রাজধানীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি-অভিজাত এলাকায় নিরাপত্তা শঙ্কা
রাজধানীতে পাঁচ দিনের ব্যবধানে ভরদুপুরে দুটি ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। একটি ঘটেছে অভিজাতদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত বাংলামটরের ইস্টার্ন টাওয়ারে। অপরটি অভিজাতদের আবাসস্থল ও বাণিজ্যিক এলাকা বনানীর ইকবাল সেন্টারের নিউ হীরা জুয়েলার্সে।
উভয় ক্ষেত্রেই ভয় দেখানোর জন্য মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং অপরাধ সংঘটনের পর দুষ্কৃতকারীরা পালাতে পেরেছে নির্বিঘ্নে। রোববার ইস্টার্ন টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট থেকে এভাবে লুট হয় এক কোটি টাকার বেশি স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মালপত্র। শুক্রবার নিউ হীরা জুয়েলার্স থেকে লুট হয়ে যাওয়া অলঙ্কারের মূল্য বলা হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। উভয় ঘটনার প্রকৃতি দুর্ধর্ষ ধরনের। ডাকাতরা চরম ঝুঁকি নিয়েছে একং সাফল্যের সঙ্গে সটকে পড়েছে। আর এখানেই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি যেমন প্রকটভাবে ধরা পড়েছে, তেমনি উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে। ইস্টার্ন টাওয়ারে নিজস্ব সিকিউরিটি চেকিং যথেষ্ট কঠোর এবং সেখানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শনাক্ত করা যায়নি। বনানীর ইকবাল সেন্টারের অবস্থান অতি ব্যস্ত সড়ক কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে। বড় বড় স্বর্ণালঙ্কারের দোকানগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু হীরা জুয়েলার্সও ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এর মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়, 'ওগুলো আগে থাকতেই নষ্ট ছিল।' সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন বিভিন্ন আবাসিক কমপ্লেক্স ও বিপণি বিতানে এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন ঠিকঠাক কাজ করছে না সেটা খতিয়ে দেখতে পারে। তবে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ কিংবা তাতে এমনকি গুরুতর গলদ থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এ দুটি ঘটনায় অভিজাত বিপণি বিতান ও আবাসিক এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। দুপুরবেলা কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফ্ল্যাট বাড়িতে হানা দিয়ে কোটি টাকার মালপত্র নিয়ে নির্বিঘ্নে সরে পড়ার ঘটনা সংঘটিত অন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকেও এ ধরনের অভিযানে উৎসাহিত করতে পারে। রোববারের এ ঘটনার পর ইস্টার্ন টাওয়ারে ডাকাতির পর পুলিশ ওই কমপ্লেক্সের দেড়শ' ফ্ল্যাটের প্রতিটিতে তল্লাশি চালিয়েছে। তাদের কি ধারণা ছিল যে, ডাকাতরা বমাল ধরা পড়ার জন্য ঘটনাস্থলের অতি নিকটেই অপেক্ষা করবে? এতে বাসিন্দাদের হয়রানি হয়েছে এবং তারা অপমানিতও বোধ করে থাকবেন। বনানীর যে সড়কের দোকান থেকে ডাকাতি হয়েছে সেখানে পুলিশ টহল থাকে সর্বক্ষণ। ঘটনা ঘটেছে সরকারি ছুটির দিনে, কিন্তু বনানীর এলাকার মার্কেট খোলা ছিল। জুমার নামাজের বিরতির সময় সড়কে যানবাহন চলাচল কিছুটা কম ছিল এবং দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যাওয়ার জন্য এ সুযোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তাতে পুলিশের দায়মুক্তি মেলে না। অপরাধীরা ডালে ডালে চললে তাদের পাতায় পাতায় চলার কথা। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে বিপরীত। গুরুতর অপরাধ সংঘটনের পর পুলিশ অপরাধীদের পাকড়াও করতে পারলে জনমনে কিছুটা স্বস্তির ভাব ফিরে আসতে পারে। কিন্তু সে জন্য কি অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে? এ দুটি ঘটনার রহস্য উন্মোচনের আগেই নতুন এক বা একাধিক ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত হলে রাজধানীবাসীদের নিরাপত্তাহীনতাবোধ যে অনেক বেড়ে যাবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহল নিশ্চয়ই সচেতন রয়েছে।
No comments