ভালো বাবা

দক্ষিণ মেরুতে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকার সুবিশাল বরফের রাজ্য। শীতকালে সেখানে আরও ঠান্ডা পড়ে। এ সময় স্ত্রী রাজ পেঙ্গুইন একটি মাত্র ডিম পাড়ে। আর সে ডিম ফোটানোর কাজটা পুরোপুরি নিয়ে নেয় পুরুষ পেঙ্গুইন। ডিমটাকে বাবা রাজ পেঙ্গুইন দুপায়ের পাতার ওপর তুলে পেটের পালক দিয়ে ঢেকে ওম দিতে থাকে।


মা-টি তখন হিম সাগরে যায় খাবারের খোঁজে। যখন জোর বাতাস বইতে শুরু করে, তখন ডিমে তা দিতে থাকা সব বাবা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে হিমের দুর্ভোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করে। ডিমকে বাঁচায়। কষ্ট যতই হোক, পায়ের পাতা থেকে মুহূর্তের জন্য ডিম পড়তে দেয় না তারা। কারণ বরফের পরশ পাওয়া মাত্র ডিম জমে যাবে। আর বাচ্চা ফুটবে না। রাজ পেঙ্গুইন বাবা এভাবে টানা চার মাস এক ঠায় ডিম আগলে রেখে তা দেয়। এ সময় একটু-আধটু বরফ ছাড়া আর কিছু খায় না সে। খাবে কী করে? সুযোগ তো নেই।
তারপর যেই না ডিম থেকে ছানা বের হয়, তখন আবার অন্য ধরনের কষ্ট। এ সময় বাবা তাঁর গলা থেকে দুধের মতো এক ধরনের তরল পদার্থ বের করে ছানাকে খাওয়ায়।
বাবা কিউইও দায়িত্ব পালনে বেশ সচেতন। সে সুন্দর একখানা বাসা তৈরি করলে সেখানে একসঙ্গে কয়েকটি ডিম পাড়ে মা কিউই। সাধারণত ১০-১২টি ডিম পাড়ে কিউই। তবে তা মাঝেমধ্যে ২০টিতে পৌঁছায়। ডিম পেড়েই মা কিউইয়ের দায়িত্ব শেষ। এবার বাবা বসে যায় তা দিতে। ডিম ফুটতে মাস দুয়েক লাগে। এই দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকে বাবাটি। ডিমে শুধু চুপচাপ বসেই থাকে না বাবা। দিনে বেশ কয়েকবার প্রতিটা ডিম উল্টেপাল্টে দেয়, যাতে সব দিকে সমান তাপ লাগে।
ব্যাঙের দুনিয়ায় বাবার কথা বলে আর কী হবে, পানিতে ডিম ছাড়ার পর মায়েরই কোনো খোঁজ থাকে না। এর পরও ‘পয়জন অ্যারো ফ্রগ’ বলে পরিচিত এক জাতের বিষাক্ত সবুজ ব্যাঙ অন্য রকম। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বৃষ্টিবনে থাকে এসব ব্যাঙ। সবুজ গায়ে লম্বা কালো ডোরা রয়েছে এসব ব্যাঙের। ত্বকে মারাত্মক বিষ। মা ব্যাঙ গাছের পাতায় একগাদা ডিম পাড়ার পর কাছে বসে বাবা ব্যাঙটি টানা দুই সপ্তাহ পাহারা দেয়। তারপর যেই না ডিম ফুটে ব্যাঙাচি বের হয়, পিঠের ওপর তুলে নেয় বাবা। নতুন বাড়িতে নিয়ে ছেড়ে দেয় এগুলো। এই নতুন বাড়ি হতে পারে পানি জমে থাকা কোনো গাছের কোটর। হতে পারে পানি জমে থাকা উঁচু কোনো স্থান।
, যেখানে শেওলার মতো পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। ব্যাঙাচিগুলো পূর্ণাঙ্গ খুদে ব্যাঙে পরিণত হতে মাস তিনেক সময় লাগে। এই পুরোটা সময় বাবা ব্যাঙ পাহারা দেয় তাদের। যেকোনো ক্ষতি থেকে ব্যাঙাচিগুলোকে রক্ষা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে।
বৃষ্টিবনের আরেক দায়িত্বশীল বাবা ‘এম্পেরর টামারিন’। দক্ষিণ আমেরিকার বৃষ্টিবনে বাস করে এই ছোট জাতের বানর। আকারে একেকটা কাঠবিড়ালির সমান হয়। ছোট ছোট দলে বাস করে টামারিন। মা সাধারণত একসঙ্গে দুটি বাচ্চার জন্ম দেয়। এরপর পুরো লালন-পালনের দায়িত্ব বাবার। বাবা যেখানে, তার পিঠে করে ছানাটিও সেখানে। কেবল দুধ খাওয়ার সময় ছানাগুলো মায়ের কাছে যায়।
 শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া সূত্র: রেঞ্জার রিক

No comments

Powered by Blogger.