ঢাকায় জাপানি উপপ্রধানমন্ত্রী-বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধ মেটালে পদ্মায় সহায়তা

পদ্মা সেতুর জন্য বাংলাদেশকে অর্থায়নের আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে জাপান। তবে তার আগে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশকে মতপার্থক্য দূর করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায় জাপান।


সফররত জাপানি উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে এই অভিমত দিয়েছেন। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে কাতসুইয়া ওকাদা জাপানের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ওকাদার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয় সোনারগাঁও হোটেলে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ব্যাপারে ওকাদা তাঁর দেশের অর্থায়নের আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি তিনি বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মতপার্থক্য দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে জাপান বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীরা। বিশ্বব্যাংক সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে, দুর্নীতির তদন্ত শেষ না হলে এ প্রকল্পে অর্থায়নের জটিলতা দূর হবে না। রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়েও বৈঠকে ওকাদা তাঁর দেশের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
জাপানি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী অবকাঠামো সমস্যা নিরসনের ওপর জোর দিয়েছেন। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানের উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অনুরোধ জানিয়েছে জাপানকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (ইপিএ) সইয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার মনোভাব দেখিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের বড় প্রকল্পে সহায়তার জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি জাপানের ৩৩তম বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার পরিকল্পনায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ অন্যান্য প্রকল্প রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
বৈদেশিক বিনিয়োগের পথ সুগমের জন্য বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে বিনিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী গতকাল দুপুরে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।
গত এক যুগের মধ্যে বাংলাদেশে জাপানের উচ্চপর্যায়ের এটি প্রথম সফর। ২০০০ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি বাংলাদেশে এসেছিলেন।
খালেদার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ: জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী ওকাদা গতকাল রাতে গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
রাত সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে ১০টা পর্যন্ত। সাক্ষাৎকালে দুটি দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী জাপান। অনেক সময় দেখা যায়, দুর্নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হয় না। দুর্নীতি কম হলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আরও বাড়ত। বৈঠকে পদ্মা সেতু নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া উপপ্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি, জাপানে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ ও জনশক্তি আমদানির ওপর জোর দেন। জবাবে উপপ্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে জাপানের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। সরকার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিলে ভবিষ্যতে এ দেশে জাপানের বিনিয়োগ বাড়বে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব ধরনের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে উপপ্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.