গুম, দমন-পীড়ন বিদেশিদের কাছে তুলে ধরবে বিএনপি

বিরোধী দলের ওপর সরকারের ‘দমন-নিপীড়ন’-এর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ অন্যান্য বিদেশি অতিথির সামনে তুলে ধরতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’, খুন-গুম, ধরপাকড়, কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হওয়া এবং আদালতে যেতে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনাগুলো আলোচনায় আনবে দলটি।


বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেখানে প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিব, সাংসদ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়, নেতাদের পালিয়ে থাকতে হয়, সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা ও মানবাধিকার-পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা সহজে বোঝা যায়। আর এই পরিস্থিতির কথা ঢাকায় সফররত জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা এবং আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির কাছে তুলে ধরা হবে, যাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ আসে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঢাকা সফরে আসছেন। এর আগ মুহূর্তে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেছে। এতে বিদেশি অতিথিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দেশের এই অসম্মানের দায় সরকারকেই নিতে হবে।
৫ মে হিলারি ক্লিনটন ঢাকায় আসছেন। একই দিন প্রণব মুখার্জিও আসবেন। তাঁরা দুজনই বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আর গত রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী।
নেতাদের আত্মগোপনে কর্মীরা হতাশ: এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে চার দিন ধরে আত্মগোপনে আছেন। এটাকে আপাতকৌশল বলে দাবি করা হলেও, এতে দলের মধ্যম ও মাঠপর্যায়ের নেতারা হতাশ হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দলটির আন্দোলন কর্মসূচিতে।
দলের মধ্যম সারির অনেক নেতা মনে করেন, গ্রেপ্তার এড়াতে এই ‘আত্মগোপন’ কৌশলের কারণে দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তাঁদের মতে, এর চেয়ে নেতারা গ্রেপ্তার হলে সেটা আন্দোলনের জন্য ভালো হতো।
মামলা হওয়া নেতাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান, মহিলা দলের নেতা রেহানা আক্তার। আর যুগ্ম মহাসচিব ও সাংসদ মাহবুব উদ্দিন খোকন গতকাল হাইকোর্ট থেকে ৯ মে পর্যন্ত আগাম জামিন পেয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাইকোর্টের চারপাশ ঘিরে থাকায় বাকি নেতারা জামিন নিতে আদালতে আসতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত একজন আইনজীবী নেতা বলেছেন, সশরীরে আদালতে না গেলে নেতারা জামিন পাবেন না। আগাম জামিন পেলেও তাঁদের নিম্ন আদালতে যেতে হবে। সেই আদালতের জামিন দেওয়ার এখতিয়ার থাকবে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। তিনি বলেন, হিলারিসহ অন্য বিদেশি অতিথিরা চলে যাওয়ার পর আত্মগোপনে থাকা নেতারা জামিনের জন্য আদালতে আসবেন, এমন একটা পরিকল্পনা রয়েছে।
গত ২৯ এপ্রিল হরতালের দিন সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ, বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ২২০ জন নেতাকে আসামি করা হয়। এর পর থেকেই সাতজন ছাড়া বাকি নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার অনুপস্থিতি দলের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করেন বিএনপির মহানগর শাখার একাধিক নেতা।
এসব নেতার অনুপস্থিতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শে আপাতত মাঠে দলের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান। তবে মওদুদ আহমদকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে মির্জা ফখরুলসহ অন্য নেতাদের জামিন করানোর তৎপরতায়।
অবশ্য মওদুদ আহমদ দাবি করেন, সরকার ভয় পেয়ে মামলা-গ্রেপ্তারের পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির যে সমস্যা হচ্ছে, সেটি সাময়িক। অচিরেই তা কেটে যাবে। আগামী রোববারের পর কঠোর কর্মসূচি আসছে। নেতা-কর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াবেন।

No comments

Powered by Blogger.