ধর্ম-মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
সমাজে প্রত্যেক মানুষ তার নিজ কর্মফলের জন্য দায়ী। পার্থিব জীবন শেষে আল্লাহ তাআলার কাছে প্রত্যেককে তার নিজ নিজ কর্মকাণ্ডের জন্য অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। কোনো লোকের দুর্নীতি, অপকর্ম বা পাপে অন্য কেউ বা তার আত্মীয়স্বজন বা বংশ দায়ী হবে না।
ইসলামে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ইহকালীন ও পারলৌকিক উভয় জগতেই লক্ষ করা যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হওয়া (জবাবদিহি)কে ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।’ (সূরা আল-নাযিআত, আয়াত- ৪০)
প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের যে ক্ষমতা বা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা পালন করার সন্তোষজনক কৈফিয়ত প্রদানকে জবাবদিহি বোঝায়। শাসক বা নেতাকে যেমন অধীন প্রজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তেমনি আপামর জনসাধারণকেও তাদের কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সমাজে সব মানুষেরই একে অন্যের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার অভাবে অর্পিত দায়িত্ব ন্যায়নিষ্ঠা, যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করা যায় না। তাই প্রত্যেকেই স্বীয় অধীনদের প্রতি নিজ নিজ কর্তব্য ও দায়দায়িত্ব পালন করল কি না, সে সম্পর্কে পরকাল তথা কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে। সঠিক উত্তর প্রদানের জন্য অশেষ পুরস্কার আর জবাবদিহি করতে অসমর্থ হলে কঠোর শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে।’ (সূরা আয-যিলযাল, আয়াত: ৭-৮)
এ নশ্বর দুনিয়াতে সব বস্তুই একে অপরের কাছে আমানতস্বরূপ। সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সমাজে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার সীমাবদ্ধতার ফলে একদিকে যেমন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিরপেক্ষতার অভাব, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও হতাশা ব্যাপকভাবে বিদ্যমান; অপরদিকে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, অদক্ষতা, তোষামোদ, কাজে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি নিয়মশৃঙ্খলা ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ যেমন তার দায়দায়িত্বের জন্য পরকালে জিজ্ঞাসিত হবে, ঠিক তেমনি একজন ধর্মপ্রাণ বান্দাও তার নির্ধারিত কাজের জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। পরিবারের রক্ষক ও অভিভাবক পুরুষকে যেমন তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তেমনি সংসারের কর্ত্রী স্ত্রীকেও তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তান-সন্ততিদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে প্রত্যেকেই তার অধীন ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি দায়িত্বশীল রয়েছে এবং সবাই ভালোমন্দ কাজের জন্য দায়বদ্ধ হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদের আমি জিজ্ঞাসা করব এবং রাসুলদেরও জিজ্ঞাসা করব। অনন্তর তাদের কাছে পূর্ণ জ্ঞানের সঙ্গে তাদের কার্যাবলি বিবৃত করব, আর আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম না। সেদিন ওজন ঠিক করা হবে, যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৬-৮)
পরকালে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সম্মান ও মর্যাদাপ্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আত্মসচেতন, কর্তব্যপরায়ণ ও কর্মতৎপর হতে হবে। নিজেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে। কাজেকর্মে স্বচ্ছতার কারণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় ও জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়। দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির মনে ঈমানি চেতনায় মানসিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। স্বচ্ছতার ফলে অধীদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সম্মান পাওয়া যায়। তারাও স্বচ্ছতার ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান ও সতর্ক হয়ে পড়ে। মানবজীবন জবাবদিহির একটি নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। এটি ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ বয়ে আনে। এ জন্য সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, নিরপেক্ষতার সঙ্গে সবাইকে সমাজ জীবনে যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বচ্ছতা অবশ্যই একটি উত্তম প্রক্রিয়া। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে প্রত্যেক মানুষকে লোভ-লালসা ও ভোগ বিলাসিতার মাধ্যমে নয়, বরং ন্যায়নিষ্ঠা ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা খুবই প্রয়োজন।
চাকরি, ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে কাজের জন্য কোনো একজনের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রচলন না থাকলে স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসে। দেশের জনগণ প্রশাসনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর যে গুরু দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ করেছে, তা যথাযথভাবে পালন করা সবার অবশ্যকর্তব্য। দায়বদ্ধতা বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অনন্য কৌশল জবাবদিহি। দক্ষ ও উন্নত নৈতিকতাসম্পন্ন প্রশাসনের জন্য জবাবদিহির বিকল্প নেই। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। একজন সফল আদর্শ নেতা ও জাতি গঠনকারী হিসেবে সরকারের দায়িত্ব ও জবাবদিহি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যাকে আল্লাহ তাআলা প্রজা সাধারণের ওপর শাসক বানিয়েছেন সে যদি তাদের পূর্ণভাবে কল্যাণ কামনা না করে, তবে সে জান্নাতের সুবাসও পাবে না।’
জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য বর্তমানে যেসব ব্যবস্থা প্রচলিত আছে তার দীর্ঘসূত্রতার ফলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, সরকারি অর্থ-সম্পদ অপচয়, জনগণের হয়রানি প্রভৃতি নানাবিধ অভিযোগ উঠছে। তাই ইসলামের আলোকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের আবশ্যকতা রয়েছে। অপরদিকে কোনো ব্যক্তি যখন ইচ্ছামতো রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ, অবৈধভাবে ভোগ বা জবরদখল, কলহ-বিবাদ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মারামারি-হানাহানি, ভাঙচুর, লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, অপহরণ, গুম, হত্যাকাণ্ড, বোমাবাজি প্রভৃতি সামাজিক অনাচার করবে আর দায়িত্বশীল সরকার অন্যায় আচরণের জন্য তাদের জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে না—এটা কাম্য হতে পারে না। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুসারে জনসাধারণের প্রতিনিধি তত্ত্বাবধায়ক ও নেতৃত্বদানকারী শাসককে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হেফাজতকারী জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবহারকারী ও নিরাপত্তাদানকারী হিসেবে সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্মিলনের প্রয়াস ঘটাতে প্রত্যেককেই নিজ নিজ অধীনদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের যে ক্ষমতা বা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা পালন করার সন্তোষজনক কৈফিয়ত প্রদানকে জবাবদিহি বোঝায়। শাসক বা নেতাকে যেমন অধীন প্রজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তেমনি আপামর জনসাধারণকেও তাদের কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সমাজে সব মানুষেরই একে অন্যের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার অভাবে অর্পিত দায়িত্ব ন্যায়নিষ্ঠা, যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করা যায় না। তাই প্রত্যেকেই স্বীয় অধীনদের প্রতি নিজ নিজ কর্তব্য ও দায়দায়িত্ব পালন করল কি না, সে সম্পর্কে পরকাল তথা কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে। সঠিক উত্তর প্রদানের জন্য অশেষ পুরস্কার আর জবাবদিহি করতে অসমর্থ হলে কঠোর শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে।’ (সূরা আয-যিলযাল, আয়াত: ৭-৮)
এ নশ্বর দুনিয়াতে সব বস্তুই একে অপরের কাছে আমানতস্বরূপ। সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সমাজে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার সীমাবদ্ধতার ফলে একদিকে যেমন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিরপেক্ষতার অভাব, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও হতাশা ব্যাপকভাবে বিদ্যমান; অপরদিকে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, অদক্ষতা, তোষামোদ, কাজে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি নিয়মশৃঙ্খলা ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ যেমন তার দায়দায়িত্বের জন্য পরকালে জিজ্ঞাসিত হবে, ঠিক তেমনি একজন ধর্মপ্রাণ বান্দাও তার নির্ধারিত কাজের জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। পরিবারের রক্ষক ও অভিভাবক পুরুষকে যেমন তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তেমনি সংসারের কর্ত্রী স্ত্রীকেও তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তান-সন্ততিদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে প্রত্যেকেই তার অধীন ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি দায়িত্বশীল রয়েছে এবং সবাই ভালোমন্দ কাজের জন্য দায়বদ্ধ হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদের আমি জিজ্ঞাসা করব এবং রাসুলদেরও জিজ্ঞাসা করব। অনন্তর তাদের কাছে পূর্ণ জ্ঞানের সঙ্গে তাদের কার্যাবলি বিবৃত করব, আর আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম না। সেদিন ওজন ঠিক করা হবে, যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৬-৮)
পরকালে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সম্মান ও মর্যাদাপ্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আত্মসচেতন, কর্তব্যপরায়ণ ও কর্মতৎপর হতে হবে। নিজেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে। কাজেকর্মে স্বচ্ছতার কারণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় ও জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়। দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির মনে ঈমানি চেতনায় মানসিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। স্বচ্ছতার ফলে অধীদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সম্মান পাওয়া যায়। তারাও স্বচ্ছতার ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান ও সতর্ক হয়ে পড়ে। মানবজীবন জবাবদিহির একটি নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। এটি ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ বয়ে আনে। এ জন্য সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, নিরপেক্ষতার সঙ্গে সবাইকে সমাজ জীবনে যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বচ্ছতা অবশ্যই একটি উত্তম প্রক্রিয়া। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে প্রত্যেক মানুষকে লোভ-লালসা ও ভোগ বিলাসিতার মাধ্যমে নয়, বরং ন্যায়নিষ্ঠা ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা খুবই প্রয়োজন।
চাকরি, ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে কাজের জন্য কোনো একজনের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রচলন না থাকলে স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসে। দেশের জনগণ প্রশাসনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর যে গুরু দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ করেছে, তা যথাযথভাবে পালন করা সবার অবশ্যকর্তব্য। দায়বদ্ধতা বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অনন্য কৌশল জবাবদিহি। দক্ষ ও উন্নত নৈতিকতাসম্পন্ন প্রশাসনের জন্য জবাবদিহির বিকল্প নেই। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। একজন সফল আদর্শ নেতা ও জাতি গঠনকারী হিসেবে সরকারের দায়িত্ব ও জবাবদিহি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যাকে আল্লাহ তাআলা প্রজা সাধারণের ওপর শাসক বানিয়েছেন সে যদি তাদের পূর্ণভাবে কল্যাণ কামনা না করে, তবে সে জান্নাতের সুবাসও পাবে না।’
জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য বর্তমানে যেসব ব্যবস্থা প্রচলিত আছে তার দীর্ঘসূত্রতার ফলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, সরকারি অর্থ-সম্পদ অপচয়, জনগণের হয়রানি প্রভৃতি নানাবিধ অভিযোগ উঠছে। তাই ইসলামের আলোকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের আবশ্যকতা রয়েছে। অপরদিকে কোনো ব্যক্তি যখন ইচ্ছামতো রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ, অবৈধভাবে ভোগ বা জবরদখল, কলহ-বিবাদ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মারামারি-হানাহানি, ভাঙচুর, লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, অপহরণ, গুম, হত্যাকাণ্ড, বোমাবাজি প্রভৃতি সামাজিক অনাচার করবে আর দায়িত্বশীল সরকার অন্যায় আচরণের জন্য তাদের জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে না—এটা কাম্য হতে পারে না। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুসারে জনসাধারণের প্রতিনিধি তত্ত্বাবধায়ক ও নেতৃত্বদানকারী শাসককে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হেফাজতকারী জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবহারকারী ও নিরাপত্তাদানকারী হিসেবে সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্মিলনের প্রয়াস ঘটাতে প্রত্যেককেই নিজ নিজ অধীনদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments