সম্পাদকের কলাম-আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার by ইমদাদুল হক মিলন

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের রসবোধের তুলনা হয় না। বিটিভি শুরু হলো ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। তখন নাম ছিল 'ঢাকা টেলিভিশন'। সন্ধ্যার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা চলত। সোমবার বন্ধ থাকত। ৩১ ডিসেম্বর স্যার প্রথম অনুষ্ঠান করলেন। টেলিভিশনে তাঁকে নিয়ে গেলেন মুস্তাফা মনোয়ার।


স্যার তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির সবগুলো হলে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেন। ডিবেট, উপস্থিত বক্তৃতা, নির্বাচিত বক্তৃতা, বাংলা-ইংরেজি আবৃত্তি সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন। থাকেন সায়েন্স কলেজের হোস্টেলে। মুস্তাফা মনোয়ার ও জামান আলী খান এসে সায়েন্স কলেজের হোস্টেলে হাজির। 'আপনাকে অনুষ্ঠান করতে হবে।
পরশু দিন রেকর্ডিং। কবি জসীম উদ্দীনের ইন্টারভিউ।'
জামান আলী খান পরে পাকিস্তান টেলিভিশনের এমডি হয়েছিলেন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের টেলিভিশনযাত্রা শুরু হলো জসীম উদ্দীনের ইন্টারভিউ দিয়ে। প্রথম প্রথম স্বভাবতই খুব নার্ভাস। ধীরে ধীরে সেই অবস্থা কেটে গেল। একের পর এক অনুষ্ঠান করতে লাগলেন। স্বাধীনতার পর ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান শুরু করলেন। অনুষ্ঠানের নাম 'সপ্তবর্ণা'। এই অনুষ্ঠান এমন জনপ্রিয় হলো, স্যারের রাস্তায় বেরোনো দুষ্কর। যদিও তখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন ছিল না, তবু উপস্থাপক হিসেবে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। মানুষ তাঁকে দেখলেই হাসিমুখে তাকায়। কথা বলার জন্য এগিয়ে আসে। যেখানেই যান, সেখানেই দু-চারজন টিভি দর্শক ঘিরে ধরে। স্যারও ব্যাপারটা ভালোই উপভোগ করেন।
একদিন বাজারে গেছেন। বাজার করছেন। এক লোক এগিয়ে এলো। 'আপনাকে চেনা চেনা লাগে!'
স্যার ভাবলেন তাঁর ভক্ত। কথা না বলে হাসলেন।
লোকটা তাঁর দিকে তীক্ষ্ন চোখে তাকাল। 'আপনারে কোথায় দেখছি বলেন তো?'
স্যারের মুখে সেই হাসি। মাত্র বলতে যাবেন, নিশ্চয়ই টেলিভিশনে দেখেছেন, তার আগেই লোকটি উৎফুল্ল গলায় বলল, 'এই তো মনে পড়ছে। চিনছি আপনেরে। আপনে আমোগো মজিদের খালু।'
খুব রসিয়ে রসিয়ে এই ঘটনা আমাদের বলেছেন স্যার। আমরা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়েছি।
ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করেন। তাঁর ক্লাসে দেখা যায় ক্লাস উপচানো ছাত্র। বসার জায়গা না পেয়ে অনেকে দরজার সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কী ব্যাপার! এত ছাত্র এলো কোত্থেকে? আসলে স্যারের লেকচার শোনার জন্য অন্যান্য বিভাগের ছাত্ররা এসে ভিড় করেছে। ছাত্রদের কাছে এতই জনপ্রিয় হয়ে গেছেন তিনি।
'কণ্ঠস্বর' নামে সাহিত্য পত্রিকা করতেন। ওই মানের সাহিত্য পত্রিকা তারপর আর বাংলাদেশ থেকে কখনোই প্রকাশিত হয়নি।
'কণ্ঠস্বর' নিয়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমি আর আমার বন্ধু সৈয়দ ইকবাল গল্প পাঠিয়েছি কণ্ঠস্বরে। সৈয়দ ইকবালের গল্পটা ছাপা হলো, আমারটার খবরই নেই। পর পর দুটো গল্প ছাপা হয়ে গেল ইকবালের। '৭৪-৭৫ সালের কথা। অন্য পত্রপত্রিকায় আমার গল্প ছাপা হয়, কণ্ঠস্বরে হয় না। লজ্জায় ব্যাপারটা চেপে গেলাম। কাউকেই কিছু বলি না। বহু বছর পর, যখন স্যারের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠতা, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, বইপড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সারা দিন ধরে চলেছে রমনার বটমূলে, অনুষ্ঠান শেষ করে স্যারকে ঘিরে আমরা কয়েকজন বসেছি আড্ডা দিতে, কথায় কথায় কণ্ঠস্বরে আমার গল্প ছাপা না হওয়ার ঘটনাটা বললাম। শুনে স্যার মজার ভঙ্গি করে বললেন, 'ও, তুমি তাহলে একজন ব্যর্থ লেখক।'
আমরা সবাই হাসতে লাগলাম।
স্যার তাঁর 'কথোপকথন' বইটি আমাকে উৎসর্গ করেছেন। এ আমার লেখকজীবনের এক বিশাল পুরস্কার।
এনটিভিতে একটা টক শো করেছিলাম- 'কী কথা তাহার সাথে'। ১৫০ পর্বের পর আর করিনি। প্রথম অনুষ্ঠানটি করেছিলাম স্যারকে নিয়ে। আমি জানি পোশাকে, জীবনাচরণে, কর্মে আর কথায় তিনি আমাদের আদর্শ হয়ে উঠেছেন।
টেলিভিশনে 'সপ্তবর্ণা', 'চতুরঙ্গ'- এই দুটো নিয়মিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান তো করলেনই, ফাঁকে ফাঁকে করলেন বেশ কয়েকটি 'ঈদ আনন্দমেলা'। টিভি উপস্থাপক হিসেবে যখন জনপ্রিয়তার একেবারে তুঙ্গে, যে জনপ্রিয়তার লোভ সামলানো বাঙালির পক্ষে কঠিন, হঠাৎ করেই সেখান থেকে সরে এলেন স্যার। শুরু করলেন 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র'। '৭৮ সালের কথা। ইন্দিরা রোডের একটি বাড়িতে বই জড়ো করতে লাগলেন। বইয়ের আলোয় আলোকিত করতে শুরু করলেন ছাত্রছাত্রীদের, দেশের মানুষকে। 'আলোকিত মানুষ চাই' বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্লোগান। দিনে দিনে 'আলোকিত' শব্দটি আলোকময় হয়ে উঠতে লাগল। এখন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে দেশের শিক্ষকসমাজ, সুশীল শ্রেণী, ছাত্র-অভিভাবক- সবার মুখে এই শব্দ। বক্তৃতা-বিবৃতিতে, নাটকে-সাহিত্যে, টক শোতে আর খবরের কাগজে কথায় কথায় আসছে 'আলোকিত' শব্দটি। এই শব্দের প্রকৃত জনক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
কিছু মানুষ জন্মান কাজ করার জন্য। দেশ ও সমাজ বদলের জন্য। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তেমন একজন মানুষ। একের পর এক কাজ করে গেছেন তিনি। শিক্ষকতার মহান পেশায় ছিলেন। সেখান থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, মানুষের হাতে বই তুলে দেওয়ার ব্রত নিলেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র দাঁড় করাবার জন্য কী অমানুষিক পরিশ্রম তিনি করেছেন, কত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিয়েছেন, আমরা দেখেছি। অতি লক্কড়ঝক্কড় একটা গাড়ি ছিল। ড্রাইভার রাখার সামর্থ্য ছিল না। নিজে ড্রাইভ করতেন। 'র‌্যামন ম্যাগসাইসাই' পুরস্কার পেলেন। সেই টাকার কিছুটা খরচ করে অপেক্ষাকৃত ভালো একটা গাড়ি কিনলেন। থাকেন সেন্ট্রাল রোডের দুই বেডের ক্ষুদ্র একটি ফ্ল্যাটে। তাঁর লেখার জায়গাটি এত ছোট, ছোট্ট একটি টেবিল রাখার পর চারজন মানুষের বসার জায়গা নেই। ওইটুকু জায়গায় বসে আমরা বহুদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কথা শুনেছি।
স্যার 'বুড়িগঙ্গা বাঁচাও' আন্দোলন করেছেন, পরিবেশ আন্দোলন করেছেন। ঢাকা যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হলো, আমাদের নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে। স্কুলে স্কুলে গিয়ে, রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন আমাদের সঙ্গে। ডেঙ্গুর আবাসস্থলগুলো ধ্বংস করেছেন, মানুষকে সচেতন করেছেন। এডিস মশা কী, কোথায় বংশ বিস্তার করে, ডেঙ্গু আতঙ্ক যখন তুঙ্গে, তখন এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ শুরু করলেন। বছর দুয়েকের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে চলে এলো ডেঙ্গু। এখনো, এই বয়সেও তিনি কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি করে দেশের জেলায় জেলায় বই পৌঁছে দিচ্ছেন ছেলেমেয়েদের হাতে। বই পড়ো, আলোকিত মানুষ হও। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির ধারণাটিও তাঁর। দেশের প্রায় ১০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে বইপড়া কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছেন তিনি। জেলায় জেলায়, স্কুলে স্কুলে বইপড়া প্রতিযোগিতা করেন। দুই দিনের অনুষ্ঠানে ১০-১২ হাজার ছেলেমেয়েকে পুরস্কৃত করেন। অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যাবেলা প্রত্যেকের হাতে দেওয়া হয় মোমবাতি। একসঙ্গে জ্বলে ওঠে হাজার হাজার মোমবাতি। ওই দৃশ্য যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা আসলে আলোকিত বাংলাদেশ দেখেছেন; আমাদের আগামী প্রজন্ম, যাদের হাতে আগামী দিনের বাংলাদেশ, তাদের দেখেছেন।
এই মহতি কর্মের উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে বহু বই প্রকাশিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ সব বই। বিশ্বসাহিত্যের, বাংলা সাহিত্যের সেরা বইগুলো পাঠকের হাতে তুলে দেয় স্যারের প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ বছরে এত এত কৃতী মানুষ তৈরি হয়েছে এই কেন্দ্র ঘিরে, বাংলাদেশের যেকোনো সেক্টরে কেন্দ্রের ছেলেমেয়ে কেউ না কেউ আছেই। রাজনীতির ক্ষেত্রেও আছেন স্যারের বহু কৃতী ছাত্র।
এ বছর প্রবন্ধ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন স্যার। যদিও এই পুরস্কার তাঁর পাওয়া উচিত ছিল ২০-২৫ বছর আগে। ২০-২২টি গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন। ঢাকার ব্যস্ত জীবনে লিখতে অসুবিধা হয় বলে ঢাকার বাইরে এক তরুণ বন্ধুর বাড়িতে চলে যান। দু-চার দিন থেকে মনের মতো করে লিখে ফিরে আসেন। সংসারজীবনের দিকে কখনোই ফিরে তাকাননি।
একুশে পদক পেয়েছেন কয়েক বছর আগে। সাধারণত বাংলা একাডেমী পুরস্কার পাওয়ার পর একুশে পদক পান লেখকরা। স্যার একুশে পদক পেলেন আগে। তারপর পেলেন এশিয়ার নোবেল প্রাইজ খ্যাত র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার। এই পুরস্কার পাওয়ার পর পৃথিবী-বিখ্যাত সিএনএন টেলিভিশন স্যারের দীর্ঘ ইন্টারভিউ করল। খুবই জাঁদরেল এক মহিলা করলেন স্যারের ইন্টারভিউ। স্যার তাঁর অসাধারণ কণ্ঠে, স্নিগ্ধ ভঙ্গিতে এত বিশুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি ভাষায় ইন্টারভিউ দিলেন, পুরো পৃথিবী অবাক হয়ে এক কৃতী বাঙালিকে দেখল, তাঁর কথা শুনল।
এই অসামান্য মানুষটিকে নিয়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেল কয়েক দিন আগে। টিআইবির এক অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করল একটি দৈনিক পত্রিকা। আর ওই নিয়ে কয়েকজন সম্মানীয় সংসদ সদস্য এবং সেদিন স্পিকারের দায়িত্বে ছিলেন যিনি, তিনিও কিছু মন্তব্য করলেন। মন্তব্যগুলোর কোনোটাই ভালোভাবে নেয়নি দেশবাসী। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এবং তাঁর ভক্ত-অনুরাগীরা খুবই মর্মাহত হয়েছেন। স্যার তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে টিআইবির অনুষ্ঠানে বক্তব্য উপস্থাপন করছিলেন। আমাদের আরেক কৃতীজন সুলতানা কামাল উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। 'দুর্নীতি' কী তা বোঝাতে গিয়ে স্যার বললেন, 'চোর যে চুরি করে, ডাকাত যে ডাকাতি করে, সেটি কি দুর্নীতি? আমার ধারণা, এটা দুর্নীতি নয়। কারণ দুর্নীতি শব্দের মধ্যে আরেকটি শব্দ লুকিয়ে আছে। শব্দটি হলো 'নীতি'। চোর বা ডাকাতের কাজ ঠিক দুর্নীতি নয়। কারণ তাদের কোনো নীতিই নেই। সুতরাং দুর্নীতি সেই মানুষটি করে, যার নীতি আছে। একটা উদাহরণ দিই। যেমন- যদি একজন মন্ত্রী এই বলে শপথ নেন যে তিনি শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ না করে সবার প্রতি সমান বিচার করবেন, কিন্তু পরে তিনি সেটা না করেন, সেটা হবে দুর্নীতি' (প্রথম আলো, ৪ জুন)। স্যারের এই বক্তব্য বিকৃতভাবে তুলে ধরল দৈনিক পত্রিকাটি। লিখল, 'মন্ত্রী-এমপিদের চোর-ডাকাত বলেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।' আর এই পড়ে, স্যার এসব কথা বলেছেন কি না যাচাই না করে সংসদ তপ্ত হলো আলোচনায়। স্যারকে সংসদে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হলো। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার খুবই দুঃখ পেলেন। স্যারকে যাঁরা চেনেন তাঁরা জানেন, তিনি খুবই অভিজাত একজন মানুষ, অতি রুচিশীল মানুষ। বেফাঁস কথা বলা, কাউকে ছোট করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, অসম্মান করা তাঁর চরিত্রে নেই।
সংসদে যেদিন এই ঘটনা ঘটল, পরদিন স্যারকে আমি ফোন করেছি। তিনি এত মন খারাপ করা গলায় কথা বললেন, তিনি যে খুবই ব্যথিত হয়েছেন, দুঃখিত হয়েছেন, আমি বুঝতে পারলাম। তিনি আমাকে পরিষ্কার বললেন, 'আমি এমপি বা মন্ত্রীদের দুর্নীতি নিয়ে কোনো মন্তব্যই করিনি। এমনকি এমপি শব্দটিও আমি সেদিন উচ্চারণ করিনি। আমাকে নিয়ে আলোচনা করার আগে যদি কেউ আমার কাছে একটু জানতে চাইতেন আমি আসলে কী বলেছি, তাহলে এ অবস্থাটা হয় না।'
এক দিন পর সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী সাহেব বললেন, সংসদে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সাহেবকে নিয়ে আলোচনা করা ঠিক হয়নি। আমিও তাঁকে শ্রদ্ধা করি, তিনি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। পরে টিআইবি এই নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করে। বিষয়টি এখন দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার। 'চিলে কান নিয়ে গেল', কানটা জায়গামতো আছে কি নেই যাচাই না করে চিলের পেছনে দৌড় দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
স্যার আমাকে একদিন বলেছিলেন, 'আমি জীবনে টাকার কথা ভেবে কোনো কাজ করিনি।' শুনে কেঁপে উঠেছিলাম। নিজেকে এত ক্ষুদ্র মনে হয়েছিল স্যারের সামনে, মনে হয়েছিল আমি দাঁড়িয়ে আছি এক হিমালয়ের পায়ের কাছে। মাথা তুলে যতই ওপর দিকে তাকাই না কেন, হিমালয়ের চূড়াটা দেখতে পাই না।
স্যারের সেই 'মজিদের খালু' ঘটনার কথা মনে আসে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে এখনো আমরা কেউ কেউ চিনতে ভুল করি। এই ভুল দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আমাদের একটি বাতিঘর। বাতিঘরের আলোয় গভীর সমুদ্রে পথ হারানো মানুষ পথের দিশা পায়। বাতিঘর আক্রান্ত হলে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় চারদিক। আমরা অন্ধকার চাই না। আমরা চাই আলো, আমরা চাই আলোকিত মানুষ।

No comments

Powered by Blogger.