চরাচর-উভচর প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে by আজিজুর রহমান

প্রাণিজগতে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে উভচর প্রাণী। এ প্রাণীদের ব্যাপক বিলুপ্তি লক্ষ করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জীববিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা। দ্য জার্নাল সায়েন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ৫০ জন উভচর প্রাণী বিশেষজ্ঞ নজিরবিহীন ওএসএ সংকেত পাঠিয়েছেন পৃথিবীজুড়ে এসব প্রাণী বিলুপ্তির যে হুমকি দেখা দিয়েছে সে বিষয়ে


নীতিনির্ধারকদের জোরালোভাবে সতর্ক করতে, যাতে এ বিলুপ্তি ঠেকানো যায়। বিশ্বব্যাপী পরিচিত পাঁচ হাজার ৭৪৩টি উভচর প্রাণী প্রজাতির মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৩২.৫ শতাংশ বিলুপ্তির মুখে পড়েছে। আর ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এদের ১২২টি প্রজাতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ১১৩ প্রজাতির হারলিকুয়িন নামের রঙিন ছোট ব্যাঙের ৩০ প্রজাতি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অবশিষ্ট প্রজাতিগুলো হুমকির মুখে। মাত্র ১০টি প্রজাতি যথাযথ জীবনধারণ ও বংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু তাও নিরাপদ থাকবে, এমন প্রতীয়মান মনে হচ্ছে না। এদিকে ব্যাপকভাবে বিলুপ্তির মুখে পড়েছে কোলাব্যাঙ, কুনোব্যাঙ, গুইসাপ ও গিরগিটি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, উভচর প্রাণীদের বিলুপ্তির যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃত ও সঠিক সংখ্যাটি আরো বেশি। কারণ এসব প্রাণীর মাঝে দ্রুত সমীক্ষা চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। উভচর প্রাণীদের এ বিলুপ্তি প্রকৃতপক্ষে মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের পরিণতি। বিশ্ব প্রকৃতিকে মানুষ যেভাবে অপব্যবহার করছে, তার ফলে শুধু উভচর প্রাণীই নয়, সব প্রাণী আজ হুমকির মুখে। উভচর প্রাণীর এ বিলুপ্তি পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী, বিশেষ করে মানবজাতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। মানুষের জন্য ক্ষতিকর রোগজীবাণু বহনকারী কীটপতঙ্গ খেয়ে উভচর প্রাণীরা জীবনধারণ করে। এসব প্রাণীর ত্বক থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রসে শক্তিশালী বায়োমেডিসিন ও বায়োটেকনোলজির উপাদান থাকে, যা পরিবেশে বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়া বাধাগ্রস্ত করে। এ ছাড়া উভচর প্রাণী অন্য প্রাণীর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এসব প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় ইকোসিস্টেমের নিয়মিত চক্র ভেঙে পড়ছে। যার পরিণাম সমগ্র জীবজগতের জন্য মারাত্মক। উভচর প্রাণী হুমকির মুখে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রতিবেশ হারানো, জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, কীটনাশক, অতি বেগুনি রশ্মির বিকিরণ ইত্যাদি। সম্প্রতি এক ধরনের ছত্রাক রোগ উভচর প্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রোগটি ইকোসিস্টেমে ঢোকার ছয় মাসের মধ্যে এসব প্রাণীর অর্ধেক হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন, জলজ ও বন্য প্রাণীর অবাধ বাণিজ্য আর দূষণ হলো প্রধান কয়েকটি ফ্যাক্টর, যা এই ছত্রাক রোগ দ্রুত ছড়াতে সাহায্য করে। শুধু ছত্রাক রোগই নয়, আমাদের অর্থলিপ্সা মেটাতে উভচর প্রাণী হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস ইত্যাদি কারণে উভচর প্রাণী আজ মহাবিপন্ন।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.