তবে দেশে দাসপ্রথাও বৈধ করে দিন by সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

দেশের জাহাজভাঙা শিল্পকে আপনি কিভাবে দেখেন? আমি মনে করি, বাংলাদেশে যেগুলোকে আমরা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বলি, সেগুলো মোটেও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড নয়। এটি তো আসলে প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত। যথাযথ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড হয়ে ওঠার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করা দরকার, সেসবের খুব কমই আমাদের এখানে পূরণ করা হয়।


এই শিল্প দেশের লোহার চাহিদা পূরণ করে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে।
শুধু কিছু লোহার জোগান দেওয়ার জন্য এই শিল্প আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে, এই কথাতেও আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। পৃথিবীর বড়জোর ১৪টি দেশে লোহা আছে। বাকিরা কীভাবে লোহার চাহিদা মেটায়? ওদের আরও একটি বড় যুক্তি হচ্ছে, এই শিল্পের সঙ্গে নাকি প্রায় লাখো মানুষের জীবিকা জড়িত। অথচ গেল বছরে ভাঙার জন্য আনা হয়েছে প্রায় ২০০ জাহাজ। একটি জাহাজভাঙার কাজে যদি ১০০ জন শ্রমিকও কাজ করে, তাহলেও মোট সংখ্যাটা কিছুতেই ২০ হাজারের বেশি নয়। আবার এসব শ্রমিকের একটি বড় অংশই টানা কাজ করে না। একদল যায়, আরেকদল আসে। এভাবেই কাজ হয়। আমি শুধু সরকারকে বলতে পারি, বিধিবহির্ভূতভাবে জাহাজভাঙার কাজ যদি চলে, তবে দেশে দাসপ্রথাও বৈধ করে দিন। সেটাও তো এক ধরনের কর্মসংস্থান।
আদালত পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া জাহাজভাঙার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি তেমন একটা উন্নতি হয়নি।
এই শিল্পের জন্য আলাদা বিধিমালা করার কথা একাধিকবার বলা হয়েছে। সামনেই এ রকম আরও একটি সভা আছে। কিন্তু কাজের কাজ খুব কমই হচ্ছে। করছি, করব বলে সময় নষ্ট করা হচ্ছে। অথচ আদালত এর জন্য একটা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। আমার মনে হয়, বাংলাদেশকে এখন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই শিল্প সত্যিই দেশে থাকবে কি না।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
প্রধান নির্বাহী, বেলা (বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি)

No comments

Powered by Blogger.