মোবাইল ফোনে সারচার্জ-বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করুন

নতুন সারচার্জের খৰ বসতে যাচ্ছে মোবাইল ফোনের কলচার্জে। এমনিতেই যেখানে কলচার্জ কমানোর জন্য গ্রাহকদের দাবি রয়েছে, সেখানে সরকার নতুন করে সারচার্জ আরোপ করলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার আরো সীমিত হয়ে পড়তে পারে।


সরকার মোবাইল ফোনের কলের ওপর সারচার্জ আরোপ করতে চাইছে নতুন একটি জ্বালানি তহবিল গঠনের স্বার্থে। শুধু মোবাইলের কলচার্জই নয়, গ্যাস-বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সারচার্জ আরোপ করা হতে পারে- নীতিগতভাবে এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। আরো জানা গেছে, বিদ্যুতের ঘাটতি কমানোর জন্য প্রতি মোবাইল ফোনকলের ওপর ১৫ থেকে ২০ পয়সা সারচার্জ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। এই সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিয়ে সরকার একটি 'জ্বালানি তহবিল' গড়ে তুলতে চায়। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য এসব পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থায় রীতিমতো বিপ্লব এনে দিয়েছে মোবাইল ফোন। নিকটজনের সঙ্গে যোগাযোগের যে সুযোগ মোবাইল ফোন করে দিয়েছে, তার তুলনা নেই। শুরুতে একটি মোবাইল ফোন অনেকের দৃষ্টিতে বিলাসিতা হলেও এখন আর সে পর্যায়ে নেই। মোবাইল ফোন এখন নিত্যদিনের একটি প্রয়োজনীয় সামগ্রী হিসেবেই বিবেচিত। স্বাভাবিকভাবেই মোবাইল ফোনের কদর যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা। কিন্তু তার পরও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় মুঠোফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনো অনেক কম। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব অনুযায়ী গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে মোট মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটির বেশি। এ হিসাবে দেশের ৫৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ লোকের হাতে মুঠোফোন পৌঁছে গেছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় নিজস্ব মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। সুইডেনভিত্তিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এরিকসনের 'কনজ্যুমার ল্যাব' বিভাগের করা সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে নিজস্ব মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা শহর এলাকায় ৭৬ শতাংশ, আর প্রত্যন্ত এলাকায় তা মাত্র ২৪ শতাংশ। পাশাপাশি মোবাইল ফোনের সুবিধাভোগীর (ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কৃষিতথ্য, স্বাস্থ্যসেবা, আবহাওয়া বার্তা) বেশির ভাগ গ্রাহক হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার। কিন্তু নিজস্ব মুঠোফোন না থাকায় সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পেতে তাদের সমস্যা হয় বলে জরিপে উল্লেখ রয়েছে। মোবাইল অপারেটরদের দাবি, শুধু সংযোগ কর (সিম ট্যাঙ্) না থাকলে গ্রাহক বৃদ্ধির হার জাদু দেখিয়ে দিত। এই সিম ট্যাঙ্ গ্রাহক বৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেন মোবাইল অপারেটররা। কারণ এই ট্যাঙ্রে জন্যই দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় মুঠোফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে বিনা মূল্যে সংযোগ দিতে পারছেন না মোবাইল অপারেটররা। পাশাপাশি মোবাইল ফোনের কলরেট আরো কমানো গেলে অধিকসংখ্যক মানুষকে মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যেত। যোগাযোগ বাড়ত। কিন্তু এখন বিদ্যুতের জন্য সারচার্জ আরোপ করা হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার কমে যেতে পারে।
বিদ্যুৎ ব্যবহার করুক বা না করুক- এ খাতের ভর্তুকি মোকাবিলায় টাকা দিতে হবে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী দেশের সব নাগরিককে, এমন সিদ্ধান্ত অনেকটাই 'গোদের উপর বিষফোড়া'র মতো হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা ও সহজপ্রাপ্যতা দেশের অনেক দরিদ্র মানুষকেও মোবাইল ফোন সংগ্রহে আগ্রহী করেছে। কিন্তু নতুন করে এই সারচার্জ আরোপ করা হলে তাতে ব্যবহারকারীদের ওপর প্রভাব পড়বে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখা দরকার। বিদ্যুতের ভর্তুকি কমাতে হবে। কিন্তু তার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কেন অতিরিক্ত খরচ করতে হবে?

No comments

Powered by Blogger.