চারদিক-জেলেদের ইলিশগল্প by নেয়ামতউল্যাহ
মেঘনায় ইলিশের রুপোলি চমক না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে মাছঘাটগুলো গম গম করে। আলাদা ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে জেলে আর আড়তদারের হইচই। ঝড়-বৃষ্টি এ সুর পাল্টাতে পারে না। চলে ভোর থেকে রাত অবধি। অনেকে মাছঘাটে আসে। তারা জেলে নয়, নয় ক্রেতা বা বিক্রেতা। তারা দর্শনার্থী।
কী দেখতে আসে তারা? রুপালি ইলিশের রং, আর গন্ধ শোঁকে। বড় ইলিশের পিঠ সবুজ ঘাসের জমিনের রং ধারণ করে। ওই মাছ দেখেই সুখ। বর্ষা শেষ হলেও এখনো সে অবস্থা বিরাজমান। এ সময় সুখ থাকে জেলের সংসার আর বধূর মুখে। কিন্তু এ বছর এখনো চোখে পড়েনি এমন হাসিমাখা জেলের মুখ। কেন হাসি নেই, কতটুকুই বা তাঁদের দাবি!
দৌলতখান পাতার খাল মাছঘাট এ তল্লাটের সবচেয়ে বড় মাছঘাট। অর্ধশতাধিক আড়তদার মাছ কেনেন জেলেদের কাছ থেকে। স্থানীয় ভাষায় আড়তদারদের দালাল আর আড়তকে তওফিল বলে ডাকা হয়। শত শত ফড়ে-পাইকার আসেন। ট্রাকে-ট্রাকে, লঞ্চে-ট্রলারে ইলিশ ভরে এ ঘাট থেকে ভোলার বাইরে যায়। গত বছর যখন এ ঘাটে ভরা এই মৌসুমে এসেছিলাম, তখন জেলেদের দেখেছি ঝুড়ি ভরে মাছ আনতে। এবারও ইলিশ আনে, তবে এক হালি, আধ হালি। ঘাট ও মেঘনার তীরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়ালে চোখ দেখে বিস্তীর্ণ মেঘনা। ভেসে আসা ঘাটের দিকে নানা প্রতীকওয়ালা রং-বেরঙের বাদাম-নৌকা। ঘাটে দাঁড়িয়ে শত শত দাঁড়টানা জেলে-নৌকা। বৃদ্ধ থেকে শিশু। তারা ব্যস্ত জাল পরিষ্কারে অথবা জালের ছেঁড়া অংশ সারার কাজে।
ঘাট থেকে নেমে উত্তরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয় ফারুক মাঝির সঙ্গে। সঙ্গে আরও তিনজন শিশু জেলে। একটি ফারুক মাঝির এগারো বছর বয়সী ছেলে রুবেল। অন্য দুজনের একজন বারো বছুরে আলাউদ্দিন আর নয় বছুরে বসিরুল্লাহ। তবে সবার ঘরই চারপাতা বাঁধের ওপর। ফারুক মাঝি জানান, সেই সুবহে সাদেকে পূর্ব থেকে জেলেরা ঘর থেকে বের হয়েছেন। একই সময় বের হয়েছে সঙ্গের শিশু-যুবা মাল্লারা। তাঁরা জেলে নৌকাটি ভাসিয়ে দেয় মেঘনায় অথৈ জলের বুকে। আল্লার নাম নিয়ে জাল ফেলেন। নদীর পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে আরাম করে বসে বিড়ি ফোঁকেন। মুঠোফোনে গান শোনেন। দিনের প্রথম আলোয় যখন নিজের কালো শরীর চিনতে পারেন, তখন জালে টান পড়ে। ইলিশের সংখ্যায় জাল ভারী হলে মাঝি-মাল্লার মনে আনন্দ ধরে না। জলের ভেতর মাছের নাচনের মতোই নেচে ওঠে মন। মুখে আসে গান।
দিনের প্রথম খেওয়ে ফারুক মাঝি পৌনে ২০০ টাকার ইলিশ পেয়েছেন। এভাবে সন্ধ্যা অবধি মাছ ধরবেন। দিনে ৫০০-৬০০ টাকার বেশি মাছ পাননি এ মৌসুমে। যেদিন তাঁর সঙ্গে দেখা, তার আগের দিন পেয়েছিলেন ৪৫০ টাকার মাছ। এটাই ভাগ হয়েছে পাঁচটি। নিজের দুটি আর ছেলেরটি মিলিয়ে কোনো মতে সংসার চালান।
কয়েক বছর জেলেদের বড় দুর্দিন যাচ্ছে। যে মাছ পান, তাতে ভাগ বসান আড়তদার। এর পরিমাণ শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগ। দাদনের টাকা তো শোধ দিতেই হবে। নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত টানা সাত মাস মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে নিয়ম-আবদার মেনে জাল ফেলতে হয় নদীতে। নইলে জালের মুঠি ধরে এক্কেবারে আগুনে দেবে পুড়িয়ে, নয়তো কারাগারে জব্দ। ওই সাত মাসের মধ্যে আবার দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) এ দুটি নদীতে কোনো প্রকার জাল ফেলা যাবে না। যাকে বলে ‘নিষেধাজ্ঞা’। কারণ জাটকা ধরা হলে ইলিশ মাছ বিলুপ্ত হবে। ইলিশকে বাঁচানোর জন্য ‘অভয়াশ্রম’ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু ইলিশ বাঁচানোর জন্য পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, মৎস্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন একসঙ্গে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু সফল হচ্ছে না।
বেকার জেলেরা বলছেন, ‘আমরা কী খাবো! আমরা তো জাল বোনা, জাল ফেলা ছাড়া কিছুই শিখিনি।’ সরকার জেলেদের ঘরে বসে খাবারের ব্যবস্থা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দ দিল। কিন্তু সেগুলো গেল কোথায়? জেলেরা চাইতে লাগলেন। পেলেন না। এখনো জেলেরা তাঁদের জন্য আসা বরাদ্দ চাইছেন। ওই বরাদ্দ নাকি দলীয় কর্মীরা খেয়ে ফেলেছেন।
এ কারণেই সরকার ইলিশ বাঁচাতে যেসব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফল হচ্ছে, সরকার জেলেদের নানা বরাদ্দ দিচ্ছে, জেলেরা ঠিকই জাটকা ধরছে। আর এ জন্য ভরা মৌসুমেও জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না।
বয়সে বুড়ো জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় জেলেরাই অনেক নিয়মকানুন মান্য করে নদীতে মাছ ধরতেন। ছোট মাছ ধরতেন না। ডিমওয়ালা মাছ ধরতেন না। ছোট ফাঁঁকের জাল ব্যবহার করতেন না। কিন্তু এখন সরকার আইনকানুন করেও আইন মানাতে পারছে না। বুড়ো জেলেরা বলেন, ‘মারু হাপ্পু পরোইন্যারা অইছে জাইল্যা, খিদা লাগজে খাই ল’ আড়ি (পাত্র) হুদা করি। পরের বেলা কী খাবি দরকার কী চিন্তা করি। ইলিশ থাইকপো কুডেত্তেন?’ কারা ধরেছেন এ মাছ? সাধারণ জেলেরা? অবশ্যই সাধারণ জেলেরা। তবে তাঁদের দিয়ে ধরানো হচ্ছে। কারা ধরাচ্ছেন? প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এঁরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী, নয়তো নেতাকে বখরা দিয়ে তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় মৎস্য ব্যবসা করেন। এঁদের সঙ্গে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন। এঁরা মাছেরও ক্ষতি করছেন, জেলেদেরও ক্ষতি করছেন। দেখা গেছে, গত দুই বছর এই প্রভাবশালী মহল নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের দিয়ে ঠিকই মাছ ধরিয়েছে এবং সেটা মাছের রেণু পোনা বংশসহ। জাটকা ইলিশ ধরেননি শুধু গরিব জেলেরা। তাতেই ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু এ বছর ভরা মৌসুমেও উল্লেখ করার মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে।
প্রশাসনের হাতে মহাজনের দাদন এবং এনজিওর ঋণে ক্রয় করা নিজের শেষ সম্বল জাল-নৌকা হারানোর ভয় থাকে। ওই জেলেরাই প্রকৃতভাবে বেকার থাকেন, তাঁদের সংসারে অভাব থাকে। সন্তানদের দুবেলা খেতে দিতে পারেন না। অনেক সময় হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে চাল কিনতে হয়। তার পর আছে এনজিওর কিস্তি। ১২ মাসই এ ঋণের কিস্তি টানতে হচ্ছে। সাড়ে চার মাস মাছ ধরেন, সাড়ে সাত মাস এক হিসেবে বেকার থাকতে হচ্ছে। ওই চার মাসেও যদি ইলিশ না পড়ে জালে, তবে জেলে পেশায় থেকে কী লাভ? তজুমদ্দিনের জেলে জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, বেকার থাকা দুই মাসে সংসার চালাতে সংসারের সব খোয়া যায়। পড়ে থাকে ঋণ। এটা শোধ করার জন্য বর্ষা মৌসুম। তাও যদি মাছ না পড়ে, তবে? বর্ষা মৌসুমও শেষ হয়ে যায়!
নীরব নিথর মেঘনার তীর আর কোলাহলহীন মাছঘাটের শেষ প্রান্তে দাঁড়ালে বিস্তীর্ণ মেঘনা। দূরে সবুজ বনায়ন নদীর মতো বেঁকে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে মাঝেমধ্যে ক্ষুধার্ত জেলেদের পুরো মেঘনাকে একটি বড় ইলিশ মনে হয়; যার পিঠে সবুজ ভূমি, আর পেটভর্তি চর্বি।
দৌলতখান পাতার খাল মাছঘাট এ তল্লাটের সবচেয়ে বড় মাছঘাট। অর্ধশতাধিক আড়তদার মাছ কেনেন জেলেদের কাছ থেকে। স্থানীয় ভাষায় আড়তদারদের দালাল আর আড়তকে তওফিল বলে ডাকা হয়। শত শত ফড়ে-পাইকার আসেন। ট্রাকে-ট্রাকে, লঞ্চে-ট্রলারে ইলিশ ভরে এ ঘাট থেকে ভোলার বাইরে যায়। গত বছর যখন এ ঘাটে ভরা এই মৌসুমে এসেছিলাম, তখন জেলেদের দেখেছি ঝুড়ি ভরে মাছ আনতে। এবারও ইলিশ আনে, তবে এক হালি, আধ হালি। ঘাট ও মেঘনার তীরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়ালে চোখ দেখে বিস্তীর্ণ মেঘনা। ভেসে আসা ঘাটের দিকে নানা প্রতীকওয়ালা রং-বেরঙের বাদাম-নৌকা। ঘাটে দাঁড়িয়ে শত শত দাঁড়টানা জেলে-নৌকা। বৃদ্ধ থেকে শিশু। তারা ব্যস্ত জাল পরিষ্কারে অথবা জালের ছেঁড়া অংশ সারার কাজে।
ঘাট থেকে নেমে উত্তরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয় ফারুক মাঝির সঙ্গে। সঙ্গে আরও তিনজন শিশু জেলে। একটি ফারুক মাঝির এগারো বছর বয়সী ছেলে রুবেল। অন্য দুজনের একজন বারো বছুরে আলাউদ্দিন আর নয় বছুরে বসিরুল্লাহ। তবে সবার ঘরই চারপাতা বাঁধের ওপর। ফারুক মাঝি জানান, সেই সুবহে সাদেকে পূর্ব থেকে জেলেরা ঘর থেকে বের হয়েছেন। একই সময় বের হয়েছে সঙ্গের শিশু-যুবা মাল্লারা। তাঁরা জেলে নৌকাটি ভাসিয়ে দেয় মেঘনায় অথৈ জলের বুকে। আল্লার নাম নিয়ে জাল ফেলেন। নদীর পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে আরাম করে বসে বিড়ি ফোঁকেন। মুঠোফোনে গান শোনেন। দিনের প্রথম আলোয় যখন নিজের কালো শরীর চিনতে পারেন, তখন জালে টান পড়ে। ইলিশের সংখ্যায় জাল ভারী হলে মাঝি-মাল্লার মনে আনন্দ ধরে না। জলের ভেতর মাছের নাচনের মতোই নেচে ওঠে মন। মুখে আসে গান।
দিনের প্রথম খেওয়ে ফারুক মাঝি পৌনে ২০০ টাকার ইলিশ পেয়েছেন। এভাবে সন্ধ্যা অবধি মাছ ধরবেন। দিনে ৫০০-৬০০ টাকার বেশি মাছ পাননি এ মৌসুমে। যেদিন তাঁর সঙ্গে দেখা, তার আগের দিন পেয়েছিলেন ৪৫০ টাকার মাছ। এটাই ভাগ হয়েছে পাঁচটি। নিজের দুটি আর ছেলেরটি মিলিয়ে কোনো মতে সংসার চালান।
কয়েক বছর জেলেদের বড় দুর্দিন যাচ্ছে। যে মাছ পান, তাতে ভাগ বসান আড়তদার। এর পরিমাণ শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগ। দাদনের টাকা তো শোধ দিতেই হবে। নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত টানা সাত মাস মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে নিয়ম-আবদার মেনে জাল ফেলতে হয় নদীতে। নইলে জালের মুঠি ধরে এক্কেবারে আগুনে দেবে পুড়িয়ে, নয়তো কারাগারে জব্দ। ওই সাত মাসের মধ্যে আবার দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) এ দুটি নদীতে কোনো প্রকার জাল ফেলা যাবে না। যাকে বলে ‘নিষেধাজ্ঞা’। কারণ জাটকা ধরা হলে ইলিশ মাছ বিলুপ্ত হবে। ইলিশকে বাঁচানোর জন্য ‘অভয়াশ্রম’ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু ইলিশ বাঁচানোর জন্য পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, মৎস্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন একসঙ্গে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু সফল হচ্ছে না।
বেকার জেলেরা বলছেন, ‘আমরা কী খাবো! আমরা তো জাল বোনা, জাল ফেলা ছাড়া কিছুই শিখিনি।’ সরকার জেলেদের ঘরে বসে খাবারের ব্যবস্থা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দ দিল। কিন্তু সেগুলো গেল কোথায়? জেলেরা চাইতে লাগলেন। পেলেন না। এখনো জেলেরা তাঁদের জন্য আসা বরাদ্দ চাইছেন। ওই বরাদ্দ নাকি দলীয় কর্মীরা খেয়ে ফেলেছেন।
এ কারণেই সরকার ইলিশ বাঁচাতে যেসব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফল হচ্ছে, সরকার জেলেদের নানা বরাদ্দ দিচ্ছে, জেলেরা ঠিকই জাটকা ধরছে। আর এ জন্য ভরা মৌসুমেও জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না।
বয়সে বুড়ো জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় জেলেরাই অনেক নিয়মকানুন মান্য করে নদীতে মাছ ধরতেন। ছোট মাছ ধরতেন না। ডিমওয়ালা মাছ ধরতেন না। ছোট ফাঁঁকের জাল ব্যবহার করতেন না। কিন্তু এখন সরকার আইনকানুন করেও আইন মানাতে পারছে না। বুড়ো জেলেরা বলেন, ‘মারু হাপ্পু পরোইন্যারা অইছে জাইল্যা, খিদা লাগজে খাই ল’ আড়ি (পাত্র) হুদা করি। পরের বেলা কী খাবি দরকার কী চিন্তা করি। ইলিশ থাইকপো কুডেত্তেন?’ কারা ধরেছেন এ মাছ? সাধারণ জেলেরা? অবশ্যই সাধারণ জেলেরা। তবে তাঁদের দিয়ে ধরানো হচ্ছে। কারা ধরাচ্ছেন? প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এঁরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী, নয়তো নেতাকে বখরা দিয়ে তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় মৎস্য ব্যবসা করেন। এঁদের সঙ্গে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন। এঁরা মাছেরও ক্ষতি করছেন, জেলেদেরও ক্ষতি করছেন। দেখা গেছে, গত দুই বছর এই প্রভাবশালী মহল নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের দিয়ে ঠিকই মাছ ধরিয়েছে এবং সেটা মাছের রেণু পোনা বংশসহ। জাটকা ইলিশ ধরেননি শুধু গরিব জেলেরা। তাতেই ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু এ বছর ভরা মৌসুমেও উল্লেখ করার মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে।
প্রশাসনের হাতে মহাজনের দাদন এবং এনজিওর ঋণে ক্রয় করা নিজের শেষ সম্বল জাল-নৌকা হারানোর ভয় থাকে। ওই জেলেরাই প্রকৃতভাবে বেকার থাকেন, তাঁদের সংসারে অভাব থাকে। সন্তানদের দুবেলা খেতে দিতে পারেন না। অনেক সময় হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে চাল কিনতে হয়। তার পর আছে এনজিওর কিস্তি। ১২ মাসই এ ঋণের কিস্তি টানতে হচ্ছে। সাড়ে চার মাস মাছ ধরেন, সাড়ে সাত মাস এক হিসেবে বেকার থাকতে হচ্ছে। ওই চার মাসেও যদি ইলিশ না পড়ে জালে, তবে জেলে পেশায় থেকে কী লাভ? তজুমদ্দিনের জেলে জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, বেকার থাকা দুই মাসে সংসার চালাতে সংসারের সব খোয়া যায়। পড়ে থাকে ঋণ। এটা শোধ করার জন্য বর্ষা মৌসুম। তাও যদি মাছ না পড়ে, তবে? বর্ষা মৌসুমও শেষ হয়ে যায়!
নীরব নিথর মেঘনার তীর আর কোলাহলহীন মাছঘাটের শেষ প্রান্তে দাঁড়ালে বিস্তীর্ণ মেঘনা। দূরে সবুজ বনায়ন নদীর মতো বেঁকে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে মাঝেমধ্যে ক্ষুধার্ত জেলেদের পুরো মেঘনাকে একটি বড় ইলিশ মনে হয়; যার পিঠে সবুজ ভূমি, আর পেটভর্তি চর্বি।
No comments