বিপন্ন মাদ্রাজ চেক! by আসিফ আহমেদ
বাংলাদেশ তার বাজার অন্য দেশের রফতানি পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় অনেক দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী থাকাকালে এ কাজটি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি করেছিলেন। দেখা গেল, যেসব পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় এমন অনেক পণ্য বাংলাদেশে আমদানির সুযোগ প্রদান করা হয়েছে এবং আমদানি করা পণ্যের দাম দেশীয় পণ্যের তুলনায় কম।
বলা হয়ে থাকে যে, সাইফুর রহমানের উদার আমদানি নীতির সবচেয়ে বেশি সুফল পেয়েছে ভারত। তাদের পণ্যের মান ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। আরেকটি সুবিধা ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের একেবারে কাছে অবস্থান। ট্রাকে করে বা জাহাজে স্বল্প সময়ে ভারতের শিল্প পণ্য, নানা ধরনের কাঁচামাল এবং খাদ্যদ্রব্য বাংলাদেশে চলে আসতে পারে।
ভারত এ ধরনের সুবিধা পাওয়ায় বাংলাদেশের তাদের রফতানি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশের রফতানি অনেক কম। এর প্রধান কারণ অবশ্য বাংলাদেশের রফতানি করার মতো পণ্য তেমন নেই। ভারতের তরফে বেশ কিছু শুল্ক ও অশুল্ক বাধাও রফতানির পথে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বাণিজ্য ঘাটতির ইস্যুটি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলে চলেছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য আরও বেশি করে যেন রফতানি হতে পারে সে জন্য বেশ কিছু সুবিধা ঘোষণা করা হয়। এর কিছু সুফলও মিলতে শুরু করেছে। ডেকান ক্রনিকল জানিয়েছে, বিখ্যাত মাদ্রাজ চেক এখন বিপন্ন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কারণে। তামিলনাড়ূর রাজধানী চেন্নাইয়ে রয়েছে পাঁচশ' ওভেন ফ্যাক্টরি। তারা মূলত পুরুষের পোশাক তৈরি করে। কিন্তু বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কাছে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এখন মাত্র একশ'টি কোনো রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। অ্যাপারেল অ্যান্ড হ্যান্ডলুম এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রণজিৎ পি শাহ বলেন, বাংলাদেশের পোশাকে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে। ৩৩টির মতো বড় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৪৫ হাজারের বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছে। বাংলাদেশের পণ্য কেন সেখানে সস্তা_ এ প্রশ্নেম্ন তিনি বলেন, ভারতে মজুরি বেশি এবং বাংলাদেশে কম। ভারতের ব্যবসায়ীরা গত বছর মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় ৪৮ ধরনের তৈরি পোশাক পণ্যকে শূন্য শুল্ক সুবিধায় ভারতের বাজারে প্রবেশে সুবিধার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এর ফলে আরও বেশি পোশাক আসবে। ভারতে এখন পোশাকের বাজার ৩০০ কোটি ডলারের (৩৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি)। প্রতিবেশী দেশটি তাদের স্বল্প মজুরি এবং অন্যান্য সুবিধা কাজে লাগিয়ে এ বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে নিতে পারে।
প্রসঙ্গত বলা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং ভারতের এক হাজার ১১৬ কোটি ডলার।
ভারতে উৎপাদন ব্যয় কেন বাড়ছে, সে প্রশ্নে মি. শাহ বলেন, একটি কারণ বিদ্যুতের সংকট। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যে আমদানি করার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা ধরনের বিধিনিষেধ। সেকেলে শ্রম আইনকেও তিনি বাধা মনে করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতীয় রফতানিকারকদের দাবি_ এক. দিলি্লর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আরও সাবসিডি এবং দুই. রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কম দামে বিদ্যুৎ।
৪০ বছর আগে তামিলনাড়ূর মাদ্রাজ চেকের রমরমা বাজার শুরু হয়। এক সময়ে বাংলাদেশের বাজারেও এর ছিল কদর। কিন্তু সময় বদলে যাচ্ছে। ভারত এখন জোর দিচ্ছে উৎপাদনে দক্ষতা বাড়ানোর প্রতি। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা যে বাজার দখল করেছেন সেটা ধরে রাখার জন্য নিশ্চয়ই সচেষ্ট থাকবেন। ডেকান ক্রনিকলের খবরে আমরা গর্বও অনুভব করতে পারি। আমাদের অনেক শিল্প আমদানি পণ্যের ঢালাও প্রবেশের কারণে বিপন্ন। এখন আমরাও পারছি অন্যের বাজারে যথাযোগ্য স্থান করে নিয়ে তাদের উৎপাদকদের দুশ্চিন্তায় ফেলতে। এর পেছনে বাংলাদেশের শ্রমিকদের যে অবদান সেটাও কিন্তু ভুললে চলবে না। তাদের দক্ষতার কারণেই বাংলাদেশ থেকে মানসম্পন্ন পণ্য যাচ্ছে ভারত এবং অন্যান্য দেশের বাজারে।
আসিফ আহমেদ :সাংবাদিক
ভারত এ ধরনের সুবিধা পাওয়ায় বাংলাদেশের তাদের রফতানি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশের রফতানি অনেক কম। এর প্রধান কারণ অবশ্য বাংলাদেশের রফতানি করার মতো পণ্য তেমন নেই। ভারতের তরফে বেশ কিছু শুল্ক ও অশুল্ক বাধাও রফতানির পথে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বাণিজ্য ঘাটতির ইস্যুটি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলে চলেছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য আরও বেশি করে যেন রফতানি হতে পারে সে জন্য বেশ কিছু সুবিধা ঘোষণা করা হয়। এর কিছু সুফলও মিলতে শুরু করেছে। ডেকান ক্রনিকল জানিয়েছে, বিখ্যাত মাদ্রাজ চেক এখন বিপন্ন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কারণে। তামিলনাড়ূর রাজধানী চেন্নাইয়ে রয়েছে পাঁচশ' ওভেন ফ্যাক্টরি। তারা মূলত পুরুষের পোশাক তৈরি করে। কিন্তু বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কাছে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এখন মাত্র একশ'টি কোনো রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। অ্যাপারেল অ্যান্ড হ্যান্ডলুম এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রণজিৎ পি শাহ বলেন, বাংলাদেশের পোশাকে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে। ৩৩টির মতো বড় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৪৫ হাজারের বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছে। বাংলাদেশের পণ্য কেন সেখানে সস্তা_ এ প্রশ্নেম্ন তিনি বলেন, ভারতে মজুরি বেশি এবং বাংলাদেশে কম। ভারতের ব্যবসায়ীরা গত বছর মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় ৪৮ ধরনের তৈরি পোশাক পণ্যকে শূন্য শুল্ক সুবিধায় ভারতের বাজারে প্রবেশে সুবিধার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এর ফলে আরও বেশি পোশাক আসবে। ভারতে এখন পোশাকের বাজার ৩০০ কোটি ডলারের (৩৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি)। প্রতিবেশী দেশটি তাদের স্বল্প মজুরি এবং অন্যান্য সুবিধা কাজে লাগিয়ে এ বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে নিতে পারে।
প্রসঙ্গত বলা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং ভারতের এক হাজার ১১৬ কোটি ডলার।
ভারতে উৎপাদন ব্যয় কেন বাড়ছে, সে প্রশ্নে মি. শাহ বলেন, একটি কারণ বিদ্যুতের সংকট। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যে আমদানি করার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা ধরনের বিধিনিষেধ। সেকেলে শ্রম আইনকেও তিনি বাধা মনে করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতীয় রফতানিকারকদের দাবি_ এক. দিলি্লর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আরও সাবসিডি এবং দুই. রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কম দামে বিদ্যুৎ।
৪০ বছর আগে তামিলনাড়ূর মাদ্রাজ চেকের রমরমা বাজার শুরু হয়। এক সময়ে বাংলাদেশের বাজারেও এর ছিল কদর। কিন্তু সময় বদলে যাচ্ছে। ভারত এখন জোর দিচ্ছে উৎপাদনে দক্ষতা বাড়ানোর প্রতি। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা যে বাজার দখল করেছেন সেটা ধরে রাখার জন্য নিশ্চয়ই সচেষ্ট থাকবেন। ডেকান ক্রনিকলের খবরে আমরা গর্বও অনুভব করতে পারি। আমাদের অনেক শিল্প আমদানি পণ্যের ঢালাও প্রবেশের কারণে বিপন্ন। এখন আমরাও পারছি অন্যের বাজারে যথাযোগ্য স্থান করে নিয়ে তাদের উৎপাদকদের দুশ্চিন্তায় ফেলতে। এর পেছনে বাংলাদেশের শ্রমিকদের যে অবদান সেটাও কিন্তু ভুললে চলবে না। তাদের দক্ষতার কারণেই বাংলাদেশ থেকে মানসম্পন্ন পণ্য যাচ্ছে ভারত এবং অন্যান্য দেশের বাজারে।
আসিফ আহমেদ :সাংবাদিক
No comments