প্রকৃতির সন্তান
কবি রণজিত্ দাশগুপ্ত লিখেছিলেন, বৃক্ষে হাত রেখে কবি টের প্রায় প্রাণ, আর ব্যবসায়ী দেখে কেবলই কাঠ। যখন হাকালুকি হাওরে হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে কেউ দেখে প্রকৃতির অপরূপ লীলা, তখন একদল শিকারি দেখে একগুচ্ছ স্বাদু মাংসের ওড়াউড়ি। অথচ পাখি হলো প্রকৃতির শিশু।
পাখির সৌন্দর্য আমাদের মধ্যে মমতার অনুভব জাগায়। অথচ এসব ভুলে অতিথি পাখি শিকার করা বা তার মাংস খাওয়ার জন্য বিক্রি করা হয়। এটা কেবল নিষ্ঠুরতাই নয়, বর্বরতারই নামান্তর। প্রতিবছর শীতের শেষাশেষি আমাদের বিল-হাওরগুলো দূর-দূরান্তর থেকে আসা নানা জাতের অতিথি(নাকি পরিযায়ী?) পাখিতে ভরে যায়। এবারও তাই ঘটেছে হাকালুকি হাওরে (সূত্র: প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি)। দর্শনার্থীদের উত্পাত, পাখিভক্ষক শিকারিদের আক্রমণ যেখানে থাকে না, সেখানে রংবেরঙের অজস্র পাখিতে স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তা কেবলই দেখার জিনিস, খেয়ে ফেলার জিনিস নয়! তার পরও একশ্রেণীর মানুষ পাখির মাংসের লোভ সংবরণ করতে পারে না। এমনকি অনেক হোটেলকেও পাখির মাংসের রান্না পরিবেশনের বড়াই করতে দেখা যায়। তারা কি ভেবে দেখেছে, কেবল রসনা আর ব্যবসার জন্য তারা শুধু প্রকৃতিরই ক্ষতি করছে না, মানুষ হিসেবেও অনেক হীন কাজে লিপ্ত হচ্ছে। কিছু মানুষ সাধারণত মৌসুমি পেশা হিসেবে পাখি শিকার করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের জন্য নয়, শহর-বাজারে বিক্রির জন্যই তারা ফাঁদ পেতে পাখি ধরে বা শিকার করে। তাই, তাদের কাছ থেকে পাখি কেনা বন্ধ করলে শিকারিরা নিরুত্সাহিত হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ পুলিশ প্রশাসনের। এমনকি যেসব এলাকার বিল-হাওর-জলাশয়ে অতিথি পাখির সমাগম হয়, সেসব এলাকার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদেরও উচিত এগিয়ে আসা।
—আ. হো.
—আ. হো.
No comments