অবিলম্বে বহিষ্কার করা উচিত-সরকারি দলের নেতা!

তিনি একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বাড়ির কাছে অন্য একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে, তিনি সেই পদটিতে নিয়োগ চান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর তিনি আবেদন করেছেন, কিন্তু ওই পদের জন্য আবেদনকারী আছেন আরও নয়জন।


তদবিরের চেষ্টাগুলো থেকে ভরসা মেলেনি যে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত। আবার নিয়োগের জন্য যে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তাতে প্রথম স্থান অধিকার করে পদটি জয় করবেন—এমন আত্মবিশ্বাসের অভাব। তাই, নিয়োগ পরীক্ষার ঠিক আগের দিন ৩০-৪০ জন গুন্ডা নিয়ে তিনি হানা দিলেন ওই বিদ্যালয়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তাড়ালেন, একজন শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করা হলো, তারপর বিদ্যালয়টির কার্যালয় ও শ্রেণীকক্ষগুলোর দরজায় তালা ঝুলিয়ে চলে গেলেন।
এই ব্যক্তির নাম বনি আমিন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নরিগুন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এটা তাঁর বড় পরিচয় নয়। আদতে কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন না। বনি আমিন এটা করেছেন তাঁর অন্য পরিচয়ের জোরে। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর শনিবারের দাপট প্রদর্শনের খবর পরদিন প্রথম আলোয় প্রকাশের পর মোবাইল টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গম্ভীরভাবে হুকুম দিলেন, ‘যা জানতে চান ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকের কাছে জেনে নিন।’
অর্থাত্ বনি আমিন তাঁর বেআইনি, সন্ত্রাসমূলক আচরণের সম্ভাব্য শাস্তি এড়াতে ক্ষমতাসীন দলের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে চান; দলের স্থানীয় নেতাদের নাম ব্যবহার করতে চান। ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ খান রোববার দুপুরে মোবাইল ফোনে আমাদের জানালেন, বনি আমিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। বনি আমিনের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তিনি কিছু শোনেননি—ওসির এই দাবি সত্য হলে আশা করা যায়, বনি আমিন শিগগিরই গ্রেপ্তার হবেন।
আমরা প্রথমত বলি, বনি আমিনের মতো ব্যক্তি কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেন, সাধারণ শিক্ষক হওয়ারও উপযুক্ত নন। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উচিত অবিলম্বে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে দলের মান-সম্মান রক্ষা করা। তৃতীয়ত, শনিবারের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার জন্য বনি আমিন ও তাঁর লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন এবং ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেখানে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.