ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে-পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ

মেয়েদের বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এখন অবশ্যপালনীয়। আদালতের আদেশ-নির্দেশ কেউ অমান্য করতে পারেন না। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ রোববার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেন। নাটোরের রানী ভবানী


সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক ছাত্রীদের বোরকা পরার নির্দেশ দেওয়ার খবরটি সত্য হলে তা স্রেফ ফতোয়া ছাড়া কিছু নয়। ভিন্ন মামলায় ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ কেবল বেআইনি কাজই করেননি, আদালতও অমান্য করেছেন।
নাটোরের সরকারি রানী ভবানী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মেয়েদের বোরকা না পরে কলেজে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুব শফিক ও কে এম হাফিজুল আলম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত উপরিউক্ত নির্দেশ দেন। আদালত একই সঙ্গে নারীদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের বহু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। কিন্তু নাটোরের রানী ভবানী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ যা করেছেন, তা সরকারি চাকরিবিধিরও পরিপন্থী। আদালত ইতিমধ্যে তাঁকে তলব করেছেন। সরকার কলেজ অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করে হয়তো লঘু দণ্ড দিয়েছে। আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের ব্যক্তির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকত্বের কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
অধ্যক্ষের কাজ সুষ্ঠুভাবে কলেজ পরিচালনা করা। কে কী পোশাক পরবে, সেটি ঠিক করা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। পোশাক নির্বাচন করা ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়। এটি কেউ কারও ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। যে দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী নারী, সে দেশে সরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষ কীভাবে এ নির্দেশ দেন? তিনি অবশ্য এ ধরনের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আজ তাঁর আদালতে হাজির হওয়ার কথা।
আদালত স্বরাষ্ট্র ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি রুল জারি করেছেন। আশা করি, তাঁরা রুলের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অধীন সব প্রতিষ্ঠানে কোনো পোশাক পরতে কাউকে বাধ্য করা যাবে না বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ আদেশ যারা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানেই যাতে মেয়েদের পোশাক পরার ওপর কেউ বিধিনিষেধ আরোপ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরও সজাগ থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.