বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৪১৯ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন।আতাহার আলী, বীর প্রতীক সফল এক মুক্তিসেনা শীতের রাতে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প লক্ষ্য করে। তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলে আছেন আতাহার আলী। নিঃশব্দে তাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন।
আক্রমণের নির্দিষ্ট সময় শেষ রাত। সেই সময় ক্রমে এগিয়ে আসছে। আর কিছু সময়ের মধ্যেই তাঁরা পৌঁছে যাবেন নির্ধারিত স্থানে। অন্য দলগুলোরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজ নিজ নির্ধারিত স্থানে পৌঁছার কথা। তারপর তাঁরা একযোগে আক্রমণ শুরু করবেন।
আতাহার আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁদের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিচ্ছেন। এমন সময় তাঁদের ডান দিকে হঠাৎ শুরু হয়ে গেল গোলাগুলি। শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। ডান দিকে রাতের আকাশ লাল বর্ণ ধারণ করল।
নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আক্রমণ করেছে। আতাহার আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকলেন। যুদ্ধ চলতে থাকল।
মুক্তিযোদ্ধারা একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকলেন সামনে। একসময় তাঁরা পাকিস্তানিদের প্রবল প্রতিরোধ উপেক্ষা করে পৌঁছে গেলেন পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে। আতাহার আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানিদের আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকলেন।
সারা দিন যুদ্ধ চলল। রাতেও থেমে থেমে গোলাগুলি চলল। পরদিন সকাল হওয়ার আগেই পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে গুলির শব্দ নীরব হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর জানা গেল, পাকিস্তানি সেনারা নিহত ও আহত সঙ্গীদের ফেলে পালিয়ে গেছে।
এরপর আতাহার আলীসহ মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের ভেতর। তখন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের ভেতর পড়ে আছে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনার লাশ। আহত কয়েকজন কাতরাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা।
এ ঘটনা রায়গঞ্জে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, নভেম্বরের শেষে। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা (তখন থানা) সদরের উত্তর দিকে রায়গঞ্জ। দুধকুমার নদের পশ্চিম পাশে। সীমান্ত এলাকা। সেখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট।
দুই দিন যুদ্ধের পর রায়গঞ্জ মুক্ত হয়। যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩০-৩৫ জন নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে লে. সামাদসহ (আবু মঈন মো. আশফাকুশ সামাদ, বীর উত্তম) কয়েকজন শহীদ হন।
আতাহার আলী চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের অধীন ১০ নম্বর উইংয়ে (বর্তমান ব্যাটালিয়ন)। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাবসেক্টরে। তিস্তা, পাটেশ্বরী, জয়মনিরহাট, রায়গঞ্জ ও ভূরুঙ্গামারীসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আতাহার আলীকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২১৯। তাঁর সঠিক নাম আতাহার আলী খান।
আতাহার আলী খানের পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বারাইভিকরা গ্রামে। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম আলাদত খান, মা তোতা বেগম, স্ত্রী শিরিয়া বেগম। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
সূত্র: আতাহার আলী খান বীর প্রতীক, মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৬।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
আতাহার আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁদের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিচ্ছেন। এমন সময় তাঁদের ডান দিকে হঠাৎ শুরু হয়ে গেল গোলাগুলি। শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। ডান দিকে রাতের আকাশ লাল বর্ণ ধারণ করল।
নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আক্রমণ করেছে। আতাহার আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকলেন। যুদ্ধ চলতে থাকল।
মুক্তিযোদ্ধারা একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকলেন সামনে। একসময় তাঁরা পাকিস্তানিদের প্রবল প্রতিরোধ উপেক্ষা করে পৌঁছে গেলেন পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে। আতাহার আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানিদের আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকলেন।
সারা দিন যুদ্ধ চলল। রাতেও থেমে থেমে গোলাগুলি চলল। পরদিন সকাল হওয়ার আগেই পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে গুলির শব্দ নীরব হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর জানা গেল, পাকিস্তানি সেনারা নিহত ও আহত সঙ্গীদের ফেলে পালিয়ে গেছে।
এরপর আতাহার আলীসহ মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের ভেতর। তখন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের ভেতর পড়ে আছে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনার লাশ। আহত কয়েকজন কাতরাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা।
এ ঘটনা রায়গঞ্জে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, নভেম্বরের শেষে। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা (তখন থানা) সদরের উত্তর দিকে রায়গঞ্জ। দুধকুমার নদের পশ্চিম পাশে। সীমান্ত এলাকা। সেখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট।
দুই দিন যুদ্ধের পর রায়গঞ্জ মুক্ত হয়। যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩০-৩৫ জন নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে লে. সামাদসহ (আবু মঈন মো. আশফাকুশ সামাদ, বীর উত্তম) কয়েকজন শহীদ হন।
আতাহার আলী চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের অধীন ১০ নম্বর উইংয়ে (বর্তমান ব্যাটালিয়ন)। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাবসেক্টরে। তিস্তা, পাটেশ্বরী, জয়মনিরহাট, রায়গঞ্জ ও ভূরুঙ্গামারীসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আতাহার আলীকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২১৯। তাঁর সঠিক নাম আতাহার আলী খান।
আতাহার আলী খানের পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বারাইভিকরা গ্রামে। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম আলাদত খান, মা তোতা বেগম, স্ত্রী শিরিয়া বেগম। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
সূত্র: আতাহার আলী খান বীর প্রতীক, মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৬।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments