শস্যহীন মংলা-লবণপানি নয়, মিঠাপানি চাই
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং লবণপানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের ফলে এক সময়ের সবুজ গাছগাছালি ও ফসলে ভরা মংলা এখন প্রাণের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার সমকালের লোকালয় পাতায় 'লবণপানিতে শস্যহীন মংলা' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এক সময়ের সমৃদ্ধ জনপদটির প্রায় বিরানভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত
করে বলা হয়েছে, ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা কাজের খোঁজে বিভিন্ন শহরে পাড়ি দিচ্ছে। অথচ এখানে ঘের করে চিংড়ি চাষ শুরুর আগে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হতো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে আমন চাষের জমির পরিমাণ মাত্র ১ হাজার ৭শ' হেক্টরে এসে ঠেকেছে। উৎপাদনও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। ১০ বছর আগে ১ বিঘায় (৫২ শতাংশ) যেখানে রোপা আমন হতো ২৫ মণ, এখন তা ৮ থেকে ১০ মণে নেমে এসেছে। তবে চিংড়ি চাষ পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেই রাতারাতি গোটা এলাকা পুনরায় শস্য-শ্যামল রূপ ধারণ করবে না। এর জন্য আরও অনেক কসরত করতে হবে। এক দশক ধরে লোনা পানি ধরে রেখে বা ঘেরে ঢুকিয়ে জমির উর্বরতা শক্তিকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাই মাটির উর্বরতা শক্তি ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন স্বীকৃত পন্থা অবলম্বন করতে হবে। লবণাক্ত পানি যেন আর না ঢুকতে পারে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈশাখে বৃষ্টির পানি তথা মিঠাপানির প্রবাহ যাতে স্বাভাবিক ছন্দে প্রবাহিত হতে পারে তার ব্যবস্থাও করতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে ওই এলাকার শস্য-শ্যামল শ্রী আবার ফিরে আসবে এবং কৃষকরাও ফিরে পাবেন তাদের স্বাভাবিক কৃষিজীবী জীবন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়াজনিত ক্ষতি পোষানোর উদ্যোগও সমুদ্রের লবণপানি ঢোকা আটকানোর ব্যবস্থার সঙ্গেই সামঞ্জস্য বিধান করে নিতে হবে। এভাবে মংলাকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের আওতাধীন এলাকার মধ্যে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তবেই জলবায়ু পরিবর্তনের তহবিল এলাকাটিকে স্বাভাবিক গ্রামীণ জনপদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করার কাজে লাগবে। মংলায় আর লবণপানি নয়, আমরা মিঠাপানির স্বাভাবিক প্রবাহ দেখতে চাই।
No comments