মামলাজট ও একটি শুভ সংবাদ

'জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড'_বহু পুরনো একটি অতি সত্য কথা। অর্থাৎ বিচারকাজ যত বিলম্বিত হবে, ন্যায়বিচার ততটাই ব্যাহত হবে। এ সত্য উপলব্ধি করে বর্তমান প্রধান বিচারপতি জাতিকে একটি সুসংবাদ উপহার দিয়েছেন, সে জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।


তিনি রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন, গত ছয় মাসে হাইকোর্টে বিচারাধীন ৬০ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর পরও হাইকোর্টে জমে থাকা মোট মামলার সংখ্যা দুই লাখ ৯৫ হাজার। আর ছয় মাস আগে তা ছিল তিন লাখ ৫৫ হাজার, যার মধ্যে হয়তো ১০, ১৫ কিংবা ২০ বছরের পুরনো মামলাও ছিল। কিন্তু এখনো যে সংখ্যাটি রয়েছে, তাও খুব স্বস্তিকর নয়। আমরা আশা করছি, প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে মামলা নিষ্পত্তির এ গতি অব্যাহত থাকলে মামলাজট দ্রুত কমে আসবে।
সর্বোচ্চ আদালতের ক্ষেত্রেই যখন অবস্থাটি এমন, তখন সারা দেশের নিম্ন আদালতগুলোর মামলাজট নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। এর মধ্যে যেমন আছে ফৌজদারি অপরাধের মামলা, তেমনি আছে অর্থবিত্ত বা জমিজমাসংক্রান্ত দেওয়ানি মামলাও। কে বলতে পারে, এর মধ্যে কতজন দুর্বল বিচারপ্রার্থী শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে না পেরে ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছেন। কিংবা কতজন বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে মামলা চালানো থেকে দূরে সরে গেছেন। আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থার এ দুর্বলতা অনেক দিনের। এর সুযোগ নিয়ে বরাবরই প্রভাবশালীরা লাভবান হয়েছেন, আর দুর্বল ব্যক্তিরা বঞ্চিত হয়েছেন ন্যায়বিচার থেকে। বর্তমান সরকারও এই অতি প্রয়োজনীয় সত্যটি কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৮১৫ জন সহকারী বিচারক ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বা বিজেএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে অচিরেই আরো ১০১ জন সহকারী বিচারক ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে। মামলাজট নিরসনের জন্য আইনেরও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হচ্ছে। পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে, দ্রুত নিষ্পত্তি করতে গিয়ে যেন কোনো মামলায় বিচার বিপথগামী না হয়।
দুর্বল হোক আর সবলই হোক, কোনো বিচারপ্রার্থীই যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন_সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব যেমন বিচার বিভাগের, তেমনি বিচার বিভাগকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। তা ছাড়া দ্রুততম সময়ে ন্যায়বিচার পাওয়ার ওপরই নির্ভর করে একটি দেশের বিচারব্যবস্থার ভাবমূর্তি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থা এখনো জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আমরা আশা করি, প্রধান বিচারপতি, বিচার বিভাগ ও সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা পাহাড়সমান মামলাজটের সমাধান অবশ্যই ত্বরান্বিত করবে। প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.