দিনবদল নয়, নামবদলের সরকারঃ প্রতিহিংসার পরিচয়
অবশেষে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলে হজরত শাহজালাল (রা.) বিমানবন্দর করা হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ঘোষণা করা হলে দেশজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সরকারের অন্ধ সমর্থক ছাড়া আর কেউই এমন সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারেননি।
সরকার সমর্থকদের অনেকেই সাহস করে পত্রিকার পাতায় ও টিভি আলোচনায় খোলাখুলিভাবে এমন সিদ্ধান্তকে ছেলেমানুষির সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেউ কেউ একে প্রতিহিংসার পরিচয়ও বলেছেন। আর বিরোধী দল সরকারের পদক্ষেপকে পরিকল্পিতভাবে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণপুরুষের নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা হিসেবেই গণ্য করেছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং জনগণের ক্ষোভ ও বিরোধী দলকে ধ্বংসের অপচেষ্টাতেই যে সরকার মরিয়া, সেটা বুঝতে পেরেই বিরোধী দল আন্দোলনের হুমকি না দিয়ে পারেনি। আর্থ-সামাজিক ও জনগণের জ্বলন্ত সমস্যাগুলোর সমাধানের চেয়ে নাম পরিবর্তনে সরকারের পদক্ষেপ জনমনের প্রতি উপেক্ষা ও একগুঁয়েমি মনোভাবের প্রকাশ ছাড়া আর কী!
পাকিস্তান আমলে কুর্মিটোলায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হলেও শেষ হয় জিয়াউর রহমানের আমলে। তারই উদ্বোধন করার কথা থাকলেও শাহাদাত বরণের কারণে তা হয়ে ওঠেনি। পরে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার ১৯৮১ সালে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করেন। দেশবাসীর আবেগের প্রতি সম্মান দেখিয়েই তখন কেউই এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেনি বা সে চিন্তাও কারও মাথায় আসেনি। দীর্ঘ ৩০ বছর পর আওয়ামী মহাজোট সরকার এর নাম পরিবর্তনের যুক্তি হিসেবে যেসব কথা তুলে ধরেছে, সেগুলোর কোনোটাই ধোপে টেকে না। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রকাশের সময় উচ্চ আদালতের একটি রায়ের কথা বলা হয়েছে। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেয়া সে রায়ে ১৯৭৯ পর্যন্ত স্বৈরশাসক ও অনির্বাচিত সরকারের কথা বলা হলেও জিয়া বিমানবন্দরের নামকরণ হয়েছে একটি নির্বাচিত বেসামরিক সরকার আমলে। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ সব দলই অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনেও সব দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দুঃখজনক মৃত্যুর পর বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। অতএব এই সরকারের কোনো সিদ্ধান্তই উল্লিখিত আদালতের রায়ের আওতায় পড়ে না। অন্যদিকে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে করা নাম পরিবর্তনের সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। সে বিচারেও জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা প্রমাণ হয় না। কারণ বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। এসব সমালোচনা চারদিকে যখন ঝড় তুলেছে, ঠিক তখনই ১৯ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ভিন্নকথা। তিনি বলেন, বিএনপিকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বিএনপি জোট সরকারের আমলে দুই-আড়াইশ’ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের অভিযোগ তুলে এখন সেসবই সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কিন্তু তিনি বা অন্য কোনো সূত্রে এ নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
দেখা যায়, অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টানো হয়েছিল, বিএনপি জোট সরকার সেগুলোরই নাম পাল্টেছে। যেমন, যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নাম বঙ্গবন্ধু সেতু করা হয়েছিল। একইভাবে ভাসানী নভোথিয়েটারের নাম পাল্টে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রের নাম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারই। সে সময়ই তারা শাহবাগের আইপিজিএমআরের (পিজি হাসপাতাল) নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রাখে। ঢাকা স্টেডিয়ামের নামও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিএনপি জোট সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেনি এটা সবাই জানেন। আওয়ামী মহাজোট সরকার মিথ্যাচারের জোয়ার বইয়ে দিয়েও এসব সত্যকে ঢাকতে পারবে না।
এছাড়া দিনবদলের সরকারের মুখে আগে নাম বদল করা হয়েছিল বলে এখন আবার পরিবর্তন করতে হবে এটা খুবই ছেলেমানুষি কথা। বাচ্চা মেয়েদের ঝগড়ায় এমন পাল্টাপাল্টি কথা শোনা যায়। আর বড়দের মধ্যে এরকম দেখা গেলে সেটা প্রতিহিংসাপরায়ণতাই প্রমাণ করে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে, সেখানে নামবদলের স্থান কোথায় ছিল সেটা তারাই ভালো জানেন। তবে আমজনতা দেশের বিপর্যস্ত আর্থ-সামাজিক, প্রশাসনিক প্রতিটি ক্ষেত্রে সঙ্কটের মুখে যেভাবে নাস্তানাবুদ হচ্ছে তার সমাধানই অন্য সবকিছুর চেয়ে বড় করে দেখে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা জনগণের দৃষ্টি থেকে আড়াল করার জন্যই যদি সুচিন্তিতভাবে নাম বদলের ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করে থাকেন। শুধু জিয়া বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের খেসারতই দিতে হবে ১৪শ’ কোটি টাকার মতো। সরকারের বোধোদয় না হলে এমনসব পদক্ষেপের খেসারত কত বড় হয়ে দাঁড়াবে সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
পাকিস্তান আমলে কুর্মিটোলায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হলেও শেষ হয় জিয়াউর রহমানের আমলে। তারই উদ্বোধন করার কথা থাকলেও শাহাদাত বরণের কারণে তা হয়ে ওঠেনি। পরে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার ১৯৮১ সালে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করেন। দেশবাসীর আবেগের প্রতি সম্মান দেখিয়েই তখন কেউই এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেনি বা সে চিন্তাও কারও মাথায় আসেনি। দীর্ঘ ৩০ বছর পর আওয়ামী মহাজোট সরকার এর নাম পরিবর্তনের যুক্তি হিসেবে যেসব কথা তুলে ধরেছে, সেগুলোর কোনোটাই ধোপে টেকে না। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রকাশের সময় উচ্চ আদালতের একটি রায়ের কথা বলা হয়েছে। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেয়া সে রায়ে ১৯৭৯ পর্যন্ত স্বৈরশাসক ও অনির্বাচিত সরকারের কথা বলা হলেও জিয়া বিমানবন্দরের নামকরণ হয়েছে একটি নির্বাচিত বেসামরিক সরকার আমলে। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ সব দলই অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনেও সব দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দুঃখজনক মৃত্যুর পর বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। অতএব এই সরকারের কোনো সিদ্ধান্তই উল্লিখিত আদালতের রায়ের আওতায় পড়ে না। অন্যদিকে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে করা নাম পরিবর্তনের সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। সে বিচারেও জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা প্রমাণ হয় না। কারণ বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। এসব সমালোচনা চারদিকে যখন ঝড় তুলেছে, ঠিক তখনই ১৯ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ভিন্নকথা। তিনি বলেন, বিএনপিকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বিএনপি জোট সরকারের আমলে দুই-আড়াইশ’ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের অভিযোগ তুলে এখন সেসবই সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কিন্তু তিনি বা অন্য কোনো সূত্রে এ নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
দেখা যায়, অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টানো হয়েছিল, বিএনপি জোট সরকার সেগুলোরই নাম পাল্টেছে। যেমন, যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নাম বঙ্গবন্ধু সেতু করা হয়েছিল। একইভাবে ভাসানী নভোথিয়েটারের নাম পাল্টে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রের নাম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারই। সে সময়ই তারা শাহবাগের আইপিজিএমআরের (পিজি হাসপাতাল) নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রাখে। ঢাকা স্টেডিয়ামের নামও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিএনপি জোট সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেনি এটা সবাই জানেন। আওয়ামী মহাজোট সরকার মিথ্যাচারের জোয়ার বইয়ে দিয়েও এসব সত্যকে ঢাকতে পারবে না।
এছাড়া দিনবদলের সরকারের মুখে আগে নাম বদল করা হয়েছিল বলে এখন আবার পরিবর্তন করতে হবে এটা খুবই ছেলেমানুষি কথা। বাচ্চা মেয়েদের ঝগড়ায় এমন পাল্টাপাল্টি কথা শোনা যায়। আর বড়দের মধ্যে এরকম দেখা গেলে সেটা প্রতিহিংসাপরায়ণতাই প্রমাণ করে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে, সেখানে নামবদলের স্থান কোথায় ছিল সেটা তারাই ভালো জানেন। তবে আমজনতা দেশের বিপর্যস্ত আর্থ-সামাজিক, প্রশাসনিক প্রতিটি ক্ষেত্রে সঙ্কটের মুখে যেভাবে নাস্তানাবুদ হচ্ছে তার সমাধানই অন্য সবকিছুর চেয়ে বড় করে দেখে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা জনগণের দৃষ্টি থেকে আড়াল করার জন্যই যদি সুচিন্তিতভাবে নাম বদলের ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করে থাকেন। শুধু জিয়া বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের খেসারতই দিতে হবে ১৪শ’ কোটি টাকার মতো। সরকারের বোধোদয় না হলে এমনসব পদক্ষেপের খেসারত কত বড় হয়ে দাঁড়াবে সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
No comments