চারদিক-কাননে কুসুমকলি by সৈয়দা আখতার জাহান
মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকের রোড নম্বর ৪-এর বাড়িটির নিচতলায় বসেছে ঈদমেলা। মেলায় আছে হাতে তৈরি মোম, পটারি, কার্ড হোল্ডার, চাদর, শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়া, বেডশিট, পাপেট, চুড়ি, ডোরবেল। তবে প্রথমে ঢুকতেই আপনার চোখে পড়বে ঈদকার্ড।
বাচ্চাদের হাতে আঁকা এই কার্ডগুলোয় রয়েছে রংবেরঙের ফুল, পাখি, প্রজাপতি, ঘুড়ি, বল আঁকা। ওপরে লেখা ‘ঈদকার্ড ২০১০’। হাতে তৈরি এসব পণ্য যারা তৈরি করেছে, তারা অটিস্টিক শিশু।
পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সুসজ্জিত ফটক পেরিয়ে মেলায় ঢুকতেই আপনি মুগ্ধ হবেন সাজসজ্জা দেখে। মেলা প্রাঙ্গণটা সাজিয়েছেন তাসনিয়া। দেয়ালে এঁকেছেন ফুল।
পশলা, অর্ণব, অনীক, প্রমা, রাশিক, আরিফ, আফরা, সামির—এমন প্রায় ১৪৮ জন অটিস্টিক শিশুর তৈরি পণ্য নিয়ে বসেছে এই ঈদমেলা। প্রতিটি স্টলে সাজানো পণ্যগুলো আগত দর্শকদের দেখাচ্ছে পণ্য তৈরি করা শিক্ষার্থীরা। একটা স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম পুঁথি দিয়ে তৈরি ডোরবেল। নূরই তাবাসসুম মিতির তৈরি এই ডোরবেল সে নিজ হাতে নিয়ে আমাকে দেখাল। কীভাবে বানালে এত সুন্দর জিনিস? হেসে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল সে। বলল, ‘সুন্দর মোমগুলোও আমার তৈরি।’ পাশের স্টলে নিজের তৈরি চুড়ি, ছোট্ট ব্যাগ ও ফুল নিয়ে বসেছে পশলা। আদিবা ইবনাত পশলা। বয়স ১১ বছর, পড়ছে চতুর্থ শ্রেণীতে। পশলা সবচেয়ে ভালো যেটা পারে, তা হলো ছবি আঁকতে। বলল, ‘আমি রংপেন্সিল অনেক ভালোবাসি। ছবি আঁকা আমার প্রিয় খেলা। জানো, আমার অনেক বন্ধু আছে। আড়াল, রোদলি, আনিকা, আয়ত, শীলা।’ বললাম, ওরা এখানে আছে? ‘না, ওরা নেই। ওরা তো আমার কল্পনার বন্ধু।’ পাশের তাকে রাখা শাড়ি, থ্রিপিস ও বেডশিটগুলো দেখে মেলায় আগত দর্শকেরা বেশ প্রশংসা করছে। আগ্রহভরে এগিয়ে যেতেই দেখলাম, সত্যি ভীষণ সুন্দর করে ব্লকপ্রিন্ট করা। ‘এগুলো করতে শিক্ষকেরা আমাদের সাহায্য করেছেন’, বলল মাইশা রহমান। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা জানালেন, প্রতিটি পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কিছুটা সহযোগিতা তো করতেই হয়, তবে বাকি কাজটুকু তারা নিজেরাই করে। মেলা প্রাঙ্গণের পাশেই একটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেল, ব্লকপ্রিন্ট ও বাটিক করার সরঞ্জাম। আছে পুঁতির ঝুড়ি, কাপড়ের টুকরা, সুতাসহ নানা কিছু। শিক্ষিকা শিরিন রহমান বললেন, ‘এ কক্ষটিতে বসে শিশুরা পণ্যগুলো তৈরি করেছে। পাশের ঘরটি স্কুলের ক্যাফেটেরিয়া। বাচ্চারা যেসব টিফিন স্কুলে খায়, সবই তৈরি হয় এখানে। বাচ্চারা সবজি কেটে এ কাজেও সাহায্য করে। আমাদের ছাত্র লাবিব রান্নাটা বেশ ভালোভাবে করতে পারে।’
শিশুদের তৈরি নকশিকাঁথা ঢঙের ওয়ালম্যাটগুলো বেশ বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা ব্লক করা ছোট ছোট ব্যাগও কিনছে অনেক। পাশাপাশি অগ্রিম অর্ডার দিচ্ছে বিভিন্ন ব্লকপ্রিন্ট করা বেডশিটের। শিক্ষার্থীদের নিজেদের পণ্যগুলো তৈরির সময়কার ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছিল। তা দেখানো হচ্ছে মেলার স্টলগুলোর পাশে রাখা একটা টেলিভিশনে। মেলায় আগত দর্শকেরা মেলা প্রাঙ্গণ ঘোরার পাশাপাশি কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে দেখছে টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওচিত্র।
এ মেলার আয়োজক অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. রওনাক হাফিজ বললেন, ‘কাননের অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের তৈরি ঈদকার্ড ও হস্তশিল্প নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এই মেলা বসেছে। অটিস্টিক শিশুরা যে কতটা প্রতিভাবান, সে ব্যাপারটি তুলে ধরতেই এ ধরনের আয়োজন করেছি।’ তিনি আরও বললেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি এই স্কুলে বাচ্চাদের হাতের কাজও শেখানো হয়। ওরা অনেক আনন্দ নিয়ে পণ্যগুলো তৈরি করে। আগ্রহ নিয়ে কাজ শেখে। প্রত্যেকটি বাচ্চার মধ্যেই প্রতিভা আছে। বাচ্চারা ভবিষ্যতে যাতে নিজেরাও কিছু করতে পারে, সেই উদ্দেশ্য থেকেই এই লক্ষ্যে পথচলা। মেলা দেখতে আসা সামিয়া রহমান বলেন, অনেকটা কৌতূহল থেকে অটিজম শিশুদের তৈরি পণ্য নিয়ে আয়োজিত মেলাটা দেখতে আসা। নিজে না দেখলে জানা হতো না, শিশুরা এত সুন্দর কাজ করতে পারে। তিনি ওয়ালম্যাট ও চুড়ি কিনেছেন। ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। যেসব বাচ্চা মেলায় পণ্য এনেছে, তাদের অভিভাবকেরা বললেন, ‘ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, আমাদের বাচ্চারা পারবে আগামী দিনকে জয় করতে।’ অভিভাবকদের এমন আনন্দ-অনুভূতি নিয়ে যখন ফিরছি, তখন সিডি রাখা ‘ডাবল পোস্টার পেপার’ আকারের হাতে আঁকা ছবিটা নজর কাড়ল। রংতুলির আঁচড়ে আর পেন্সিলে আঁকা ফুল-পাখির প্রাকৃতিক দৃশ্যটা মুগ্ধ করল আমাকে। মেলায় ঘুরে অটিস্টিক বাচ্চাদের কাজ দেখে সত্যিই ওদের শিল্পীমনের পরিচয় পাওয়া গেল। মেলাটি চলবে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সুসজ্জিত ফটক পেরিয়ে মেলায় ঢুকতেই আপনি মুগ্ধ হবেন সাজসজ্জা দেখে। মেলা প্রাঙ্গণটা সাজিয়েছেন তাসনিয়া। দেয়ালে এঁকেছেন ফুল।
পশলা, অর্ণব, অনীক, প্রমা, রাশিক, আরিফ, আফরা, সামির—এমন প্রায় ১৪৮ জন অটিস্টিক শিশুর তৈরি পণ্য নিয়ে বসেছে এই ঈদমেলা। প্রতিটি স্টলে সাজানো পণ্যগুলো আগত দর্শকদের দেখাচ্ছে পণ্য তৈরি করা শিক্ষার্থীরা। একটা স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম পুঁথি দিয়ে তৈরি ডোরবেল। নূরই তাবাসসুম মিতির তৈরি এই ডোরবেল সে নিজ হাতে নিয়ে আমাকে দেখাল। কীভাবে বানালে এত সুন্দর জিনিস? হেসে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল সে। বলল, ‘সুন্দর মোমগুলোও আমার তৈরি।’ পাশের স্টলে নিজের তৈরি চুড়ি, ছোট্ট ব্যাগ ও ফুল নিয়ে বসেছে পশলা। আদিবা ইবনাত পশলা। বয়স ১১ বছর, পড়ছে চতুর্থ শ্রেণীতে। পশলা সবচেয়ে ভালো যেটা পারে, তা হলো ছবি আঁকতে। বলল, ‘আমি রংপেন্সিল অনেক ভালোবাসি। ছবি আঁকা আমার প্রিয় খেলা। জানো, আমার অনেক বন্ধু আছে। আড়াল, রোদলি, আনিকা, আয়ত, শীলা।’ বললাম, ওরা এখানে আছে? ‘না, ওরা নেই। ওরা তো আমার কল্পনার বন্ধু।’ পাশের তাকে রাখা শাড়ি, থ্রিপিস ও বেডশিটগুলো দেখে মেলায় আগত দর্শকেরা বেশ প্রশংসা করছে। আগ্রহভরে এগিয়ে যেতেই দেখলাম, সত্যি ভীষণ সুন্দর করে ব্লকপ্রিন্ট করা। ‘এগুলো করতে শিক্ষকেরা আমাদের সাহায্য করেছেন’, বলল মাইশা রহমান। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা জানালেন, প্রতিটি পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কিছুটা সহযোগিতা তো করতেই হয়, তবে বাকি কাজটুকু তারা নিজেরাই করে। মেলা প্রাঙ্গণের পাশেই একটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেল, ব্লকপ্রিন্ট ও বাটিক করার সরঞ্জাম। আছে পুঁতির ঝুড়ি, কাপড়ের টুকরা, সুতাসহ নানা কিছু। শিক্ষিকা শিরিন রহমান বললেন, ‘এ কক্ষটিতে বসে শিশুরা পণ্যগুলো তৈরি করেছে। পাশের ঘরটি স্কুলের ক্যাফেটেরিয়া। বাচ্চারা যেসব টিফিন স্কুলে খায়, সবই তৈরি হয় এখানে। বাচ্চারা সবজি কেটে এ কাজেও সাহায্য করে। আমাদের ছাত্র লাবিব রান্নাটা বেশ ভালোভাবে করতে পারে।’
শিশুদের তৈরি নকশিকাঁথা ঢঙের ওয়ালম্যাটগুলো বেশ বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা ব্লক করা ছোট ছোট ব্যাগও কিনছে অনেক। পাশাপাশি অগ্রিম অর্ডার দিচ্ছে বিভিন্ন ব্লকপ্রিন্ট করা বেডশিটের। শিক্ষার্থীদের নিজেদের পণ্যগুলো তৈরির সময়কার ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছিল। তা দেখানো হচ্ছে মেলার স্টলগুলোর পাশে রাখা একটা টেলিভিশনে। মেলায় আগত দর্শকেরা মেলা প্রাঙ্গণ ঘোরার পাশাপাশি কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে দেখছে টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওচিত্র।
এ মেলার আয়োজক অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. রওনাক হাফিজ বললেন, ‘কাননের অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের তৈরি ঈদকার্ড ও হস্তশিল্প নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এই মেলা বসেছে। অটিস্টিক শিশুরা যে কতটা প্রতিভাবান, সে ব্যাপারটি তুলে ধরতেই এ ধরনের আয়োজন করেছি।’ তিনি আরও বললেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি এই স্কুলে বাচ্চাদের হাতের কাজও শেখানো হয়। ওরা অনেক আনন্দ নিয়ে পণ্যগুলো তৈরি করে। আগ্রহ নিয়ে কাজ শেখে। প্রত্যেকটি বাচ্চার মধ্যেই প্রতিভা আছে। বাচ্চারা ভবিষ্যতে যাতে নিজেরাও কিছু করতে পারে, সেই উদ্দেশ্য থেকেই এই লক্ষ্যে পথচলা। মেলা দেখতে আসা সামিয়া রহমান বলেন, অনেকটা কৌতূহল থেকে অটিজম শিশুদের তৈরি পণ্য নিয়ে আয়োজিত মেলাটা দেখতে আসা। নিজে না দেখলে জানা হতো না, শিশুরা এত সুন্দর কাজ করতে পারে। তিনি ওয়ালম্যাট ও চুড়ি কিনেছেন। ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। যেসব বাচ্চা মেলায় পণ্য এনেছে, তাদের অভিভাবকেরা বললেন, ‘ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, আমাদের বাচ্চারা পারবে আগামী দিনকে জয় করতে।’ অভিভাবকদের এমন আনন্দ-অনুভূতি নিয়ে যখন ফিরছি, তখন সিডি রাখা ‘ডাবল পোস্টার পেপার’ আকারের হাতে আঁকা ছবিটা নজর কাড়ল। রংতুলির আঁচড়ে আর পেন্সিলে আঁকা ফুল-পাখির প্রাকৃতিক দৃশ্যটা মুগ্ধ করল আমাকে। মেলায় ঘুরে অটিস্টিক বাচ্চাদের কাজ দেখে সত্যিই ওদের শিল্পীমনের পরিচয় পাওয়া গেল। মেলাটি চলবে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
No comments