গরল-ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি সফর সামনে রেখে by মিজানুর রহমান খান
সরলবাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বহু প্রতীক্ষিত ‘নতুন অধ্যায়’কে টেকসই করা বড় চ্যালেঞ্জ। সদ্যপ্রসূত সূচনাপর্ব ভারত-বিরোধিতার রুগ্ণ রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে হারিয়ে যেতে কিংবা ধূসর হতে দেওয়ার ঝুঁকি এড়াতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহনের ফিরতি ঢাকা সফর দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।
দিল্লিকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশে বিবদমান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো রাজনৈতিক দল ছাড়াও আরেকটি সরাসরি পক্ষ আছে। তাঁরা মালিকপক্ষ অর্থাত্ জনগণ। এই জনগণ বোধগম্য ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকাতর, অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপ্রিয়, কৃতজ্ঞ এবং অধিকারসচেতন। সচেতন মধ্যবিত্ত ক্রমশ ভালোই বোঝেন, তাঁদের নেতা-নেত্রীদের ভোটের রাজনীতি কিংবা বাক-বিলাস কখনো জাতির জন্য নিদারুণ পরিহাস।
অধিকতর পরিপক্ব ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় কংগ্রেস এখন এতটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো যে, তাদের পক্ষে এককভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অনুঘটকের ভূমিকা পালন সম্ভব। তবে দেখার বিষয়, দিল্লি বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কী করে কত দ্রুততায় নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে একটি নবতর আঞ্চলিক সহায়তাবলয় গড়তে পারে। সার্ক বা চীন যেন অহেতুক চোট না পায়। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কাজ হলো, প্রথাগত বাগাড়ম্বরের দুর্দমনীয় প্রবণতা সংবরণ করা।
ভারত আমাদের এমন এক অনিবার্য প্রতিবেশী, যার সঙ্গে সব মৌসুমে, সব আবহাওয়ায় ভালো সম্পর্ক বজায় রাখাই কাম্য। কিন্তু রাষ্ট্র ও কূটনীতি এমন বিষয়, যেখানে একটা লেনদেনের হিসাব থাকেই। ১২ জানুয়ারি দিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে প্রকাশিত হলো ৫০ অনুচ্ছেদবিশিষ্ট যৌথ ইশতেহার। এর একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো, দ্বিপক্ষীয় ঘরানা থেকে উত্তরণের ইঙ্গিত। আঞ্চলিক উদ্যোগের প্রতি গুরুত্বারোপ। পাঁচবার এসেছে ‘আঞ্চলিক’ কথাটি। তবে কি ভারতীয় কূটনীতিতে পরিবর্তন এসেছে? এ কথা যে নিছক কথার কথা নয়, এখন তা প্রমাণের সময়। দিল্লির অগ্রাধিকার আঞ্চলিক ট্রানজিটের আদলে ঢাকার অগ্রাধিকার পানিসম্পদকেও সমগুরুত্বে আঞ্চলিক রূপ দিতে হবে। সড়কের ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান সম্প্রীতি গড়লে তা পানিতেও গড়ে তোলা সম্ভব। নিউইয়র্ক টাইমসে ১২ জানুয়ারি দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ফিলিপ বাওরিং লিখেছেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম নিরাপত্তা ইস্যু হলো পানি। যৌথ পানি প্রকল্প দিতে পারে পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ও। এই চারটি দেশ তাই আগে রাজনৈতিক ভূগোলের বাইরে আসুক। তারা মেনে নিক, প্রকৃতির দেওয়া নদীব্যবস্থা। তাহলেই কিন্তু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার টেবিলে ‘ন্যায্য হিস্যার’ সংজ্ঞা ও আলোচনা দুটোই রং বদলায়।
একটা যেনতেন তিস্তাচুক্তি করা অসার ও অনুচিত। ৫৪ নদীর মধ্যে মাত্র ৩০ বছর মেয়াদে গঙ্গাচুক্তি সইয়ের ১৪ বছর পর তিস্তাচুক্তির তোড়জোড় চলছে। তাহলে ৫৪ নদী নিয়ে ৫৪টি পৃথক চুক্তি করতে কত বছর লাগবে? চীনের কৈলাশ গিরিশৃঙ্গে অবস্থিত হিমবাহে জন্ম নেওয়া ব্রহ্মপুত্রের উপনদী তিস্তা। এটি ছাড়া আর সাতটি নদীর উল্লেখ আছে যৌথ ইশতেহারে, জেআরসি এসব নদী নিয়ে আলোচনা করবে। আগামী মার্চে কথাবার্তা নির্দিষ্টভাবে তিস্তা নিয়ে হবে বলেই শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ভারতীয় কূটনীতিক শ্রীনিবাসনের তথ্য সত্য হলে, আগামী মার্চে দুই পানিমন্ত্রীর বৈঠক কিংবা সম্ভাব্য একটি দ্বিপক্ষীয় তিস্তাচুক্তি নিয়ে বড় আশাবাদ ব্যক্ত করা চলে কি?
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব কৃষ্ণ শ্রীনিবাসন ৫ জানুয়ারি ২০১০ দি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত ‘বড় আশা’ শীর্ষক এক নিবন্ধে তথ্য দেন যে তিস্তার সর্বনিম্ন প্রবাহ যেখানে চার হাজার কিউসেক, সেখানে ভারতীয় খালব্যবস্থারই পানি লাগে ৪৪০০ কিউসেক। যৌথ ইশতেহারে দুই নেতা ‘তিস্তা নদীতে শুখা মৌসুমে উভয় দেশের জনগণের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন।’ তাহলে প্রশ্ন ওঠে, তিস্তায় পানির প্রবাহ না বাড়িয়ে বাংলাদেশকে পানি দিলে তা শুখা মৌসুমে ভারতীয় জনগণের সংকট তীব্র করবে কি না?
শ্রীনিবাসন এ সম্পর্কে যা লিখেছেন, তাকে অস্বীকার করে তিস্তাচুক্তি করলে তার ভবিষ্যত্ মাথায় রাখতে হবে। তাঁর মন্তব্য, তিস্তা ছাড়া ‘বরাকের ওপর টিপাইমুখ বাঁধ ভাটিতে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই সমস্যা দুটি আরেক ফারাক্কা বিরোধ হয়ে ওঠার আগেই জরুরি ভিত্তিতে উভয় সমস্যার সুরাহা দরকার। উভয় দেশ সহযোগিতার ভিত্তিতে চীন, নেপাল ও ভুটানের পাহাড়ি নদীগুলোর পানির সুব্যবহারে উজানের দেশগুলোর কাছে যৌথ নিবেদন পেশ করতে পারে।’
রাজনৈতিক বাস্তবতা যতই ভিন্ন হোক, এ ধরনের আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া পানিসম্পদের সুষ্ঠু ভাগবাটোয়ারা কিংবা সর্বাধিক উপযোগিতা লাভ অসম্ভব। এখন কোপেনহেগেন সম্মেলনকে পেছনে রেখে এই অঞ্চলের নেতা হিসেবে ভারত প্রথম ধাপে ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশকে নিয়ে আঞ্চলিক পানি সহযোগিতা দেখাতে পারে। চীনকেও কাছে টানতে হবে। এতে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পেতে উন্মুখ ভারতের মর্যাদা বিশ্বসভায় বাড়বে।
দি হিন্দু পত্রিকার সম্পাদকীয় পর্ষদকে ধন্যবাদ জানাই। এই শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় দৈনিক কেবলই তিস্তার কথা বলেনি। ‘চার দশকের অধিকাংশ সময় বিস্তৃত সন্দেহকে পেছনে ফেলে’ দুই নেতার সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি হিন্দু ১৪ জানুয়ারি লিখেছে, ‘এটা একটা পরীক্ষা যে, বাংলাদেশকে সমগ্র অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা দিতে ভারতের আগ্রহী হওয়া।’
টাইমস অব ইন্ডিয়া-র (১৩ জানুয়ারি) প্রতিনিধিত্বমূলক সুর : ‘শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে নবতর মৈত্রী গড়তে ভারত তার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রকে একসঙ্গে এক শ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা ঘোষণা করল।’ কিন্তু ঋণ তো ঋণীই করে। ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম-মংলা বন্দর ব্যবহারে নিশ্চয় পারস্পরিক স্বার্থ আছে। সড়ক ও বন্দর ভাড়া দিয়ে বাংলাদেশ অনেক টাকা পাবে। কিন্তু জনগণের কাছে টাকার অঙ্ক বড় করে দেখানো বৃথা। বিষয়টি পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।
সন্ত্রাসবাদ দমনসংক্রান্ত সহযোগিতায় পারস্পরিক স্বার্থ বিরাট। উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষেত্রে বলা চলে, ’৭১-এ জন্মের জন্য ভারতের প্রতি নিঃশর্তে কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ এখানে শতভাগ আন্তরিক থাকতে পারে। তথাকথিত ওয়ার অন টেররের অংশীদার হওয়ার বিনিময়ে পাকিস্তান তার পানসে সার্বভৌমত্ব বেচে দেয়। আমরাও হয়তো কখনো মুখ ফুটে তেমনটা মার্কিনিদের বলেছি। সংবিধানের অবমাননা ঘটিয়ে আমরাই প্রথম আমাদের জল-স্থল-অন্তরীক্ষ মার্কিনিদের ব্যবহার করতে দিয়েছি। তাই বলেছি, বিনিময়ে এখন অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দাও। বিনা শুল্কে গার্মেন্টস বেচার মওকা দাও। কিন্তু ভারতকে আমরা তা বলব না। মানবাধিকার ও আইনের আওতায় সন্ত্রাস দমনে ভারতকে আমরা সর্বাত্মক ও সন্দেহাতীত সহায়তা দেব। এ জন্য কোনো দরকষাকষি নেই। একজন ভারতীয় কূটনীতিক উলফার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ভারত শুধু নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশকে পাশে চায়। এটা পেলে তারা আর কিছু চায় না। সেই নিরাপত্তা ভারত বাংলাদেশকে দিয়েছে এবং ভারত আজ তা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করছে।
দেওয়া-নেওয়া বা লেনদেনের প্রশ্ন এলে বলব, ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম বন্দর ইত্যাদি ব্যবহারের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে সব কটি নদীর পানি এবং স্থল ও সমুদ্রসীমার সুরাহা করা। ১৯৫৮ সালে নুন-নেহরুর সই করা সীমান্ত চুক্তিটিই ১৯৭৪ সালে প্রায় অবিকল সই করেন মুজিব-ইন্দিরা। নুন-নেহরুর সমঝোতাই মুজিব-ইন্দিরার সমঝোতা। নুন-নেহরুর চুক্তি বাস্তবে রূপ দিতে ভারতীয় সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়। বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধন করে তাতে অনুসমর্থন দেয়। এত দিন ভারত নতুন করে সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছে বলে জানি। এবার ইশতেহারের ২০ দফায় দেখি, ১৯৭৪ সালের চুক্তির ‘চেতনার আলোকে’ সব বকেয়া সমস্যা সুরাহার কথা বলা হয়েছে। এটা নতুন। চিন্তার কথা।
লেখার শুরুতেই স্বল্পতম সময়ে ড. মনমোহনের ঢাকা সফরের উল্লেখ করেছিলাম। উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ভারতের তরফে জরুরি ভিত্তিতে কতিপয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রথমত, সীমান্তে প্রাণহানি বন্ধে বিএসফএফ-কে ‘সংযত’ করতে রাজনৈতিক নির্দেশনা লাগবে। দ্বিতীয়ত, শ্রীনিবাসনের প্রস্তাবের আলোকে মন্ত্রিপর্যায়ে একটি পাঁচ দেশীয় পানি কমিশন গঠন করা যায়। চীনকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তুতি পর্বেই নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান জেআরসির বৈঠক এখনই হতে পারে। তৃতীয়ত, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ভারত কবে, কখন, কীভাবে পাকা করতে চায়, তার একটি স্পষ্ট ঘোষণা দরকার। চতুর্থত, সমুদ্রসীমার বিষয়ে একটি রাজনৈতিক নির্দেশনা চাই। পঞ্চমত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে চার দেশের সড়ক, রেল ও নৌমন্ত্রীদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠান।
আমাদের সমুদ্র উপকূলটা অবতল ধরনের। সমুদ্রের পাড় ভারতের মতো হলে আমাদের পক্ষে ভারতের প্রস্তাব মানতে কোনো অসুবিধাই হতো না। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে ভারতের উপকূল নিচে, আমাদেরটা বেশ ওপরে। তাই আমরা বলছি, সমুদ্রসীমার সুরাহা হতে হবে ইকুয়িটি বা সমতার নীতির ভিত্তিতে। ভারত চায় সমদূরত্বের নীতি প্রয়োগ করতে। বাংলাদেশ কোনো অবস্থায়ই ভারতের প্রস্তাব মানতে পারে না। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তার ইতিহাসে প্রথম জাতিসংঘের সালিস আদালতে গেছে। শেখ হাসিনা-মনমোহন সালিসির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে বিষয়টি সুরাহার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। নিজেরা পারলে উত্তম। আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে সালিস নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে পারে। তবে এর মধ্যে জানা গেল, মিয়ানমার সমদূরত্ব ও সমতা উভয়ের মিশেলে সমঝোতা সারতে চায়। এটা একটা অগ্রগতি। ভারত এখন বরং মিয়ানমারের মতো সালিসি বাদ দিয়ে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারে। ঢাকার স্বস্তি এতে বাড়বে বলেই মনে করা হয়।
ঢাকা-দিল্লি ‘নতুন অধ্যায়ের’ সূচনা এমন সময়ে, যখন চীন উত্তর-পূর্ব ভারতে নজর তীক্ষ করেছে। অরুণাচল প্রদেশের মালিকানা দাবি করেছে। সম্প্রতি ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল দীপক কাপুর বলেন, চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ভারতের প্রস্তুতি আছে। অন্যদিকে ভারত ও চীনের বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে হিমবাহ দ্রুত গলছে দেখে শঙ্কিত। তাঁরা বলেন, আগামী তিন থেকে চার দশকের মধ্যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো নদীগুলো মৌসুমি নদীতে পরিণত হবে। মাসের পর মাস এসব নদী শুকনো থাকবে। (ওয়াশিংটন পোস্ট, ২১ ডিসেম্বর ২০০৬) বিশিষ্ট চীনা হিমবাহ বিশেষজ্ঞ কিন ডাহে ও হি ইউয়ানকিং অভিন্ন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তাঁরা নিশ্চিত করেন, ইয়াংজি, মেকং ও গঙ্গার মাধ্যমে এক শ কোটি লোককে পানি সরবরাহের উত্স যে হিমবাহ তা অস্বাভাবিক হারে গলছে। জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) চেয়ারম্যান ভারতীয় বিশেষজ্ঞ রাজেন্দ্র পচৌরি ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকার নদ-নদী প্রসঙ্গে বলেন, এ অঞ্চলটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শস্যভান্ডার। যদি হিমবাহবাহিত নদী শুকায় তাহলে তা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকি বয়ে আনবে। (রয়টার্স, ২৩ এপ্রিল, ২০০৭)
শেখ হাসিনা ও মনমোহন সহযোগিতার যে বিশাল সম্ভাবনার সূচনা ঘটালেন, তাকে এখন বাস্তবে রূপ দিতে দরকার চীনকে সংশ্লিষ্ট করে একটি বৃহত্তর কূটনীতির সঞ্চারণ। নদীর অববাহিকাভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতার রূপায়ণই শুধু সবাইকে ‘জয়ী’ করতে পারে। এ ক্ষেত্রের ‘জয়’ ট্রানজিট ও বন্দর ব্যবহারে দৃশ্যত চার দেশীয় নীতিগত সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নের পথ সুগম করবে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
অধিকতর পরিপক্ব ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় কংগ্রেস এখন এতটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো যে, তাদের পক্ষে এককভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অনুঘটকের ভূমিকা পালন সম্ভব। তবে দেখার বিষয়, দিল্লি বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কী করে কত দ্রুততায় নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে একটি নবতর আঞ্চলিক সহায়তাবলয় গড়তে পারে। সার্ক বা চীন যেন অহেতুক চোট না পায়। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কাজ হলো, প্রথাগত বাগাড়ম্বরের দুর্দমনীয় প্রবণতা সংবরণ করা।
ভারত আমাদের এমন এক অনিবার্য প্রতিবেশী, যার সঙ্গে সব মৌসুমে, সব আবহাওয়ায় ভালো সম্পর্ক বজায় রাখাই কাম্য। কিন্তু রাষ্ট্র ও কূটনীতি এমন বিষয়, যেখানে একটা লেনদেনের হিসাব থাকেই। ১২ জানুয়ারি দিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে প্রকাশিত হলো ৫০ অনুচ্ছেদবিশিষ্ট যৌথ ইশতেহার। এর একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো, দ্বিপক্ষীয় ঘরানা থেকে উত্তরণের ইঙ্গিত। আঞ্চলিক উদ্যোগের প্রতি গুরুত্বারোপ। পাঁচবার এসেছে ‘আঞ্চলিক’ কথাটি। তবে কি ভারতীয় কূটনীতিতে পরিবর্তন এসেছে? এ কথা যে নিছক কথার কথা নয়, এখন তা প্রমাণের সময়। দিল্লির অগ্রাধিকার আঞ্চলিক ট্রানজিটের আদলে ঢাকার অগ্রাধিকার পানিসম্পদকেও সমগুরুত্বে আঞ্চলিক রূপ দিতে হবে। সড়কের ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান সম্প্রীতি গড়লে তা পানিতেও গড়ে তোলা সম্ভব। নিউইয়র্ক টাইমসে ১২ জানুয়ারি দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ফিলিপ বাওরিং লিখেছেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম নিরাপত্তা ইস্যু হলো পানি। যৌথ পানি প্রকল্প দিতে পারে পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ও। এই চারটি দেশ তাই আগে রাজনৈতিক ভূগোলের বাইরে আসুক। তারা মেনে নিক, প্রকৃতির দেওয়া নদীব্যবস্থা। তাহলেই কিন্তু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার টেবিলে ‘ন্যায্য হিস্যার’ সংজ্ঞা ও আলোচনা দুটোই রং বদলায়।
একটা যেনতেন তিস্তাচুক্তি করা অসার ও অনুচিত। ৫৪ নদীর মধ্যে মাত্র ৩০ বছর মেয়াদে গঙ্গাচুক্তি সইয়ের ১৪ বছর পর তিস্তাচুক্তির তোড়জোড় চলছে। তাহলে ৫৪ নদী নিয়ে ৫৪টি পৃথক চুক্তি করতে কত বছর লাগবে? চীনের কৈলাশ গিরিশৃঙ্গে অবস্থিত হিমবাহে জন্ম নেওয়া ব্রহ্মপুত্রের উপনদী তিস্তা। এটি ছাড়া আর সাতটি নদীর উল্লেখ আছে যৌথ ইশতেহারে, জেআরসি এসব নদী নিয়ে আলোচনা করবে। আগামী মার্চে কথাবার্তা নির্দিষ্টভাবে তিস্তা নিয়ে হবে বলেই শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ভারতীয় কূটনীতিক শ্রীনিবাসনের তথ্য সত্য হলে, আগামী মার্চে দুই পানিমন্ত্রীর বৈঠক কিংবা সম্ভাব্য একটি দ্বিপক্ষীয় তিস্তাচুক্তি নিয়ে বড় আশাবাদ ব্যক্ত করা চলে কি?
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব কৃষ্ণ শ্রীনিবাসন ৫ জানুয়ারি ২০১০ দি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত ‘বড় আশা’ শীর্ষক এক নিবন্ধে তথ্য দেন যে তিস্তার সর্বনিম্ন প্রবাহ যেখানে চার হাজার কিউসেক, সেখানে ভারতীয় খালব্যবস্থারই পানি লাগে ৪৪০০ কিউসেক। যৌথ ইশতেহারে দুই নেতা ‘তিস্তা নদীতে শুখা মৌসুমে উভয় দেশের জনগণের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন।’ তাহলে প্রশ্ন ওঠে, তিস্তায় পানির প্রবাহ না বাড়িয়ে বাংলাদেশকে পানি দিলে তা শুখা মৌসুমে ভারতীয় জনগণের সংকট তীব্র করবে কি না?
শ্রীনিবাসন এ সম্পর্কে যা লিখেছেন, তাকে অস্বীকার করে তিস্তাচুক্তি করলে তার ভবিষ্যত্ মাথায় রাখতে হবে। তাঁর মন্তব্য, তিস্তা ছাড়া ‘বরাকের ওপর টিপাইমুখ বাঁধ ভাটিতে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই সমস্যা দুটি আরেক ফারাক্কা বিরোধ হয়ে ওঠার আগেই জরুরি ভিত্তিতে উভয় সমস্যার সুরাহা দরকার। উভয় দেশ সহযোগিতার ভিত্তিতে চীন, নেপাল ও ভুটানের পাহাড়ি নদীগুলোর পানির সুব্যবহারে উজানের দেশগুলোর কাছে যৌথ নিবেদন পেশ করতে পারে।’
রাজনৈতিক বাস্তবতা যতই ভিন্ন হোক, এ ধরনের আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া পানিসম্পদের সুষ্ঠু ভাগবাটোয়ারা কিংবা সর্বাধিক উপযোগিতা লাভ অসম্ভব। এখন কোপেনহেগেন সম্মেলনকে পেছনে রেখে এই অঞ্চলের নেতা হিসেবে ভারত প্রথম ধাপে ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশকে নিয়ে আঞ্চলিক পানি সহযোগিতা দেখাতে পারে। চীনকেও কাছে টানতে হবে। এতে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পেতে উন্মুখ ভারতের মর্যাদা বিশ্বসভায় বাড়বে।
দি হিন্দু পত্রিকার সম্পাদকীয় পর্ষদকে ধন্যবাদ জানাই। এই শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় দৈনিক কেবলই তিস্তার কথা বলেনি। ‘চার দশকের অধিকাংশ সময় বিস্তৃত সন্দেহকে পেছনে ফেলে’ দুই নেতার সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি হিন্দু ১৪ জানুয়ারি লিখেছে, ‘এটা একটা পরীক্ষা যে, বাংলাদেশকে সমগ্র অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা দিতে ভারতের আগ্রহী হওয়া।’
টাইমস অব ইন্ডিয়া-র (১৩ জানুয়ারি) প্রতিনিধিত্বমূলক সুর : ‘শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে নবতর মৈত্রী গড়তে ভারত তার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রকে একসঙ্গে এক শ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা ঘোষণা করল।’ কিন্তু ঋণ তো ঋণীই করে। ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম-মংলা বন্দর ব্যবহারে নিশ্চয় পারস্পরিক স্বার্থ আছে। সড়ক ও বন্দর ভাড়া দিয়ে বাংলাদেশ অনেক টাকা পাবে। কিন্তু জনগণের কাছে টাকার অঙ্ক বড় করে দেখানো বৃথা। বিষয়টি পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।
সন্ত্রাসবাদ দমনসংক্রান্ত সহযোগিতায় পারস্পরিক স্বার্থ বিরাট। উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষেত্রে বলা চলে, ’৭১-এ জন্মের জন্য ভারতের প্রতি নিঃশর্তে কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ এখানে শতভাগ আন্তরিক থাকতে পারে। তথাকথিত ওয়ার অন টেররের অংশীদার হওয়ার বিনিময়ে পাকিস্তান তার পানসে সার্বভৌমত্ব বেচে দেয়। আমরাও হয়তো কখনো মুখ ফুটে তেমনটা মার্কিনিদের বলেছি। সংবিধানের অবমাননা ঘটিয়ে আমরাই প্রথম আমাদের জল-স্থল-অন্তরীক্ষ মার্কিনিদের ব্যবহার করতে দিয়েছি। তাই বলেছি, বিনিময়ে এখন অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দাও। বিনা শুল্কে গার্মেন্টস বেচার মওকা দাও। কিন্তু ভারতকে আমরা তা বলব না। মানবাধিকার ও আইনের আওতায় সন্ত্রাস দমনে ভারতকে আমরা সর্বাত্মক ও সন্দেহাতীত সহায়তা দেব। এ জন্য কোনো দরকষাকষি নেই। একজন ভারতীয় কূটনীতিক উলফার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ভারত শুধু নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশকে পাশে চায়। এটা পেলে তারা আর কিছু চায় না। সেই নিরাপত্তা ভারত বাংলাদেশকে দিয়েছে এবং ভারত আজ তা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করছে।
দেওয়া-নেওয়া বা লেনদেনের প্রশ্ন এলে বলব, ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম বন্দর ইত্যাদি ব্যবহারের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে সব কটি নদীর পানি এবং স্থল ও সমুদ্রসীমার সুরাহা করা। ১৯৫৮ সালে নুন-নেহরুর সই করা সীমান্ত চুক্তিটিই ১৯৭৪ সালে প্রায় অবিকল সই করেন মুজিব-ইন্দিরা। নুন-নেহরুর সমঝোতাই মুজিব-ইন্দিরার সমঝোতা। নুন-নেহরুর চুক্তি বাস্তবে রূপ দিতে ভারতীয় সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়। বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধন করে তাতে অনুসমর্থন দেয়। এত দিন ভারত নতুন করে সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছে বলে জানি। এবার ইশতেহারের ২০ দফায় দেখি, ১৯৭৪ সালের চুক্তির ‘চেতনার আলোকে’ সব বকেয়া সমস্যা সুরাহার কথা বলা হয়েছে। এটা নতুন। চিন্তার কথা।
লেখার শুরুতেই স্বল্পতম সময়ে ড. মনমোহনের ঢাকা সফরের উল্লেখ করেছিলাম। উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ভারতের তরফে জরুরি ভিত্তিতে কতিপয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রথমত, সীমান্তে প্রাণহানি বন্ধে বিএসফএফ-কে ‘সংযত’ করতে রাজনৈতিক নির্দেশনা লাগবে। দ্বিতীয়ত, শ্রীনিবাসনের প্রস্তাবের আলোকে মন্ত্রিপর্যায়ে একটি পাঁচ দেশীয় পানি কমিশন গঠন করা যায়। চীনকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তুতি পর্বেই নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান জেআরসির বৈঠক এখনই হতে পারে। তৃতীয়ত, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ভারত কবে, কখন, কীভাবে পাকা করতে চায়, তার একটি স্পষ্ট ঘোষণা দরকার। চতুর্থত, সমুদ্রসীমার বিষয়ে একটি রাজনৈতিক নির্দেশনা চাই। পঞ্চমত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে চার দেশের সড়ক, রেল ও নৌমন্ত্রীদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠান।
আমাদের সমুদ্র উপকূলটা অবতল ধরনের। সমুদ্রের পাড় ভারতের মতো হলে আমাদের পক্ষে ভারতের প্রস্তাব মানতে কোনো অসুবিধাই হতো না। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে ভারতের উপকূল নিচে, আমাদেরটা বেশ ওপরে। তাই আমরা বলছি, সমুদ্রসীমার সুরাহা হতে হবে ইকুয়িটি বা সমতার নীতির ভিত্তিতে। ভারত চায় সমদূরত্বের নীতি প্রয়োগ করতে। বাংলাদেশ কোনো অবস্থায়ই ভারতের প্রস্তাব মানতে পারে না। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তার ইতিহাসে প্রথম জাতিসংঘের সালিস আদালতে গেছে। শেখ হাসিনা-মনমোহন সালিসির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে বিষয়টি সুরাহার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। নিজেরা পারলে উত্তম। আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে সালিস নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে পারে। তবে এর মধ্যে জানা গেল, মিয়ানমার সমদূরত্ব ও সমতা উভয়ের মিশেলে সমঝোতা সারতে চায়। এটা একটা অগ্রগতি। ভারত এখন বরং মিয়ানমারের মতো সালিসি বাদ দিয়ে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারে। ঢাকার স্বস্তি এতে বাড়বে বলেই মনে করা হয়।
ঢাকা-দিল্লি ‘নতুন অধ্যায়ের’ সূচনা এমন সময়ে, যখন চীন উত্তর-পূর্ব ভারতে নজর তীক্ষ করেছে। অরুণাচল প্রদেশের মালিকানা দাবি করেছে। সম্প্রতি ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল দীপক কাপুর বলেন, চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ভারতের প্রস্তুতি আছে। অন্যদিকে ভারত ও চীনের বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে হিমবাহ দ্রুত গলছে দেখে শঙ্কিত। তাঁরা বলেন, আগামী তিন থেকে চার দশকের মধ্যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো নদীগুলো মৌসুমি নদীতে পরিণত হবে। মাসের পর মাস এসব নদী শুকনো থাকবে। (ওয়াশিংটন পোস্ট, ২১ ডিসেম্বর ২০০৬) বিশিষ্ট চীনা হিমবাহ বিশেষজ্ঞ কিন ডাহে ও হি ইউয়ানকিং অভিন্ন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তাঁরা নিশ্চিত করেন, ইয়াংজি, মেকং ও গঙ্গার মাধ্যমে এক শ কোটি লোককে পানি সরবরাহের উত্স যে হিমবাহ তা অস্বাভাবিক হারে গলছে। জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) চেয়ারম্যান ভারতীয় বিশেষজ্ঞ রাজেন্দ্র পচৌরি ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকার নদ-নদী প্রসঙ্গে বলেন, এ অঞ্চলটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শস্যভান্ডার। যদি হিমবাহবাহিত নদী শুকায় তাহলে তা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকি বয়ে আনবে। (রয়টার্স, ২৩ এপ্রিল, ২০০৭)
শেখ হাসিনা ও মনমোহন সহযোগিতার যে বিশাল সম্ভাবনার সূচনা ঘটালেন, তাকে এখন বাস্তবে রূপ দিতে দরকার চীনকে সংশ্লিষ্ট করে একটি বৃহত্তর কূটনীতির সঞ্চারণ। নদীর অববাহিকাভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতার রূপায়ণই শুধু সবাইকে ‘জয়ী’ করতে পারে। এ ক্ষেত্রের ‘জয়’ ট্রানজিট ও বন্দর ব্যবহারে দৃশ্যত চার দেশীয় নীতিগত সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নের পথ সুগম করবে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
No comments