যাত্রা করে। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকার অলিগলি এলাকায় লাখ লাখ লোকের বাস। পরের প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে পাকিস্তানি সেনারা পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। ইংলিশ রোড, ফ্র্যান্স রোড, নয়াবাজার, সিটি বাজার ইত্যাদি এলাকায় কয়েক হাজার লোককে পুড়িয়ে মারা হয়। সৈন্যদের একটি ইউনিট গ্যালন গ্যালন পেট্রল নিয়ে আসে। যারা পালাতে চেষ্টা করেছিল, তাদের গুলি করে মারা হয়। যারা তাদের ঘরবাড়িতে রয়ে যায়, তারা আগুনে পুড়ে মারা যায়। এ এলাকায় নারী ও শিশু মিলে সেদিন রাত ২টার মধ্যে মারা যায় প্রায় ৭০০ মানুষ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঠিক একই ধরনের অভিযান পরিচালনা করে আরো তিনটি জায়গায়। একটি এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার পর সৈন্যরা আরেক এলাকায় চলে যায়। ওরা মৃতদেহগুলোকে টেনেহিঁচড়ে ট্রাকে তোলে এবং অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। এ এলাকার পুলিশ স্টেশনগুলোও আক্রমণের শিকার হয়। পাকিস্তানি বাহিনী পুরান ঢাকায় যে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, তার উত্তাপ বেশি পড়ে এখানকার শাঁখারীবাজারের হিন্দু এলাকায়। এখানে সৈন্যরা প্রথমে ঘরবাড়ি থেকে লোকজনকে বেরিয়ে আসতে বলে এবং এরপর দলবদ্ধভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। এলাকাটিকেও পরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ২৬ মার্চ রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত হানাদার সৈন্যরা পুরান ঢাকায় অবস্থান করে। এদের সহযোগিতা করছিল স্থানীয় কিছু বাঙালি দালাল। এই দালালরা দেখিয়ে দিত কোন কোন বাড়িতে আগুন দিতে হবে এবং কোন কোন বাড়ি আওয়ামী লীগের সমর্থকদের। তারপর সৈন্যরা সেগুলোতে সরাসরি ট্যাংক থেকে রিকোয়েলস গুলিবর্ষণ করে অথবা গ্যালন গ্যালন পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ অভিযানের অন্যতম আক্রান্তস্থল ছিল দৈনিক ইত্তেফাক। ঘড়িতে যখন ঠিক ৪টা বাজে, তারিখ ২৬ মার্চ, চারটি ট্যাংক পত্রিকা অফিসটির সামনে এসে দাঁড়ায়। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে পুরো পত্রিকাটির অফিস আগুনের লেলিহানে ভস্মীভূত হতে থাকে। পরদিন শনিবার সকালে রেডিওতে ঘোষণা দেওয়া হয় যে শহর থেকে কারফিউ সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। রেডিও থেকে সে সময় বারবার সামরিক আইনের জারিকৃত ধারাগুলো পড়ে শোনানো হয়। সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ ঘোষণা করা হয়, পত্রপত্রিকার ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের শেষ ইচ্ছে পূরণ হয়নি। ২৫ মার্চের কালরাত থেকে শুরু হওয়া নতুন আন্দোলন দ্রুত প্রতিরোধ যুদ্ধ বা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটি হানাদার সৈন্যমুক্ত হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকা নগরীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর 'অপারেশন সার্চলাইট' সংযুক্ত পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেক, সংযুক্ত পাকিস্তানের শেষরাত্রি। জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রচণ্ড এক ধাক্কায় বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় এ রাতে।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
hh1971@gmail.com
৩১ মার্চ ১৯৭১ লন্ডনের 'ডেইলি টেলিগ্রাফ' পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শী সাইমন ড্রিংয়ের 'ডেটলাইন ঢাকা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি এ রকম : ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর ঢাকা মহানগরী মুহুর্মুহু তোপধ্বনিতে প্রকম্পিত হতে থাকে। সর্বত্র বোমা-বারুদের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। টিক্কা খান বর্বর সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নির্মমভাবে গণবিদ্রোহ দমনে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টারস, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের প্রধান কার্যালয় পিলখানা সেনা অভিযানে বিধ্বস্ত হয়। এ অভিযানে নির্বিচারে ভারী আরআর-গান ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তৈরি আমেরিকান ট্যাংক ও এক কলাম সৈন্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি ঘিরে ফেলে। মধ্যরাতেই তারা ক্যাম্পাসে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়ে এবং নিকটবর্তী ছাত্রাবাসে গোলাগুলি চালানোর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে। আকস্মিক গোলাবর্ষণে একমাত্র ইকবাল হলেই (বর্তমান জহুরুল হক হল) ২০০ ছাত্র নিহত হয়। সৈন্যরা একদিকে হলগুলোর দিকে উপর্যুপরি শেল নিক্ষেপ করতে থাকে, অন্যদিকে চলতে থাকে মেশিনগানের গুলি। দুদিন পর্যন্ত পোড়া ঘরগুলোর জানালা-দরজায় মৃতদেহ ঝুলে থাকতে দেখা যায়। পথেঘাটে মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। জগন্নাথ হলে ছাত্রদের মৃতদেহগুলোকে সৈন্যরা ত্বরিত গর্ত খুঁড়ে গণকবর দেয় এবং পরে ট্যাংক চালিয়ে সমান করে রাখে। রেললাইন সংলগ্ন বস্তিগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ঘটনার দুদিন পরও ইকবাল হলের যত্রতত্র মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃতদেহ পড়ে থাকে আশপাশের জঙ্গল ও পুকুরে। সেনাবাহিনী এসব মৃতদেহ বেশির ভাগই সরিয়ে ফেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বহু মানুষ নির্বিচার গোলাগুলির শিকার হয়। রেললাইনের দু-পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা বস্তিগুলোকে নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়। তারা আশপাশের বাজারগুলো ধ্বংস করে। দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে মারা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজও সেনাবাহিনীর নির্বিচার গোলাগুলি থেকে রক্ষা পায়নি। রক্ষা পায়নি পাশের একটি মসজিদও। ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টো সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে রক্ত রঞ্জিত নাটক প্রত্যক্ষ করেন। পরে এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, 'প্রায় রাত সাড়ে ১০টায় রাতের খাবার শেষ করে আমরা আমাদের রুমে চলে যাই। ঘণ্টাখানেক পর প্রচণ্ড তোপধ্বনিতে আমরা জেগে উঠি। আমার বন্ধু ও সহচররা আমার রুমে চলে আসে। আমরা দেখতে পাই, আর্মি অপারেশনে নেমেছে। আমার ঘরে বসেই আমরা তিন ঘণ্টা ধরে দেখতে পাই আর্মি অপারেশন। বেশ কিছু স্থানে দেখা যায় প্রজ্বলিত অগি্নশিখা। আমরা দেখতে পাই স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক 'দ্য পিপল'-এর অফিস ধ্বংস হতে। এ পত্রিকাটি নিয়মিত আর্মি ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর সংবাদ পরিবেশন করত। প্রজ্বলিত দিগন্তের পানে তাকিয়ে আমার চিন্তা অতীত ও ভবিষ্যতের দিকে ছুটে চলে। ভেবে অবাক হই, ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী আছে।'
'ডেইলি টেলিগ্রাফ'-এর রিপোর্টটির অন্য একটি অংশ এ রকম : 'আল্লাহ এবং পাকিস্তানের ঐক্যের নামে' ঢাকা আজ এক বিধ্বস্ত ও সন্ত্রস্ত নগরী। দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টার নৃশংস অভিযান, ঠাণ্ডা মাথায় বোমাবর্ষণ এবং গোলাগুলি চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ হত্যা করে। তারা বিশাল এলাকা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে, যাতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার স্পৃহা শুরুতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অবশ্য দাবি করেছেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার প্রধানের এ দাবি সত্ত্বেও শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ গ্রামের দিকে পালাচ্ছে। শহরের রাস্তাঘাটগুলো প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে এবং প্রদেশটির নানা জায়গা থেকে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের খবর আসছে। কিন্তু এর পরও দেখা যাচ্ছে, ট্যাংক-বহর নিয়ে সেনাবাহিনী ছোট-বড় শহরগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সামান্য অভিযোগেই তারা গুলি করে মারছে সাধারণ মানুষ এবং দালানকোঠা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে নির্বিচারে। ... এই বর্বর অভিযানকে আন্দাজ করা যাবে বিছানায় ছাত্রদের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে, ঢাকার বাজারগুলোতে, দোকানের আশপাশে বিভিন্ন মানুষের মৃতদেহ দেখে এবং ভস্মীভূত ঘরবাড়িতে আগুনে পোড়া নারী ও শিশুর দেহ দেখে। পাকিস্তানের হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজনকে যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানেই গণহারে গুলি করে মারা হয়েছে। বাজার এবং শপিংমলগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আনুমানিক তিন ব্যাটালিয়ন সৈন্য 'অপারেশন সার্চলাইট' অভিযানে অংশগ্রহণ করে। রাত ১১টায় অভিযান শুরু হয়। একদিকে শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি, অন্যদিকে শহরবাসীও দ্রুত রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করতে থাকে। কেউবা গাড়ি উল্টিয়ে রাস্তা বন্ধ করে, গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে কিংবা আসবাবপত্র, কংক্রিটের পাইপ ইত্যাদি ঠেলে আনতে থাকে রাস্তার দিকে। সেনাবাহিনীর অন্য দলগুলো অভিযান চালায় রাজারবাগের পুলিশ সদর দপ্তরে। প্রথমে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে সেনাবাহিনী এগিয়ে গেছে পুলিশ লাইনসের দিকে। পুলিশের ছাউনিগুলো গোলা ছুড়ে এবং নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে ধ্বংস করেছে। ঠিক কত লোক রাজারবাগে সেই অভিযানে নিহত হয়েছে জানা যায়নি। কিন্তু সে রাতে অবস্থানরত এক হাজার ১০০ পুলিশের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই জীবন বাঁচাতে পেরেছিল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় যখন এ ধরনের অভিযান চলছিল, তখন সেনাবাহিনীর অন্য ইউনিটগুলো শেখ মুজিবের বাড়ি ঘেরাও করে। তিনি হয়তো সম্ভাব্য একটি আক্রমণ বুঝতে পেরেছিলেন। রাত ১টা ১০ মিনিটে একটি ট্যাংক, একটি সেনাবাহিনী ভর্তি গাড়ি এবং কয়েকটি ট্রাক বোঝাই সৈন্য গুলি ছুড়তে ছুড়তে তাঁর ধানমণ্ডির বাড়িতে প্রবেশ করে। সৈন্যরা বাড়ি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও দলিলপত্রও নিয়ে যায়। বাড়ির গেটে উড়তে থাকা নতুন বাংলাদেশের লাল, সবুজ ও হলুদ রঙের পতাকার ওপর তারা উপর্যুপরি গুলি চালায়। ২৬ মার্চের রাত ২টা পর্যন্ত ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি জায়গায় আগুন জ্বলতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা যত্রতত্র তরুণদের হত্যা করতে থাকে। ২৬ তারিখ ভোরের ঠিক আগ দিয়ে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সূর্য ওঠে, তখন নগরীর চারদিকে এক ভয়ংকর নিস্তব্ধতা বিস্তার করতে থাকে। ঢাকা শহরকে তখন মনে হয় এক মৃতের নগরী। কাক এবং মাঝেমধ্যে সেনাবাহিনীর ভারী যানের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। কোনো রকম সতর্কবাণী ছাড়াই সেনাবাহিনীর কলামগুলো পুরান ঢাকার দিকে যাত্রা করে। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকার অলিগলি এলাকায় লাখ লাখ লোকের বাস। পরের প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে পাকিস্তানি সেনারা পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। ইংলিশ রোড, ফ্র্যান্স রোড, নয়াবাজার, সিটি বাজার ইত্যাদি এলাকায় কয়েক হাজার লোককে পুড়িয়ে মারা হয়। সৈন্যদের একটি ইউনিট গ্যালন গ্যালন পেট্রল নিয়ে আসে। যারা পালাতে চেষ্টা করেছিল, তাদের গুলি করে মারা হয়। যারা তাদের ঘরবাড়িতে রয়ে যায়, তারা আগুনে পুড়ে মারা যায়। এ এলাকায় নারী ও শিশু মিলে সেদিন রাত ২টার মধ্যে মারা যায় প্রায় ৭০০ মানুষ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঠিক একই ধরনের অভিযান পরিচালনা করে আরো তিনটি জায়গায়। একটি এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার পর সৈন্যরা আরেক এলাকায় চলে যায়। ওরা মৃতদেহগুলোকে টেনেহিঁচড়ে ট্রাকে তোলে এবং অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। এ এলাকার পুলিশ স্টেশনগুলোও আক্রমণের শিকার হয়। পাকিস্তানি বাহিনী পুরান ঢাকায় যে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, তার উত্তাপ বেশি পড়ে এখানকার শাঁখারীবাজারের হিন্দু এলাকায়। এখানে সৈন্যরা প্রথমে ঘরবাড়ি থেকে লোকজনকে বেরিয়ে আসতে বলে এবং এরপর দলবদ্ধভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। এলাকাটিকেও পরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ২৬ মার্চ রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত হানাদার সৈন্যরা পুরান ঢাকায় অবস্থান করে। এদের সহযোগিতা করছিল স্থানীয় কিছু বাঙালি দালাল। এই দালালরা দেখিয়ে দিত কোন কোন বাড়িতে আগুন দিতে হবে এবং কোন কোন বাড়ি আওয়ামী লীগের সমর্থকদের। তারপর সৈন্যরা সেগুলোতে সরাসরি ট্যাংক থেকে রিকোয়েলস গুলিবর্ষণ করে অথবা গ্যালন গ্যালন পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ অভিযানের অন্যতম আক্রান্তস্থল ছিল দৈনিক ইত্তেফাক। ঘড়িতে যখন ঠিক ৪টা বাজে, তারিখ ২৬ মার্চ, চারটি ট্যাংক পত্রিকা অফিসটির সামনে এসে দাঁড়ায়। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে পুরো পত্রিকাটির অফিস আগুনের লেলিহানে ভস্মীভূত হতে থাকে। পরদিন শনিবার সকালে রেডিওতে ঘোষণা দেওয়া হয় যে শহর থেকে কারফিউ সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। রেডিও থেকে সে সময় বারবার সামরিক আইনের জারিকৃত ধারাগুলো পড়ে শোনানো হয়। সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ ঘোষণা করা হয়, পত্রপত্রিকার ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের শেষ ইচ্ছে পূরণ হয়নি। ২৫ মার্চের কালরাত থেকে শুরু হওয়া নতুন আন্দোলন দ্রুত প্রতিরোধ যুদ্ধ বা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটি হানাদার সৈন্যমুক্ত হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকা নগরীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর 'অপারেশন সার্চলাইট' সংযুক্ত পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেক, সংযুক্ত পাকিস্তানের শেষরাত্রি। জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রচণ্ড এক ধাক্কায় বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় এ রাতে।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
hh1971@gmail.com
No comments