সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে না-সেবিকা-সংকট

সেবিকা-সংকটে রয়েছে চিকিৎসাব্যবস্থা। বলা যায়, ছিল, আছে এবং তা কাটার কোনো লক্ষণ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের সহযোগী হিসেবে তিনজন সেবিকা থাকার কথা। এটা থাকলেই বলা যায়, চিকিৎসার অপরিহার্য অঙ্গ সেবাদানের সামর্থ্য অর্জিত হয়েছে।


অথচ বাংলাদেশে প্রতি দুজন চিকিৎসকের জন্যও একজন করে সেবিকা নেই।
গত রোববারের প্রথম আলোর এ-বিষয়ক সংবাদ জানাচ্ছে, দেশে যেখানে আড়াই লাখ সেবিকার ঘাটতি রয়েছে, সেখানে ছয় বছর ধরে নতুন সেবিকা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। এত বিপুল ঘাটতিকে তাই অভাব না বলে চিকিৎসাব্যবস্থার সংকট হিসেবেই চিহ্নিত করতে হবে। সংকটটি সহসা কাটানোর কোনো উদ্যোগ সরকারের তরফে দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দুই হাজার ৬৩৯টি শূন্যপদে সরকারিভাবে মঞ্জুর করা সেবিকাদের মধ্য থেকে শিগগিরই নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রথমত, যেখানে বিরাট ঘাটতি সেখানে পদ থাকার পরও তা শূন্য থাকে কী করে? কী করে সেবিকা পদে ছয় বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকে? এর একটাই উত্তর—উদাসীনতা। কিন্তু বিবিধ কারণে এ বিষয়ে উদাসীনতার কোনো সুযোগ নেই। একাধিক গবেষণা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অভাবে নবজাতক শিশুসহ অনেক রোগীকেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা যায়, পর্যাপ্ত সেবিকার অভাবে একদিকে চিকিত্সকদের পেরেশানিতে পড়তে হচ্ছে, অন্যদিকে রোগীদেরও যারপরনাই ভুগতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের স্বার্থে এই অবস্থার বদল ঘটাতে হবে।
দেশে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটেছে। আগের থেকে অনেক বেশি হারে যুব প্রজন্মের নারীরা কর্মসংস্থানের দাবিদার হচ্ছেন এবং তাঁদের সেই যোগ্যতাও রয়েছে। আড়াই লাখ সেবিকার ঘাটতি পূরণ করা মানে এই নারীদের অনেকেরই সম্মানজনক কর্মসংস্থান ঘটবে। এ ছাড়া বিদেশেও সেবিকাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। সেবিকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে, আরও বেশি সংখ্যায় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবাসে তাদের নিয়োগের বন্দোবস্ত করতে পারে। এতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের জনবল যেমন বাড়ে, তেমনি প্রবাসী-আয়ের নতুন পথও খুলে যায়।
সরকারকে তাই এ বিষয়ে আশু ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সেবিকা-পেশার কর্মীদের অধিকার রক্ষা করে তাদের দক্ষতার বিকাশও ঘটাতে হবে। সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে কথায় নয়, কাজে বিদ্যমান ঘাটতি মোকাবিলায় আশু উদ্যোগ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.