বিএনপি বেকায়দায় মাঠে নামতে মরিয়া by মোশাররফ বাবলু

সরকার মামলা দিয়ে ধরপাকড় শুরু করায় বেকায়দায় পড়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একদিকে আন্দোলনের মাঠ ধরে রাখা, অন্যদিকে যাঁদের নামে মামলা হয়েছে, তাঁদের জামিনে বের করে আনাই এখন দলটির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সরকারবিরোধী আন্দোলন ছাড়া এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে বলে নেতারাও মানেন। তাই নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের দাবিতে প্রায় ঝিমিয়ে পড়া আন্দোলনকে আবার জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামতে মরিয়া দলটি।
উদ্ভূত সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার লক্ষ্য নিয়ে গত রাতে গুলশানের বাসভবনে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ের নেতারা চরম হতাশায় ভুগছেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে কেন্দ্রীয় নেতারা এখন ঘরের বাইরে। এ অবস্থায় আন্দোলন না থাকলে দলের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে বলে সবার ধারণা। আগামী রবিবার ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া আছে। পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে দলটি। দলের মধ্যে এ বিষয়গুলো নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দলটি নানা কৌশল খুঁজছে। তাই নিখোঁজ ইলিয়াস ইস্যুকে সামনে রেখেই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে ১০ জুন পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া আছে। তাই ইলিয়াস আলী ইস্যুর আন্দোলনকে ১০ জুন পর্যন্ত টেনে নেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্র জানায়। ১১ জুন সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়ার কথা। সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন শুরু হবে বলে দলের একাধিক নেতা জানান।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি-নির্যাতন করছে। এভাবে মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ রাখা যায় না, তা সরকার ভালো করেই জানে। এর পরও সরকার পুলিশি হয়রানি শুরু করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি বর্তমানে একটু বেকায়দায় পড়েছে। এই সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। সহসাই সমাধান হবে। তাই অবিলম্বে নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, আপাতত যাঁদের নামে মামলা হয়েছে, তাঁরা মাঠে-ময়দানে আসছেন না। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে আবার রাজপথের আন্দোলনে শরিক হবেন। এ জন্য মামলায় জামিন পেতে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। মামলা থাকায় নেতারা দলের কোনো সভা-সমাবেশেও যোগ দিচ্ছেন না। আড়াল থেকেই দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এ অবস্থায় ওই নেতাদের নিয়ে কোনো বৈঠকও করতে পারছেন না চেয়ারপারসন। অনেকের ধারণা, নেতারা আত্মগোপনে না গেলে সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হতো। গ্রেপ্তার হলে অনেকের নামে আরো মামলা দেওয়া হতো। এ জন্যই কৌশলগত কারণে নেতারা গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। কিন্তু সিনিয়র নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায় মাঠের নেতারাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন। তবে মোবাইল ফোনে নেতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেই নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন বলে দলের একাধিক সূত্র জানায়। আরো জানা গেছে, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দলের সিনিয়র নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি খালেদা জিয়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনের সঙ্গেও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি অসুস্থ। আমার নামেও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।' দলের অবস্থা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়েই সামনে এগোতে হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ বিএনপির সঙ্গে আছে, পরিস্থিতি এ রকম থাকবে না। এই সরকারের পতন অবশ্যই হবে। সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছে বলেই বিএনপি নেতাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'সরকারের বিরুদ্ধে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। শিগগিরই দেখতে পাবেন।'
মামলায় অভিযুক্ত দলের এক সিনিয়র নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনে বের হলেই আবার আমাদের মাঠে-ময়দানে দেখতে পাবেন। সরকার হার্ডলাইনে চলে গেছে। সরকার মনে করছে বিএনপি নেতাদের দমন করতে পারলে সারা দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন বন্ধ হবে। কিন্তু মামলা দিয়ে আন্দোলন থামানো যায় না। রাজপথের পাশাপাশি অফিস-আদালত ও ঘরে ঘরে আন্দোলন হবে। মাঠে নামতে না পারলেও ঘরে বসে মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমাদের নেত্রী গত ১২ মার্চের সমাবেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে ১০ জুন পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন। ১১ জুনের সমাবেশ থেকে এক দফার আন্দোলন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সরকার বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের জন্য সরকারের প্রতি আমরা দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের কর্মকাণ্ডে মনে হয় না, তারা ইলিয়াসকে খুঁজছে। তাই আমাদের আন্দোলন ছাড়া বিকল্প পথ নেই।'
আত্মগোপনে থেকেই মির্জা ফখরুলের আহ্বান : আত্মগোপনে থেকেই নেতা-কর্মীদের নামে মামলায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জনরোষের হাত থেকে কোনো বিদেশি প্রভুই এ সরকারকে রক্ষা করতে পারবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা উল্লেখ করা হয়।
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের অশুভ চক্রান্ত থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আপনারা এখন বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচিতে ভয় পেয়ে দমননীতির অংশ হিসেবে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনী তৈরি করে মামলা করছেন।'
একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতাদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

No comments

Powered by Blogger.