সুমন্ত সেন-একটি যুদ্ধ, কিন্তু অনেক যুদ্ধ

সর্বদাই পশ্চিম বাংলায় চরম ডান এবং চরম বামপন্থীরা বামফন্ট্রের বিরোধী। এই বিরোধীদের সবাই ৩৪ বছরের দুঃশাসনের কথা বলছেন, একটি পরিবর্তন চাচ্ছেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ বিরোধী দল কখনো শাসকদলের প্রশংসাগীত গাইবে না। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, বিরোধীদের বিরোধিতার ধরন বা পরিস্থিতি।


বামফ্রন্টের বিরোধিতা ছাড়াও দলগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেসের জোটের বিরোধিতা করছে। এ বিরোধিতা কেন করছে তা বোধগম্য। কিন্তু যা পরিষ্কার নয় তা হলো, কেন এই ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোটকে বড় ভাইয়েরা ত্যাগ করছে। বামফ্রন্টের শাসনের পরিবর্তন আনতে বড়রা এই ছোট দলকে জোর করছে না। খুব অল্প কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় এই ছোট দলগুলো নিজেরা জয়লাভ না করলেও বড় যেকোনো দলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তথাপি ছোট দলগুলো মনে করছে যে তাদের দায়িত্ব হলো বামফ্রন্টকে পরাজিত করা।
তবে এ ছোট দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম হলো সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার ফর ইন্ডিয়া। এই দলটি তৃণমূলের সঙ্গে জোটবদ্ধ, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রী তাদের জন্য মাত্র দুটি ছেড়ে দেওয়ায় তারা নাখোশ হয়েছে। কিন্তু দলটি তাদের অসন্তোষ তৃণমূলের ওপর না দেখিয়ে বরং খেপে উঠেছে। দলটি বলেছে, তৃণমূলের সঙ্গে জোট মানেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নয়। এ দল আদর্শের প্রশ্ন তুলেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, তৃণমূলের সঙ্গে তারা কোন আদর্শের কারণে জোট বেঁধেছে? যদি তারা কংগ্রেসের বিরোধীই হয়, তাহলে তাদের দলের একমাত্র লোকসভা সদস্য কী করে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স বা ইউপিএকে সমর্থন দিয়েছেন? এর একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে যে রাজ্যের এবং কেন্দ্রের ক্ষেত্রে দলের অবস্থান এক রকম না-ও হতে পারে। এরপর রয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান এবং সমীর পুতাতুন্দের কথা। এ দুজনই নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুরের আন্দোলনের সময় তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু নন্দীগ্রাম থেকে মার্কসিস্টদের এবং সিঙ্গুর থেকে টাটা কম্পানিকে তাড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল তাদের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল করে দিয়েছে। এ দুজনই সে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এবং তাঁরা কংগ্রেসের দিকে মুখ ফিরিয়েছেন। এই তিন পক্ষের মধ্যে একটি জোটের ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু দিলি্ল থেকে যখন বার্তা এল যে রাজ্যে কংগ্রেস তৃণমূল নেত্রীর ওপর ভর করছে, তখন তারা বেমালুম ওই দুজনের কথা ভুলে গেল।
সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের খবরটি এসেছে গুর্খা জনমুক্তি মোর্চা থেকে। বিজেপি ঘোষণা দিয়েছিল যে মোর্চা তাদের পাঁচজন পদপ্রার্থীকে সমর্থন জানাবে। কিন্তু জনমুক্তি মোর্চা বলেছে, তারা এর মধ্যে চারটি নির্বাচনী এলাকায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে সমর্থন দেবে। পরিষ্কার যে তারা মনে করছে ইউপিএ সরকার গুর্খাল্যান্ডের ইস্যুতে তাদের সমর্থন দেবে। এ বিষয়টি মার্কসিস্টদের তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারণায় একটি সুযোগ করে দিচ্ছে। তৃণমূলের সঙ্গে জোট হিসেবে কংগ্রেসকে এই প্রচারণার দায়ভার কাঁধে নিতে হবে।
পশ্চিম বাংলার বিরোধী দলের পথ যে দুর্গম হয়ে উঠছে, তার দায় অন্য কারো কাঁধে চাপানো যাবে না। প্রত্যেকেই অপরিহার্যভাবে খাবারের ভাগ চায়। অবস্থা যদি এমন হতে থাকে, তাহলে কে যে খাবারটি পাবে তা বলার কোনো সুযোগ থাকবে না।
কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফ থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.