ইতি-নেতি-সংবিধান সংশোধন এবং খালেদা জিয়ার 'না' by মাসুদা ভাট্টি
সংবিধান সংশোধন বিষয়ে একটি টেলিভিশন টকশো উপস্থাপনার সুযোগ হয়েছে আমার। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং নতুন প্রজন্মের ব্যারিস্টার রাকিব হাসান। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্তমান সংসদের একজন সম্মানিত সদস্য, সংসদ ও বিচার বিভাগীয় সংসদীয় কমিটির প্রধান এবং বর্তমানে সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটির কো-চেয়ারম্যান।
এ আলোচনায়ই উঠে এল ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে ১১ জানুয়ারি দেশের সংবিধান প্রণয়নে একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করেন এবং সেখানে একমাত্র বিরোধী সদস্য হিসেবে ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। মজার ব্যাপার হলো, তিনি একাই ৩৪টি পয়েন্ট উত্থাপন করেন এই সংবিধানে। পৃথিবীর অনেক দেশই বিপ্লব বা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক, মানবাধিকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানকারী সংবিধান রচনার সাফল্য কেবল বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের সরকারই দেখাতে পেরেছে এবং এই সাফল্য অভূতপূর্ব বলে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম মতামত দিয়েছে।
আমরা স্মরণ করতে পারি সেই সময়ের বাংলাদেশের কথা। একটি সদ্য সশস্ত্র যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসা বিধ্বস্ত অবকাঠামো, তখনো অনেক দেশই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি, অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, স্বজন হারানোর বেদনায় দেশের প্রতিটি কোনায় মাতম চলছে, তখনো নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য মানুষ। এ অবস্থায়ই সংবিধান প্রণয়নের যে তৎপরতা এবং বছরখানেকের মাথায় একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান জাতিকে উপহার দেওয়ার কৃতিত্ব প্রথম সরকারের। শুধু তাই-ই নয়, সেই সংবিধানের আলোকে নির্বাচন এবং নতুন সরকার গঠনও ছিল একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কিন্তু সবই হলো 'গরল ভেল'। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথমেই সংবিধান রদ করল। দেশে দেশে সাধারণত তাই-ই হয়ে থাকে। এটাও এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! দেশ চলছে, মানুষ কাজ করছে; কিন্তু তা দেশ পরিচালনার যে সিদ্ধ রীতি-কৌশল সেই সংবিধানের আলোকে নয়, বরং সংশ্লিষ্ট অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ শাসকের মাথা থেকে বের হওয়া নির্দেশের দ্বারা। বাংলাদেশ এ অভিজ্ঞতা প্রথম অর্জন করেছে জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে বহু আগেই, যদিও সে অর্থে পাকিস্তানের কোনো সংবিধানই ছিল না। যে কারণে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জন্য একটি মৌলিক সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন সবচেয়ে বেশি। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, পাকিস্তানে একটি কার্যকর সংবিধানের অভাবই দেশটিতে বারবার সেনাশাসন আসার মূল কারণ। কিন্তু সংবিধান দিয়ে যে রাষ্ট্রকে অবৈধ দখলদারিত্বের হাত থেকে রক্ষা করা যায় না, এর প্রমাণ তো তিনি নিজের জীবন দিয়েই দিয়ে গেছেন।
সেদিনের সেই টেলিভিশন টকশোতে একটি কথা গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে যে সংবিধানটি প্রণীত হয়েছিল তা সম্পূর্ণ নিখুঁত, এ দাবি করা উচিত নয়; কিন্তু তার ত্রুটি-বিচ্যুতি কোনোটাই দেশের জনগণের স্বার্থ-পরিপন্থী ছিল না। বাংলাদেশের সংবিধান প্রথম দেশের জনগণের মনমানসিকতা ও চিন্তার বিপরীতে হাঁটতে শুরু করে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। এই সংশোধনী এমন এক সংশোধনী, যা কোনো সংসদ বা সম্মিলিত প্রয়াস নয়, বরং একজন সেনাশাসকের নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত অর্ডিন্যান্স মাত্র, যার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আসলে বন্দুকের নল। যার বলে তিনি সংবিধানের মূলনীতিগুলো পরিবর্তন করেন এবং সংবিধানকে করেন কেবল একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের জন্য। কিন্তু এই ভূখণ্ড তো নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের। সে ক্ষেত্রে ওই বিশেষ ধর্ম ছাড়া বাকি সবাই এ রাষ্ট্রে হয়ে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। পরবর্তী সময়ে আরেক সেনাশাসক জেনারেল এরশাদ এই সংবিধানে একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করে বাকি সবাইকে দ্বিতীয় থেকে একেবারে চতুর্থ শ্রেণীতে নামিয়ে দেন। এ যেন সংখ্যালঘু যেকোনো ধর্মবিশ্বাসীকেই একটি বিশেষ 'ট্যাগ' ধারণ করে নিজেদের ধর্মবিশ্বাস যে সংখ্যাগুরু নয় তা প্রমাণ করার নির্দেশ দেওয়া। এ ছাড়া সংবিধানের মৌলিক নীতি যা সাধারণত কোনো দেশেই পরিবর্তনযোগ্য নয়, তা পরিবর্তন করা হয় কোনো প্রকার জন-অংশগ্রহণ ছাড়াই।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কোনো কোনো বিচারক যে নজির স্থাপন করেছেন তা দুঃখজনক। তাঁদের প্রজ্ঞা, বিচারিক বুদ্ধি_সব কিছুর ওপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সামরিক সরকারের এই যে বৈধতা প্রদান, তা যে সম্পূর্ণ জনস্বার্থবিরোধী এবং আইনের চোখে ধুলো দিয়ে ব্যক্তির ক্ষমতাকে প্রায় ঈশ্বরতুল্য করে তোলা_এটা যদি আইন দ্বারা সিদ্ধ হয় তাহলে সে আইনের প্রয়োজন আছে কি না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। কিন্তু বিগত জোট সরকারের আমলে আদালত একটি যুগান্তকারী রায় দেন, যা আসলে জনগণের পক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশে দেওয়া প্রধানতম রায় বললেও কম বলা হয়। এই রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা হয় এবং সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় অবিলম্বে রায় কার্যকর করার জন্য। যথারীতি আপিল করা হয় এই রায়ের বিরুদ্ধে এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের নির্বাচিত সরকার জনগণের পক্ষের এ রায়কে পাঠিয়ে দেয় নথির স্তূপে। এর পর দুই বছরকালের সেনা-সমর্থিত সরকার যে ওই রায় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে না, তা বলাই বাহুল্য। পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আপিল বিভাগে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে এবং রায় যথারীতি বহাল থাকে। মূলত এই রায়ে বাংলাদেশে যেকোনো অবৈধ শাসনকে 'অবৈধ' বলে উল্লেখ করা হয় এবং সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলোতে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়।
এখন যখন এই রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধন করার সময় এসেছে তখন বিরোধী দল আলোচনায় বসতে নারাজ। খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ পাঠানোর পর তিনি এটাকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে নাকচ করে দিয়েছেন। আড়াই বছরের সংসদে যিনি মাত্র পাঁচ-ছয় দিন উপস্থিত থেকেছেন, তিনি সংসদবিষয়ক যেকোনো বিষয়ই এড়িয়ে চলবেন, তাতে বিস্মিত হচ্ছি না; কিন্তু আদালতের দেওয়া রায় মানেন কি মানেন না সে কথা তাঁর ফিরতি চিঠিতে উল্লেখ না করেই তাঁর দল এই কমিটিকে অবৈধ বলে উল্লেখ করছে। প্রশ্ন হলো, সংবিধান সংশোধনের মতো মৌলিক বিষয়েও যদি দুই দল এ রকম দুই মেরুতে থাকে এবং খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কায়দায় এতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? বিএনপি যে অবৈধ সেনাশাসনের হাত ধরে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল, এ সত্য তো বদলানো যাবে না। কিন্তু সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে জনগণের সামনে এটুকু তো প্রমাণ করা যায়, 'জন্ম হোক যথাতথা, কর্ম হোক ভালো!'
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ, editor@ekpokkho.com
আমরা স্মরণ করতে পারি সেই সময়ের বাংলাদেশের কথা। একটি সদ্য সশস্ত্র যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসা বিধ্বস্ত অবকাঠামো, তখনো অনেক দেশই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি, অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, স্বজন হারানোর বেদনায় দেশের প্রতিটি কোনায় মাতম চলছে, তখনো নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য মানুষ। এ অবস্থায়ই সংবিধান প্রণয়নের যে তৎপরতা এবং বছরখানেকের মাথায় একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান জাতিকে উপহার দেওয়ার কৃতিত্ব প্রথম সরকারের। শুধু তাই-ই নয়, সেই সংবিধানের আলোকে নির্বাচন এবং নতুন সরকার গঠনও ছিল একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কিন্তু সবই হলো 'গরল ভেল'। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথমেই সংবিধান রদ করল। দেশে দেশে সাধারণত তাই-ই হয়ে থাকে। এটাও এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! দেশ চলছে, মানুষ কাজ করছে; কিন্তু তা দেশ পরিচালনার যে সিদ্ধ রীতি-কৌশল সেই সংবিধানের আলোকে নয়, বরং সংশ্লিষ্ট অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ শাসকের মাথা থেকে বের হওয়া নির্দেশের দ্বারা। বাংলাদেশ এ অভিজ্ঞতা প্রথম অর্জন করেছে জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে বহু আগেই, যদিও সে অর্থে পাকিস্তানের কোনো সংবিধানই ছিল না। যে কারণে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জন্য একটি মৌলিক সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন সবচেয়ে বেশি। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, পাকিস্তানে একটি কার্যকর সংবিধানের অভাবই দেশটিতে বারবার সেনাশাসন আসার মূল কারণ। কিন্তু সংবিধান দিয়ে যে রাষ্ট্রকে অবৈধ দখলদারিত্বের হাত থেকে রক্ষা করা যায় না, এর প্রমাণ তো তিনি নিজের জীবন দিয়েই দিয়ে গেছেন।
সেদিনের সেই টেলিভিশন টকশোতে একটি কথা গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে যে সংবিধানটি প্রণীত হয়েছিল তা সম্পূর্ণ নিখুঁত, এ দাবি করা উচিত নয়; কিন্তু তার ত্রুটি-বিচ্যুতি কোনোটাই দেশের জনগণের স্বার্থ-পরিপন্থী ছিল না। বাংলাদেশের সংবিধান প্রথম দেশের জনগণের মনমানসিকতা ও চিন্তার বিপরীতে হাঁটতে শুরু করে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। এই সংশোধনী এমন এক সংশোধনী, যা কোনো সংসদ বা সম্মিলিত প্রয়াস নয়, বরং একজন সেনাশাসকের নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত অর্ডিন্যান্স মাত্র, যার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আসলে বন্দুকের নল। যার বলে তিনি সংবিধানের মূলনীতিগুলো পরিবর্তন করেন এবং সংবিধানকে করেন কেবল একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের জন্য। কিন্তু এই ভূখণ্ড তো নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের। সে ক্ষেত্রে ওই বিশেষ ধর্ম ছাড়া বাকি সবাই এ রাষ্ট্রে হয়ে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। পরবর্তী সময়ে আরেক সেনাশাসক জেনারেল এরশাদ এই সংবিধানে একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করে বাকি সবাইকে দ্বিতীয় থেকে একেবারে চতুর্থ শ্রেণীতে নামিয়ে দেন। এ যেন সংখ্যালঘু যেকোনো ধর্মবিশ্বাসীকেই একটি বিশেষ 'ট্যাগ' ধারণ করে নিজেদের ধর্মবিশ্বাস যে সংখ্যাগুরু নয় তা প্রমাণ করার নির্দেশ দেওয়া। এ ছাড়া সংবিধানের মৌলিক নীতি যা সাধারণত কোনো দেশেই পরিবর্তনযোগ্য নয়, তা পরিবর্তন করা হয় কোনো প্রকার জন-অংশগ্রহণ ছাড়াই।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কোনো কোনো বিচারক যে নজির স্থাপন করেছেন তা দুঃখজনক। তাঁদের প্রজ্ঞা, বিচারিক বুদ্ধি_সব কিছুর ওপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সামরিক সরকারের এই যে বৈধতা প্রদান, তা যে সম্পূর্ণ জনস্বার্থবিরোধী এবং আইনের চোখে ধুলো দিয়ে ব্যক্তির ক্ষমতাকে প্রায় ঈশ্বরতুল্য করে তোলা_এটা যদি আইন দ্বারা সিদ্ধ হয় তাহলে সে আইনের প্রয়োজন আছে কি না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। কিন্তু বিগত জোট সরকারের আমলে আদালত একটি যুগান্তকারী রায় দেন, যা আসলে জনগণের পক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশে দেওয়া প্রধানতম রায় বললেও কম বলা হয়। এই রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা হয় এবং সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় অবিলম্বে রায় কার্যকর করার জন্য। যথারীতি আপিল করা হয় এই রায়ের বিরুদ্ধে এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের নির্বাচিত সরকার জনগণের পক্ষের এ রায়কে পাঠিয়ে দেয় নথির স্তূপে। এর পর দুই বছরকালের সেনা-সমর্থিত সরকার যে ওই রায় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে না, তা বলাই বাহুল্য। পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আপিল বিভাগে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে এবং রায় যথারীতি বহাল থাকে। মূলত এই রায়ে বাংলাদেশে যেকোনো অবৈধ শাসনকে 'অবৈধ' বলে উল্লেখ করা হয় এবং সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলোতে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়।
এখন যখন এই রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধন করার সময় এসেছে তখন বিরোধী দল আলোচনায় বসতে নারাজ। খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ পাঠানোর পর তিনি এটাকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে নাকচ করে দিয়েছেন। আড়াই বছরের সংসদে যিনি মাত্র পাঁচ-ছয় দিন উপস্থিত থেকেছেন, তিনি সংসদবিষয়ক যেকোনো বিষয়ই এড়িয়ে চলবেন, তাতে বিস্মিত হচ্ছি না; কিন্তু আদালতের দেওয়া রায় মানেন কি মানেন না সে কথা তাঁর ফিরতি চিঠিতে উল্লেখ না করেই তাঁর দল এই কমিটিকে অবৈধ বলে উল্লেখ করছে। প্রশ্ন হলো, সংবিধান সংশোধনের মতো মৌলিক বিষয়েও যদি দুই দল এ রকম দুই মেরুতে থাকে এবং খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কায়দায় এতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? বিএনপি যে অবৈধ সেনাশাসনের হাত ধরে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল, এ সত্য তো বদলানো যাবে না। কিন্তু সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে জনগণের সামনে এটুকু তো প্রমাণ করা যায়, 'জন্ম হোক যথাতথা, কর্ম হোক ভালো!'
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ, editor@ekpokkho.com
No comments