বিশেষ সাক্ষাত্কার-আশাভঙ্গ ঘটেনি তবে আত্মতুষ্টিরও সুযোগ নেই by আলী রীয়াজ

ড. আলী রীয়াজের জন্ম ১৯৫৮ সালে ঢাকায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের চেয়ারম্যান। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি করেছেন। সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন বিবিসিতে। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র: রাজনৈতিক ইসলাম, দক্ষিণ এশীয় রাজনীতি ও গণমাধ্যমের রাজনৈতিক অর্থনীতি।


তাঁর প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে: ইসলামিস্ট মিলিট্যান্সি ইন বাংলাদেশ: এ কমপ্লেক্স ওয়েব (২০০৮), আনফোল্ডিং স্টেট: দ্য ট্রান্সফরমেশন অব বাংলাদেশ (২০০৫), গড উইলিং: দ্য পলিটিক্স অব ইসলামাইজেশন ইন বাংলাদেশ (২০০৪), ফেইথফুল এডুকেশন: মাদ্রাসাজ ইন সাউথ এশিয়া (২০০৮) ইত্যাদি।
সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মশিউল আলম

প্রথম আলো  ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হলো। জরুরি অবস্থাকালীন দুই বছরের অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত এই রাজনৈতিক সরকারের প্রতি জনসাধারণের প্রত্যাশা ছিল বিরাট। প্রথম বছরে সরকারের কর্মসম্পাদনের মূল্যায়ন নানাভাবে করা হচ্ছে। আপনি লক্ষ করেছেন, এ বিষয়ে একটি জনমত জরিপ সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনেই প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া বা পর্যবেক্ষণ কী?
আলী রীয়াজ  সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি আগের দুই বছরের চেয়ে একটা ভিন্ন স্বরূপ পেয়েছে। এ সরকারের এই এক বছরের দায়িত্ব পালনের সময়টা মূল্যায়নের সময় দুটি দিক বিবেচনায় রাখা উচিত বলে আমার মনে হয়। প্রথমত, সরকারের কার্যক্রম, তার সাফল্য, অর্জন, ব্যর্থতা—এই সমস্ত কিছু। আরেকটি দিক হচ্ছে রাজনীতি। শুধু সরকার নয়, ক্ষমতাসীন দল, প্রধান বিরোধী দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম—সবার ভূমিকাই বিবেচনা করতে হবে। প্রথম অংশটাতে, অর্থাত্ সরকারের পারফরম্যান্স বা কর্মসম্পাদন নিয়ে দুটি বড় রকমের জনমত জরিপ আমরা সম্প্রতি দেখতে পেলাম: প্রথম আলোর জরিপ এবং ডেইলি স্টার-এর জরিপ। পদ্ধতির দিক থেকে খুবই পরিকল্পিত জরিপ হয়েছে এবং দুটি জরিপই আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই দুটিরই লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের কার্যসম্পাদন (পারফরম্যান্স) মূল্যায়ন করা। দুটি জরিপেই আমরা যে ফলাফল দেখতে পাচ্ছি, তাতে নাগরিকেরা মোটামুটিভাবে এক ধরনের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কিছু কিছু সাফল্য আছে, যেমন কৃষি খাতের সাফল্যের কথা বলা হচ্ছে, শিক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে বলে নাগরিকেরা এক ধরনের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কিছু ব্যর্থতাও আছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যতটা আশা করা হয়েছিল, ততটা পূরণ হয়নি। যেমন, আইনবহির্ভূত হত্যা অব্যাহত থেকেছে। এটা নিয়ে সাধারণ লোকজন খুব সন্তুষ্ট নয়। দ্রব্যমূল্য খুব একটা স্থিতিশীল হয়নি। ফলে সব মিলিয়ে বলা যায়, সরকারের যেমন বড় রকমের সাফল্য নেই, তেমনি বড় রকমের কোনো ব্যর্থতাও নেই।
প্রথম আলো  এ সরকারকে তো কিছু বড় ধরনের সমস্যার মুখেও পড়তে হয়েছিল?
আলী রীয়াজ  হ্যাঁ, এই এক বছরে সরকারের একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা। সেটা তারা সামাল দিয়েছে; কিন্তু ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তার জন্য এর কারণগুলো আরও স্পষ্ট বোঝা দরকার। সেটা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়, এ নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন আছে।
প্রথম আলো  সরকারের পারফরম্যান্সের বাইরে, গত এক বছরের সার্বিক রাজনীতিতে কি কোনো গুণগত পরিবর্তন এসেছে?
আলী রীয়াজ  রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ঘটেনি। ক্ষমতাসীন দলের আচরণে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি, প্রধান বিরোধী দলের আচরণেও সেটা লক্ষ করা যায়নি। গুণগত পরিবর্তন যে কিছু হয়নি, তার বড় প্রমাণ হচ্ছে দুটি দলের কাউন্সিল। কাউন্সিলে দল দুটির ভেতরে গণতান্ত্রিক অনুশীলনের কোনো প্রমাণ নেই। সবই হয়েছে আগের ধারাতেই। রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তন আসেনি তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে, কোনো দলই তার কর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আচরণের দিক থেকে সরকারি দলের যে উদারতা প্রকাশ করা উচিত ছিল, বিশেষ করে, সংসদের ভেতরে এবং বাইরে যে ধরনের সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করা দরকার ছিল, সেটির উদেযাগ আমরা দেখিনি। অন্য পক্ষে প্রধান বিরোধী দল প্রায় গোড়া থেকেই সংসদ বর্জন করে চলেছে; সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ক্ষেত্রে বিরোধী দল খুব উত্সাহ দেখায়নি।
প্রথম আলো  দুর্নীতি বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। সে কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে জনমনে এ রকম একটা আশা জেগেছিল যে লাগামহীন দুর্নীতির ক্ষেত্রে অন্তত কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসবে এবং ভবিষ্যতে এই প্রবণতা কমতে বাধ্য হবে...
আলী রীয়াজ  হ্যাঁ, দুর্নীতিবিরোধী যে অভিযান চলছিল, বর্তমান সরকারের এই এক বছরে সে অভিযানে ভাটা পড়েছে। প্রথম আলোর জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করে, গত এক বছরে দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্বল হয়েছে। দুদক বলে যে প্রতিষ্ঠানটি আছে, ব্যক্তিগতভাবে বললে, এর উপস্থিতিও এখন টের পাওয়া যায় না।
প্রথম আলো  দুদকের চেয়ারম্যান কিন্তু বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন...।
আলী রীয়াজ  কিন্তু দুদকের কার্যক্রম আসলেই বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে, গত এক বছরে সরকারের কর্মসম্পাদনের মধ্য দিয়ে দেশে বড় রকমের ইতিবাচক অর্জন আমরা দেখিনি। জরুরি অবস্থার অবসান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় নেওয়ার ফলে, বিশেষত, একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকারের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার ফলে জনমনে এক ধরনের স্বস্তি হয়তো এসেছে। কিন্তু জনগণ শুধু এই স্বস্তিটুকুই পর্যাপ্ত বলে তুষ্ট থাকবে না। বেসামরিক রাজনৈতিক সরকার আসার ফলে তাদের মনে যে আশা জেগেছিল, তা বেশ বড়। যদিও এই এক বছরে আশাভঙ্গের কোনো কারণ ঘটেনি, তবু সরকারের তরফে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির অবকাশ কম। সামনে আরও চারটি বছর রয়েছে।
প্রথম আলো  এ সরকার সামনের দিনগুলোতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে?
আলী রীয়াজ  শুধু সরকার নয়, ভবিষ্যতে সরকার, ক্ষমতাসীন দল এবং গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য কিছু বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে।
প্রথম আলো  যেমন?
আলী রীয়াজ: সরকারের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো...।
প্রথম আলো  জনমত জরিপের ফলাফলে তো দেখা যাচ্ছে, এই ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে; ৪৮ শতাংশ মত দিয়েছেন, সামান্য উন্নতি হয়েছে। অর্থাত্, অল্প ও অনেক মিলে উন্নতি হয়েছে এমনটি মনে করছেন মোট ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা।
আলী রীয়াজ  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আজকের (৯ জানুয়ারি ২০১০) সংবাদপত্রেই খবর ছাপা হয়েছে যে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, রাজশাহীতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে, যা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য ক্ষতিকর। ভবিষ্যতে এগুলো বাড়ার আশঙ্কা আছে; এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে পেশাদার নানা ধরনের অপরাধবৃত্তি। আমি বলতে চাচ্ছি, নানা কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সব সময়ই থাকবে; ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জটা বড় হয়ে উঠতে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও।
প্রথম আলো  আর কোনো বড় চ্যালেঞ্জ?
আলী রীয়াজ  জ্বালানি খাতের সমস্যা। দেশে জ্বালানির সংকট রয়েছে, চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্পাদন বাড়ছে না বলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে জনসাধারণ অনেক প্রত্যাশা করেছে, কিন্তু এক বছরে কোনো উন্নতি হয়নি। সরকার দ্রুত জ্বালানি খাতের উন্নতি করতে না পারলে এটা জাতীয় অর্থনীতিসহ সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। জ্বালানি সংকটের কারণে ভোগান্তির পাশাপাশি তারা যখন দেখবে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে জীবনের নিরাপত্তা কমে যাচ্ছে, নিরাপদে চলাচল করা যাচ্ছে না, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গেলে চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে, আইনের শাসন কাজ করছে না, সরকারি দলের লোকজনের উপদ্রব বাড়ছে; তখন জনগণের মধ্যে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে। তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সমস্যা মিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। বিরোধী দল এই অস্থিরতার সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে, ফলে দেশের পরিস্থিতিই অস্থিতিশীলতার দিকে এগোতে পারে।
প্রথম আলো  তাহলে কি ২০০৭ সালের আগের ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাই বড় হয়ে উঠবে না?
আলী রীয়াজ  যে দুটি সমস্যার কথা বললাম, সেগুলোর কারণে জনসাধারণের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে বিরোধী দল সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারবে কি না, সেটা নির্ভর করবে সরকারের কয়েকটি বড় বিষয়ের ওপর। একটি হচ্ছে তার পররাষ্ট্র নীতি, বিশেষ করে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক। এরই মধ্যে যেসব কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে, তাতে বিরোধী দল এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে যে ভারত ইস্যুতে তারা আন্দোলনেও নামতে পারে। এখন সরকার ভারতের সঙ্গে যে চুক্তিই করুক, সেটা স্বচ্ছ হতে হবে এবং জনগণকে বোঝাতে সফল হতে হবে। আরেকটি সমস্যা হবে সংবিধান সংশোধন নিয়ে। সরকার একদিকে বলছে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা হবে, কিন্তু বিসমিল্লাহ থাকবে; আবার ধর্মভিত্তিক দল থাকবে না, একই সঙ্গে বলা হচ্ছে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া হবে। এগুলো বেশ অস্পষ্ট, বিভ্রান্তিকর। সরকারকে এটা পরিষ্কার করতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে সরকার আসলে সংবিধান নিয়ে কী করতে চাচ্ছে। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিরোধী দলকে সংসদে আনতে হবে, যেভাবেই হোক সরকারকে এটা করতে হবে।
প্রথম আলো  কিন্তু বিরোধী দল না চাইলে সরকার তাদের সংসদে কীভাবে আনতে পারে?
আলী রীয়াজ  তা ঠিক, বিরোধী দল না চাইলে সরকার তাকে জোর করে সংসদে নিতে পারবে না। কিন্তু সরকারকে আন্তরিকভাবে সে চেষ্টা করতে হবে; জনগণের কাছে যেন এটা স্পষ্ট হয় যে সরকার চেষ্টা করছে।
প্রথম আলো  জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছেন, সরকার সম্পূর্ণ সঠিক পথে চলছে, আর ৪৬ শতাংশ বলেছেন, কিছুটা সঠিক পথে চলছে। তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই যে সরকার সঠিক পথে আছে এটা মনে করছেন ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পরও এত বড় সমর্থন তো সরকারের জন্য বিরাট সাফল্যের বিষয়...।
আলী রীয়াজ  শুধু প্রথম আলোয় প্রকাশিত জরিপে নয়, ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত জরিপেও মোট প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মনে করে যে সরকার মোটামুটি সঠিক পথেই আছে। এটা হলো এ সরকারের অ্যাসেট। কিন্তু এই ৭০ শতাংশ কতক্ষণ থাকবে? যে সমস্যাগুলোর কথা বললাম, সেগুলোর যদি উন্নতি হয়, তাহলে সরকারের জনসমর্থন থাকবে। জনগণ যখন বুঝবে যে সরকার তাদের জন্য কিছু করছে এবং তারা যদি নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে দেখতে পায় যে জ্বালানি-সংকট লাঘব হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, নিরাপদে চলাচল করা যাচ্ছে, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস—এসব কমে আসছে, তখন তারা বুঝতে পারবে যে সরকার চেষ্টা করছে। তখন সরকারের পক্ষে জনগণের এক ধরনের সমর্থন থাকবে। পররাষ্ট্রনীতির বিষয়গুলো যদি স্বচ্ছ হয়, তাহলে সেটাকেও তারা ইতিবাচকভাবে নেবে যে হ্যাঁ, সরকার করছে, সংবিধানের বিষয়টিও আস্তে-ধীরে হবে। এই ৭০ শতাংশের সমর্থনকে অ্যাসেট হিসেবে বিবেচনা করে সরকার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারে, যদি তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে।
প্রথম আলো  আর যদি এই জনসমর্থনকে একটা স্থায়ী অ্যাসেট হিসেবে ধরে নিয়ে সরকার নিশ্চিন্ত থাকে বা আত্মতুষ্টিতে ভোগে?
আলী রীয়াজ  তা হলে, যেহেতু রাজনৈতিক কোনো গুণগত পরিবর্তন হয়নি, আশঙ্কা বাড়তে থাকবে যে আমরা হয়তো বাংলাদেশকে আবার সেই ২০০৬ সালের অবস্থায় দেখতে পাব, ২০০৫ সালের অবস্থায় দেখতে পাব। তাই, আমার মনে হয়, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংকট সৃষ্টি হলে সাধারণত খুব কম সময়ের মধ্যে তা জটিল আকার ধারণ করে, যদি না তার আগেই সরকার সতর্ক ও সক্রিয় হয়। এ সরকারের এই এক বছরের মধুচন্দ্রিমা কিন্তু সাধারণ বিষয় নয়। কোনো সরকার এ দেশে এক বছর পরও এমন মাত্রায় জনপ্রিয় থাকে না। সরকারকে বুঝতে হবে, এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে তাদের জীবন-জীবিকার সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। জনসাধারণের ধৈর্য-সহিষ্ণুতা সীমাহীন নয়। এক বছর ইতিমধ্যে চলে গেছে, জনজীবনের সমস্যাগুলোর উল্লেখযোগ্য সমাধান হয়নি; তাদের ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করার আগেই সরকারকে সর্বক্ষেত্রে ফলপ্রসূ কাজ করতে হবে। আর পররাষ্ট্রনীতিসহ সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা রাখতে হবে, যেন জনগণের স্পষ্ট ধারণা থাকে সরকার কী করছে এবং আরও কী করতে যাচ্ছে।
প্রথম আলো  আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আলী রীয়াজ  আপনাকেও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.